Author Picture

মামুন আজাদ-এর একগুচ্ছ কবিতা

মামুন আজাদ

অটোগ্রাফ

ক্যাবারে ড্যান্সারের মসৃণ উরুতে
স্যাম্পেন ঢাললেন শেখ হাফিজ বিন সাত্তার।
নতুন মডেলের ফেরারিটা সবার আগেই
নিজের গ্যারেজে ঢোকালেন সুলতান খালিদ।
ধর্মনিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট ইমরুদ কার্দিক মহাতৃপ্ত
আসছে ন্যাটোর সমর্থন
ইইউতে পাওয়া গেছে ভিসা ফ্রি অধিকার।
সুদূর আফ্রিকা তুরান থেকে ছুটে আসা
ইব্রাহিম খলিলরা ভাসা ভাসা বাঙলায়
বহুত ফায়দার দাওয়াতে
মাতাচ্ছেন ‘তুরাগে’র পাড়!
মা-শা-আল্লাহ, মা-শা-আল্লাহ
ধ্বনিত হয় আকাশ বাতাস!
পবিত্র ধর্মশালাতে নূরানী ইমাম সাহেবরা
চোখে সুরমা লাগিয়ে ঘোষণা করছেন
‘ইহকাল নহে পরকাল
পরকাল!’
আর এদিকে
তেলআবিবের ফুটফুটে সোনামনিরা
সারিবদ্ধ ক্রজ  মিজাইলের উপর
লাল কালিতে দিচ্ছে নিজেদের প্রথম অটোগ্রাফ
আসছে রমজানের ঈদেই আগুনের ডিমগুলো
পৌঁছে যাবে গাজা উপত্যাকায়।
কবর তো খোড়ায় আছে !!

 

কবর

কিছু কবর থাকাটা জরুরী ভীষণ
তোমাদের কবর তোমাদের উত্তরপুরুষদের মাটিকে শক্ত করবে
মনে রেখ তোমরা তাদের মতো এক কাপড়ে আসোনি
আর এক কাপড়ে যাবেও না
এই মাটি যার জন্য তোমার বাবা রক্ত দিয়েছে
তোমার মা অপেক্ষায় বুনেছে স্বপ্নের জাল
মনে রেখ
এই পৃথিবী কিছুই করবে না
দেখছো না তোমার আরব ভাইয়েরা
যে আরবদের তোমরা ভাই ডাকছো
তারা তোমার নয়,আবু জাহেলের ভ্রাতা

‘মৃত্যুকে ভালবাসো যেমন ওরা ভালোবাসে জীবনকে।
তোমাদের শাহদাতের তামান্না হোক শত্রুর অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী
তোমরা মনে রেখ, তোমরা আসলে আল্লাহর রাস্তারই পথিক
মনে রেখ যুদ্ধের জয়-পরাজয় শক্তিতে নয় হয় ঈমানে
ওরা সংখ্যায় অনেক হতে পারে কিন্তু তোমরা মনে রেখ
একজন সাইফুল্লাহ খালিদ তোমাদের পূর্বপুরুষ
তোমাদেরতো দুই দিকেই লাভ
হয় শাহাদাতের অমিয় শুধা নয় বিজয়ী।

তোমরা হারিয়েছ মা বাবা সন্তান বন্ধু
হারিয়েছ খেলনা, প্রিয় বিড়াল…
তোমরা রংগিন সুতায় বেধেছো নিজের কব্জি…
তোমরা হতাশ হয়োনা
তোমরাতো ইতিহাসের অংশ
তোমাদের কথা লিখবে হোমার
লিখবে নজরুল…
লিখবে টলস্টয়…
আর এসবই ভেবে নিয়ে নাজিমের মতো
‘আমার কথার কথা’…

 

জান্নাতুল ফেরদৌস

মুনকার নাকির সীল মারবেন
গভীর ঘুমের সার্টিফিকেট
ধৈর্যশীলতার পুরস্কার ‘জান্নাতুল ফেরদৌস’
যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত ঝর্ণা
সত্তর হুর পদসেবায় মশগুল!
ঠিক এরকম স্বপ্ন,  আমারও ছিল
আমিও চেয়েছিলাম
শেষ ঠিকানায় ঘুমাবো নরম বিছানায়।
পুনরুত্থান পর্যন্ত থাকবে শান্তি
কিন্তু মাতৃভূমির চেয়ে বড় আর কি হতে পারে
মা’য়ের সুখের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে!
তাই আমি ধৈর্যশীল হতে পারিনি!

যখন দেখি
আমার ঘরে আমিই পরবাসি
আমার স্বজনের রক্তে উর্বর করে
আমারই জমিনে হাল দেয় দস্যুরা
আমার ফুলের বাগানে আমাকেই
করতে হয় মালি’র চাকরি!
তখন কিভাবে আমি ধৈর্যশীল হবো?
তাইতো পাথর ছুড়েছিলাম
ওরাও প্রস্তুত ছিল, যেমন থাকে
আর তাই
‘ওদের’ নির্ভুল রাইফেলের গুলিতে
আমার ঠিকানা আজ শহীদের কবর।
আহা শহীদের কবর!
শান্তির কবর।
কিন্তু কবরে শান্তির ঘুম আমি চাইনি
চেয়েছিলাম মাতৃভূমির শান্তি
স্বপ্ন দেখতাম
আমার মা নির্বিঘ্নে সুই চালাচ্ছে
তার নকশিকাঁথায়
গুনগুন করে গাইছে কৈশরের স্বপ্নিল গান
বাবা আরাম কেদারায় বসে
খুব কায়দা করে মুছছেন চশমার কাঁচ
পড়ছেন ফেরাউনের ইতিহাস।
আমার বড়বোন তার স্বামীর হাত ধরে
বেড়াতে যাচ্ছে আগ্রার তাজমহল
সদ্য যৌবনে উঠা ছোট বোনটি
অপেক্ষা করছে
হটাৎ প্রিয় হয়ে উঠা কোন যুবকের জন্য।
আমাদের সবুজ লনে খেলা করছে
দাদির কুকুরগুলো
আর আমি
পুকুরপাড়ে নাজিয়া’র কালো চোখে
নিজেকে হারাচ্ছি গভীর আবেশে!
হায়; নাজিয়া আজ প্যারিসে,
মিলিয়ন ইউরোতে বিকোচ্ছে তার অর্ন্তবাসের সুগন্ধ
আমাদের স্বপ্নগুলো চূর্ন হচ্ছে
ওদের হলুদ রঙের বুলডোজারে
আর আমি কি না কবরে
শুয়ে আছি নরম বিছানায়
একঘুমে কাটাবো পুনরুত্থান
অত:পর সীমাহীন সুখের বেহেশত
যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত ঝর্না
সত্তর হুর পদসেবায় মশগুল!
এমন ঘুম আমি চাইনি
এমন ঘুম আমি চাইনা।
এমন ঘুম আমি চাইনা।

 

আবাবিল ফিরে আসছে

সুপ্রিয় কবিগন; আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি
আব্রাহা ফিরে এসেছে
ঐ দেখুন, আবার তারা জেগে উঠেছে
ধ্বংস করতে চায় আল আকসা
ধ্বংস করতে চায় ‘কেনান’; যেখান থেকে শুরু সভ্যতা
গুড়িয়ে দিতে চায় মানুষের প্রথম ইতিহাস
চেয়ে দেখুন, একে একে তাকে সমর্থন দিচ্ছে ইবলিসের দোসরগন
‘স্যাম’ চাচার কাছে, এর চেয়ে আপনি কি বা আশা করতে পারেন
তাই লিবারেল মুখোস খুলে সামনে আসুন।

প্রিয় কবিগন এবার জাগ্রত হোন
কুম্ভকর্ণের মতো আর কতো ঘুমাবেন
ফুল পাখি নদী প্রেম, এসব আর কতো !
এবার একটু মানুষের কথা লিখুন
আল্লাহর মালিকানায় আপনার হয়তো এলার্জি
তাহলে লিখুন সর্বহারার মালিকানা
লিখুন হক বাতিলের ইতিহাস
লিখুন শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।

আর লিখুন, বীরত্বের ইতিহাস
আজ কোন করুণ ইতিহাস লিখবেন না
বুলেট থেকে যাদের জন্ম, তারাই আগ্নেয়গিরি
মৃত্যুকে নিয়ে  তারাই খেলা করে হাতের মুঠোয়
লিখুন, ঈমান থাকলে, তিনশত তের জনই যথেষ্ট!

লিখুন কিভাবে আমার ভাইয়েরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দূর্ধর্ষ ট্যাংকের সামনে
লিখুন সবচেয়ে সাহসি বাচ্চাদের কথা
যারা এম সিক্সটিনের সামনে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে
সেই ছেলেটির কথা লিখুন,
যে বাবার কবর জিয়ারত করে আবার ছুটছে পাথর হাতে
লিখুন, দুই পা না থাকলেও কিভাবে লড়তে হয়,
সেই ইতিহাস;

লিখুন, ফিনিক্স পাখির মৃত্যু নাই
লিখুন, ওরা জেগে উঠেছে
লিখুন, মহাবীর খালিদ ফিরে এসেছে
এবার কোন করুন ইতিহাস নয়
বুলেট থেকে যাদের জন্ম, তারাই আগ্নেয়গিরি
মৃত্যুকে নিয়ে তারাই খেলা করে হাতের মুঠোয়
লিখুন পাথর দিয়ে যারা যুদ্ধ করে তাদের ইতিহাস
ওদেরকে বলে দিন
এই কেনানে
দাউদ কিভাবে সামান্য পাথরে হত্যা করেছিল অহংকারী গালিয়াতকে
বলে দিন
আবাবিল নামের ছোট্ট পাখিরা
পাথর দিয়ে কিভাবে গুড়িয়ে দিয়েছিল
আব্রাহার হস্তিবাহিনী
ওদের কে বলে দিন
এবার হবে আসল যুদ্ধ
চোখের বদলে চোখ
হাতের বদলে হাত
রক্তের বদলে রক্ত
ওদেরকে বলে দিন
‘আবাবিল’ আবার ফিরে আসছে মুখে বারুদ নিয়ে
যদি ‘বারুদই হয় অন্তিম সমাধান’
তবে তাই হোক
বারুদেই হোক অন্তিম সমাপ্তি।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!