Author Picture

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

হোসনে আরা শাপলা

আলতু ব্যথা

কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল
পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু
হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া
এসবের বালাই ছিলো না কোন
শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা।

চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু
শত জনমের সুখ।
ওইসব স্বপ্নমাখা দিন
কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায়
তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।

 

তৃপ্তি

ভরসার হাত একটিই যথেষ্ট
যার হাতে হাত রেখে
স্বপ্ন বুনন অগণন
যাকে পেলে
আন্ধারেও চাঁদ দেখা যায়।

অতৃপ্ত চোখ
চোখ রাখে বহু চোখে
তৃষ্ণার জল খুঁজে ফেরে শুধু।

আমার ভুবন আমার মহল
আমার সুখ-দুখ,
আমার স্বপ্ন আমার মতোন।

আমি ভালো আছি
আমার সবটুকু নিয়ে।

 

প্রতিবিম্ব

ধু ধু কুয়াশার পথ
অস্পষ্ট গন্তব্য
তবুও তো পথ চলি তুমি আমি
গাঁজার নেশার ঘোরের মতো
তন্দ্রালো হলে
ভালো লাগে সব

জানি আমি দিনশেষে একা
তবুও তো ভরসার হাত খুঁজি কোনো
দুর্বোধ্য আয়নায়
প্রতিচ্ছবি দেখি আমারই,
ভীষণ অচেনা
নদীর ওপারের বালুচরের মতো।

মরীচিকা ফুরিয়ে গেলে
পথচলা থেমে যাবে আমারও
কষ্টকে ঘৃণা করা বৃথাই
দূর্বা ডগায় যে বিশ্বকে দেখি
আমারই হৃদয়ের প্রতিবিম্ব তা।

যদি দলছুট হই বুঝে নিও
ফুরিয়ে গেছে ভালোবাসা আমার
মৃত্যুর কাছাকাছি বসে
জীবনকে দেখেছি আমি
দুঃখরা গভীর শিকল হয়ে
লেগে আছে পায়ে।

এখানে নদীর চরের পাড়ে
সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে
আমারই জীবনের অস্তায়ন দেখি।

তবুও তো দুচোখ মেলে
দেখি চেয়ে চেয়ে
আমার ভালোবাসার মতো সুন্দর তুমি।

 

ধর্ষিত সময়

পুরনো কাপড় থেকে গন্ধ ভেসে আসে
ঘাতক প্রবৃত্তিগুলো
পুরাতন চিহ্ন গায়ে মেখে মূর্তমান হয়
রক্তের চিহ্নগুলো বহুদূর অতীতের সাথে
কোনো এক সংযোগ এঁকে দেয়

যখন চুপসানো রাত্রি
কুয়াশার পেটের ভেতর ঢুকে পড়ে সন্তর্পণে
বরফের পাথরের মতো চোখে
তখন আমার বড্ড ভীষণ একা লাগে।

ধর্ষিত গণতন্ত্রের যুবতীর পোয়াতি শরীর
নির্জন পথের মতো কেমন ফ্যাকাসে পড়ে রয়
সোল্লাস পাশবিকতার ঢেউ তবু
কানে এসে লাগে
অধিকার এনে দেবার গল্পের মতো।

তুষের অনল

ধীরে ধীরে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিনকে দিন
মুখে তুলে দিব অন্ন
কেমন করে
যতন করে রাখা সন্তানদের মুখে।

ঘরদোর চারিদিকে হায়েনার ছোবল
যেখানে রয়েছে তোমারই মৌনতা।

মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি চিনেছি
এই বুঝি চিনি না তোমায়
কী এমন আড়ালে রাখো
খুঁজে ফিরি বারবার।

এই বুঝি মনে হয় তুমি নও আমার
সারাবেলা সারাক্ষণ
বেলা অবেলায় সেই হতাশায়
শূন্য হই আমি বার বার।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

এরশাদ জাহান-এর একগুচ্ছ কাপলেট

কাপলেটগুচ্ছ:  ১. গোলাপ বলে ঠোঁট বাঁকিয়ে কে তোর আমি দেখাস দাবি! ভ্রমর শুধায়— প্রেমধর্মের কাবিননামায় খুঁজিস পাবি। ২. ভেসে চলার ক্লান্তি মুছতে তীরের কাছে ছুটল পানা; পৌঁছে দেখে— ভাঙতে ভাঙতে তীরেরই নেই ঠাঁই ঠিকানা! ৩. চোখের তিয়াস মিটিয়ে নিতে ঘুম চাইলাম রাতের কাছে, আঁধার বলল— নিদ্রাবিহীন রাত্রি নিজেই জেগে আছে! ৪. ধর্মকাবা মক্কা, কাশি, প্রেমের….

error: Content is protected !!