Author Picture

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

কৌশিক মজুমদার শুভ

১.

জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ।
আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল—
আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ,
আমাকে ভালোবাসে না কেউ,
ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না,
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না,
শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না,
আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো কিছু দেখিনি আমাকে ভালোবাসতে।

স্কুলগামী তরুণী আমাকে দেখে ফিক করে হাসেনি,
কখনো ছুঁড়ে দেয়নি বুকের ভাঁজে জমিয়ে রাখা চিঠি,
চারিদিকে কেবল ভালোবাসাহীন রাষ্ট্রে বেড়ে উঠেছি।
আমাকে ভালোবাসেনি সরকার কিংবা বিরোধীদল,
আমাকে ভালোবাসেনি সেনাবাহিনী অথবা জনগন,
আমাকে ভালোবাসেনি রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা সুবিধাবাদী, কেউই আমাকে ভালোবাসেনি।
আমাকে ভালবাসেনি বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত, বামপন্থী ও ডানপন্থী,
কর্কট রোগাক্রান্ত শিশুটিও আমাকে ভালোবাসেনি,
আমাকে ভালোবাসেনি সুস্থ যুবক, হাড়ধরা প্রৌঢ,
শহর গ্রাম মফস্বল ভালোবাসেনি আমাকে।
সংগ্রামী ও সুবিধাবাদীদের মধ্যে একটাই মিল- কেউই আমাকে ভালোবাসেনি।
দুনিয়ায় আমি এক ভালোবাসার কাঙাল হয়ে রয়েছি।

ভালোবাসার অভাবে আমি দিন দিন শুকিয়ে গেছি,
ভালোবাসার অভাবে চোখের তলায় কালি পড়ে গ্যাছে,
এমনকি ভালোবাসার অভাবে ছায়া পালিয়ে গেছে কাছ থেকে।
ভালোবাসার খোঁজে আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি প্রভুহীন কুকুরের মতো,
আহ ভালোবাসা!
কোনো রমণী আমাকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসেনি কোনো প্রৌঢ়া, কোনো যুবতী—
কোনো মানুষ আমাকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসেনি কোনো দানব অথবা দেবতা—
কোনো কবি ও কসাই, কোটিপতি অথবা কাঙাল, কেউ না।
ভালোবাসাহীন হয়ে আমি হাটে বাজারে ঘুরেছি,
গিয়েছি পাহাড়, নদী, সমুদ্র—
ভালোবাসা খুঁজেছি স্বর্গ মর্ত্যে পাতালে, বেহেশত দোযখ কোনাকোনা খুঁজেও পাইনি ভালোবাসা।
বুকে হাত রেখে বলতে পারি কেউ ভালোবাসেনি কোনোদিন,
কিরকম ভালোবাসাহীন হয়ে বেঁচে আছি, একবার ফিরে এসে দেখে যাও।

 

২.

কালকে সারাদিন তোমারে খুঁজছি, কার সাথে ছিলা কই গেছিলা জানিনা—
তোমার জন্য সারাদিন ফিলিস্তিনের মতো পুড়ছিলো বুকটা,
তোমার জন্য কি যে অস্থিরতায় কাটাইছি বুঝাইতে পারবো না।
তুমি এমন কেন করো? কই যাও,কোথায় থাকো?
তোমারে ঘিরে বসে থাকে আমার নয় লক্ষ কোটি কথারা ফুসরত পাচ্ছে না,
আমি কোথায় যাবো, কি করবো? ভাবলা না।
ভাবলা না, তোমারে ভাইবা আমার ইংরেজি ভোঁতা হইয়া যায়,
তোমারে ভাইবা আমার হিসাবে ভুল হইয়া যায়, এ কোন অথর্ব হইয়া যাইতেছি দিনদিন?

প্রিয়তমা, কাল সারাদিন কোথায় ছিলা, কই গেছিলা?
বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরছো রিক্সায়, খাইছো কফি—
আরো কি কি জানি খাইছো, সেই শঙ্কায় আমার ঘুম হইলো না।
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার সকাল ক্রমশ সন্ধ্যা হয়ে আসলো,
তুমি খবর নিলা না।
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শরীরে বাল্মিকীর মতো উইপোকা নিয়া আমি এইখানে ওইখানে ঘুইরা বেড়াইলাম, তুমি জিজ্ঞাস করলা না—
কালকে সারাদিন কিভাবে কাটছে আমার তোমারে বুঝাইতে পারবো না।

 

৩. 

আমি চাই কেউ আমার উপর জোর খাটাক, মুখ থেকে টেনে নিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিক, খুব করে ধমকাক, রাগ দেখাক। আমার সব অনিয়মের জন্য জবাব চাক- কেন ঠিক সময়ে খাই না, কেন রাত জাগি, কেন চোখের তলায় কালি, কিভাবে কাশ বাধাইছি, কেন দিনদিন রোগা হয়ে যাচ্ছি। আমি চাই কেউ থাকুক, জিজ্ঞেস করুক, চোখে চোখে রাখুক, কার দিকে তাকাচ্ছি, দুপুরে কি খাইছি সব, কতক্ষণ ঘুমাইছি। কেউ আসুক, কারো অভাবে আমার হৃদয়টা খাঁখাঁ করতেছে।

 

৪.

একদিন আমরা কথা বলবো- আমাদের মাঝখানে থাকবে না কোনো কিছু,
আমাদের মাঝখানে থাকবে না রাষ্ট্র, বুলেট, সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ,
আমাদের মাঝখানে থাকবে না রাজনীতি, সংসদ, বিচারালয়,
আমাদের মাঝখানে কিছুই থাকবে না- কোনো পাহাড়, পর্বত, নদী,
আমাদের মাঝে থাকবে না কোনো ফিলিস্তিন, জর্ডান, ইসরায়েল,
আমাদের মাঝখানে থাকবে না কোনো ঈশ্বর, অসুর, দেবতা।
কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করবো না, একদিন কথা হবে, সে শুধুই কথা—
সে কথার ভিতরে পাত্তা পাবে না সুয়েজ সংকট, জাতিসংঘ অথবা ন্যাটো,
পাবে না যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক বোমা, মিলিটারি ট্রুপ,
আমাদের মাঝখানে থাকবে না মহাভারত, রামায়ণ, পুরাণ,
আমাদের মাঝে থাকবে না ট্রাম্প, মিলোনিয়া, পুতিন।

একদিন আমাদের কথা হবে, কোনো ব্যস্ততা থাকবে না, আমাদের মাঝখানে আসবে না পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র।
আমাদের মাঝখানে আসবে না বেহেশত, দোযখ, জাহান্নাম,
আমাদের মাঝখানে থাকবে না কোনো মহাত্মা দুরাত্মা সাধারণ,
আমাদের মাঝে থাকবে না ধর্ম, অধর্ম কোনোকিছুই,
আমাদের মাঝে শুধু আমরাই।
তোমাকে বলবো সব, তোমাকে বলবো,
কেন আমি এমন পাগলাটে, কেন এমন করি,
কেন বারবার ঘুরেফিরে বারবার তোমাকেই প্রদক্ষিণ করি পৃথিবীর মতো—
তোমাকে উদ্দেশ্য করে আমার নয় লক্ষ কোটি কথারা মার্চপার্চ করতে থাকবে—
প্রতিটি জানালা, প্রতিটি দুয়ার খুলে যাবে,
আর সকলে দেখবে একজন প্রেমিক কিভাবে প্রেমিকাকে অর্পণ করলো ভালোবাসার ইশতেহার।

 

৫.

তোমার কাছে আসলে আমার লেম জোকগুলা হারাইয়া যায়, আমি ফানি হয়ে উঠতে পারি না। বুঝতে পারি আমার তুকতাক কিছুই কাজ করতেছে না, কেমন হ্যাবলা হয়ে যাই, ইমপ্রেস করার সহজাত প্রতিভা কোথায় উধাও হয়ে যায়। বুঝিনা কেন এমন অথর্ব হয়ে গেছি, কথা খুঁজে পাই না, ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা তোমার এক কথায় বিফল হয়ে যায়, চোরের মতো করি— মনে হয় পৃথিবীটা জেলখানা আমি বিরাট ধরা খাইয়া বসে আছি।

আরো পড়তে পারেন

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

এরশাদ জাহান-এর একগুচ্ছ কাপলেট

কাপলেটগুচ্ছ:  ১. গোলাপ বলে ঠোঁট বাঁকিয়ে কে তোর আমি দেখাস দাবি! ভ্রমর শুধায়— প্রেমধর্মের কাবিননামায় খুঁজিস পাবি। ২. ভেসে চলার ক্লান্তি মুছতে তীরের কাছে ছুটল পানা; পৌঁছে দেখে— ভাঙতে ভাঙতে তীরেরই নেই ঠাঁই ঠিকানা! ৩. চোখের তিয়াস মিটিয়ে নিতে ঘুম চাইলাম রাতের কাছে, আঁধার বলল— নিদ্রাবিহীন রাত্রি নিজেই জেগে আছে! ৪. ধর্মকাবা মক্কা, কাশি, প্রেমের….

error: Content is protected !!