Author Picture

মেসিডোনিয়ার বাকতাসী সুফি সম্প্রদায়ের বৃত্তান্ত

মঈনুস সুলতান

বাকতাসী সুফি সম্প্রদায়ের বিস্তার দুনিয়া জোড়া না হলেও তুরস্কের আনাতোলিয়া অথবা ইস্তামবুল থেকে বলকান অঞ্চলের নানা দেশ তথা কসবো, আলবেনিয়া কিংম্বা মেসিডোনিয়াতে এদের বেশ কিছু ‘তাকে’ বা জিকির-আজকারের খানকা দেখতে পাওয়া যায়। আমি মেসিডোনিয়ার মুসলিম অধ্যুসিত তাতোভে শহরে এসে এরূপ একটি তাকে’র তালাশ পেয়ে সেখানে তপজপরত দরবেশ সম্প্রদায় এবং তাদের মুর্শিদ বাবা এদমনদীর সাথে মোলাকাতে উৎসাহী হই। তাতোভে শহরটির ‘জামিয়ায়ে এলারমে’ বা শত চারেক বছরের পুরানো একটি অটোমান আমলের চিত্রিত মসজিদের জন্য বলকান অঞ্চলে রীতিমতো খ্যাতি আছে। এখানকার মুসলমান সম্প্রদায় মেহমানদারীর জন্যও মশহুর। একজন ফেজ টুপি পরা মুফতি এ অঞ্চলের পচানব্বইটি মসজিদের তদারক করেন। ‘মুফতিনী’ বলে পরিচিত তার দফতরে হামেশা লেগে আছে ইমাম, মোয়াজ্জ্বিন ও মোতাওয়াল্লীদের ভরপুর মাইফেল। আমার মতো বিনা নোটিশে আগত বেগানা মুসাফিরকে মোহতারেম মুফতি রীতিমতো সমাজত করে তাঁর ইজমিরি গলিচায় মোড়া দফতরে বসান। কড়া ধাচের তুর্কি কফির সাথে শিকে গাঁথা ভেড়ীর মাংশের ‘চেবাব’ খেতে খেতে আমি বাকতাসী সুফিদের প্রসঙ্গ তুলি। ফেজ টুপির টাসেল দুলিয়ে তাদের সাথে যে তাঁর মাজহাবগত ব্যবধান আছে, তা জানান। তবে তিনি সাথে সাথে বাকতাসী সম্প্রদায়ের এক তরুণী ‘আশেক’ শাবানী সিদাতকে টেলিফোনে এত্তেলা দিয়ে আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

শাবানী সিদাতের পূর্বপুরুষরা ছিলেন তাতোভের বাকতাসী তাকে’র খেদমতগার। অটোমান সম্রাজ্যের বিলোপ হয়ে কালে কালে তাতোভে শহর সমাজতান্ত্রিক যুগশ্লাভিয়ার মেসিডোনিয়া অংঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত হলে- বাকতাসী তাকে’র লাখেরাজ জমিজিরতের অটোমানী ওয়াকফনামা বাতিল হয়। ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তাকে’তে বাসরত দরবেশদের দাড়িগোঁফ চেঁছে হাজতে পুরেন। জিকির-আজকারের জন্য যুগে যুগে ব্যবহৃত ইমারতগুলোতে খোলা হয় রেস্তোরাঁ, এবং ফোয়ারার বাঁধানো চত্তরে ইন্তেজাম হয় চন্দ্রিমা রাতে বারোয়ারি ডিসকো নাচের।

শাবানী সিদাত যখন ইস্কুল পড়–য়া কিশোরী তখন সমাজতান্ত্রিক জামানার বদল হয়। তার পিতামাতা তাকে ইস্তামবুল পাঠান, ঠিকঠাক মতো মখরেজ আদায় করে কোরান শরীফের ক্বেরাত শেখার জন্য। আলবেনিয়ার তিরানা শহর থেকে এদমনদী বাবা বলে এক সুফি এসে অটোমান জামানার ওয়াকফের ক্লেইম্ করে আবার আবাদ করেন তাতোভের দরবেশী ‘তাকে’।
শাবানী সিদাত মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়াতে ফেকাল্টি অব ইসলামিক স্টাডিজে অটোমান আমলের ওয়াকফ করা লাখেরাজ সম্পত্তির উপর পার্ট-টাইম গবেষণা করছে। তার কাছ থেকে আমি বাকতাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু বেসিক ইনফরমেশন জেনে নেই। এ সম্প্রদায়ের উপরের স্থরে পৌঁছতে হলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য ওয়াদা করতে হয়। এদের আচার-আচরণের দু’টি ধারা; একটি ‘জাহেরি’ বা প্রকাশ্য, অন্যটি ‘বাতেনি’ বা কেবলমাত্র উচ্চস্থরের আমলদার দরবেশদের জন্য নির্ধারিত। একজন ভক্ত ঐশী প্রেমে মশগুল হয়ে প্রাথমিকভাবে ‘আশেক’ হিসাবে জিকির-আজকারে লিপ্ত হতে পারেন। তারপর তিনি আধ্যাত্মিক আমলের জোরে পৌঁছবেন ‘মুহিবের’ স্থরে। মুহিবের পরবর্তী পর্যায় হচ্ছে ‘দরবেশ’। দরবেশরাও কালে কালে বিবর্র্তীত হয়ে বুজুর্গ হালতে পরিণত হন ‘দরবেশ-মাঝারালে’। এর পরবর্তী স্থর হচ্ছে ‘হালিফা’ যারা বাকতাসী সমাজে ‘বাবা’ বলে পরিচিত।

বাকতাসী দরবেশদের সান্নিধ্যে

আচরণে শাবানী সিদাতের সৌজন্য অশেষ। বিস্তর সময় নিয়ে সে আমাকে বাকতাসীদের মূল দর্শন ‘ভাহদেহ-ই-ভুকুদ’ বা কনসাসনেস্ অব্ ইউনিভারসেল ইউনিটির (বিশ্ব ঐক্যের সচেতনতাবোধ) ওপর তালিম দেয়। গায়ে সুচারু শাল জড়িয়ে অত্যন্ত শালীনভাবে সজ্জিতা এ তরুণী তার আংগুলের দীর্ঘ কৃত্রিম নখে আঁকা সিন্ধু ঘোটক ও শঙ্খের মিনিয়েচার চিত্র খুঁটতে খুঁটতে বাকতাসীদের আচার-বিচার রীতি-রিচ্যুয়েলের বর্ণনা করে। তার ভাষ্য মোতাবেক ‘আশেক-মুহিবদে’র হাম্মামে অবগাহন, ঘূর্ণয়মান দরবেশদের সান্ধ্যকালীন জিকির-আজকার, অথবা ইমাম হজরত আলীর (রাঃ) জন্মদিন ‘সুলতানে নবরোজ ’ পালন সবই বাকতাসীদের নিত্য করনীয় রিচ্যুয়েলের অন্তর্গত। তবে, এসব রিচ্যুয়েলের সাথে ‘হক’ বা ঐশী সত্যের সম্পর্ক হচ্ছে অনেকটা ছায়ার সাথে রোদের সম্পর্কের মতোই। বাকতাসীরা রব্বুল আল আমিনের বরকতে অবগাহন করে যেতে চায় ‘নূর’ বা আলোর প্রতীক রোদের দিকে।

আমার সাথে কথা বলতে বলতে শাবানী গলার চেইন থেকে একটি লকেট খুলে অত্যন্ত তাজিমের সাথে তাতে চুম্বন করে। সচ্চ কাচ বসানো লকেটটি দেখতে অনেকটা ডিব্বার মতো- তাতে সরসর করে নড়াচড়া করে কিছু বালুকা ও কাঁকর। আমি কৌতূহলী হলে সে আমাকে বলে যে, ডিব্বাটি ‘মোহর’ বলে পরিচিত, তাতে পোরা আছে মদিনা মনোয়ারার পবিত্র মৃত্তিকা। বাকতাসী সম্প্রদায়ে ‘আশিক’ রূপে গৃহিত হওয়ার পর থেকে সে গলায় এ লকেটটি ধারণ করছে। আমি বাকতাসী ‘তাকে’ পরিদর্শন ও বাবা এদমনদীর সাথে মোলাকাত করতে চাইলে- সে এক টুকরা কাগজে ওখানে যাওয়ার মানচিত্র এঁকে দিয়ে বলে,‘বাবা যখন তিরানা থেকে এসে এ তাকে আবাদ করেন, তখন আমাদের বড় মুসিবত গেছে। হানাফী সম্প্রদায়ের কিছু আলেম আমাদের আচার-আচরণকে শিরক-বেদাত বলে বাবাকে এক ঘরে করেন। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, বাবা ও তাঁর অনুগামী দরবেশরা দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাচ্ছেন, কোন দোকানদার তাদের কাছে কিছু বিক্রি করার সহস পেতো না। আমরা লুকিয়ে চুরিয়ে রাতের বেলা তাকে-তে রুটি পৌঁছে দিতাম। বর্তমান মুফতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। তিনি চান না যে, বাকতাসীদের নিজস্ব মাজহাবী আচরণের জন্য যেন তাদের উপর কোন সামাজিক জুলুম হয়।” আমি বিকালবেলা তাকে-তে  আসবো বলে শাবানীকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নেই।

তাতোভে শহরের প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে সার-প্লানিনা পাহাড়ের ঢেউ খেলানো ফুটহিলস্। দীর্ঘ ঘাসে ছাওয়া ছোট-বড় সব পাহাড়ের পাশে চতুষ্কোণ একখন্ড দেয়ালঘেরা প্রশস্থ জমিতে বাকতাসী তাকে-র অবস্থান। আমি বেলাবেলী নির্জন দোতালা দেউড়ি পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। দু’পাশে কাঠের ঝুলবারান্দা যুক্ত অত্যন্ত পুরাণো দু’টি ঘরের খোপ খোপ কামরায় চিরকুমার দরবেশদের মকতোছর বাসস্থান। নিচতলার জমায়েতের বৃহৎ হলকক্ষে সমাজতান্ত্রিক জামানায় তৈরী হয়েছিল পান ভোজনের রেস্তোরাঁ কাম বার যা বর্তমানে বিরাণ। নির্জন এ চত্তরে দাঁড়িয়ে এক ধরণের অস্বস্থি হয়, ঠিক বুঝতে পারি না ‘কী ভাবে এখানে এদমনদী বাবার তালাশ পাবো? বাগানে ঘাসপাতা ও গাছবৃক্ষে স্পষ্টত যত্নের অভাব। আমি এক’পা দু’পা করে খানিক এদিক ওদিক হাঁটি। পাঁচিল পেরিয়ে শহরের ‘হলি ভার্জিন চার্চে’র বাইজেনটাইনী স্থাপত্যে তৈরী ক্রুশঅলা চূড়া যেন সাঁতার কাটে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘে। তার চেয়ে খানিক দূরে পাহাড়ের ঢালে বিগত জামানার আটোমান শাসক রজব পাশার হেরেমের ভগ্ন¯তূপও সেঁটে আছে দিগন্তে। ওখানে দাঁড়িয়ে আমি খানিক দিশেহারা বোধ করি।

অবশেষে শাবানী সিদাতের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। সে বসে আছে নিষ্পত্র এক অতি পুরানো বৃক্ষের নিচে- রঙ জ্বলে সময়ে ক্ষয়ে যাওয়া কালচে পাথরের বেঞ্চে। আমি তার সামনে এসে দাঁড়াই, আমাকে দেখেও সে নির্বাকই থেকে যায়। আমাকে চিনতে পেরেছে কি না ঠিক বুঝতে পারি না। তরুণীটি যেন ভিন্ন এক মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। সে নির্লিপ্তভাবে বৃহৎ সুঁচ দিয়ে কার্ডবোর্ডে রেশমি সুতার নকশা করে। বোর্ডে বড় থেকে ছোট হয়ে আসা বারটি গোলাকার আয়না গঁদ দিয়ে আটকানো। নীরবতা আমাকে রীতিমতো পীড়া দেয়, তাই উদ্যোগি হয়ে জানতে চাই, ‘আয়নাগুলোর কোন প্রতীকি মূল্য আছে কি শাবানী?’ সে নত চোখে স্বগতোক্তির মতো বলে,‘ এমব্রোডারীটি আমি তৈরী করছি বারো ইমামের স্মৃতিতে।’ বলেই আবার সে ফিরে যায় নীরবতায়। আমি দাঁড়িয়ে থেকে তার পাশে ঝরে পড়া হলুদ পাতা দেখি। নিষ্পত্র বৃক্ষের শাখায় শাখায় ঝুলছে ছোটবড় নানা বর্ণের রুমাল। কোন কোন রুমালে সলমা চুমকি দিয়ে সাঁটা চাঁদ ও নক্ষত্র। একটি কালো রুমালে জরি দিয়ে আঁকা গড়ানো অশ্রুবিন্দুর মতো রূপালি ফুটকি। আমি আবার রুমালের বৃত্তান্ত জানার জন্য প্রশ্ন করি। সে চোখ তুলে তাকায়, তার অভিব্যক্তিতে ফুটে খাঁচায় পোরা পাখির বিষাদ; তার মন যেন উড়ে বেড়াচ্ছে বলকান থেকে বহুদূরের ভিন্ন কোন উপত্যকায়। সে লকেট থেকে মোহর খুলে নিয়ে তাতে চুম্বন করে নতমুখে বলে,‘তাকে-তে অনেকেই আসে, কিন্ত তারা অন্দর ইস্তক যেতে চায় না;তাদের কেউ কেউ মনষ্কামনা পূরণের প্রত্যাশায় এ রুমালগুলি ঝুলিয়ে দেয় রজব পাশার নিজ হাতে লাগানো গাছের ডালে।’ আমি আরো কিছুক্ষণ বাক্যালাপে অনিচ্চুক এ নারীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। সে সুঁচি-কাজ শেষ করে আয়না বসানো বোর্ডটি ঝুলিয়ে দেয় গাছের নিষ্পত্র ডালে। যে আলোকের প্রতি বাকতাসীদের যাত্রা, তার বৈকালিক রশ্মি এসে আরশিগুলোকে করে তুলে সূর্যময় রঙীন। শাবানী সিদাত প্রতিফলনের রেণু মেখে দুচোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাক। আমি তার আধ্যাত্মিক নির্জনতায় প্রতিবন্ধক হতে চাই না, তাই সরে আসি নীরবে।

দরবারে সামাহেইন

চত্তরের এদিক ওদিক আরো খানিক হাঁটাহাঁটি করে নিজেকে বড় অনাহুত মনে হয়। তাকে ছেড়ে ফিরে যাবো কি নিজের ডেরায়? কিন্তু এখানে এসে অপরাধ তো কিছু করিনি? আমার আগমন অনভিপ্রেত হলে শাবানী সিদাত আমাকে নিষেধ করলেই পারতো। তাকে-র ভেতরবাগ থেকে ‘বাসলামা’ বলে একটি যন্ত্রের সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসে। ইচ্ছা হয় ওদিক পানে অগ্রসর হই। ঠিক তখনই দেখি, ছোট্ট এক হরিণের বাচ্চা ঘাস খেতে খেতে আমার দিকে আসছে। মৃগশিশুটি কান খাড়া করে বাতাস শুঁকে। তার পিটে এসে বসে সবুজে রূপালি ফুটকি তোলা এক প্রজাপতি। অন্য একটি প্রজাপতি এসে তার শিং এর উপর উড্ডীন হলে পিটে বসা প্রজাপতি উড়ে যায় তার সান্নিধ্যে। বাচ্চা হরিণটি ঘাস খেতে খেতে চলে আসে জলের বাঁধানো চৌবাচ্চার কাছে।

ওখানে আবার শাবানী সিদাতের দেখা পাওয়া যায়। সে বসে আছে গোলাকার একটি বৃহৎ পাথরের উপর; হাতে তার খোলা একটি কিতাব। তার দু’পা ডুবে আছে দীর্ঘ হরিৎ ঘাসে। সে কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে ভেসে আসা ‘বাসলামা’ যন্ত্রের ধ্বনি শুনে। তারপর কিতাব খুলে দিগন্তের দিকে তাকালে তার জাফরানী বর্ণের স্কার্ফে জড়ানো মুখমন্ডল ভরে উঠে বিকালের মায়াবী আলোয়। এখানে জলাশয়ের জল মরমী মানুষের মনের মতোই সচ্চ; তাতে সাঁতরে বেড়ায় লোহিতে হরিৎ মিশ্রিত কয়েকটি মীন। শিশু হরিণটিও এসে দাঁড়িয়েছে চৌবাচ্চার পাশে। ঠিক তখনই শাবানী ‘বাসলামা’র ধ্বনীর সাথে সুর মিলিয়ে মৃদু স্বরে গেয়ে উঠে সুফি গজল। আমি খেয়াল করে শুনি। এ গজলটি আনখা কিছু না। এ ধরণের গজল আমি আগে অনেকবার কাবুলের সুফি খানকা অথবা ইস্তামবুলের বসফরাস তীরবর্র্তী মৌলোভী তরিকার ঘূর্ণয়মান দরবেশদের মাইফেলে শুনেছি। এ পিসটি সম্ভবত মৌলানা জালাল উদ্দীন রুমীর ‘দিওয়ানে শামস’ যা সমুজদার মহলে ‘দিওয়ানে কবীর’ বলে পরিচিত, তা থেকে চয়ণ করা। আমি তার গজলের ভাবার্থের দিকে মন ফেরাই। সে গেয়ে যায়:
জ্যোতিতে তোমার ভালোবাসার দীপ্ত সবক,সৌন্দর্যের ছটায় যুক্ত হয় যে কসিদায়- রূপের তবক।সমাজের অগোচরে-নৃত্যরত তুমি- আমারই বক্ষে,পোড়া চক্ষে -জড়ায় রূপময় অনুভব, জ্যোতিতে তোমার খুঁজি যে আবারআঁধারের অবয়ব।

আমি মেসিডোনিয়ার এক তরুণীর কন্ঠে গীত মওলানা রুমীর গজলের চরণগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকি জলের দিকে। জলতলে ঝলমল করে অনেকগুলো রূপালি কয়েন। মৃগশিশুটি এবার জলে দু’পা নামিয়ে তাকিয়ে আছে রঙীন মাছের দিকে। তার পিটে উপর যুগলে খুনসুটি করে দু’টি প্রজাপতি। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি- সামনের গোলাকার পাথরটি খালি। শাবানী যেন জাদুবলে উবে গেছে কোন এক রহস্যময় যবনিকার অন্তরালে। দূরে কোথা থেকে ‘কুদুম’ বলে এক ধরণের ড্রামের রিদমিক ধ্বনি ভেসে আসে। মনে হয় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অদৃশ্য সব দরবেশরা তোড়জোড় করে অজানা কোন সত্যের সন্ধানে সফরের উদযোগ করছেন। আমি তাদের কাফেলায় শরীক হতে না পেরে বিষন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।

অবশেষে শাবানী সিদাতের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। সে বসে আছে নিষ্পত্র এক অতি পুরানো বৃক্ষের নিচে- রঙ জ্বলে সময়ে ক্ষয়ে যাওয়া কালচে পাথরের বেঞ্চে। আমি তার সামনে এসে দাঁড়াই, আমাকে দেখেও সে নির্বাকই থেকে যায়। আমাকে চিনতে পেরেছে কি না ঠিক বুঝতে পারি না। তরুণীটি যেন ভিন্ন এক মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। সে নির্লিপ্তভাবে বৃহৎ সুঁচ দিয়ে কার্ডবোর্ডে রেশমি সুতার নকশা করে। বোর্ডে বড় থেকে ছোট হয়ে আসা বারটি গোলাকার আয়না গঁদ দিয়ে আটকানো।

বেশ খানিক্ষণ নিঃসঙ্গ শূণ্যতার পর আমার নসীব প্রসন্ন হয়। এক জন দরবেশ লৌহ নির্মিত দীর্ঘ ‘আশা’ বা লাঠি হাতে আমার দিকে এগিয়ে এসে মোসাফা করেন। বয়োবৃদ্ধ এ দরবেশ-মাঝারালে’র মুখে কিংবদন্তীর সাধুসন্তের মতো দীর্ঘ সফেদ শশ্রু। আমি দূর দেশ থেকে এসেছি শুনে তিনি ‘মেরহাবা মেরহাবা’ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জলে চুবিয়ে দেন তাঁর ‘আশা’টি। দীর্ঘ এ ধাতব যষ্টির শেষ প্রান্তে বোধকরি লাগানো আছে এক খন্ড ভারী চুম্বক। আমি অবাক হয়ে দেখি- জলতলে ছড়িয়ে থাকা সব রূপালী কয়েন ক্রমশঃ ছুটে এসে জড়িয়ে যাচ্ছে আশা’র শেষ প্রান্তে। দরবেশ আশা দিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে কয়েনগুলো জড়ো করে উপরে তুলে সেগুলো খুলে রাখেন একটি ঝুড়িতে।

দরবেশের সাথে আমি অতঃপর চলে আসি তাকে-র ভেতরবাগে। এখানে ধূসর বেলেপাথরে তৈরী একটি নতিবৃহৎ গৃহের তুর্কী স্থাপত্য আমাকে আকর্ষণ করে। ঘরটির চালে উপুড় করা সালুনের বাটির মতো পর পর সাতটি ছোট গুম্বুজ। আমরা সিঁড়ি বেয়ে চলে আসি বেশ নিচে। দরবেশ দিয়াশলাই দিয়ে দেয়ালগিরির দু’টি মোমে আগুন দিলেÑ আমি খনিজ জলে টইটুম্বুর সবুজ টাইলসে তৈরী হাম্মাম দেখতে পাই। দরবেশ ভাজ করা ড্রেসিংগাউনের মতো একটি জোব্বা ও তোয়ালে দেখিয়ে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে যান উপরে। আমি অনেক্ষণ ধরে ধোঁয়া উঠা উষ্ণ জলে অবগাহন করি। তারপর তোয়ালে দিয়ে শরীর শুকিয়ে জোব্বা পরে উঠে আসি উপরে।

দরবেশকে পাওয়া যায় হরেক বর্ণের অজস্র গোলাপে ভরপুর এক বাগিচার ভেতর। তিনি একাকী দাঁড়িয়ে তসবি টিপছেন। বাগিচায় অনেকগুলো কবর। একপাশে কাচের দেয়াল ঘেরা গার্ডেন হাউস। তিনি আমাকে নিয়ে গার্ডেন হাউসে এসে বসেন। ওখানে রীতিমতো মেহমানদারীর আয়োজন। পাথরের রেকাবিতে করে পরিবেশিত হয় ‘বারাক’ বলে এক ধরণের পনির দেয়া রুটি ও দইয়ের শরবত। আমি জলখাবার খেতে খেতে গার্ডেন হাউসের দেয়ালে দেখি পার্সি মিনিওতোর কেতায় আঁকা হাজী বাকতাসী ভেলীর চিত্র। বাকতাসী সুফি সম্প্রদায়ের এ প্রতিষ্ঠাতা ছবিতে মোরাকাবার মরমী আবেশে মশগুল হয়ে আছেন। তাঁর চিত্রের পাশের শোকেসে ডিসপ্লে করা সুফি কবি দুদে এফেনদি, ইউনুস ইমরি ও বালিম সুলতানের হাতে লেখা শের, কসিদা ও গজলের গ্রন্থ। আমি উঠে গিয়ে কেতাবগুলোর হাশিয়ায় আঁকা শত বৎসরের প্রচীন চিত্রাদি দেখি। একটু অবাক হই, মৌলানা জালাল উদ্দীন রুমীর কোন গ্রন্থ দেখতে না পেয়ে!

আমি যখন চিত্রগুলো খুঁটিয়ে দেখছি ঠিক তখন বাবা এদমনদী কোন প্রকার জানান না দিয়ে সহসা চলে আসেন গার্ডেন হাউসে। বয়স তাঁর দরবেশ-মাঝারালের চেয়ে অনেক কম। তিনি দীর্ঘ আঙরাখার সাথে পরে আছেন ফেজের সবুজ টুপি। আমাকে জাপটে ধরে আলিঙ্গন করে একজন মুসাফিরকে উপহার দেয়ার জন্য তিনি শাবানী সিদাতের তারিফ করেন। আমি মনে মনে ভাবি, নারীটি উদাও হলো কোথায়? অতঃপর মনের ভাব অপ্রকাশ্য রেখে বাবা এদমনদীকে বাকতাসীদের সম্পর্কে আমাকে বেসিক আইডিয়া দিতে আরজ করি। তিনি জানান যে, খোরাসানের এ দার্শনিকের জন্ম নিসাবুর বলে একটি গ্রামে দ্বাদশ শতকের প্রারম্ভে। কবিতা ও গণিত শাস্ত্রে যুগপৎ দক্ষ এ দরবেশ কৈশরে বাবা ইলিয়াস খোরাসানীর কলন্দরীয়া তরিকার আধ্যাত্মিক প্রেরণায় উজ্জীবিত হন। পরে জাজিরাতুল আরব ও ব্যবিলন সফর শেষে তিনি তুরস্কের আনাতোলিয়ায় গড়ে তুলেন জিকির-আজকারের তাকে। সেন্ট্রেল আনাতোলিয়ায় যেখানে তাঁর দরগার অবস্থান, সেখানে কালে কালে গড়ে উঠে ‘হাজি-বাকতাস’ বলে একটি শহর। তিনি তাঁর মুরিদানকে উৎসাহিত করতেন সত্যের অনুসন্ধানে। এ তরিকার মূল নীতিগুলোর প্রধান হচ্ছে; ‘আঘাত প্রাপ্ত হলেও কাউকে করো না আঘাত। বিষোদগার করো না কোন ব্যক্তি বা জাতির বিরুদ্ধে। সচেতন হও তোমার কর্মের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে, এবং সংযত করো জিহ্বা ও ইন্দ্রিয়জাত কামনা-বাসনা।’

বাকতাসী দরবেশদের সান্নিধ্যে

বাবা এদমনদী এবার আমাকে নিয়ে বেরোন গোলাপের বাগান দেখাতে। বাগিচাটি ‘হাদিকায়ে সয়েদা’ বা ‘বাগে-এ-দরবেশ’ বলে পরিচিত। এ বাগানে সমাহিত হয়েছেন বিগত জামানার অনেক মুহিব ও দরবেশ। গোলাপের চারাগুলোও তাঁদের লাগানো; যাতে তাঁদের নশ্বর দেহ ও অস্থি মজ্জা ক্রমাগত যুগিয়ে যাচ্ছে উর্বরতা। বাগিচার প্রান্তে পুরানো দিনের টালিতে ছাওয়া সাদামাটা একটি গৃহ। আমরা তাতে প্রবেশ করি। গিলাফ মোড়া সারিবদ্ধ ক’টি কবর। এখানে শেষ শয্যায় শায়িত আছেন গুজরে যাওয়া দিনের বেশ ক’জন ‘হালিফা’। তাদের শিয়রে রাখা সবুজ বর্ণের ফেজ টুপি। বাবা হারিবাতি ও বাবা তাহির এমিনির কবরের ঠিক পেছনে অটোমান শাসক রজব পাশার কবর। দেয়ালে তার তৈলচিত্রের নিচে রাখা এ তাকে-র ওয়াকফের দলিল।

জিয়ারত শেষ হলে পর আমরা আবার গোলাপের বাগিচায় এসে দাঁড়াই। বয়োবৃদ্ধ দরবেশ-মাঝারাল একটি ছোট্ট শিশি থেকে ঢেলে আমার হাতে মাখিয়ে দেন এ বাগিচার পুষ্প নিঙড়ানো নির্যাস। আমি এদমনদী বাবা ও দরবেশের যুগলে ছবি তোলার ইজাজত পাই। ভিউ ফাইন্ডারে তাদের ফোকাস করতে করতে দেখি- গোধূলির আভায় রঙীন হয়ে উঠছে বাবা এদমনদীর সবুজ ফেজে গাঁথা রূপার মিনিওতোর শঙ্খ ও সিন্ধুঘোটক। এবার কৌতূহল দমিয়ে রাখা মুশকিল হয়। আমার সওয়ালের জবাবে বাবা জানান, ‘শঙ্খে কান লাগিয়ে দেখো- সমুদ্রের আভাস পাবে, কিন্তু শঙ্খ সমুদ্র নয়। দরিয়ায় পৌঁছতে হলে তোমাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পাহাড়, গিরিপথ ও উপত্যকা। তেম্নি সিন্ধুঘোটকও স্রষ্টার এক বিচিত্র সৃষ্টি; শুধু একবার ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবো- এ আজবতরো জন্তুর সৃজনের পিছনে রব্বুল আল আমিনের অভিষ্ট কী?’

খুব কাছাকাছি কোথাও এক সাথে ‘বাসলামা’ ও ‘কুদুম’ বেজে উঠলে- বাবা এদমনদী ও দরবেশ হন্তদন্ত হয়ে আমার সাথে মোসাফা করে চলে যান তাকে-র অন্দর মহলের দিকে। আমি বাগানে একা দাঁড়িয়ে থাকি। এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। খানিক বিভ্রান্ত লাগে। এবার যাই কোথায়? গোলাপ কুঞ্জের আবডালে পাথরের ফোয়ারায় বলকে উঠে ছলছলে জল। এক নারীর সুর করে কবিতা পাঠ, ঘাসে চরা বাচ্চা হরিণ ও অন্তিম শয়ণে প্রস্ফুটিত গোলাপের ইমেজ পাথরে আটকে পড়া ঝর্ণাধারার মতো মনের গহনে অনুরণন ছড়ায়। ফোয়ারার উপর চক্রাকারে উড়ে সবুজে রূপালি ফুটকি দেয়া প্রজাপতি যুগল। সহসা বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ম্রিয়মান হয়ে সমবেত কন্ঠে শোনা যায় ‘নাত-ই-শরীফ’। আমি এ আওয়াজের উৎস সন্ধান করে করে চলে আসি তাকে-র আরেক প্রান্তে।

অনেক্ষণ রুমাল ঝোলা নিষ্পত্র বৃক্ষের নিচে নির্জনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সামনে কাঠের তৈরী চারদিক খোলা ‘দরবারে-সামাহেইন’। বাদ-মাগরেবের পর অন্ধকার একটু গাঢ় হতেই ওখানে জড়ো হন জনা সাতেক দরবেশ। তোড়জোড় দেখে বুঝতে পারি, তারা সুফি তরিকার ‘সামা’ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাবা এদমনদী ‘হিরকা’ বলে একটি কালো জোব্বা পরে আছেন- যা মূলতঃ কবরের প্রতীক। তাঁকে ঘিরে অন্য দরবেশরা কাফনের মতো সাদা লেবাস পরে দাঁড়িয়ে আছেন চক্রাকারে। সকলের শিরে উটের চামড়ায় তৈরী ‘কুলাহ্’ বলে এক ধরনের টুপি যা টুম্বস্টোন্ বা কবর ফলকের কথা মনে করিয়ে দেয়। খুব কাছাকাছি বেজে উঠে ‘নে’ বলে খোরাসান অঞ্চলের বাঁশরী। দরবেশরা ডান হাতে আসমান ও বাঁ হাতে পৃথিবীর দিকে নিশানা করে বাহুদ্বয় উর্দ্ধে তুলে দাঁড়ান। ঠিক তখনই আবার শাবানী সিদাতের কন্ঠে গীত হয় রুমীর মসনবী। মনে হয়, সে দরবারে-সামাহেইনের কাছাকাছি কোন ঝরোকার অন্তরাল থেকে গেয়ে যাচ্ছে। তাকে চাক্ষুস করার কোন উপায় নেই। তবে অতীতে বহুবার রুমীর এ মসনবী শুনেছি; তাই এর সুরছন্দে লাগে চেনা গানের কলির মতো এক ধরনের মরমী আমেজ। সে গায়:

জেগে উঠি আজ- শংকিত
শূণ্য আমাদের মন
কাজ কী কেতাবখানায় অধ্যয়ণ;
তার চেয়ে এসো- তুলে নেই রূপালী এস্রাজ
যে ভালোবাসায় অবগাহন আমাদের
পরে নিয়ে তার রেশমী তাজ,

হাজারো পথের মোড়ে শংকিত যুগল মন-
সেজদারও আছে জেনো- হরেক প্রকরণ!

শাবানী সিদাতের কন্ঠস্বর নীরব হতেই-মসনবী ক্রমাগত বেজে চলে বাঁশরীর সুর মূর্চ্চনায়। সাথে সাথে দরবেশরা উদ্বাহু হয়ে বাবাকে ঘিরে ঘুরতে থাকেন চক্রাকারে। ক্রমশঃ তাদের ঘূর্ণনে বৃদ্ধি পায় গতিবেগ, মনে হয়, এক ঝাঁক গ্রহ যেন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে। খানিক পর শাবানী সিদাত আবার সরব হয়। এবার সে গাইছে মৌলানা রুমীর আরেকটি জনপ্রিয় মসনবী যার ভাবার্থ হচ্ছে:

এসো তুমি- ডাকছি আবার
এসো আমাদের কাফেলায় আজ
পৌত্তলিক! পরিচয়ে কিবা কাজ,
অগ্নি উপাসক,
না হয় হলেইবা তপস্বী বক!
নাহকে নিমজ্জিত হয়ে-
করেছো বুঝি হাজারো পাপ,
আর ওয়াদার বরখেলাফ।

কিছু যায় আসে না- এসো
এসো, দাওয়াত হেঁকে যাই
হরেক কিসিম মানুষের কাফেলায়
তোমারও হবে যে ঠাঁই।

শাবানী সিদাতের মৃদু কন্ঠস্বর তাকে-র শিলাময় দেয়ালে বাড়ি খেয়ে প্রতিধ্বনীর ডানায় উড়ে চলে সার-প্লানিনা পাহাড়ের দিকে। আমি রজব পাশার লাগানো নিষ্পত্র বৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে ঘূর্ণয়মান দরবেশদের দিকে তাকিয়ে ভাবি- তার দাওয়াতের অভীষ্ট কে?

 

 

আরো পড়তে পারেন

আগ্নেয়গিরি থেকে পায়ে হেঁটে বেস-ক্যাম্পে ফেরা

ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছে ‘অ্যারতে-আলে’ নামে লাভা উৎক্ষেপণে প্রজ্বলিত একটি আগ্নেয়গিরি। আমরা বেশ কয়েকজন পর্যটক আজ জোট বেঁধে, একটি ট্যুর কোম্পানির গাইডের তত্ত্বাবধানে ওই আগ্নেয়গিরির পাশের একটি লাভা-হ্রদের পাড়ে ক্যাম্পিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। ওখানে যেতে হলে প্রথমে একটি বেস-ক্যাম্পে এসে প্রস্তুতি নিয়ে ট্র্যাক করতে হয় ঘণ্টাকয়েক। বেস-ক্যাম্পে পৌঁছানোও ঝকমারি বিশেষ, আমরা ঘণ্টাকয়েক ল্যান্ডরাবারে প্রায়-দুর্গম এক….

মনে করি আসাম যাব

আফ্রিকার মাসাইমারা সাফারিতে যাওয়ার পর আর কোনো বড় সাফারিতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। অপর্না সেনের ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ সিনেমাতে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার চরিত্রে রাহুল বোসের মুখে কাজিরাঙার কথা শোনার পর এ রিজার্ভ ফরেস্টে সাফারি করার ইচ্ছা জেগেছিল। মনে হচ্ছিল বাড়ির খুব কাছের এ জায়গাটাতে যে কোনো সময়েই যাওয়া যায়, আমাদের উত্তর পূর্ব সীমান্ত পেরিয়ে আর….

শিল্পের দেশে সৌন্দর্যের দেশে

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভেনিসে পা রেখেছিলাম এক রৌদ্রোজ্জ্বল গ্রীষ্মের দুপুরে। যাত্রীবোঝাই পাবলিক বাসে চেপে যাত্রা করলাম সেন্ট মার্কোসের উদ্দেশে। সেন্ট মার্কোসে অবস্থিত বিখ্যাত স্থাপত্য ক্যাথেড্রাল। ক্যাথেড্রালের চারদিকের দেয়াল সুসজ্জিত কারুকার্যে খচিত। চিত্রকর্ম ও অক্ষরে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন কাহিনি মুগ্ধতা তৈরি করে। এখানেই ভেনিসের প্রাণভোমরা, সেই বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানেল যা যুক্ত করেছে শতাধিক জলরাশিকে। বিশাল খাল ভেনিসকে….

error: Content is protected !!