Author Picture

সত্য মিথ্যার বিজ্ঞান

অপূর্ব চৌধুরী

প্রতিটি মিথ্যাই একেক রূপ নিয়ে আসে । যত বড়োই ক্রিমিনাল হোক। যতই মিথ্যা বলতে পারদর্শী হোক। যত বেশি চাপ নিয়ে সংযমী মিথ্যা বলার কৌশলই রপ্ত করুক, সে ক্ষেত্রে ক্রনিক লায়ার কিংবা ক্রনিক ক্রিমিনাল হিসেবে কম স্ট্রেস ফিল করবে মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমে, যার কাজ এই স্ট্রেস কম-বেশি করা। কিন্তু ব্রেইনের অন্য আন্তঃ অংশগুলোর অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। সেখানে কোনো-না-কোনো ভাবে সেটা অন্য অংশে প্রতিক্রিয়ার চাপ রাখবে এবং মস্তিষ্ক সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে।

ঠিক এই কারণে পলি-গ্রাফ (Polygraph) বা Lie Ditector-এর ফলাফলকে আদালতে গ্রহণ করা হয় না। এই লাই ডিটেক্টর দিয়ে মিথ্যার পরমিাপ মাপা হয় লিম্বিক সিস্টেমে স্ট্রেসের পরিমাণ কতটুকু হলো তা দিয়ে । তখন শুধু এক অংশের পরিবর্তনের ছাপকে গ্রহণ করা হয় না এই ভেবে যে, ক্রনিক লায়ার বা ক্রিমিনালরা মিথ্যা বলতে বলতে সেটার চাপ ক্ষমতা কমাতে পারে বা কমে যায়।

অন্যদিকে সত্য বলা লোকেরা চাপ কম নিতে পারে, এটা একটা ক্রিমিনাল জাজমেন্ট, বাস্তবতা নয়। বরং মিথ্যাকে জায়েজ করবার কুট তর্ক।

সত্য বলার ভালো দিকটি হলো মস্তিষ্কের বাকি তিনটি অংশকে অহেতুক চাপ নিতে হয় না, মস্তিষ্ক যত কম চাপ নিবে, তার মূল কাজ শরীরের অন্য অংশগুলোকে সুনিয়ন্ত্রণ করা, সেটাতেই এনার্জি যাবে, ফোকাস যাবে। ভোগাস মিথ্যাতে সময় শক্তি অপচয় করে না মস্তিস্ক।

সত্য সদা সুন্দর

সত্য বললে তিন অংশের কোনো অংশই কোনো প্রতিক্রিয়া করে না, টেম্পোরাল লোবের মেমোরি সেন্টার থেকে সরাসরি ফ্রন্টাল লোবের নিচের অংশে এসে বলায়, এই অংশ স্বস্তি দেয়, স্বাভাবিক রাখে। এই স্বস্তি এবং স্বাভাবিকতা তখন মস্তিষ্কের অন্য অংশগুলোকে বিনা চিন্তায় যার যার কাজে মনোযোগী করে। মিথ্যা বললে, অপরাধ করলে, ঠিক তার বিপরীত হয়, মস্তিষ্কের ওই একটিভ তিন কেন্দ্র অতি মাত্রায় একটিভ থাকে, বাকি অনেক অংশ নির্জীব হয়ে যায়। এই কারণে, মিথ্যুকরা কিংবা অপরাধীরা কম বেশি সারাক্ষণই একটা অস্থিরতার তাড়নায় থাকে।

মিথ্যার সাথে আপোষ করে চলা মানে নিজেকে মেরে ফেলা ।

আরো পড়তে পারেন

আওরঙ্গজেব ও শম্ভাজির মিথ বনাম ইতিহাস: প্রসঙ্গ ছাবা চলচ্চিত্র

বর্তমানে বিজেপির সংঘ পরিবার প্রায় তিন’শ বছর আগের ভারতের এমন এক সম্রাটের কবর মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করছেন- যিনি ইতিহাসে ভারতকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রের মানচিত্র ও সংহতি উপহার দিয়েছিলেন, যার আয়তন ছিল চল্লিশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার- যা ছিল বর্তমান ভারতের চেয়ে আট লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বড়, তাঁর অধীকৃত রাষ্ট্রটিই ভারত এখনো তারা….

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যা জানা গিয়েছে, যা জানা সম্ভব

এক মহান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অপরিসীম আত্মত্যাগ। নানা সূত্র থেকে আমরা শুনে এসেছি ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা। অনেকেই আবার ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন প্রশ্ন ওঠার মূলে রয়েছে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে ৭১-পরবর্তী শাসকদের উদাসীনতা। তারা এত বছরেও শহীদের সংখ্যা….

প্রতিটি শূন্যতা যেন নতুন শোকের জন্ম দেয়

শূন্যতার আকাশে স্মৃতির মেঘ জমে। জীবন সরে সরে আসে মৃত্যুর দিকে। ফুরিয়ে আসা সময়ের দাপট এড়াতে পারে না কেউ। একজীবনে বহু জীবনাবসানের দেখা পাওয়া যায়, হয়তো দুর্ভাগ্যক্রমেই। ব্যক্তির মৃত্যুর পরিসমাপ্তি একবারই হয়, তবে সেই ব্যক্তি যদি বহুপ্রাণের সাথে জুড়ে থাকেন, তাঁর অনুপস্থিতি বারংবার অনুভূত হয়। প্রতিটি শূন্যতা যেন এক নতুন শোকের জন্ম দেয়। ২০২৪ সালে….

error: Content is protected !!