Author Picture

স্বর্ণবোয়াল

রোমেল রহমান

মোবারক তার কন্যার পাতে তরকারি তুলে দেয় আর বলে, আইজ কয় পদের মাছ খাইতেছ সেইটা খাবা আর বলবা মা! দেখি তুমি কেমুন মাছ চিনো! ময়না তার গোলগাল তামাটে মুখে একটা মধুর হাসি ফুটিয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠে এই প্রতিযোগিতায় নামার জন্য। যদিও পুরষ্কার ফুরষ্কারের কোন তোয়াক্কা নাই। খাবার সময় বাপবেটির এইসব ফুড়ুৎ-ফাড়ুৎ খেলা আজকাল নিয়মিত কারবার। মুখে সুরমা রঙের ব্যথা নিয়ে আসমা তার স্বামী আর কন্যার খেলা দেখতে দেখতে থালে ভাত বাড়ে। ময়না একটা মাছের পাখনা চুষে বলে, এইটা আব্বা রুই মাছ? মোবারক বল্ল, খাও খাও! খাইতে খাইতে কও, আমি মিলাইতেছি। মেয়ে ডাল দিয়ে ভাত মাখে কিন্তু খেতে ইচ্ছা হয় না। বাপ তার নিজের পাত থেকে একটা কানসা ভেঙে দিয়ে বলে, এইটা খায়া কও দিই মা কোন মাছ? মেয়ের গা ঘিনঘিন লাগে! সে অসহায় মুখে মায়ের দিকে তাকায়। তার মা আসমা নিজের পাত থেকে একগাল ভাত মেয়ের মুখে দিতে দিতে বলে, এইটা হইলো হাওয়া দিয়া মাখা ভাত! খায়া দ্যাখ মাছের থিকাও টেস! ময়নার মনে আনন্দ ঢেউ মারে আবার! সে কুটিকুটি হয়ে যায়, লবন দিয়ে মেখে দেওয়া ভাত মুখে দিয়ে। মোবারক চোখ মুছে দ্রুত একগাল ভাত মুখে পুরে বলে, আইজকা নাড়িভুড়ির মইধ্যে এট্টু মাছের কোনাকাঞ্চিও মিলে নাই!? সবখানে ভুয়া লাগছে! ময়না জিজ্ঞাস্ করে, মানুষের সমান মাছ আছে আব্বা? মোবারক তখন এক অতিকায় স্বর্ণবোয়ালের গল্প ফাঁদে। যেই বোয়ালের দেখা যদি কোন জাইল্ল্যা একবার পায় তার কপালে সোনা আর সোনা! তার জালে নদীর সব মাছ উঠবেই উঠবে! আর যদি কেউ সেই বোয়ালের পিঠে চড়তে পারে সাহস নিয়া! তাইলে স্বর্ণবোয়াল তারে এমুন এক দেশে নিয়া যায় যেইখানে খাইতে বস্লে আস্ত মাছ থালের উপর বিছায় দেয়া থাকে! ময়না বিস্ময় মাখা চোখে বলে, তুমি কি সেই বোয়াল দেখছ আব্বা? মোবারক ব্যথাতুর স্বরে বলে, নারে মা অহনো দেখি নাই! তয় মনে মনে খুঁজতেছি যদি তারে একবার পাই অম্নি এক লাফে পিঠে উইঠা ঘোড়ার মতন টগবগ টগবগ করতে করতে মাছের দ্যাশে গিয়া আমার আম্মার জন্য আস্ত মাছ নিয়া ফুড়ুৎ কইরা চইল্যা আসবো! ময়নার বিস্ময় আরও বাড়ে, যেন সে চোখের সামনে দেখতে পায় সবকিছু। মুখে জমা করে রাখা ভাত সে কপ করে গিলে ফেলে বলে, সেইদিন আর আমরা এই কাঁটাকুটি খাবো না তাই না আব্বা? আসমা একগাল ভাত তার মেয়ের মুখে পুরে দেয়।

আরো পড়তে পারেন

চারটি অণুগল্প

১. পৃথিবীর শেষ গাছটা হাতে নিয়ে ফিহান সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিরকাল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা ফিহান সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, এই ছোট্ট চারাটা নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে, নাকি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে দেবে?   ২. —আমার না প্রায়ই খুব মায়া হয় এদের জন্য —কেন?! —এই যে দেখো, সারারাত জেগে থাকার কথা আমাদের, আর জেগে থাকে ওরা।….

error: Content is protected !!