Author Picture

রোমেল রহমানের তিনটি কবিতা

রোমেল রহমান

পায়ে কার্তিকের  রোদ

বিকেল এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে পায়ে,
আমি শিকল নিয়েছি মনে।
জ্বলে উঠছে সন্ধ্যামালতী, জেগে উঠছে মশার গান;
আমি থমকে দিয়েছি ডানা মেলা।
সমস্ত ফেরার রাস্তা বন্ধ করে, এখানে গেঁথেছি সঙ্ঘরাম,
কে আমাকে ডাকছে বাইরে?
আমি তো খুলবো না রুদ্ধ দুয়ার।
বিষাদ ফুটেছে তোমার বনে, তার গন্ধ আটকানো যাচ্ছে না;
হৃদয়ের পিপাসাকে অভিশাপ দিচ্ছি ভীষণ — পৃথিবীর সব যুদ্ধ শেষ হলে সে যেন আত্মহত্যা করে নিমফুলে ছয়লাপ গাছের ছায়ায়।

তবু কেন
.                 জোড়ভাঙা পাখির আর্তি হাওয়ার মধ্যে ফিরে ফিরে আসছে তুমুল।?

 

সিংহাসনের কোলে বসে

রাত্রি স্তব্ধ পাথরের মতো আজ
জানালার বাইরে কার্তিকের ঘুমন্ত পাড়া
ছাতিমের উন্মাদ গন্ধে বেহাল দুনিয়াদারি
নিঃস্ব গ্লাসে ভরে আছে মাতোয়ালা মৌনতা আমার
টের পাচ্ছি বাহাদুর শাহ জাফরের অসহায় চাহনির মতো
আমার সাম্রাজ্য হারা এই ফকিরি এখনো তোমার জিকিরে নৃত্য করে
অথচ কী অসহায় আমি, নিজেকে উজাড় করে কবিতায় মকবরা সাজাচ্ছি

জাফর
.                 আপনার হৃদয়ের হাল সিংহাসন জানবে না
রিক্ত আমি  ঘুমাতে পারছি না আপনার বিপন্ন চোখের মতো

 

ফিলিস্তিন

এখানে হত্যার জীবন্ত প্রদর্শনী হয়।
আহা, কী নান্দনিকভাবে নরহত্যা দেখার সুযোগ।
সভ্যতার অদ্ভুত  নিরবতা থেকে টের পাই —
এ এক সম্মিলিত নরমেধযজ্ঞ।

(তবু এরই মধ্যে পাথর হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর কিশোরীরা জেনে গেছে, মৃত্যুর বদলে মাতৃভূমিই এক টুকরো রুটির নিশ্চিত তৃপ্ত সম্ভাবনা।)

জলপাই গাছেরা এখানে কবরে ছায়া দেবার জন্য জন্মায়।
প্রতিটা মায়ের স্তন থেকে নেমে যায় একেকজন শহীদ।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!