Author Picture

শাহ বুলবুলের একগুচ্ছ কবিতা

শাহ বুলবুল

একখণ্ড নদীর খামে
.
সাড়ে বত্রিশ বছর পিকেটিং করেছি
তোমাদের রাস্তায়
করেছি অপেক্ষার হরতাল বেগুনি বেনারসি হাতে।

দিনের তিনপেড়ে সুখ
গৃহত্যাগী পাড়ার মধ্যিখানে
সংসারী গল্পের কাছারি খাঁ খাঁ করে কালের নগর রাতে।

এ রাস্তা তোমার দু’খান লক্ষ্মী পায়ের
আমিও হেঁটেছি মানুষের প্রাচীর বেয়ে
কোটি কোটি বছর নিতান্ত পল্লী-জীবনের সাথে।

ভেঙ্গেছি নিঃস্ব পেনসিল তোমাকে নির্ভুল ইতিহাস ভেবে
একখণ্ড নদীর খামে লিখেছি চিঠি
অভিমানের চিলেকোঠায় তুলসীর মালা হাতে।

এখানেও স্বপ্ন ছিল কালের সিন্দুকে
আছে তুমিময় মানচিত্র দুর্গতির রুদ্ধশ্বাসে
আবার কোথায় ভেসে যাব দেহের শিরা ছিঁড়ে নিরন্ধ্র সমুদ্রে।

তবে দুঃখ বিলাসী আমিও তোমার মতো
সব আলো নিভিয়ে দিলাম অপরিচিত দৃশ্য ভেবে
তোমাদের সনাতনী বারান্দায় এখনও আমি মৃত্যুময় সংঘাতে।


আকাশে আগুন
.
ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় দাপট মুখস্থ বিদ্যায় উবে যায়
বাবার সাইকেল
ব্যথাতুর মরিচে পান্তা ভাত
মায়ের ভর্তাবাটা লক্ষ্মী হাত।

‘একদিন দেয়ালের পোস্টার হয়ে উঠে’
গ্রাম্যনীতির ম্যাজিকে গৃহস্থালির বিজলী চমকায়
বিবর্তনের কোঠায় ফিরে আসে ডাকটিকেটের গায়
যুদ্ধংদেহি সৈনিকের ভাঙ্গা হেডলাইনে।

‘জনযুদ্ধের দপ্তর কাঁপে প্যাঁচার সিগন্যালে’

ভিখিরির ভাগ্যকোষ গিলে নেয় অগ্রজ নিরাপত্তায়
বাজেটের সালাম ঠুকে অস্তিত্বের লোটা হাতে
এক সিরিঞ্জ জন্ডিসের পরীক্ষায়।

‘ঈশ্বর জেগে আছেন তো বাংলাদেশে’

আকাশের মুখ দেখি প্রলয়ের ছায়ায়
কপালের মাঠে জিরোয় উন্নয়নের ছাড়পোকা
ভিআইপি বাজপড়ে ইতিহাস দোল খায়।

‘ক্ষুদ্রঋণ বর্গী কেন বিরাণ ভিটায়’

আর কত পরিহাস কৃষাণীর থালায়
আবারও কাঁদছে দেখ প্রিয় শ্মশান
কামারের তলোয়ার পলাশীর গাঁয়।


বেদনাতুর উপন্যাস
.
কয়লার বাজারে কোঁকড়া চুলের গোলাপি মেয়ে
পূর্বের চুনোরি শাড়ি কসাইয়ের দোকানে বেচে।
মুড়িওয়ালার ঠোঙ্গায় দ্যাখো নাগরিক ধূমকেতু
অস্ত যায় স্যাঁতস্যাঁতে উল্কার পায়ে।

মৃত্যুর ওপারে কিছুই নেই দিন-যাপনের দায়ে
রৌদ্রের ভগ্নাংশে লেখা সব বেদনাতুর উপন্যাসে।
আইসক্রিমের খামে কাতর ম্যালেরিয়া সুখ
মুখস্থ গিলে যাই কোম্পানির পুঁথি হয়ে।

রাজনৈতিক হেডমাস্টারের গর্ভে মহাজনী শামুক
কাঠুরে মহিষ পোষে রায়তের হাটে।
পাথরের খোরায় লেখি দুঃসময়ের শোক
বখাটের সং ভাজা খুন্তির হাঁড়িতে।

মুচির দাওয়ায় ঘুমায় মালতীর জাত
পুড়েছে গঙ্গাজল বোষ্টমের আখড়ায়
বাগদীদের গোয়ালঘরে উত্তরীয় দীর্ঘরাত
ফিরে গেছে কালের বাউল অন্ধকারের কা নজঙ্গায়।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!