Author Picture

এই তো সময় শস্য বোনার

আলী রীয়াজ

আসুন, তা হলে বুনতে থাকি,
শুরু হোক
আজই তবে শুরু হোক,
এই তো শস্য বোনার সময়,
আদিগন্ত বিস্তৃত এই মাঠে আসুন আমরা বুনি শস্যের দানা
বুনি যতটুকু আমাদের প্রয়োজন
বুনে দিই আমাদের ভবিষ্যৎ।

অনেকটা সময় গেলো
হেলাফেলা,
অনেকটা সময় গেলো
এই ভেবে কী বুনবো
এইটুকু নিস্ফলা জমিতে;
এই কালে কী আর বোনার আছে
ভেবে গেছে গতকাল;
এই কী বোনার সময়?
সেই নিয়ে আলোচনা নিয়ে গেছে কতটা সময়;
কিছুটা সময় গেলো এই ভেবে
কাকে কাকে সাথে নেবো এই রুদ্র দুপুরে;
এই সব ভেবে ভেবে আমাদের হয় নি বোনা
যা দেবে শস্য আর আমাদের সোনালী ফসল।
কিছু কিছু বীজ বুঝি পোকা-কীটে নষ্ট হয়েছে,
আসুন, বেছেই তুলি যা কিছু দরকার।

তা হলে যে সেইবার
তোমরা সবাই মিলে বুনেছিলে শস্যের দানা,
মনে পড়ে?
বীজগুলো, চারাগুলো সারি সারি বুনেছিলে মাটিতে;
সোনালী শস্য হবে এই ছিলো আমাদের আকাক্সক্ষা;
আমাদের স্বপ্নগুলো ভেবেছি জলের ধারা
ভেবেছি শস্যের দানায় বুঝি ঢেলে দিচ্ছি প্রাণ
যেন তারা রুক্ষ্ম মাটি ভেদ করে হবে উর্ধ্বমুখি,
যেন অনাবৃষ্টি শেষ করে নামবে বর্ষন।

আমাদের সেই শস্য কবে কারা নিয়ে গেছে?
কারা তবে পাকা ধানে মই দিয়ে নষ্ট করেছে সব?

কারা যেন আগাছার মতো করে বুনেছিলো তীব্র ঘৃনার বীজ
তাঁদের চিনি নি;
আমাদের ভালোবাসার বিশাল শস্য ক্ষেত থেকে উধাও করেছে প্রাণ
কারা যেন সংহারের বিষ ঢেলে এই জমি নিস্ফলা করেছে।
আমাদের জানা আছে,
আমাদের মনে আছে,
বিস্মৃত হই নি কিছুই,
মনে আছে, মনে আছে।

স্মৃতিরা এখনো ডাকে;
এখন এই নিস্ফলা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে আছি,
এখন আবার খরা,
আগাছায় ঢেকে গেছে এই শস্য ক্ষেত।
কৃষকের বুকচেরা হাহাকার নিশব্দে বিলীন;
কে কাকে শোনাবে এই ব্যর্থতার করুন রোদন?

তবু দেখি কয়েকটি তরুণ বুঝি
যৌবনের আতিশয্যে
জমি মাপে
জলের উৎস খোঁজে;
তাকায় এদিক সেদিক।
অবিশ্বাসী চোখে ভাবে- এইখানে? এইখানে?
এই পোড়া মাটিতে একদিন ফসলের সম্ভাবনা তুলেছিলো মাথা!
আহা!

নিস্ফলা জমি, রুক্ষ্ম মাটি, বৃষ্টিহীন নির্মম আকাশ
তবু আজ কারা যেন আশায় বেধেছে বুক
এ জমিতেই একদিন ফসলের সম্ভার ছিল শুনেছে সে পূর্বসুরীর কাছে
দেখেছে সে একদিন এইখানে কারা যেন বুনেছিলো স্বপ্নের বীজ;
আজ তাঁরা অপেক্ষায়।

তা হলে আসুন
এই সব অনভিজ্ঞ কৃষকের সাথে মেলাই আমার পা
তাঁদের সঙ্গেই যাই জলের উৎসের খোঁজে;
যতটুকু বীজ আছে
কীট ও মাকড়কে পরাজিত করে যতটুকু আছে আজো আমাদের সঞ্চয়ে
ভাগ করে সকলেই বুনে দিই
এই চেনা পোড়ার মাটিতে।

এই তো শস্য বোনার সময়
যখন রাখবার কাঁধ আছে,
ধরবার হাত আছে,
তারুণ্যের স্পৃহা আছে,
ঔদ্ধত্যের শক্তি আছে;
হালের ফলারা হয়েছে তীক্ষ্ম,
মুখোশের আড়াল থেকে বেড়িয়েছে সংহারী মুখ
যখন চিনেছি কারা
একদিন আমাদের ফসলী জমিতে রুয়ে
দিয়েছিলো আগাছার ঝাড়।
আসুন, তা হলে বুনতে থাকি,
শুরু হোক
আজই তবে শুরু হোক।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!