
করমর্দন
কবিতার শত্রুরা সমবেত শহরে
তাদের ছবিতে সয়লাব সমস্ত সরণি
ক্ষমতার বিভীষিকাময় জাগযজ্ঞ
বুড়িগঙ্গা বিমূঢ়
শহরের প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে নক্ষত্রে
ঐতিহ্যের অতীত- হাতির দাঁতের তোরণ
শুঁড় দোলাচ্ছে গৌতমের মায়ের গর্ভনিঃসৃত সাতটি শ্বেত ঐরাবত
মেঘরাজ্য থেকে ধরে আনা ময়ূরগুলোর ডানা
সোনার পানিতে ধোয়া হচ্ছে
পথে পথে কাশ্মিরী কোমল গালিচা
পলিশ করা হচ্ছে প্রতিবাদীদের রক্তে
অভ্যর্থনায় পরিবেশিত হচ্ছে বেহুলাদের উদ্দাম নৃত্য
অশ্বরোহী ও পদাতিকগণ পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
সম্মিলিত বাহিনীর সালাম গ্রহণ করছে কবিতার শত্রুরা
এদের মধ্যে কেউ হত্যা করেছিলো শহীদ সাবের ও মেহেরুন্নেছাকে
এদেরই কারো নির্দেশে ক্রসফায়ারের সামনে দাঁড়িয়েছিলো
কায়সার ও রায়হান
রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় ধোঁয়া উঠছে
ঝাড়বাতির কৃপায় পানীয় রূপ নিয়েছে পান্নায়
সুকান্তের মোরগ রোস্টের প্লেট থেকে দৌঁড়ে পালাতে চাইছে
কালাভূণার কড়াই থেকে শরৎচন্দ্রের মহেশের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে
অতিথিদের জিহ্বা দীর্ঘ হতে হতে স্পর্শ করেছে
শহরের সবকটি থালা
আর মাননীয়গণ অনবরত করমর্দন করছেন
কবিতার বিখ্যাত শত্রুদের সাথে
কি অভূতপূর্ব
প্রতি বৈশাখে
হালখাতা ভিজে সাদা হয়ে আছে কান্না,
অক্ষরগুলো দেনা-পাওনার পান্না।
প্রতি বৈশাখে জীবিকার সংঘর্ষ,
ম্লান করে দেয় নির্মল নববর্ষ।
তবু বুকে হেঁটে এতোদূর এই বাঙলা,
বিদ্যুৎ দিয়ে সাজিয়েছে ঘর জাঙলা।
সুষম বণ্টন
বদলে দিতে পারি তোমার ভুল বিশ্বাসগুলো
ভালোবাসার শক্তি অসীম
প্রেমের আলিঙ্গণ পাপ এই ভয় আমাদের
মিলনকে কতযুগ ঠেকিয়ে রেখেছে
ঈশ্বর প্রেরিতগণ পুরুষ বলে
তাদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ
পতির পায়ের নিচে স্ত্রীর স্বর্গ- এ এক প্রহসন
আর কখনো পুরুষের পাঁজর থেকে জন্মাওনি তুমি
সন্তানের জন্মদাতা কেবল পুরুষ নয়
নারীর জরায়ু সৌরউদ্ভিদ
সভ্যতার মাপকাঠি সম্পদের সুষম বণ্টন
এবং অবশ্যই মা-বাবার মূলধনে
সমান অংশীদারীত্ব তোমার
ফুলের সৌরভ নেয়া
কিংবা নীলাকাশ দেখার অধিকার তোমার জন্মগত
শুধু সন্তান লালন আর রুটির কারাগারে
ক্রুশবিদ্ধ হতে জন্মাওনি তুমি
অতীতে আগুন দিলে বর্তমান অধরা থাকে না
সহমরণের অগস্ত্য যাত্রায় পুড়তে পুড়তে স্বর্গে যাবে
এই বিভীষিকার বাজপাখি ঠুকরে খাচ্ছে পৃথিবীর মুখ
প্রকাশ্য চুম্বন নিষিদ্ধ কিন্তু
কী অবলীলায় মেনে নিচ্ছো পাশবিকতা
তোমার সম্ভ্রম হানি করে এমন ক্ষমতা কারো নেই
হাজার পুরুষ তোমাকে স্পর্শ করলেও
তুমি থাকো অনাঘ্রাতা
কুমারী মেরি
সেবাধর্ম
সেবাধর্ম উঠে গেছে মানুষ নিয়েছে নানা সংঘের শরণ
ক্ষুধা ও দৈন্যের দেশে সেবা পায় সুদখোর প্রভুর চরণ
বোধের উদ্যোগ নেই সমিতি বিভূতি আর বিদেশী বাহানা
কত পথে অর্থ আসে দৃশ্যে শুধু বস্তিবাসী কুমিরের ছানা
নদীবর্তী মানুষের আতঙ্ক ভাঙন নয় সেবকের ঋণ
ক্ষুধা ও খাদ্যের দ্বন্দ্বে দাতাদের নীতিমালা কুয়াশা কঠিন
করুণার লেশমাত্র নেই কারো ধর্মের অধিক তারা সাধু
প্রান্তিকের রক্তের রান্না বাঙালার ব্যাঞ্জন বড়ই সুস্বাদু
খেয়েছে ইংরেজ আর্য পর্তুগীজ জলদস্যু ফরাসী বণিক
এখনো ভোলেনি তারা সেই স্বাদ লেহনের ইচ্ছে অনধিক
কেউ আসে খনিজের খোঁজে কেউ ঘন সবুজ গ্যাসের
চোখের জলের খনি কারো কারো উপজীব্য উপন্যাসের
স্বর্গের সড়ক খোঁজে কোনো কোনো মুনিঋষী মূষিক দেবতা
মানব শক্তির চেয়ে বড় কিছু নেই বুঝে বলেন- নেবো তা
প্রযুক্তির কলি যুগে অগণিত ইতিহাস অলিখিত থাকে
সরল হৃদয় যাকে মিত্র ভাবে সেও খায় সবুজ বাংলাকে
মুগ্ধ কোনো দৃশ্য নেই মাঝে মাঝে ঈসা খাঁর অশ্বের হ্রেষা
আর আর্তের সেবায় ঘরে ঘরে জেগে আছে মাদার তেরেসা
প্রতিবিদ্যা
আমি কোনো প্রশিক্ষক নই
যে শিক্ষা দেবো কিভাবে লিখতে হয় কবিতা
পৃথিবীর কোনো কবি
কবিতা লিখতে শেখাননি কাউকে
নদীর কল্লোল কিভাবে শুনতে হয়
পর্বতের উচ্চতায় কিভাবে বিষ্মিত হতে হয়
তা বুঝতে কাউকে বিদ্যালয়ে যেতে হয় না
প্রতিটি মাছ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস
প্রতিটি পাখি বিখ্যাত বৈমানিক
তাদের কোনো গুরুগৃহ নেই
ভুমিষ্ঠ শিশুকে কেউ বলে দেয় না কিভাবে কাঁদতে হবে
ভালোবাসার কৃৎকৌশল শিখতে যেতে হয় না
কুস্তিগীরের কাছে
আর পৃথিবীর সব মহত্তম মানুষেরা ছিলেন নিরক্ষর