Author Picture

একগুচ্ছ কবিতা

রহমান হেনরী

মখমলে মোড়ানো

দেখো
সিঁড়িগুলোকে:
মখমলে মুড়িয়ে দেয়া
হয়েছে; অথচ প্রতিটি ধাপের
নিচেই মাংসাশী পশুর গর্জন— সতর্ক
থেকো, ওইসব সুগন্ধী আর পোশাকী জেল্লা
থেকে। রূপযৌবন এবং চাকচিক্য খুবই কার্যকর
ব্যবস্থাপনায়, সচেতনের বিবেক আর বোকাদের বেদনাকে
ঘুম পাড়িয়ে দিতে জানে। নিশ্চয় তোমরা ছলনা ও মেকাপে বিভ্রান্ত নও!

 

অভিন্নতা

শহরের মধ্যে, এখানে ওখানে, তুমি দেখতে পেয়েছিলে:
নিজেরই ছেঁড়া চুল, ছিন্নবাহু, বিকৃত গ্রীবা,
থেঁতলে যাওয়া হৃৎপিণ্ডের খণ্ডিতাংশ— ছড়িয়ে আছে।
বলেছিলে, ‘অন্য কোনও সমুদ্র, বেলাভূমি, শহর
খুঁজে নেবে’; এবং নিয়েছিলেও—
এখানে, প্রতিমুহূর্তে, আমি আমার মৃত্যুকে দেখতে পাই:
কখনও নিজেরই ছায়া, কখনও প্রিয় শার্ট, মায়া লাগা
এক জোড়া পুরাতন জুতা, নিবিড় শয়নকক্ষ কিংবা
বিশ্রামের মাতৃ-আহ্বান হয়ে, সে আমাতে লেপ্টে থাকে—
তোমার বসবাসের নতুন শহরে, প্রতিটি ভোরবেলায়
মিশে যায় ত্যায্য সেই শহরের নারকীয় বাতাস—
প্রতিটি বিকেলের মধ্যে, হুড়মুড় ঢুকে পড়ে: পুরনোসব গল্প;
অভিনব কিছুই জোটে না আমাদের—
যেখানেই থাকো, যে দেশেই থাকি, তিলেতিলে অপচয় হচ্ছে:
আমাদেরই জীবনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এখন তো,
তোমার ছেঁড়া চুলের পাশে, আমিও আমার
বিচ্ছিন্ন বাহু, কাঁধ ও কোমর দেখতে পাই—
বৃত্তবন্দি এই পৃথিবীর বাইরে, এখন আর কোথায় পালাবো আমরা?

 

প্রতিস্থাপনীয়

জ্বলন্ত, উজ্জ্বল বাঘ— খাঁটি রাজকীয়;
পহেলা আশ্বিনে, তাকে জয়ধ্বনি দিও!
সে আমার বাংলাদেশ। অতি তীব্র শীতে,
উত্তেজনা মেখে দেবে— ধীর, আচম্বিতে:
মনোমাঠে, লোকালয়ে, লুপ্ত রাজপথে;
দৈবশক্তি যে রকম: ঐশ্বরিক রথে—
পশুরের টানা স্রোত সরলরেখায়
সদম্ভে পেরিয়ে যাবে; আঁধারে-জ্যোৎস্নায়…
ক্ষিপ্র সেই রাজনের প্রতীজ্ঞায় স্থির
জেদি ভঙ্গি, মেখে নাও স্বীয় আকাঙ্ক্ষাতে;
হয়তো সময় এলো— উপলব্ধির,
সমুদ্র পেরোতে হবে: গাঢ় অমারাতে।
যখন সোনার দেশ: শ্বাপদে মৌসুমী—
জ্বলন্ত, উজ্জ্বল বাঘ হয়ে উঠো তুমি!

 

ভাঙার ভণ্ডামি

যদি ডানা ভাঙো— তার,
আবার,
অভদ্র হবো আমি;

ডানা তো আমার নয়— মিষ্টি কবিতার;
তা হলে যে ভাঙছো বড়!
ভাঙার ভণ্ডামি?

কিংবা ধরো:
আমার পিঠেই ছিলো কবিতার ডানা—
নিস্পন্দ দেহঘর, জৈব-অ্যান্টেনা;
তাকেই কি গৃহ মনে করো?

কিন্তু তুমি এমন শয়তান!
ফিরে এসে, ভাঙাডানা জুড়ে দেবে বলে
জুড়ে দিচ্ছো: জলের গঠনে গাঁথা গান—

তোমার ভণ্ডামি আজ দেখুক সকলে!

 

রূপান্তর

দেশপ্রেমিক শুধুই কথা বলছে, অনর্গল কথা বলছে—
স্মৃতিপণ্য: সস্তায় বিকাতে চাইছে, জনপদে; তার নগ্নতার পাশে
বসে থাকতে থাকতে, আমি বোবা হয়ে যাচ্ছি, রক্তিমা!
আমার কলম থেকে নিব, কী-বোর্ড থেকে আঙুল
খসে পড়ছে, বারবার…

তোমার রক্তচক্ষু, মাঝেমাঝে সজল হয়ে উঠছে— সমব্যথায়;
কিন্তু সেই চাহুনি, জীবনের দিকে বাঁক নিতে নিতেও,
হুট করে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে— কোনও আলো নয়, স্বপ্ন নয়,
স্পর্শ ও চুম্বনের অনুভূতি: পরিত্যক্ত ঠোঙ্গার মতো পড়ে রইলো
পথের দু’পাশে।

দেশপ্রেমিকের কাছে বসে আছি। হিমোগ্লোবিন ভেঙে
বিলিভারডিন হচ্ছে; রক্ত সবুজ হয়ে যাচ্ছে, রক্তিমা!
স্বরথলি থেকে বেরিয়ে আসছে: বিকট আওয়াজ—
নিরুপায় রূপান্তরে, আমরা কি গিরগিটি হতে চলেছি?

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!