
উপমার চতুরতা
উপমার মাধ্যমে আমি বলি: ‘আমি জিতেছি’
উপমার মাধ্যমে আমি বলি: ‘আমি হেরেছি’
আমার সামনে বিস্তৃত দুর্গম উপত্যকা
আমি শুয়ে আছি চির সবুজ
ওকের পড়ে থাকা অংশে
সেখানে দুটি জলপাই গাছ
তিন দিক থেকে আমাকে ঘিরে আছে
দুটি পাখি আমাকে বহন করে নিয়ে যায়
শিখর আর অতল গহ্বরের
শূন্যতার পাশে।
যেকারণে আমি বলি না: ‘আমি জিতেছি’
যেকারণে আমি বলি না:’আমি বাজিতে হেরে গেছি।’
মশা
আমি জানি না আরবীতে মশা শব্দটির পুংলিঙ্গ কী হতে পারে যা অপবাদের গ্লানির চেয়েও বেশি ধ্বংসাত্মক। শুধুমাত্র তোমার রক্ত চুষে এটি সন্তুষ্ট নয় বরং সে তোমাকে একটি নিষ্ফল যুদ্ধে বাধ্য করে। আল-মুতানব্বির উত্তেজনার মতো সে কেবল অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়। যুদ্ধবিমানের মতো ভোঁ ভোঁ গর্জন করে যা তুমি শুনতে পাওনা তোমার রক্তে পৌঁছা পর্যন্ত। তুমি তাকে দেখতে বাতি জ্বালাও আর সে ঘরের কোনও গোপন কোণে অদৃশ্য হয়ে যায়, তারপর দেওয়ালে স্থির দাঁড়ায় – নিরাপদে, শান্তিপূর্ণ, যেন আত্মসমর্পণ করেছে। তুমি এটিকে নিজের জুতা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করো, কিন্তু সে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় আর বিদ্বেষী তৃপ্তির বাতাস নিয়ে আবার উপস্থিত হয়।
তুমি তাকে চিৎকার করে অভিশাপ দিতে থাকো কিন্তু সে তাতে মনোযোগ দেয় না। তুমি বন্ধুত্বপূর্ণ কণ্ঠে তার সাথে যুদ্ধবিরতির আলোচনা করো: ‘ঘুমাও যাতে আমি ঘুমাতে পারি!’ তুমি মনে করো যে তুমি এটিকে বোঝাতে পেরেছো। তারপর আলো নিভিয়ে ঘুমাতে যাও। কিন্তু তোমার বেশিরভাগ রক্ত চুষে নেওয়ার পরে সে আবার গুনগুন করতে শুরু করে। নতুন আক্রমণের হুমকি দেয়। তারপর নিজের ঘামের সাথে তোমাকে একটি সম্পূরক যুদ্ধ করতে বাধ্য করে। তুমি আবার বাতি জ্বালিয়ে ওদের দুজনকে অর্থাৎ মশা আর ঘামকে পড়তে পড়তে প্রতিহত করো।
কিন্তু তুমি যে পৃষ্ঠাটি পড়েছো তাতে মশা এসে বসে, আর তুমি খুশি হয়ে নিজেকে বলছো: ‘এটা ফাঁদে পড়ে গেছে।’ তারপর তুমি বইটি বন্ধ করে দাও: ‘আমি এটিকে হত্যা করেছি… আমি এটিকে হত্যা করেছি!’ বিজয়ের গৌরব করতে যখন তুমি বইটি খুলবে তখন দেখবে সেখানে মশা বা শব্দের কোনও চিহ্ন নেই। তোমার বই খালি। আমি জানি না আরবীতে মশা শব্দটির পুংলিঙ্গ কী হতে পারে। এটি রূপক, ভ্রম কিংবা শব্দের খেলা নয়। এটি একটি পোকা যা তোমার রক্ত পছন্দ করে আর বিশ মাইল দূর থেকে গন্ধ নিতে পারে। যুদ্ধবিরতির জন্য তুমি এর সাথে দর কষাকষি করতে পারো শুধুমাত্র একটি উপায়ে: নিজের রক্তের ধরন পরিবর্তন করে।
একটি ঈগল নিচুতে উড়ছে
কবিতার ভেতরে ভ্রমণকারী
কবিতায় ভ্রমণকারীকে বলছিলো:
‘আর কতদূর যেতে হবে?’
‘সর্বদিকে’
‘তাহলে যাও, এমনভাবে যাও
যেন তুমি এসেছো বা আসো নি’
‘যদি যাওয়ার জন্য এতগুলো পথ না থাকত,
আমার হৃদয় ঝুঁটিত্তয়ালা হুপু পাখি হয়ে যেত
আর আমি পথ পেতাম’
‘তোমার হৃদয় ঝুঁটিত্তয়ালা হুপু পাখি হলে
আমি তাকে অনুসরণ করতাম’
“কে তুমি? তোমার নাম কি?”
‘ভ্রমণে আমার কোনো নাম নেই’
‘আমি কি আবার তোমাকে দেখতে পারব?
হ্যাঁ। দুই পাহাড়ের চূড়ায়
উচ্চ প্রতিধ্বনির সাথে আর তাদের গভীর খাদে,
আমি তোমাকে দেখবই’
‘তারপর আমরা কিভাবে খাদে ঝাঁপ দিব
যদি আমরা পাখি না হই?’
আমরা গান গাইব:
“কারা আমাদেরকে দেখতে পারে
যাদেরকে আমরা দেখতে পারি না?
আর আমরা যাদেরকে দেখি
তারা আমাদেরকে দেখতে পারে না”
“তারপর কি?”
“আমরা গান গাইব না”
“তারপর কি?”
তাহলে তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করো
আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি:
“আর কতদূর যেতে হবে?”
“সর্বদিকে”
“ভ্রমণকারীর আগমনের জন্য
সকল পথ কি যথেষ্ট?”
“না। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি
একটা কল্পিত ঈগল
আমাদের উপরে চক্কর দিচ্ছে,
নিচুতে উড়ছে!”
ব্যক্তিগত দায়িত্ব
তারা চিৎকার করে উঠল ‘বীর!’ কাছে গিয়ে তাকে পাবলিক স্কোয়ারে প্যারেড করিয়ে নিয়ে গেলো। অল্পবয়সী মেয়েদের হৃদয় তাকে দেখে লাফিয়ে উঠল, বারান্দা থেকে তার দিকে ধান আর লিলি ছুঁড়ে মেরেছিল। কবিতা উৎসবের দ্রোহী কবিরা উদ্দীপ্ত হয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় তাকে সম্বোধন করেছিলেন: ‘আমাদের বীর! আমাদের আশা!’ তারপর সে, বিজয়ের পতাকার মতো কাঁধ উঁচু করে, নানাবিধ উপাধির বন্যায় নিজের নাম হারিয়েছিলো। বিয়ের দিনের বধূর মতো লাজুক হয়ে বলে: ‘আমি কিছুই করিনি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম।’ পরের দিন সকালে সে নিজেকে একা পেয়ে এক সুদূর অতীতের কর্তিত আঙ্গুল হাতছানি দিয়েছিলো: ‘আমাদের নায়ক! আমাদের আশা!’ সে চারপাশে তাকিয়ে গতকালের উৎসাহী শ্রোতাদের কাউকে দেখতে পায়নি। সে একা নির্জন ঘরে বসে তার শরীরে বীরত্বের চিহ্ন খুঁজতে স্প্লিন্টারগুলি বের করে একটি ধাতব থালায় রাখলো কিন্তু ব্যথা অনুভব করলো না। ব্যথা এখানে নয়। ব্যথাটা অন্য জায়গায়। কিন্তু এখন তাদের সাহায্যের আর্তনাদ কে শোনে? সে ক্ষুধার্ত অনুভব করল। সে সার্ডিন আর বাদামী মটরশুটির টিন অনুসন্ধান করে দেখতে পায় সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। সে হেসে উঠলো আর বিড়বিড় করে বলে উঠলো: ‘বীরত্বেরও নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে, তারপর বুঝতে পেরেছিলো যে সে তার দেশপ্রেমের দায়িত্ব পালন করেছে!
সর্বজনীন শত্রু
যুদ্ধে হালকা ঘুমিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। যোদ্ধারা তাদের গার্লফ্রেন্ডের কাছে যায়, ক্লান্তি আর ভয়ের কারণে তাদের কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হবে: ‘আমরা জিতেছি কারণ আমরা মরিনি, আর আমাদের শত্রুরাও জিতেছে কারণ তারাও মরেনি।’ পরাজয়ের জন্য সে এক নিরাশ অভিব্যক্তি। কিন্তু স্বাধীন যোদ্ধা যাকে ভালোবাসে তার উপস্থিতিতে সে আসলে একজন সৈনিক নয়: ‘তোমার চোখ যদি আমার হৃদয়ের দিকে লক্ষ্য না করত তবে বুলেটটি সেখানে প্রবেশ করত!’ অথবা: ‘আমি যদি হত্যা এড়াতে এতটা উদগ্রীব না হতাম, আমি কাউকে হত্যা করতাম না!’ অথবা: ‘আমি মরে গেলে তোমার জন্য ভয় পেতাম, তাই তোমার মনকে শান্ত করতে আমি বেঁচে গিয়েছিলাম।’ অথবা: ‘বীরত্ব এমন একটি শব্দ যা আমরা কেবল কবরের কাছে ব্যবহার করি।’ অথবা: ‘যুদ্ধে আমি বিজয়ের কথা ভাবিনি, কিন্তু নিরাপদ থাকার কথাও ভাবিনি কিংবা তোমার পিঠে আঘাতের কথা ভাবিনি।’ অথবা: ‘নিরাপত্তা, শান্তি আর তুমি যে ঘরে ঘুমাও তার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে।’ অথবা: ‘যখন আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম তখন আমি আমার শত্রুর কাছে পানি চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি, তাই আমি তোমার নাম বলার পর আমার তৃষ্ণা নিবারণ হল।’ উভয় পক্ষের যোদ্ধারা তাদের ভালবাসার উপস্থিতিতে একই রকম কথা বলে। কিন্তু উভয় পক্ষের হতাহতরা অনেক দেরি না হওয়া পর্যন্ত বুঝতে পারে না যে তাদের একটি সাধারণ শত্রু আছে: যার নাম মৃত্যু। সুতরাং এর মানে কি ?