
একটা চলতি গল্প দিয়ে শুরু করি। তিন বন্ধু খুব ঘনিষ্ঠ। নিজেদের একান্ত যৌনতা সম্পর্ক প্রেম- প্রেমিকা সব নিয়ে তারা খোলামেলা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। তিন জনই যখন তাদের প্রেমিকার কাছ থেকে শুনলেন ছোটবেলাতেই সাইকেল দুর্ঘটনায় তাদের প্রেমিকাদের সতীপর্দা ফেটে রক্ত বের হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তখন তিন জনই খুব আপসেট হয়ে যান। গল্পের এইটুকুই এখনকার জন্য যথেষ্ট। ইদানিং এমন বেশ কিছু তরুণের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেমিকার সাইকেল দুর্ঘটনা। ঘটনাটা অবশ্য অনেক আগে ঘটে গিয়েছে বলে বেশির ভাগের প্রেমিকারা দাবি করেন। কিন্তু সেই অতীতের ঘটনার আতঙ্ক বিমর্ষ করে বর্তমানের প্রেমিককে। ঘটনাটা ঘটে এইভাবে, প্রথমে পরিচয় হয়, তারপরে প্রেম। তারপরে সিদ্ধান্ত যখন নিয়ে ফেলেন এই নারীকেই তিনি নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নেবেন, নারীও যখন এই সিদ্ধান্তে রাজি থাকেন তখন শুরু হয় স্বীকারোক্তির পর্ব। ইংরেজিতে যেটাকে বলে কনফেশন। এই স্বীকারোক্তির পর্বে দুইজনই চায় যত কঠিনই হোন সত্য শুনতে। সেটাকে বরণ করে নিতে প্রেমিক মনকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন অনেকে। কিন্তু কঠিন সত্য শুনতে চেয়ে যখন প্রায় কমন বা একই রকম গল্প থাকে সবারই -তখন সন্দেহ তৈরি হয়। সেই গল্পের আড়ালে স্বীকারোক্তির কঠিন পুলসিরাত সহজেই পার হয়ে যায় প্রেমিক যুগল। প্রেমিক পুরুষও হয়তো কোন না কোন গল্পের আড়ালে তার শরীরের বা মাংসের স্বীকারোক্তির কঠিন পরীক্ষা পেরিয়ে যেতে চায়। নারী ও পুরুষ শরীরের অভিজ্ঞতার ইতিহাস বা স্বীকারোক্তি একে অপরকে জানান সম্পর্কের একটা পর্যায়ে। আগে যৌনতার অভিজ্ঞতায় পৌঁছে যাওয়া কোন তরুণীর জন্য এমনই একটি পুলসিরাত পাড়ি দেয়ার হাতিয়ারের নাম- সাইকেল দুর্ঘটনা।
প্রেমিক অনেক কিছু জানতে চাওয়ার ছুতায় আসলে যা জানতে চায় তা হলো- তোমার জীবনে আমিই তো প্রথম পুরুষ? এর আগে কোন পুরুষ তো তোমার জীবনে আসে নাই। তারপরে আসল কনসার্ন বা সতর্কতা দেখা দেয় আসলে সে ভার্জিন বা অক্ষতযোনি কিনা? এই স্বীকারোক্তির পর্বে সাইকেল দুর্ঘটনা যখন কমন গল্প হয়ে ওঠে তখন বিষয়টা কৌতুককর হয়ে ওঠে। সবারই সাইকেল দুর্ঘটনার গল্প সামনে আসলে কনফেশন হারায় বিশ্বাসযোগ্যতা। এগুলো নিয়ে প্রচুর চুটকি ও সরস গল্প চারদিকে শুনতে পাওয়া যায়। আমরা আজকে যৌনতার বিষয়ে এই কনফেশন বা স্বীকারোক্তির দিকটা নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করবো।
আগে যৌনতার অভিজ্ঞতায় পৌঁছে যাওয়া কোন তরুণীর জন্য এমনই একটি পুলসিরাত পাড়ি দেয়ার হাতিয়ারের নাম- সাইকেল দুর্ঘটনা
এই ২০২১ সালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মিশেল ফুকোর অসমাপন্ত কাজের একটি খণ্ড ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এটা এ বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যৌনতার ইতিহাসের এটা ৪ নম্বর খণ্ড। যৌনতার ইতিহাস নিয়ে প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে, এরপরে আরও দুটি খণ্ড মিলে মোট তিনটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও এটা ৬ খণ্ডে প্রকাশের পরিকল্পনা করেছিলেন ফুকো। কিন্তু মৃত্যু তাকে সেই সুযোগ দেয় নাই। এই বছর ইংরেজিতে ৪ নাম্বার খণ্ডটি প্রকাশিত হলো। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে ফুকো এই বইটির পাণ্ডুলিপি কিছুটা কারেকশন কারার সুযোগ পেয়েছিলেন। বইটা ফ্রান্সের পাণ্ডুলিপি মন্ত্রণালয়ের জিম্মায় ছিল। সেখান থেকে ২০১৮ সালে ফরাসি সংস্করণ এবং এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম, “Confessions of the Flesh”-এখানে লিখেছি শরীরের স্বীকারোক্তি, যদিও আক্ষরিক অনুবাদ হবে, মাংসের স্বীকারোক্তি। সরাসরি মাংস লিখলে কেমন যেন লাগে, তাই এখানে শরীরকে পড়তে হবে মাংসময় শরীর অর্থে। প্রায় এক হাজার পৃষ্ঠার এই বইটি ধরে আলোচনা করার সুযোগ এখানে নাই। এখানে শুধু আমরা এই কনফেশন বা স্বীকারোক্তির সাথে যৌনতা ও ক্ষমতার সম্পর্ক আলোচনা করেই শেষ করবো।
ফুকোর যৌনতার ইতিহাস সন্ধান কোনোভাবেই যৌনতা বলতে অক্ষরিক অর্থে আমরা যা বুঝি তেমন কোন প্রকল্প নয়। তিনি মূলত সংস্কৃতির নির্মাণের প্রক্রিয়াকে বুঝাতে চেয়েছেন। মূল উদ্দেশ্য, আধুনিক কালের ক্ষমতা-সম্পর্ককে বুঝতে চেষ্টা করা। এই জন্য তিনি সেক্স ও সেক্সচুয়ালিটির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। ফলে যৌনতার ডিসকোর্স ফুকোর কাছে ক্ষমতা সম্পর্ক বুঝতে পারার একটা দরকারী পাটাতন। এই দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত না লিখলে উল্টো বুঝবার বিপদ আছে।
আমাদের দেশে ফুকো-দেরিদার নামে যে ধরণের ফ্যাশনেবল চর্চা হয় তা বিরক্তিকর। অন্যদিকে যারা এই দিকগুলো নিয়ে চিন্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তাদের চিন্তার জন্য পরিশ্রম ও সততার অভাবে এরা নিজেদের মনোভাবকেই সেরা ও শ্রেষ্ঠ বলে প্রচারে মনোযোগী। নিজেদের দেশি ও অন্যদের বিদেশি বলে চিন্তার বিশ্বরূপকে ব্যক্তি ও কমিউনিটির ক্ষুদ্র দলাদলির মধ্যে নিয়ে গিয়ে কে কত বড় হিরো হবে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তার সিলসিলা ধরে আলাপের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আমি চেষ্টা করি আইডিয়া ধরে ধরে কথা বলতে। এতে যারা নাট সিটকাবে বুঝতে হবে তাদের অশিক্ষিত পাঠকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা ও নিজের মূর্খতাকে এতোদিন পণ্ডিতি হিসেবে জাহিরের যে চক্র জারি ছিল তা হুমকির মুখে পড়াতেই এই অস্বস্তি। চিন্তা বা দর্শনের কোন পূব-পশ্চিম নাই। হয়তো তরিকা ভিন্ন, কিন্তু জীবনের জন্য জরুরী প্রশ্নগুলো প্রতিটি সমাজেই দার্শনিক দিক থেকে কমন। ফলে ফুকোর কাজকে যারা পড়েন কিন্তু ফুকোর তরিকা ও রাজনীতির বিরোধী অবস্থানে ফাংশন করেন তাদের পাঠের মধ্যে নাম জাহিরি বিষয় থাকলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না।
ফুকোর কাজকে যারা পড়েন কিন্তু ফুকোর তরিকা ও রাজনীতির বিরোধী অবস্থানে ফাংশন করেন তাদের পাঠের মধ্যে নাম জাহিরি বিষয় থাকলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না
আমরা এখন নতুন যে বইটা নিয়ে কথা বলছি তাতে তিনটা পার্ট আছে।
১. part i. “The Formation of a New Experience”
২. part ii. “Being Virgin”
৩. part iii. “Being Married”
এবং সংযুক্তি হিসেবে আরও ৪টি লেখা ছাপা হয়েছে। সব মিলে এই খণ্ডটি প্রায় একহাজার পৃষ্ঠার।
পুরো বইটা ধরে আলাপ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখানে কেবল প্রাথমিক কিছু ধারণার বিষয়ে আলাপ করেই শেষ করবো। তিনটা পর্বের ধারাবাহিকতার দিকে খেয়াল করলে দেখবেন প্রথমে যৌনতা খুব নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরা দেয়, তারপরে সতী-অসতীর প্রশ্ন এবং বিবাহের মধ্যদিয়ে এই অবস্থার একটা প্রতিষ্ঠানিকতা আমরা দেখতে পাই। এবং এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি আর একটির সাথে সম্পৃক্ত। আগ্রহী পাঠক যেন পুরো বইটি নিজেই পড়তে উদ্যোগী হন তাই স্বল্প পরিসরে আলোচনাতেই ক্ষান্ত থাকছি।
যৌনতার অভিজ্ঞতা মানুষের প্রকৃতির মধ্যে যেভাবে ধরা পড়ে তাতে অবশ্য প্রথমেই এটাকে অভিজ্ঞতা আকারে মানুষ সনাক্ত করতে পারে নাই। এটা ছিল স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক প্রবণতা। এটা অভিজ্ঞতা আকারে মানুষকে গঠন করতে হয়েছে কালে কালে। বা আবিষ্কার করতে হয়েছে। তো এই আবিষ্কারের বা গঠনের এই নতুন ফরমেশনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সত্যকে হাজির করার চেষ্টা। যৌনতা বিষয়ে সত্যের এই ধারণার সাথে ক্ষতার সম্পর্ক নিয়ে ফুকো বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি খ্রিষ্টের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের ফাদার ও দার্শনিকদের লেখা-লেখি থেকে এই সত্যের স্বরূপ গঠনের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। খ্রিষ্টের মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত যৌনতার বিষয়ে এই সত্যের সংযোগের ইতিহাস আলোচনার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা ও সংস্কৃতির নির্মাণের বর্তমান স্বরূপের একটা পরিষ্কার চিত্র ফুকো আমাদের দেখিয়ে দেন।
যৌনতার বিষয়ে পেগান বা প্রকৃতিপূজারী মানুষদের থেকে খ্রিষ্ট যুগের প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে যে আধুনিক সভ্যতার বর্তমান রূপে আমরা উপনীত হয়েছি তার পুরো সিলসিলা ফুকো খুব নিষ্ঠার সাথে উম্মোচন করেছেন। এবং তিনি দেখিয়েছেন, যৌনতার নতুন ডিসকোর্স বা ফরমেশন বা ধরণ-ধারণা তৈরিতে পেগান দার্শনিকদের অনেক চিন্তাকে খ্রিষ্ট পরর্বতী আমলে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। যৌনতার সাথে নৈতিকতার যে সম্পর্ক তা খ্রিষ্টের আগের আমলে যা ছিল তার থেকে পরের আমলের যে পরির্বতন তাও আলোচনায় উঠে এসেছে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কনফেশন বা স্বীকারোক্তি। যৌনতার বিষয়ে মানুষের মনোভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তি বিশেষ আলাদা হয়ে থাকে। এই ভিন্নতার মধ্যে অনুশাসনের জন্য, শৃঙ্খলার জন্য দরকার সত্য হওয়া। ব্যক্তির সত্য বা প্রকৃত অভিপ্রায় জানাটা জরুরী। এই ধারার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিন। তার কনফেশন পর্বের লেখা-লেখিও ফুকো গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন।
সমাজে যে যার কাছে স্বীকারোক্তি দেয় সেই হয় ক্ষমতার মূল ভরকেন্দ্র। আগের আমলে এই স্বীকারোক্তি দেয়া হতো চার্চের ফাদারদের কাছে। এখন সেই জায়গা নিয়ে রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্র এই কাজটা করে আদালত দিয়ে। ফলে ব্যক্তির স্বীকারোক্তি যখন নিজের কাছে না হয়ে অন্যের কাছে হয় -সেই হয় ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। কোন ব্যক্তি যদি কোন ‘পাপ’ করে ফেলতেন সেই আমলে চার্চে গিয়ে ফাদারের কাছে স্বীকারোক্তি প্রদানের মাধ্যমে পুনরায় পুণ্যের পথে নিজেকে চালিত করতে চেষ্টা করতেন। পেগানরা এভাবে কনফেশনের মাধ্যমে ব্যাপটিস্ট হয়ে উঠেছিল ইউরোপে। এই কনফেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক
হলো-যৌনতা বিষয়ে কনফেশন। এই স্বীকারোক্তির মধ্যদিয়ে ব্যক্তি একই সাথে সত্য কথা বলার এক পবিত্র প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হয়। ইসলামে তওবা করাকে এই অবস্থার সাথে মিলিয়ে বুঝতে পারা সম্ভব।
সমাজে যে যার কাছে স্বীকারোক্তি দেয় সেই হয় ক্ষমতার মূল ভরকেন্দ্র। আগের আমলে এই স্বীকারোক্তি দেয়া হতো চার্চের ফাদারদের কাছে। এখন সেই জায়গা নিয়ে রাষ্ট্র
ফুকোর এই আলোচনা মুসলমান সমাজের জন্যও প্রাসঙ্গিক। এই কনফেশনের মধ্যমে প্রথমে ব্যক্তি নিজের কাছে নিজে সত্য বলার প্রক্রিয়াতে যদি শামিল না হয় তা হলে এই কনফেশন একটা ক্ষমতা সম্পর্ক চর্চার প্রক্রিয়া হলেও তাতে সত্য কথা বলার বা সত্যের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপনের হক আদায় হয় না। তাই স্বীকারোক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ট্রুথ টু দ্যা সেল্ফ। নিজের প্রতি সত্য হওয়া।
আমরা যৌনতার বিষয়ে বা শরীরের বিষয়ে যখন কনফেশন করি তখন আসলে কি ঘটে? আমরা কি চলতি শাসনতন্ত্রের কাছে কনফেশন করি। সেটা হোক কমিউনিটির নীতি বা আইন। নাকি নিজের সাথে সত্যের সম্পর্ক রচনার কোন সূত্র তৈরি হয় এই কনফেশন এর মাধ্যমে? আমার ধারণা ব্যক্তির শরীরের বিষয়ে কনফেশন বা স্বীকারোক্তির সাহস বা সততা খুবই কম দেখা যায়। আমাদের কনফেশন সেই সাইকেলে দুর্ঘটনার গল্পের মতো।
সত্যিকারের কনফেশন যে শুধু ধর্মীয়ভাবে খুব গুরুত্ব দেয়া হয় তাই না। এর অন্য গুরুত্বও আছে। এটা একই সাথে আত্ম-আবিষ্কারের একটি প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কেউ নিজের শরীর বা কামনা সম্পর্কে সত্য বলেন, তখনই কেবল তার পক্ষে নিজের আপন সত্তার শক্তিকে বুঝতে পারা সম্ভব। কিন্তু আমাদের প্রধান প্রবণতা হলো, অন্যের কাছে সাধু হতে চাওয়া। সত্যবাদি হতে চাওয়া। মানে আমরা অন্যের কাছে কনফেশন করি। নিজের কাছে কনফেশন না করার ফলে ব্যক্তির ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অন্যের কাছে চলে যায়। কেউ যদি নিজের যৌনতার বিষয়ে মিথ্যা কনফেশন করে, আগের যৌনতাকে অস্বীকার করে সতী নারী বা পুরুষ সাজতে চায়- তা হলে সেই মুহূর্তে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সত্য থেকে সে পলায়ন করার মধ্যে দিয়ে আসলে আত্মসম্মান হারায়। গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে সে অন্যের কাছে বা চলতি নীতি চোখে সাধু হলেও তাতে তার সম্মান উদ্ধার হয় না। এই জন্য নিজের যৌনতার বিষয়ে নিজের কাছে কনফেশন করা সব সময়ই সম্মানের।
আধুনিক মানুষ এক অবদমনের কারাগারে বন্দি। কারণ ট্রু কনফেশনের দিকটি সে আমলে নেয় না। সে নিজের প্রতি নিজে অনেস্ট হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। ফলে তার শরীরের স্বীকারোক্তিতে থাকে ছলনা, মিথ্যা, গল্পের আড়াল
ধরেন দ্বিতীয় বিয়েতে আসলে কি ঘটে? দ্বিতীয় বিয়ে শরীরের দিক থেকে এক ধরণের সত্য স্বীকারোক্তি। প্রথম ও কাঙ্ক্ষিত সতী যৌনতার কোন আশা সেখানে থাকে না। এটাকে বলা যায়, “every remarriage is an honorable adultery”। এটাকে এক ধরণের সম্মানজনক যৌনতার অবস্থা বলা যায়। কিন্তু আধুনিকতা এইসবের পাত্তা দিতে চায় না। ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে সে যে জায়গায় পৌঁছায় তা মূলত এক ধরণের আত্মপ্রতারণার অবস্থা তৈরি করে। আইন-আদালতের কাছে তাকে কনফেশন করতে হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু সে মনে করে সে আসলে স্বাধীন। শরীর বিষয়ে মানুষ সত্যিকারের স্বীকারোক্তি দিতে ভয় পায়। নিজের যৌনতার বিষয়ে সব সময় মিথ্যা পবিত্রতার অভিনয় করতে হয় তাকে। সে কনফেশন করতে পারে না। প্রথমে নিজের কাছে পারে না, ফলে অন্যের কাছে তো প্রশ্নই ওঠে না। তখন তাকে যে জীবন যাপন করতে হয় তার মধ্যে প্রকৃত নিজের যৌনতা, কামনা আর সে যেটা লোক দেখানো অর্থে করে তার মধ্যে একটা তাল রেখে চলতে হয়। তাকে একই সাথে ডাবল রোল প্লে করতে হয়। এতে সে দিন দিন ক্লান্ত ও জীবন হয়ে ওঠে আনন্দহীন। ফলে আধুনিক মানুষ এক অবদমনের কারাগারে বন্দি। কারণ ট্রু কনফেশনের দিকটি সে আমলে নেয় না। সে নিজের প্রতি নিজে অনেস্ট হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। ফলে তার শরীরের স্বীকারোক্তিতে থাকে ছলনা, মিথ্যা, গল্পের আড়াল।
যার শরীর সত্য স্বীকারোক্তি দেয় না। তার যৌনতায় ও জীবনে সত্য থাকে না। থাকে ভং। এই মিথ্যার কারণে তার স্বীকারোক্তির ফলে ক্ষমতার মালিক হয় রাষ্ট্র, আইন। ব্যক্তি না। কারণ সে নিজের কাছে কখনও কনফেশন করে না। ফলে যৌনতা, কামনা এবং এর সাথে সত্যের সম্পর্ক বুঝতে না পারলে আমরা নিজের ঘরেই চোরের মতো বাঁচি। যৌনতার বিষয়টা চিরদিনের চোর-পুলিশ খেলা হয়ে থেকে যায়।
শরীরের স্বীকারোক্তির সত্য মনের ভারকে অবমুক্ত করতে পারে। বা যে শরীর সত্যের শর্তের অধীন তার মিথ্যা স্বীকারোক্তির দায় নাই। সে সব সময়ই সত্য ও শরীরকে অভিন্ন মনে করে নিজের কাছে ও অন্যের কাছে শরীরের স্বীকারোক্তিতে আত্ম-সত্যের আনন্দ ও স্বাধীনতাকে অনুভব করতে পারে। সত্যদেহ মিথ্যা স্বীকারোক্তি বা মিথ্যাদেহ সত্য স্বীকারোক্তি যে সংস্কৃতির জন্ম দেয় তা সব সময় অন্যের কাছে নিজেকে সত্য প্রমাণে ব্যস্ত থাকে। কিন্ত কে না জানে, নিজের কাছে নিজে সত্য হয়ে ওঠার লড়াই মানুষকে মানুষ করে তোলে।