Author Picture

ভালোবাসার কারাগারে

খন্দকার রেজাউল করিম

‘বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায়, বিনা কারণে।
এ মনে যতন করে বিফল প্রেমের বীজ বুনেছে হায়, বিনা কারণে।
আমি বাদী, আমি বিবাদী, কোথা উধাও অপরাধী।
কেন সেই রূপের আগুন বুকে জ্বেলে আছি বেঁচে হায়, বিনা কারণে।’

হঠাৎ একদিন কেভিনের কপালটা গেলো খুলে। সুজান ফোন করেছে, ‘কাল থেকে আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বন্ধ। বৈদ্যুতিক প্যানেলটা পুড়ে গেছে। ডেভকে ফোন করেছিলাম, ওটা সারাতে নাকি কয়েক দিন লাগবে। কি করবো বুঝতে পারছি না।’
‘আমার এপার্টমেন্টে চলে এসো, দুটো ঘর খালি আছে। তোমার, জেসির এবং তোমার কুকুরের কোনো অনাদর হবে না।’ কেভিনের স্বপ্নচারিনী শেষপর্যন্ত কেভিনের ঘরে আসলো।
তারপরেই শুরু হলো এক খ্যাপা প্রেমিকের ভালোবাসার নির্যাতন। কেভিন সুজানকে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল হতে দেয় না। প্রতিদিন দুটি টিভি সিরিয়েল দেখা সুজানের অনেকদিনের অভ্যাস। আগে পপকর্ন খেতে খেতে একা টিভি দেখতো। কেভিন এসব কখনো দেখে নি, কিন্তু তবুও সুজানের পাশে বসে থাকে। মুগ্ধ চোখে সুজানের দিকে চেয়ে থাকে। সুজানকে পিপাসিত মনে হলে দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে। পপকর্ন শেষ হওয়ার আগেই চুলা গরম করে নতুন গরম পপকর্নের প্যাকেট নিয়ে আসে। কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে দেয়। দোকান থেকে এক গাদা দামি পোশাক কিনে এনেছে কেভিন। সুজানের যে রং পছন্দ কেভিনের তা পছন্দ নয়। সুজানের সব কাপড় কেভিন ইস্ত্রি করে রাখে। সুজান গাড়ি নিয়ে একা ঘুরতে গেলে কেভিন সবসময় তার সঙ্গী হতে চায়।

প্রথম দর্শনেই যারা রূপসী মেয়েদের অনুরক্ত হয়ে পড়ে, তাদের প্রতি সুজানের একধরণের অবজ্ঞা ছিল। এরকম ছেলেদের দেখা হাটেবাজারে গন্ডায় গন্ডায় মেলে

সুজান জীবনের অনেকটা সময় একা কাটিয়েছে। একাকী জীবনের স্বাধীনতা, সুবিধে, এবং অসুবিধে, সবই এখন দুর্লভ মনে হয়। কেভিনের ভালোবাসায় সুজান দ্রুত অতিষ্ঠি হয়ে উঠলো। এমন সঙ্গীর চেয়ে নিঃসঙ্গ জীবন অনেক ভালো! কেভিন যে প্রথম দেখাতেই তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিল এবং এই অনুরাগের মাত্রা যে দিনদিন বেড়েই চলেছিল তা সুজান আগেই বুঝেছিলো। প্রথম দর্শনেই যারা রূপসী মেয়েদের অনুরক্ত হয়ে পড়ে, তাদের প্রতি সুজানের একধরণের অবজ্ঞা ছিল। এরকম ছেলেদের দেখা হাটেবাজারে গন্ডায় গন্ডায় মেলে। অপদার্থ প্রেমিক শ্রেণীর পুরুষ ভেবে সে তাই প্রথমে কেভিনকে একেবারেই প্রশ্রয় দেয় নি। কেভিন সুদর্শন, শিক্ষিত। তাই হয়তো সুজান ক্ষনিকের তরে দুর্বল হয়ে কেভিনের ভালোবাসার কারাগারে আটকে পড়েছে। কিন্তু এভাবে কি সারা জীবন কাটানো যায়? ‘‘দিনে দিনে কঠিন হলো কখন বুকের তল।’’ এককালে সবাই তাকে লক্ষী মেয়ে বলে জানতো। এখন মনটা বিদ্রোহ করতে চায়। সাহস করে টাকা ধার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় নি। ডক্টর বর্গের ছেলের মতো বুদ্ধিমান ছেলেদের প্রণয়ের আবেদনে সাড়া না দিয়ে ডেভের মতো মূর্খকে বিয়ে করেছে। এখন আবার কি একটা ভুল করতে যাচ্ছে? পালাতে হবে এখান থেকে! কেভিন একদিন যখন স্কুলে, তখন সুজান জেসি এবং কুকুরকে সাথে নিয়ে নিজের পুরানো বাড়িতে ফিরে এলো।
সুজানের স্বামী ডেভ বাড়িটা বিক্রি করার কথা ভাবছিলো। তাহলে প্রতিমাসে মর্টগেজের টাকা দেওয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সুজান কেভিনের সাথে বাস করছে এই খবর পেয়ে ডেভ খুশি হয়েছিল। এখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই চরিত্রহীন! বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সুজানের ভরণপোষণের দায়িত্ব আদালত আর তার উপরে চাপিয়ে দিতে পারবে না। সুজান বাড়ি ফিরে আসায় ডেভের সব প্ল্যান ভেস্তে গেল।
কেভিন প্রতিদিন সুজানকে ফোন করে অনুনয় করে, ‘এস আমার ঘরে এস, আবার ফিরে এস আমার বুকে, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা’, ইত্যাদি। কিন্তু সুজান নির্দয়। ভালোবাসার কারাগারে সে আর ফিরতে চায় না।
এক অসুস্থ বান্ধবীকে দেখার জন্যে সুজান দুই দিনের জন্যে গ্রামের বাইরে গেছে। সাথে জেসিকে নিয়ে গেছে। কুকুরটা বাড়ি পাহারায় আছে। সেই রাত্রে বাড়িতে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বাড়ি পুড়ে চাই হয়ে গেছে। কুকুরটা পুড়ে মরে নি, ওকে দুই কিলোমিটার দূরে এক পুকুরের ধারে খুঁজে পাওয়া গেছে।

আরো পড়তে পারেন

কানু কাকা

আঁধার হারিয়ে গেলেও, সেভাবে ভোরের আলোর উপস্থিতি নেই, রোদ যেনো ফেরারি আসামি হয়ে পালিয়ে। মরুভূমির বালুকণা যেনো উড়ছে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে, ক্ষমতাধর কোনো মন্ত্রীর মত। সাথে যুক্ত হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনির মত কোনো শীতের তীব্র উপস্থিতি। কিন্তু এসব কিছু উপেক্ষা করে বিদ্রোহী কবিতার শ্লোকের মত রওনা হয়েছে কানু কাকা। হেমন্তের হেলে পড়া সূর্যের মত, তার শরীর….

চারটি অণুগল্প

১. পৃথিবীর শেষ গাছটা হাতে নিয়ে ফিহান সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিরকাল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা ফিহান সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, এই ছোট্ট চারাটা নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে, নাকি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে দেবে?   ২. —আমার না প্রায়ই খুব মায়া হয় এদের জন্য —কেন?! —এই যে দেখো, সারারাত জেগে থাকার কথা আমাদের, আর জেগে থাকে ওরা।….

বিবশ

এক. আমাদের আব্বা বড্ড নিশ্চুপ। চুপচাপ-চাপা স্বভাবের। সারাদিনে তিনটা শব্দও তার মুখ দিয়ে বের হয় না। অন্যদিকে আম্মা কথার খই ফোটান। তার সংসার, সংগ্রাম, সীমাহীন দুঃখ এসব। এক রথে একাকী বয়ে চলা জীবনের ঘানি। বাপের বাড়ির রকমারি কেচ্ছা, ছোটবেলায় মা-খালাদের সাথে করা হরেক কাহিনির গপসপ। আমাদের মামারা কেউ বোনের খবর নেয় না। এরপরও সন্ধ্যা করে,….

error: Content is protected !!