
ভাদ্র আর আশ্বিন এ দুই বাংলা মাস মিলে হয় শরৎকাল। কিন্তু বাংলা মাস দিয়ে ঋতুর এ হিসাবটা বর্তমানের অধিকাংশ মানুষ বুঝবে না। শরৎ ঋতুর বাস্তবতা আরও বুঝবে না। ওই অবুঝ অধিকাংশ মানুষ কারা? মোটাদাগে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। কেন বুঝবে না? কারণ অনেক। এরা কায়িক শ্রমের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে অনেক আগেই। কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে তো এদের ছেদ ঘটেছে আরও আগে। এদের জীবনে প্রকৃতি নেই। প্রকৃতি বইয়ের পাতা আর স্মৃতির জানালা দিয়ে মাঝে মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যায় এ শ্রেণির মনোদর্পণে। ঋতুর সঙ্গে তার জীবনের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলা মাসের হিসাবের সঙ্গে ছেদ তো বহু আগেই ঘটেছে।
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভেতর থেকে বাংলা মাসের সঙ্গে মিলিয়ে ঋতুচক্রের হিসাব-কিতাব রাখার ব্যাপারটা বহু আগে নাই হয়ে গেছে। এ ব্যাপারটাকে এ শ্রেণি যখন ব্যাখ্যা করতে যায়, তখন গলায় কিছুটা খেদ মিশিয়ে বাঙালিয়ানা থেকে সরে যাওয়ার কথা বলে। বাঙালি জনগোষ্ঠীর বাঙালিয়ানার এ অতিরিক্ত মৌখিক জজবা-জোশ দেখার মতো একটা ব্যাপার বটে! এমনটা বাংলাভাষা সম্পর্কিত আলাপের মধ্যেও দেখা যায়। ভাষা সম্পর্কিত বাঙালিপনার ব্যাপারটা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় একুশে ফেব্রুয়ারি এলে। প্রতিটি একুশে ফেব্রুয়ারি শেষ হয় একুশে ফেব্রুয়ারিকে ৮ ফাল্গুন করার একটা বিপ্লবাত্মক চিন্তার অভিঘাত তুলে।
কিন্তু এরা একবারও বলে না যে, আমাদের জীবনধারায় একটা মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়ে গেছে। এরা বলে না যে, আমাদের প্রিয় ছোট্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি নানাভাবে ক্রমাগত ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীতে পৃথিবীতে; বিলেতে, আমেরিকায়, রাশিয়ার পথে প্রান্তরে বা আরও আরও নানা দেশে উপদেশে। আর উন্নয়ন-অক্টোপাস আমাদের এক বিশেষ বিলেতি কায়দায় এমন কেচকি দিয়ে ধরেছে যে, শুধু আমাদের বাংলা মাস ও ঋতুচক্র নয়, বাপের নাম শুদ্ধ ভুলিয়ে দেওয়ার এন্তেজাম করেছে। গ্রামকে শহর বানানোর উন্নয়ন-দর্শনের কথা নাই-বা বললাম। বাংলাদেশের মানুষ ও এর প্রাণ-প্রকৃতিরও যে একটা জাতীয় নিজস্ব আত্মা আছে, সেদিকে খুব একটা লক্ষ রাখা হয় বলে মনে হয় না। এ জাতীয় আত্মার অনুকূলে আমাদের কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড গৃহীত হয়-এমন কথা বড় মুখ করে বলতে পারব না। এসব কথা ওই জজবা গ্রস্তরা বলবে না।
বাংলা মাসের নাম ও ঋতুচক্র অবশ্য যাদের জানার-বোঝার তারা ঠিকই জানে-বোঝে। কারণ, তার এক ফসলের নামই আছে চৈতালি। আরেক ফসলের নাম পৌষালি। শুধু তাই নয়, তার ফসলের আপদ-বালাই, ভালো-মন্দ, পরিমাণ-অপরিমাণ-এক কথায় তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ওই বাংলা মাস আর ঋতুচক্রের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। বৈশাখ মাস কালবৈশাখী নিয়ে এসে প্রবল প্রতাপে এ বাংলা নাম ও ঋতুচক্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষের ফসল ঘরবাড়ি গাছগাছালি তছনছ করে প্রতি বছর। ফলে তাকে মনে রাখতেই হয় এবং প্রস্তুত থাকতেই হয় যে, বৈশাখ সমাগত। তাকে সংস্কার করে তুলতে হয় ঘরদোর। যেতে হয় বাঁশঝাড়ে। পরিবর্তন করতে হয় ঘরের জরাজীর্ণ খুঁটিগুলো। চালে চালে দিতে হয় প্যালা। আষাঢ়ের গাদলায় তাকে মাঠের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে থাকতে হয়। শ্রাবণের পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিল-ঝিলের বাহারি নামের আমন ধানগুলো বাড়তে পারবে কিনা এজন্য শুধু মাস না মাসের দিনেরও খোঁজ রাখতে হয় তাকে। মাঘের শীতে হাড় কাঁপে। তবু যেতে হয় মাঠে। না গিয়ে যে তার আর উপায় নেই। এর সঙ্গে তার উপোস ও উদরপূর্তি দুটিরই সম্পর্ক গভীর। জীবন-মরণ ব্যাপার। বাংলা মাস ও তার প্রতিটি দিন তাকে নাড়া দেয়, বিষণ্ন করে, আশাবাদী করে, কান্না-হাসির দোলায় দোল দেয়। ফলে কোন কোন বাংলা মাস নিয়ে কোন কোন ঋতু ঋতুবতী হয় তা তাকে মনে রাখতেই হয়।
কিন্তু শ্রমচোরা ও অন্যের শ্রমনির্ভর আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির এসব খোঁজখবর না রাখলেও চলে। এই শ্রেণি; যারা আমার এ লেখার পাঠকও বটে; তাদের জন্য জানিয়ে রাখি-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর জড়াজড়ি করে থাকে শরৎ ঋতুটি। বাংলা ভাদ্র মাসটি আগস্টের কিছু দিন এবং সেপ্টেম্বরের কিছু দিন মিলে নিজের মাসবৃত্তটি পূর্ণ করে। আর আশ্বিন মাস পূর্ণগর্ভ হয় সাধারণত সেপ্টেম্বরের কিছু দিন এবং অক্টোবরেরও কিছু দিন মিলে। ভাদ্র ও আশ্বিন এ দুই মাসের মধ্যে নিজের রূপ-রং-গন্ধ আর বিশেষ যাপনের প্রস্তাব-সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের জীবনের ওপর এসে পড়ে শরৎকাল।
শরতের দুই আঁচল। ভাদ্র মাসের আঁচল। আর এক আঁচল আশ্বিন তরফে। কিন্তু আঁচল দিয়ে নিজের ছতর ঢাকার যেন তার কোনো সংগতি নেই। সম্ভ্রম বাঁচানোর যেন কোনো উপায় নেই। শরতের এক আঁচল টেনে নিজের গতর ঢেকে থাকে ভ্যাপসা গরমের বর্ষা। সে কি সাধারণ গরম! একেবারে তাল-পাকা গরম। আষাঢ়-শ্রাবণের যে-দাবদাহ তারই যেন বিস্তার শরতের ভাদ্র
এক.
বাংলাদেশের ঋতুগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গায়েপড়া স্বভাবের। মানে নিজের যা-কিছু বিশেষত্ব আছে তাই নিয়ে সে আমাদের ঘাড়ে চড়ে বসে। আমরা চাইলেও তার সম্পর্কে অচেতন থাকতে পারি না; উপেক্ষা করতে পারি না। এক কিসিমের মানুষ আছে যারা তাদের নিজেদের অস্তিত্ব জুতমতো জানান না দিয়ে কোথাও চুপটি করে থাকতে পারে না। যতক্ষণ তাকে আপনি মনোযোগ না দেবেন ততক্ষণ সে এমন সব কাণ্ডবাণ্ড করতে থাকবে যে, আপনি তার প্রতি মনোযোগী না হয়ে পারবেন না। এদেশের অধিকাংশ ঋতুরও ওই রকম স্বভাব। বাংলাদেশে এমন কোনো বাপের ব্যাটা আছে যে, শীত ঋতুকে আমলে না নিয়ে আগের মতোই তার জীবনটি চুপচাপ যাপন করে যাবে! গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালের কথাই ভাবা যাক! বাপরে-বাপ-অবস্থা কাকে বলে! বসন্ত একটু নীরবে আসে বটে। কিন্তু এর বাউরি-উদাস বাতাস আর বিচিত্রবর্ণা ফুল ও কচিপাতার সম্ভার বোঝার জন্য কবি হওয়ার দরকার পড়ে না। এমনকি সবচেয়ে নীরব, নিঃশব্দ পদচারী বিলাতি বিড়ালের মতো আসতে অভ্যস্ত হেমন্তকেও বেশ বোঝা যায়। হেমন্ত নীরব অথচ গভীর প্রেমিকার মতো এসে নিশ্চিত হয়ে বসে থাকে। যেন তাকে বুঝতেই হবে। শুধু একটু অপেক্ষা এই আর কি!
কিন্তু যে-ঋতুটার আগমন সহজে বোঝা যায় না-তার নাম শরৎ। সে যেন আমাদের শহরের বাসায় বেড়াতে আসা গরিব আত্মীয়টি। কোথায় থাকছে টের পাওয়া যায় না। সামনে আসে না। কিছু চায় না। লুকিয়ে থাকলেই বুঝি বাঁচে। তার তো তেমন কিছু নেই। কী দিয়ে বাড়ির এত এত ঠাটবাটওয়ালা মানুষদের (পড়ুন অন্যান্য ঋতু) সামনে নিজেকে তুলে ধরবে!
শরতের দুই আঁচল। ভাদ্র মাসের আঁচল। আর এক আঁচল আশ্বিন তরফে। কিন্তু আঁচল দিয়ে নিজের ছতর ঢাকার যেন তার কোনো সংগতি নেই। সম্ভ্রম বাঁচানোর যেন কোনো উপায় নেই। শরতের এক আঁচল টেনে নিজের গতর ঢেকে থাকে ভ্যাপসা গরমের বর্ষা। সে কি সাধারণ গরম! একেবারে তাল-পাকা গরম। আষাঢ়-শ্রাবণের যে-দাবদাহ তারই যেন বিস্তার শরতের ভাদ্র। ভাদ্রের গরম সম্পর্কে মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডিমঙ্গল কাব্যে ঠিকই বলেছেন, ‘আনলে পোড়এ অঙ্গ ভেতরে বাহিরে।’ ফলে বর্ষার পরে ভাদ্র মাসে যে-আলাদা একটা ঋতুর সমাগম ঘটে তা বোঝার প্রায় কোনো উপায়ই থাকে না। আগের থেকে পার্থক্য শুধু এই যে, বর্ষার শ্রাবণে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। ভাদ্রে এসে সেই বৃষ্টি কিছু কমে যায়। থেকে থেকে হালকা বৃষ্টির ছাট আর অসহনীয় দাবদাহ শরতের এ মাসটিকে নতুন ঋতুর সমাগমী মাস হিসাবে বিশেষভাবে চিহ্নিত হতে দেয় না। আবার শরতের আরেক আঁচল অর্থাৎ আশ্বিন মাসটা খুব সূক্ষ্মভাবে হেমন্তের আবহের দখলে থাকে। হিম হিম না আবার হিম হিম বাতাস। একে হেমন্ত ছাড়া আর কী-ই-বা বলা যায়! ফলে আলাদাভাবে শরৎকাল বলে যে একটা ঋতু আছে তা প্রায় অপ্রকাশিতই রয়ে যায়।
তবে কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন সূচিত হয় শরৎকালে। সাদা মেঘ, কাশফুল, বকুল, শেফালি, শিউলি, গগনশিরীষ শরতের বিশেষ বিশেষ ফুল। আশ্বিন মাসে আছে ঘরছাড়ায় প্রবুদ্ধ করে এমন নয়ন-মন-ভোলানো কোজাগরী জোছনা। কিন্তু প্রকৃতির এ সমাবেশ সাধারণ মানুষের চোখে, ওই যে শ্রমযুক্ত মানুষের চোখে, ধরা পড়ে খুব কম। এজন্য যেন অসাধারণ একটা চোখ ও অনুভূতি থাকার দরকার হয়। এ অর্থে শরৎ একটা অভিজাত ঋতু। অভিজাতরা ছাড়া এর শোভা-সৌন্দর্য বোঝার যেন উপায় নেই। শ্রম-অবসর ছাড়া যেন বোঝা মুশকিল। এ কারণেই কি ঋতুভিত্তিক যাপন-উদযাপনের পুরুত রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে প্রায়শই শরতের উল্লেখ দেখতে পাই! চিঠিপত্রে দেখি শরৎ উপভোগের জন্য তার বরাবরই একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহরা যুদ্ধ-বিগ্রহ বা দিগ্বিজয়ের জন্য শরৎকালকে বেছে নিতেন। শরৎ ঋতু নদীমাতৃক বাংলাদেশে বরাবরই বাণিজ্যযাত্রার জন্যও ভালো সময় বলে প্রাচীনকাল থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে
কিন্তু শরৎকালকে রবীন্দ্রনাথ এবং অভিজাতদের একারই-বা বলি কী করে! বাংলা ‘লোকগানের’ মধ্যে ভাদ্র ও আশ্বিনকে বিশেষভাবে হানা দিতে দেখি। সঙ্গলিপ্সু প্রেমিক বলছে, ‘ভাদর ও আশিন মাসে ভ্রমর বসে কাঁচা বাঁশে/আরও কি থাকিবে বাপের ঘরে গো/মন আমার কেমন কেমন করে/ও বঁধু হে/আর না থাকিও বাপের ঘরেতে।’ যৌবন-উদ্বিগ্ন আর এক নারীর আক্ষেপ জাগছে ওই শরতের আশ্বিন মাসে। ওই নারী তার দাদির কাছে আক্ষেপের সুরে বলছে, ‘আরে ও দাদি আমি চিন্ত্যায় বুজল্যারে বাঁচি ন্যা/যৌবনকালে একটা সোয়ামি গো পাইলাম ন্যা।/আশ্বিন মাসে যেমন তেমন দাদি গাঞ্জে ধানখ্যাত গাড়তাছে/আমার যৌবন দাদি মার্বোল খেলতাছে।’ ভাদ্র-আশ্বিনের মধ্যে কী একটা হাহাকারী ব্যাপার আছে নিশ্চয়ই। তা না হলে গ্রামীণ নারী কেন বলবে, ‘ভাদ্র মাসে তালেরও পিঠা/আরে খাইতে লাগে দারুণ মিঠা রে বন্ধু /একবার আইসা তুমি খাইলা না রে।’ আশ্বিন মাসে গাভির দুধের ক্ষীর-ননি কতজন খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রেমিক পুরুষ না আসাতেও নারীর রূপকী আক্ষেপের যেন শেষ নেই কিছু কিছু লোকগানে!
এটা সত্য যে, অন্য অনেক ঋতুর তুলনায় শরতে গ্রামীণ জনপদে মানুষের কর্মব্যস্ততা কিছুটা কম থাকে। তবু এ ঋতু বর্ষার আষাঢ়-শ্রাবণের অবসর-অবরুদ্ধতা থেকে মানুষকে কিছুটা তো মুক্তি দেয়ই। গানের কথায় তার সাক্ষ্য আছে, ‘ভাদ্র মাসে কাটিলাম সুতা/আশ্বিন মাসের পয়লাতে/বাড়ির কাছের তাঁতিয়া ভাইরে/শাড়িখান বুইন্যা দে।’ আষাঢ়-শ্রাবণের কর্মহীন তাঁতি ভাদ্রে এসে কাজ শুরু করছে। ভাদ্রের ২০ তারিখের পর থেকে পানি কমতে শুরু করলে আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়। এ সেই ধান যা পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এতদিন বেড়ে উঠেছিল। পাট আর আমন ধান কাটার আংশিক ব্যস্ততা ছাড়া শরতের আর কোনো ব্যস্ততা নেই। বরং শরতের শেষভাগটা জমিজমা আর কৃষকের বিশ্রামের সময়। সামনের ফসলের চাষ শুরু হওয়ার আগে কিছুদিন যেন পূর্ণ অবকাশ। ওই যে গানের মধ্যেকার নারী-পুরুষের যৌবন-উদ্বেগের উৎস কি তবে এ অবসর!
তবে বাংলা অঞ্চলে শরৎকালের অন্য কিছু কর্মযোগের ব্যাপারও আছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহরা যুদ্ধ-বিগ্রহ বা দিগ্বিজয়ের জন্য শরৎকালকে বেছে নিতেন। শরৎ ঋতু নদীমাতৃক বাংলাদেশে বরাবরই বাণিজ্যযাত্রার জন্যও ভালো সময় বলে প্রাচীনকাল থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে। এ দুটিরই কারণ এ সময় আবহাওয়া মুটামুটি শান্ত ও দুর্যোগমুক্ত থাকে। কিন্তু এ যুদ্ধযাত্রা আর বাণিজ্যে বের হওয়া সেই বড়লোকী ব্যাপার-স্যাপারই তো!
রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ঝলিছে অমল শোভাতে।/পারে না বহিতে নদী জলধার,/মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর-/ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল/তোমার কাননসভাতে!/মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,/শরৎকালের প্রভাতে।’ আর যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘আজি কি তোমার বিধূর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাত বঙ্গ, মলিন অঙ্গ/ভরে গেছে খানা ডোবাতে।/পারে না বহিতে লোক জ্বরভার,/পেটে পেটে পিলে ধরে নাকো আর-/দিবসে শেয়াল গাহিছে খেয়াল/বিজন পল্লীসভাতে!/একপাশে তুমি কাঁদিছ জননী,/শরৎকালের প্রভাতে।’ রবীন্দ্রনাথের শরৎকালই বাংলা সাহিত্যের ও বাংলাদেশের সাহিত্যের সবার শরৎকাল হয়ে উঠেছে; শান্ত, স্নিগ্ধ, মোহনীয়। কিন্তু এর বাইরেও বাংলাদেশের জনজীবনের ভাঁজে ভাঁজে যে শরতের সমাবেশ ঘটে তার খবর রাখে কে! সেই খবর আমরা শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা কম রাখি বলেই জনজীবনের শরতের সঙ্গে আমাদের সাহিত্যের শরতের অনেক পার্থক্য। বাংলাদেশের সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ পার্থক্যের পরিমাণ জনজীবনের সঙ্গে এ সাহিত্যের অমিলের সমানুপাতিক।