
দ্বিধা
তোমরা চলে যাচ্ছ!
সময়ের বুদবুদ বাজিয়ে বেখায়াল সুরসুরি গায়
কলমি ডগায় লেপ্টে দ্যাখো কোমল সূর্যাস্তকাল
এ কেমন চলে যাওয়া বিহঙ্গমা?
তোমাদের একান্ত অতনু বান্ধবীর শাড়ীতে সাঝ পড়েনি এখনও!
মালতী ফুল ধরে ডুবে থাকো হে কুমারীকাল!
নদী আর স্রোত নির্বিকার বয়ে যাক মুহ্যমান বয়ঃসন্ধিতে,
দ্বিধার রশিতে ঈষৎ ধারাপাত।
বিহঙ্গমা তোমরা চলে যাও,
আমাদের পূর্বপরিচয় শুক্রাণুর মতোই অনিশ্চিত অপরিচিত।
টুপ
জেগে থাকা এই মৃত্যু বিমুখতা রাতের একান্ত কার্নিশে
বর্ষার ছাঁট লেগে ভিজে যায় সবুজ পাতা
একসাথে কেঁপে ওঠে দুটো নরোম মন
পাখি আর আমি
অনুভূত হয়-
একদিন মরে যাবো।
তারপরও বহুদিন বৃষ্টি হবে,ভিজে যাবে পাতা
সবুজ মাঠের পরে শুয়ে থাকবে ধানক্ষেত
নদীর পাড় ভেসে যাবে আগত বর্ষায় বর্ষায়
আমার এ ঘরেই জল পড়বে আবার
‘টুপ’
শুধু আমিই মরে যাবো।
মৃত্যু
একজন ঘুমন্ত মানুষ একবার মরে যাওয়ার পর
আরো একশোবার মরে
বীভৎস জঘন্য হয়ে ছিড়ে যায় শরীরের একেকটা অঙ্গ
জানালার বাইরে রাখা তাজ হাতা কাটা পড়ে পেছন থেকে ছুটে আসা বাসে
মানুষ নির্বিকার ঙঙ্গিতে চেয়ে রয় শুধু
তার হাতটি চলে যাচ্ছে
বাহু থেকে কাটা ওই জায়গাটুই যা কদাকার
রক্তের কি উৎকট গন্ধ
উফ!
হঠাৎ বুক ঘেমে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
বুকের পশমে লেগে থাকা লোল মুছে বলে।
আহ বেচে আছি বেশ!
এমন কয়েকশোবার প্র্যাকটিস শেষে,
একদিন ঠিক মরে যায়,মৃত্যুমুখী এই কেতারদুরস্ত মানুষ।
কাম অথবা প্রেম
এই মসৃণ কর্পোরেট দুনিয়ার সমস্ত পথ ভিজিয়ে দেব
ছুঁয়ে দেখব সুশ্রী রমনীর তিলবাঁধা ঠোঁট আর অভিশপ্ত সকল অবয়ব।
রিক্সার রিনরিন ঘন্টা বাজিয়ে দেব গলিতে গলিতে,
অবেলায় ঘুম ভেঙ্গে যাবে বিপত্নীক স্বামীর।
কোলকাতা ছাপা রগরগে ম্যাগাজিনে মুখ গুজে অর্ধনগ্ন শরীরে হাযির হবে বারান্দায়-
আঙ্গুলে চাপা সিগারেট ছেড়ে ঠোঁট ফাঁক করে বলবে
‘শালার পো’ এইখানে কি!
তারপর!
তারপর চলে যাবে কোনও মধ্যবিত্ত পাড়ায়
যেখানে অভাবের ফিসফাস আওয়াজ আর শ্যাওড়াপড়া ফুলের টব
এসব অদ্ভুত সৌন্দর্য পাহারা দেয় ঘরের একমাত্র কুমারী মেয়ে
বসে থাকে নিগূঢ় অস্বচ্ছ দৃষ্টির ছায়া জড়িয়ে
বেলা শেষে ত্যাদড় ছেলেটা নিপাট ভদ্রলোক সেজে সমাসীন হয় পড়ার টেবিলে
সামনেই পড়ে থাকে স্টিলের স্কেল-
মা-বাবার পিঠ চুলকে দেন।
এই বাসার বয়ঃসন্ধিকালের আপু মহল্লার সকল উঠতি ছেলের প্রেমিকা।
যে যার মতো টিচ করতে বাধা নেই,
খুঁজে বার করে রেলিংয়ে লুকানো আন্ডারওয়্যার আর অন্তর্বাস।
তারপর!
তারপর ভয়ে ভয়ে ঢুকে যাব সুশীল সমাবেশে
আলোর স্তিমিত শব্দের সঙ্গে যেখানে মিশে থাকে অভিনয় দক্ষতা
এখানে বেশীক্ষণ টেকা যাবেনা
এদের জীবনাচরণ আমাদের বোধের বাইরে
তাদের হাগা-মুতা-প্রেম সবই নাকি আর্ট!
এমন প্রলেপ জীবনে আর যাইহোক কাব্য করা যায়না.
তারপর!
তারপর ফিরে আসবো আমার শীতলক্ষ্যার পাড়ে
সোয়াই বাইদ্যানীর মাজা দেখে কাটিয়ে দেব অর্ধনিমিত এই রাত।
সমস্ত উৎকট গন্ধ মাখা জঙ্ঘা আর উরুর হিসেব কষা নির্লজ্জ কবিকে বসিয়ে দেব নৌকার গলুইয়ে,
দেখুন মহাকবি!
প্রেম কাহাকে বলে!
এই সেই মেয়ে।
যার কাছে তুচ্ছ হেলেন,নার্গিস, মমতাজরা।
এমন নির্মোহ চোখ আর ঠোঁটের নড়াচড়া কোথায় দেখেছিলেন শেষবার!
কোথায় পেয়েছিলেন এই তুচ্ছ কাম।
এমন তো কতকিছুই চাওয়ার ছিলো
তোমার সমস্ত গন্ধ মেখে যখন আমার সৎকার মেনে নিলাম
অরণ্যবাস নিয়ে হারিয়ে গেলাম কোথা থেকে কোথায়?
উপনিবেশ ছেড়ে চলে এলাম তোমার লোকালয়ে
নীলাভ্র আকাশ ছুটি দিয়ে শেষতক মন দিলাম চোখে
যদি ভালোবেসে ফেলো কোনওদিন এই অভিপ্রায়ে।
কোনও পূর্ণিমায় যদি জড়তাগ্রস্ত হও-
মুখ ফুটে বলে ফেলো ভালোবাসি
আলোর চিমনি ভেঙ্গে ছড়িয়ে দিতাম মুগ্ধতা
হৃদয় বিছিয়ে বলতাম ‘হেঁটে যাও’
এই তো অকাঙ্খা ছিলো।
এই তো চাওয়ার ছিলো শুধু
কোনও মেঘ সন্ধ্যায় ভিজে জবজব শরীর বেয়ে নেমে যাবে জল
দুয়ারে দাঁড়িয়ে শাড়ীর আচলে ঢেকে নিবো মুখ,
চিবুক গড়ানো জল ধরে ব্রীড়া ভাঙ্গবে
উল্টোমুখ করে বলবে ‘ভালোবাসি ‘
এমন তো কতকিছুই চাওয়ার ছিলো
অথচ,দ্যাখো!
অনতিক্রম্য সব প্রেম ঠেলে যখন কাছে এলাম শেষে
উড়ে গেলে দূরে, ঢেউয়ে,
নিরুদ্দেশ পথযাত্রায় রেখে গেলে পায়ের ছাপ
কিছু অস্পষ্ট শব্দ আর অস্পৃশ্য বাক্যালাপ
নতুন আঙিনায় ওঠে গেছো বুঝি!
আলপনা আঁকা উঠোনে হেঁটে চলো ধীর,
একপিঠ চুল নিয়ে এখনও কি পুকুরে যাও!
তার সাথে উঠে এসো আনন্দ ধীরস্থীর।