
একটি রাইফেল আর একটি কাফন
‘কেউ কখনই আমাকে পরাজিত করতে পারবে না, বা আমার কাছে পরাজিত হবে না,’ কিছু গুরুত্বহীন কাজের জন্য অভিযুক্ত এক মুখোশধারী নিরাপত্তাকর্মী বললো। সে ফাঁকা গুলি চালিয়ে বললো: ‘শুধু বুলেটই জানবে কে আমার শত্রু।’ বাতাস সাড়া দিল একটি অনুরূপ বুলেট সহ। বেকার পথচারীরা তাদের কাজের বাইরে একজন মুখোশধারী নিরাপত্তাকর্মীর মনে কী ঘটছে তা নিয়ে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু সে তার নিজের ব্যক্তিগত যুদ্ধ খুঁজছিল কারণ সে রক্ষা করার মতো শান্তি খুঁজে পায়নি। সে আকাশের দিকে তাকালো আর আকাশটা ছিলো অনেক উঁচুতে পরিষ্কার। সে কবিতা পছন্দ করতোনা তাই আকাশকে সমুদ্রের আয়না হিসেবে দেখতে পারেনি। সে ক্ষুধার্ত ছিলো, আর ভাজা নিরামিষ ফ্যালাফেলের গন্ধ পেলে তার ক্ষুধা বেড়ে যায়। তারপর সে অনুভব করেছিলো তার রাইফেল তাকে তাচ্ছিল্য করেছে। সে আকাশের দিকে গুলি চালিয়েছিলো যদি বেহেশত থেকে তার উপর একগুচ্ছ আঙ্গুর পতিত হয়। একটি বুলেট তাকে প্রতিউত্তর দিয়েছিলো, যা লড়াইয়ের জন্য তার চাপা উৎসাহকে জাগিয়ে তুলেছিল। সে একটি কাল্পনিক যুদ্ধে ছুটে গেলো আর মনে মনে বললো: ‘অবশেষে আমি কাজ খুঁজে পেয়েছি। এটা যুদ্ধ।’ সে অন্য একজন মুখোশধারী নিরাপত্তারক্ষীর উপর গুলি চালিয়ে তার কাল্পনিক শত্রুকে আঘাত করে নিজের পায়ে সামান্য আঘাত পেয়েছিলো। তারপর সে শিবিরে নিজের বাড়িতে ফিরে, রাইফেলের উপর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সে দেখতে পেল যে বাড়িটি শোকার্ত মানুষের ভিড়ে ঠাসাঠাসি হয়ে আছে। তখন সে মুচকি হেসে উঠলো কারণ সে মনে করলো শোকার্তরা এই ভেবে শোক করছে যে সে শহীদ হয়েছে। সে বললো: আমি মারা যাই নাই। যখন তারা তাকে জানায় যে সে তার ভাইকে হত্যা করেছে, তখন সে তার রাইফেলের দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল: ‘আমি আমার ভাইয়ের উপযুক্ত একটি কাফন কিনতে এটি বিক্রি করতে যাচ্ছি।’
লজ্জাজনক ভূমি
এটি একটি অবরুদ্ধ ভূমি যেখানে আমরা বসবাস করি আর এটি আমাদের বসবাস করায়। একটি অবরুদ্ধ ভূমি, একজন নবী আর একজন জেনারেলের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের জন্য যথেষ্ট বড় নয়। যদি দুটি মোরগ একটি মুরগির জন্য তাদের অহংকার নিয়ে লড়াই করে তবে তাদের পালক উড়ে যায়। একটি অবরুদ্ধ ভূমি যেখানে মিলনের জন্য একটি পুরুষ আর মহিলা ঘুঘুর ঘনিষ্ঠতা নেই। লজ্জাজনক ভূমি। গ্রীষ্মে হলুদ হয়ে যাওয়া ভূমি, যেখানে কাঁটাগুলি সময় কাটানোর জন্য পাথরের পৃষ্ঠে খাঁজ কাটে, এমনকি যদি আমাদের কবিতা বিপরীত কিছু বলে, তাদের পরিচয় রক্ষা করতে তারা ক্ষুধা মেটাতে অনুভবের ভেতর বেহেশতের সুন্দর বস্তুর বর্ণনা করে। আমরা যারা দাপ্তরিক আর কাব্যিক দলিল বর্ণনা করি তারা তার স্বতঃস্ফূর্ততা আশা করি, জানি যে আকাশ দলিলের জন্য তার কাজগুলো ত্যাগ করবে না। একটি অবরুদ্ধ ভূমি, যাকে আমরা ভালবাসি আর বিশ্বাস করি এটি আমাদেরকে ভালবাসে, জীবিত বা মৃত। আমরা তাকে ভালোবাসি আর জানি যে এই ভূমি নির্লজ্জ হাসি বা সুফির প্রার্থনার জন্য যথেষ্ট বড় নয়। এমনকি প্রতিবেশীদের প্রার্থনারত চোখের নাগালের বাইরে ধোয়া কাপড় ঝুলিয়ে রাখার জন্য বা অনুবাদিত সনেটের চতুর্দশ লাইনের জন্য যথেষ্ট বড় নয়। একটি অবরুদ্ধ ভূমি যেখানে বহিরাগত শত্রুর সাথে উপযুক্ত যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট বড় কোন এলাকা নেই কিংবা মিছামিছি শান্তির বিস্তৃত আলোচনা করতে লোকেদের মিলিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট বড় হল নেই। এইসব সত্ত্বেও বা এইসব কারণে, লোকেরা বলে অসন্তুষ্ট ঈশ্বর পিছু হটানোর জন্য একটি গুহা হিসাবে এটিকে বেছে নিয়েছিলেন অপ্রত্যাশিত অতিথিদের থেকে লুকানোর একটি জায়গা হিসেবে যারা তখনই আমাদের মেষের শিং চুরি করেছিল আর পবিত্র গুহার দরজা থেকে আমাদের দূরে রাখার জন্য অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
সে বলেছিলো: আমি ভয় পাচ্ছি
সে ভীত ছিল। সে চিৎকার করে বলেছিলো: ‘আমি ভয় পাচ্ছি।’ জানালা দৃঢ়ভাবে লাগানো ছিলো, তারপর প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল: ‘আমি ভয় পাচ্ছি।’ সে নীরব ছিলো, কিন্তু দেয়াল পুনরাবৃত্তি করতে থাকলো: ‘আমি ভয় পাচ্ছি।’ দরজা, চেয়ার, টেবিল, পর্দা, পাটি, মোমবাতি, কলম আর ছবি সব বলতে থাকলো: ‘আমি ভয় পাচ্ছি।’ ভয় তখন ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো: ‘যথেষ্ট!’ কিন্তু প্রতিধ্বনি হলো না: ‘যথেষ্ট!’ সে বাড়িতে থাকতে ভয় পেয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সে একটি ছিন্নভিন্ন পপলার গাছ দেখে অজানা কারণে এর দিকে তাকাতে ভয় পেলো। একটি সামরিক যান দ্রুত গতিতে চলে গেল আর সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় পেল। ঘরে ফিরে যেতে ভয় পেলেও তার কোন উপায় ছিল না। সে ভয় পেয়েছিলো এই ভেবে যে তার চাবিটি ভিতরে রেখে এসেছে কিন্তু যখন এটি নিজের পকেটে খুঁজে পেলো তখন সে আশ্বস্ত হলো। তার ভয় ছিল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সে সিঁড়ির দিকে প্যাসেজে সুইচ টিপলো আর আলো জ্বলে উঠল, তাই সে আশ্বস্ত হলো। সে ভয় পেয়েছিলো এই ভেবে যে সিঁড়িতে পিছলে পড়বে আর তার কোমর ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু এটি ঘটেনি তাই সে আশ্বস্ত হলো। সে চাবিটি তালার ভেতরে ঢুকিয়ে ভয় পেয়েছিলো যে দরজাটি খুলবে না, কিন্তু তা খুলেছে, তাই সে আশ্বস্ত হলো। ভেতরে ঢুকে ভয়ে ভয়ে চেয়ারে বসেই বের হয়ে গেল সে। যখন সে নিশ্চিত হলো যে সে ই বাড়িতে প্রবেশ করেছিলো, অন্য কেউ নয়, তখন সে আয়নার সামনে দাঁড়ালো, যখন সে আয়নায় নিজের মুখ চিনতে পারলো, তখন সে আশ্বস্ত হলো। সে নীরবতায় কান পাতলো, এবং কোনো কথা শুনলো না: ‘আমি ভয় পাচ্ছি’ তখন সে আশ্বস্ত হলো। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সে আর ভয় পেল না।
নদী মরে যায় পিপাসায়
এখানে একটি নদী ছিল
যার দুটি তীর ছিল
আর এক স্বর্গীয় মা ছিলো
যে তাকে মেঘের ফোঁটায়
পালন করেছিলো।
পাহাড়ের চূড়া থেকে
নেমে আসা ছোট নদীটি
বয়ে চলেছে ধীরে ধীরে
কমনীয় প্রাণবন্ত অতিথির মত
গ্রাম আর তাঁবু দেখতে দেখতে
উপত্যকায় করবী আর খেজুর গাছ
এনে তীরে তার নিশাচর ভক্তদের কাছে
হাসতে থাকে: ‘মেঘের দুধ পান কর
আর ঘোড়াকে পানি পান করিয়ে
জেরুজালেম অথবা দামেস্কে উড়ে যাও।’
কখনও কখনও
এটি গেয়েছিল বীরত্বের গান
অন্যরকম গভীর আবেগের সাথে।
এটি একটি নদী ছিল
যার ছিলো দুটি তীর
আর ছিলো এক স্বর্গীয় মা
যে তাকে মেঘের ফোঁটায়
পালন করেছিলো।
কিন্তু তারা তার মাকে
অপহরণ করে নিলো
তাই পানির অভাবে ধীরে ধীরে
এটি তৃষ্ণায় মরে গেলো।
ভয়ের আইন
অনুশোচনাহীন হত্যাকারী মৃত ব্যক্তির চোখের দিকে না তাকিয়ে ছায়ামূর্তির দিকে তাকায়। সে তার আশেপাশের লোকদের বলে: ‘আমাকে দোষ দিও না। আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভয় পেয়ে হত্যা করেছি, আর আমি ভয় পেয়ে আবার হত্যা করব।’ বিচার সম্পর্কিত আইনের উপর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে অভ্যস্ত উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ বলে: ‘সে নিজেকে রক্ষা করেছে।’ অন্যন্যরা যারা নৈতিকতার উন্নত স্তরে আছে তারা বলে: ‘ন্যায়বিচার ক্ষমতার উদারতা থেকে উদ্ভূত হয়। হত্যাকারীর উপর যে মানসিক আঘাত এনেছে তার জন্য ভুক্তভোগীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ জীবন আর বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য বিষয়ক পণ্ডিতরা বলেন: “এই সাধারণ ঘটনাটি যদি এইখানে পবিত্র ভূমিতে না ঘটে অন্য যে কোনো জায়গায় ঘটতো তবে আমরা কি ভুক্তভোগীর নাম জানতে পারতাম? আসো আমরা ভীত লোকটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিই।’ তারা যখন হত্যাকারীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের পথে নেমেছিল, তখন পাশ দিয়ে যাওয়া কিছু বিদেশী পর্যটক তাদের জিজ্ঞাসা করেছিল: ‘বাচ্চাটি কী ভুল করেছে? তারা উত্তর দিলো: ‘সে বড় হয়ে ভীত লোকটির ছেলেকে ভয় দেখাবে।’ ‘মহিলাটি কি দোষ করেছে?’ তারা বলল: ‘সে একটি স্মৃতির জন্ম দেবে। “গাছটা কি দোষ করেছে?” তারা বললো: ‘এর থেকে একটা সবুজ পাখি আবির্ভূত হবে।’ তারপর তারা চিৎকার করে বলেছিল: ‘ভয়, ন্যায়বিচার নয়, শক্তির ভিত্তি। যখন মৃত ব্যক্তির ছায়ামূর্তি মেঘহীন আকাশ থেকে তাদের কাছে আবির্ভূত হলো তখন তারা তার উপর গুলি চালাল কিন্তু তারা এক ফোঁটা রক্তও দেখতে পেল না। তারপর তারা ভয় পেল।