
পঞ্চাশের দশক থেকে সমকালীন শিল্পীদের নির্বাচিত শিল্পকর্ম নিয়ে বেঙ্গল শিল্পালয়ে চলছে ‘ছাপাইচিত্রের পরম্পরা’ প্রদর্শনী। চলমান এই প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে গত ৮ জুন শনিবার ২০২৪, বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘ছাপাইচিত্রের দূর অদূর’— শীর্ষক শিল্প আলাপের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রফেসর এমিরেটাস শিল্পী রফিকুন নবী ও শুন্য আর্ট স্পেস এর পরিচালক জাফর ইকবাল জুয়েল। এই শিল্প আলাপে ছাপচিত্রের নানা করণকৌশল ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজনীয়তা ও পরিবর্তিত ভাবনার উপর আলকপাত করা হয়।
শিল্পী রফিকুন নবী স্মৃতিচারণ করে বলেন ‘আমি নিজেও ঠিক ছাপচিত্রের মানুষ না। আমাদের সময় এসব ব্যাপারে আমরা সবাই খুব রিজিট ছিলাম। এখন সেই মনোভাব নেই, যা একটি ইতিবাচক দিক। ছাপচিত্রের স্প্যান অনেক বড় এখন। আমি নিজে খুব ভয় পেতাম, বিশেষ করে শফিউদ্দিন স্যারের মত মানুষের সামনে এ বিষয় নিয়ে কাজ করার ভয়।‘ তিনি আরও বলেন’ অনেকসময় যা চাইতাম তাঁর থেকেও ভালো রেসাল্ট ছাপচিত্র দিতে পারে। মজাটা এখানেই। ছাপচিত্রের টেকনিক্যাল দিকের সাথে সাথে ভাবগত দিক অনেকে উপেক্ষা করে থাকে যা আমার মতে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিবরিয়া স্যার আসার পর থেকে ছাপচিত্রে অনেক নতুন ধরন যুক্ত হয়। তাঁর এক্সপেরিমেন্ট আমাকে অনেক উৎসাহিত করে তোলে এই বিষয়ে’।’

জাফর ইকবাল জুয়েল বলেন ঢাকার বাইরে অনেক ছাপচিত্র বিভাগ চালু হয়েছে, অনেক স্টুডিও এগুলো নিয়ে কাজ করছে আমরা সবাই জানি। কিন্তু সংগ্রাহকদের কাছ থেকে ততটা সাড়া আমরা পাইনা, প্রিন্ট নিয়ে তাঁদের একধরনের অস্স্থিও রয়েছে। আমি মনে করি প্রিন্ট মেকিং নিয়ে একটি পলিসি দাড় করানো এখন সময়ের দাবি।‘ আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পী শহিদ কবির ও মুস্তফা জামান।
উল্লেখ্য ছাপাইচিত্রের ঐতিহাসিক ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরম্পরা ও নিরীক্ষা-প্রবণতা তুলে ধরতে, পঞ্চাশের দশক থেকে সমসাময়িককালের ছাপচিত্রীদের নির্বাচিত শিল্পকর্ম নিয়ে বেঙ্গল শিল্পালয়ে ১১ মে থেকে শুরু হওয়া ‘ছাপাইচিত্রের পরম্পরা’ শীর্ষক প্রদর্শনী চলবে ১১ জুন পর্যন্ত।
ছাপচিত্র-শিল্প সৃজনীশক্তি ও নান্দনিকতায় জনপরিসরে প্রসারিত হবার দাবি রাখে। প্রাথমিকভাবে মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে ছাপচিত্র মাধ্যমের বিকাশ ঘটেছিল। ক্রমান্বয়ে শিল্পীরা ছাপচিত্রের নানা করণকৌশল আত্মস্থ করেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ছাপচিত্র প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করে। ঐতিহাসিক ভিত্তি ও বহুল চর্চা থাকা সত্ত্বেও, ছাপচিত্র সাধারণ মানুষের কাছে এখনও সুপরিচিত নয়।চিত্রকলার চিরায়ত ধ্যান-ধারণা ও পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছাপচিত্র শিল্প। এ-মাধ্যমে প্রয়োজন বিশেষায়িত টুলস, মেশিন, স্টুডিও এবং করণকৌশল। ছাপচিত্রের মূল তিনটি পদ্ধতি ইন্টাগ্লিও, রিলিফ ও লিথোগ্রাফি। ড্রাই পয়েন্ট, এচিং, কাঠখোদাই, প্লেটোগ্রাফি বহুল চর্চিত হলেও, সিল্কস্ক্রিন, ডিজিটাল প্রিন্টসহ বিভিন্ন নতুন নতুন মাধ্যমে শিল্পীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন।