Author Picture

মামুন আজাদের একগুচ্ছ কবিতা

মামুন আজাদ

ইহা একটি বিপ্লবের খাঁটি ইস্তেহার
.
তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিলেন
যেমনটা নেন প্রায়ই
তার মতো আরো যারা ছিলেন
কেউ বন্ধু,বোন ব্রাদার ইত্যাদির কাছ থেকে নেন
যেমনটা উনারা নেন প্রায়ই
তারা সবাই আসলেন
চা খেলেন সাথে সিগারেট
খুব সন্তর্পনে বায়ু ত্যাগ করে
বললেন, ‘বিপ্লব’ ‘বিপ্লব’ !!

প্রকৃতি পাঠ
.
আমরা পাঠ করবো প্রকৃতি থেকে
আমি আমার গ্রামকে শহর বানাতে দেবনা
আমি দারবিশের কাবতা পড়েছি
দেখেছি কিভাবে তোমরা
আমাদের আঙ্গুর ক্ষেত গুড়িয়ে
তৈরি করো ওয়াইনের কারখানা
তোমরা নদীতে বাঁধ দিয়ে
তৈরী করো বিদ্যুৎ
তোমাদের কলের কালো মবিল
খেয়ে ফেলেছে জলের অক্সিজেন
গাছদের গায়েও বেড়েছে জ্বর
তোমরা আমাদের বনভূমি কেটে
করছো পপি ফুলের চাষ।

তোমারা আমাদের কয়লা তুলছো
আমাদের তেল তুলছো
আমাদের গ্যাস তুলছো

আর আমরা, আমাদের জমিতে
চাকরি করে চাকর হচ্ছি তোমাদের।

আমরা আমাদের গ্রামকে শহর বানাতে দেবনা
আমরা ‘আমরাই’ থাকবো
আমরা পাঠ করবো প্রকৃতি থেকে।

আমরা কৃষক থাকবো
আমরা জেলে থাকবো
ঘোষ,পাল,জোলা,পাটনি
এবং আরো যা কিছু পদবী
তোমরা দিয়েছো
আমরা ‘আমরাই’ থাকবো।

আমরা স্পার্টাকাস পড়েছি
আমরা ‘দিব্যক’কে জেনেছি
আমরা তোমাদের মতো পদলেহী হতে চাই না
আমরা চৌধুরী হতে চাই না
আমরা রায় হতে চাই না
আমরা ‘আমরাই’ থাকতে চাই।
আমরা পাঠ করবো প্রকৃতি থেকে
আমরা আমাদের গ্রামকে শহর বানাতে দেবনা।

জাদুকরের প্রত্যাবর্তন
.
বন্ধুরা,
আপনারা কেউ কেউ হয়তো দুঃখিত হবেন
তারজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
অন্যদের খুশির সন্দেশ দিচ্ছি
মহান জাদুকর ফিরে এসেছেন !
না ! এবার তিনি আকাশের খেলা দেখাবেন না।
এই জমিনে মৌলিক পদার্থের রুপান্তর
নিঃসন্দেহে এই প্রথম।
কপারফিল্ড কিংম্বা পিসি সরকার
আমাদের মহান জাদুকরের শিষ্য ।
হয়তো অতি বুদ্ধিজীবীগণ মুচকি হাঁসছেন!
আপনাদের আশস্ত করছি
অ্যালকেমির সূত্র চুরি করা হয়নি।
জাদুকর দেখাবেন সম্পূর্ন নতুন খেলা।
ঐ যে
জাদুর আয়নায় দেখুন
চাঁদ তাঁরা মার্কা সফেদ টুপিতে
আরবি আতঁর মেখে
জাদুকর বশ করছেন এক তজবিওয়ালাকে।
বন্ধুরা
আপনারা কিন্তু
নিজেদের পকেট চেক করে নিন
হয়তো ইতিমধ্যে আবারো
হাজার নোটের কারেন্সি গুলো
রুপান্তরীত হয়েছে তুলোট কাগজে।
সাবধান !
বন্ধুরা, ভয় পাবেন না,
চেয়ে দেখুন
সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর সুন্দর ব্যাঘ্র
রাজসিংহাসন ছেড়ে
অথবা চ্যুত হয়ে !
রামপালে আসছে হাজার ভোল্টের আলোয়
লাইভ টকশোতে ফিরিস্তি দিচ্ছেন উন্নয়নের মহাকাব্য ।
বন্ধুরা, এইবার চোখ রাখুন উপরে
হ্যা, একটু পশ্চিম দিকে
দেখুন, রাবনের পুস্পকে
জাদুকর উড়াল দিলেন । নিশ্চিত গন্তব্যে
পান্ডবের সাথে মিলিত হলেন হস্তিনাপুরে
দ্রৌপদিকে দিলেন ইলিশের ঝাপি
আর গজমতির মালা।
সাজানো হলো মঞ্চ
ঐ দেখুন, দৃষ্টি তিক্ষ্ণ করুন
জাদুকর বের করলেন তার পাশার গুটি
শকুনি মামাকে শিশু বানিয়ে
চেয়ে দেখুন বন্ধুরা;
পাশার গুটি ফেলা হলো, সুসজ্জিত মঞ্চে
দেখুন, আরো ভালো করে দেখুন
কিভাবে … বুনো তেতুঁল আস্তে আস্তে
রুপান্তরীত হচ্ছে বেহেশতি মেওয়া’য়।
প্রিয় সূহৃদ, এমন ভেলকিবাজী হয়তো আগে দেখেননি !
হতাশ হবেন না
অতবা অতিমাত্রায় আনন্দিত !
জাদুকর আবার আসবেন
আমরা বরং অপেক্ষা করি ।

আমার কিছু মেটাফোর চাই
.
আমি যখন আমার পিতার কথা বলি
তখন প্রশংসাগুলো একে একে জমা হয়
যেন জালে আপনাই এসে ধরা দিচ্ছে রুই কাতলা
পিতার প্রশংসাই আমার বুক ফুলে উঠে
মুখে ফেনা।
পিতার কন্যা; অন্যদের মতো আমারও সহোদরা
আমাদের পিতার মতই তিনি বিশাল, বা একটু বেশি
পিতার মৃত্যুর পর সেই আমাদের বটবৃক্ষ !
আমাদের সহোদরা ও পিতার ক্বাসিদা লিখতে লিখতে
আমার ভাষার প্রাঞ্চলতা খোলতায় হয়
আমার কবিতা হয়ে উঠে সাবলিল।

কিন্তু সমস্যা বাধে যখন আমি
আম-জনতার কথা বলতে চাই !

আম-জনতা শব্দটি অবশ্যই ব্যাখ্যার দাবিদার
বিসিএস ক্যাডার, সরকারী চাকুরে, কর্পোরেট চাকুরে
বড় ব্যবসায়ী যাদের সাথে ব্যাংগুলোর উত্তেজক সম্পর্ক
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আতি-পাতি-মহারতি
এমনকি সরকারী দলের ছাত্রনেতা ইত্যাদি ব্যাতিত
সবায়ই মোটামুটি ম্যাংগো বা আম-জনতা !

সেই সাধারণের কথা লিখতে আমার কবিতা
ভাষা খুঁজে পাইনা।
অতএব হে জ্ঞানী ! আমায় কিছু মেটাফোর ধার দিন;
কিছু রুপকে আমি বলতে পারি
আমার মেয়ের খাবারের দাম বাড়ছে
মায়ের ঔষধের, বাবার চশমার
আমাদের উনুনের হাড়ি
ইদানিং অল্প সময়েই তার ক্রিয়া সম্পাদন করিতেছে।
আমার স্ত্রীর জিরো ফিগার, সন্তানের পেট মোটা
এবং আমার মাতার ব্রংকাইটিস বাড়ছে।

আমার মতো কালিবেচা শ্রমিকও
ইদানিং হরহামেশাই টিসিবির লাইনে।
এইতো সেদিন একই সারিতে দেখা হলো
আমার শিক্ষকের সাথে।

মহান পিতা ও আমাদের সহোদরা
আপনাকে কিভাবে বলি?
লাইন কিন্তু বাড়ছে
লাইন কিন্তু বাড়ছে !

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!