
আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর প্রস্তুতি পর্ব (১৯৪৯-১৯৫১)
পাকিস্তান উন্মেষ ধারা থেকে ধূমায়িত ক্ষোভ প্রকাশে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপ পরিগ্রহ করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের রাজনৈতিক আবর্তন ও ঘটনাচক্রে খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি পূর্ব বাঙলা মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্য ২৫ জানুয়ারি তিনি সস্ত্রীক ঢাকায় আগমন করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটিই ছিল তাঁর প্রথম ঢাকা সফর। ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে জনসভায় এক দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভা ও ৩০ জানুয়ারি সফলভাবে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। পরদিন, ৩১ জানুয়ারি বিকালে ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতসভায় নাজিমউদ্দীনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাকে অবিলম্বে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ ও ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়ানোর প্রত্যয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন প্রস্তুতি দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সভায় কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। পরিষদে আওয়ামী মুসলিম লীগ, খেলাফতে রাব্বানী পার্টি, তমদ্দুন মজলিশ, পূর্বপাকিস্তান যুবলীগ, পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রভৃতি সংগঠন থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি, এছাড়া প্রতিটি হল থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে জনাব আবদুল মতিন এই কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন। নাজিমউদ্দিনের ২৭ জানুয়ারির ঘোষণা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, এটি তাঁর পরিকল্পনারই অংশ ছিল। কেননা তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হইতে চলিয়াছে, অন্য কোন ভাষা নহে। ’পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা শহরে ৪ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারির হরতালকে সফল করতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, প্রচার পত্র, পথসভা ইত্যাদি ব্যাপক তৎপরতা চলতে থাকে। ১০ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রভাষা কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করছে- বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবীতে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশের সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট ও শোভাযাত্র সংগঠিত হইবে। ’১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘পতাকা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
উল্লেখ্য এসময় করাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় তিনি মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ আরও কয়েকজন নেতাদের সাথে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ কারাগারে অনসন ধর্মঘট শুরু করেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি গোপন চিরকুটের মাধ্যমে খবরটি নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছালে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি ছাত্রসভায় রাজবন্দীদের মুক্তি দাবি করে জিল্লুর রহমান, নাদিরা বেগম এবং শামসুল হক চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। এই সভাতেই গাজীউল হককে আহ্বায়ক করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাজবন্দী মুক্তি আন্দোলন কমিটি’ গঠন করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় আকস্মিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি এবং পরবর্তী একমাস সভা ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকার বাইরে এবং অন্যতম যুগ্ম-সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে। ফলে দলীয় নেতৃত্ব আপোসকামী দক্ষিণপন্থীদের হাতে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সন্ধ্যায় ৯৪ নবাবপুর রোডস্থ আওয়ামী লীগ অফিসে খেলাফতে রব্বানী পার্টির সভাপতি আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের জরুরি সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাতে মুসলিম লীগ সরকার আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার আশঙ্কায় সভায় দ্বিমত দেখা দেয় এবং ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমরেড তোয়াহা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও ভোট দানে বিরত থাকেন। এই সভায় আরও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিলুপ্ত হবে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এই বৈঠক চলাকালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ফকির সাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে একটি ছাত্র সভা হয়। অনুরূপভাবে ফজলুল হক মুসলিম আবদুল মমিনের সভাপতিত্বে সভা হয়। সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে ছাত্রসমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গভীর রাতে ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের মধ্যবর্তী পুকুরের পূর্বপাড়ে ১১ জন ছাত্রনেতা গাজীউল হক, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী, মোহাম্মদ সুলতান, এম আর আখতার মুকুল, জিল্লুর রহমান, আবদুল মমিন, এস এ বারী এটি, সৈয়দ কামরুদ্দীন শহুদ, আনোয়ারুল হক খান, মঞ্জুর হোসেন ও আনোয়ার হেসেন মিলিত হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পূর্বদিন ১৪৪ ধারা জারি ও আতঙ্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এদিন সকাল ৯টা থেকে ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণের আমতলায় এম আর আখতার মুকুলের প্রস্তাব ও কমরুদ্দীন শহুদের সমর্থনে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে বিশাল সভা শুরু হয়। শামসুল হক ও কাজী গোলাম মাহবুব ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার অনুরোধ করেন। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ উপাচার্য একই অনুরোধ করেন।
এসময় করাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় তিনি মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ আরও কয়েকজন নেতাদের সাথে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ কারাগারে অনসন ধর্মঘট শুরু করেন
তবে ছাত্র নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হক নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তমদ্দুন মজলিশ, ইসলামী ছাত্র সংঘ, খেলাফতে রব্বানী পার্টি প্রভৃতি দক্ষিণপন্থী দল-গোষ্ঠী ও নেতৃবৃন্দ ভাষা আন্দোলন থেকে দূরে সরে যান। সভায় দশজনী মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যারা ১০ জনী মিছিলে বাইরে যাবেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দেয়া হয় মোহাম্মদ সুলতানকে এবং জনাব আজহার ও হাসান হাফিজুর রহমান তাকে সাহায্য করেন। আন্দোলন প্রক্রিয়া শুরু হলে ছাত্ররা খণ্ড খণ্ড মিছিলে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’ ‘পুলিশী জুলুম চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগানে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে পড়ে। বেলা দুইটা পর্যন্ত মিছিল করে ছাত্ররা বীরত্বের সাথে কারাবরণ করতে থাকেন। প্রথম দিকে গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিলেও পরে তাদের পক্ষে আর তা সম্ভব হয় না। তাই অব্যাহত জনস্রোত ঠেকাতে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করতে থাকে। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ছাত্ররাও পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তৎকালীন ব্যবস্থাপকসভা ভবনটি ছিল বর্তমান জগন্নাথ হলের অডিটোরিয়াম যা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের একেবারে সন্নিকটে। আন্দোলনকারীরা তাই অধিক সংখ্যায় মেডিকেল গেটে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে প্রবেশ করে ছাত্রদের ওপর হামলা করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনসমাগমও বাড়তে থাকে। এ সময় সচিবালয়ের কর্মচারীদের একাংশও আন্দোলনে যোগদান করেন। এই দিন পূর্ববঙ্গের গণপরিষদে বাজেট অধিবেশনে যোগদানের জন্য এ পথ অতিক্রম করার সময় আন্দোলনকারীরা পরিষদ সদস্য আওলাদ হোসেন ও রাজা মিঞাকে ধরে নিয়ে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে তাদের সমর্থন আদায় করা। তারা মন্ত্রী হাসান আলীর গাড়িও রোধ করেন এবং আরো কয়েকজন পরিষদ সদস্যদের নিকট থেকেও আন্দোলনকারীরা প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলতে থাকে। বেলা তিনটা নাগাদ পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোরায়শি, পুলিশের ডিআইজি ওবায়দুল্লাহ এবং ঢাকার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইদরিস একুশের মিছিল বানচাল করার নগ্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারই ঘৃণ্য বাস্তবায়ন পুলিশের গুলিবর্ষণ। সরকারের এই উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই পুলিশের গুলিবর্ষণে গেটের সামনেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষনাৎ মৃত্যুবরণ করেন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র রফিকুদ্দিন আহমদ। পুলিশ এ সময় হোস্টেলের ভিতর গুলি বর্ষণ করলে ১২ নং শেডের কাছে উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণির ছাত্র আবুল বরকত। হোস্টেলের বিশ নম্বর ব্যারাকের সামনে গুলিবিদ্ধ হন গফরগাঁওয়ের আব্দুল জব্বার এবং রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই দিন পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিনজন নিহত ও কম-বেশী ষাট জন আহত হন। আহতদের মাঝে গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ আবদুস সালাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় মুসলিম লীগ দলীয় সাংসদ মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ স্পীকারকে সভা মূলতবি করার অনুরোধ করে তাদের বাইরের অবস্থা পরিদর্শনের সুযোগ দানের অনুরোধ করেন। স্পীকার তা আমলে না নিয়ে সভার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু অব্যাহত চাপে সভা ১৫ মিনিটের জন্য মূলতবি করা হয়। মূলতবির পর সভা শুরু হলে নুরুল আমীনকে মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে এসে বিবৃতি প্রদানের অনুরোধ করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের বিবৃতি দিতে থাকেন। পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের আচরণের প্রতিবাদে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, খয়রাত হেসেন, আনোয়ারা খাতুন এবং আলী আহমদ খান পরিষদ ভবন ত্যাগ করে আন্দোলকারীদের পাশে দাঁড়ান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও মনোরঞ্জন ধর প্রমুখ কংগ্রেস সদস্য একই কারণে সভা বর্জন করেন। গুলি বর্ষণের খবর চারদিকে দাবাগ্নির মতো ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি কবি ফররুখ আহমদ, সিকান্দার আবু জাফর প্রমুখ শিল্পীদের নেতৃত্বে বেতার শিল্পীবৃন্দও এর প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন। সন্ধ্যায় ঢাকা শহরে কার্ফু জারি করা হয় এবং পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়। এমনি একটি পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় মেডিকেল কলেজের কন্ট্রোল রুমে স্থাপিত মাইকে ঘোষণা করা হয় পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭ টায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহিদদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। রাত আড়াইটার দিকে কয়েকশ পুলিশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মর্গ থেকে লাশ ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং গোপনে আজিমপুরে দাফন করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ অকার্যকর হওয়ার প্রেক্ষিতে রাতে মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, এমাদুল্লাহ, আবদুল মতিন, গোলাম মাওলা প্রমুখ একটি সভায় মিলিত হন। সভায় অলি আহাদকে আহ্বায়ক ও কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য গোলাম মাওলাকে অস্থায়ী সম্পাদক করে একটি নতুন সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোরায়শি, পুলিশের ডিআইজি ওবায়দুল্লাহ এবং ঢাকার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইদরিস একুশের মিছিল বানচাল করার নগ্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারই ঘৃণ্য বাস্তবায়ন পুলিশের গুলিবর্ষণ। সরকারের এই উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই পুলিশের গুলিবর্ষণে গেটের সামনেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষনাৎ মৃত্যুবরণ করেন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র রফিকুদ্দিন আহমদ
২২ তারিখ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে মাওলানা ভাসানী ও এ কে ফজলুল হকসহ হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ একুশের শহিদদের গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সচিবালয়ের কর্মচারীরা এদিন ধর্মঘট করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাগাতার হরতাল কর্মসূচি কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। গায়েবি জানাজা ও সংক্ষিপ্ত সভা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিল মেডিকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে কার্জন হল এবং হাইকোর্টের মোড় ঘুরে এগোবার সময় হঠাৎ করে হাইকোর্টের সামনে মিছিলের মাঝখানে পুলিশ লাঠিচার্জ করেও কাদুনে গ্যাস ছোড়ে। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে দুইভাগে এগিয়ে যায়। এক অংশ স্বতস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অপর অংশ নাজিমুদ্দিন রোড ধরে চকবাজার, মোগলটুলী, ইসলামপুর ও পাটুয়াটুলী হয়ে সদরঘাট উপস্থিত হয়। মিছিলটি সদরঘাট থেকে ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পগোজ স্কুলের সামনে ও জগন্নাথ কলেজের পূর্বপাশে পুলিশ বাধা দেয় এবং বেপরোয়া লাঠি চার্জ করে ও কাদুনে গ্যাস ছোড়ে। মিছিলটি ভেঙ্গে ছোট ছোট দলে নবাবপুর রোডের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মিছিল নবাবপুর রোড ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। এতে নিশাত হোটেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হন হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান এবং সন্ধ্যায় তিনি মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন। নবাবপুর রোডের ‘খোশ মহল’ রেস্টুরেন্টের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ৮ বছরের শিশু অহিউল্লাহ। এ দিন বর্তমান ঢাকা রেল কর্মচারী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায়নিহত হন রিকশা চালক আবদুল আউয়াল। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইন পরিষদে মুসলিম লীগেরর সদস্য জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন পদত্যাগ করেন। নও বেলাল পত্রিকার সম্পদক মাহমুদ আলী মুসলিম লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। হাইকোর্টের কর্মচারীরা, রেলওয়ে ওয়ার্কশপের শ্রমিক ও রেলকর্মচারীরাও ধর্মঘট করেন। এ কে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ঢাকা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সভায় পুলিশী নির্যতন ও গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয় এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার এবং হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে গুলিবর্ষণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়। আবদুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় শহিদদের সম্মানে একমিনিট নীরবতা পালনসহ গুলিবর্ষণের ঘটনার সাথেসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণসহ নূরুল আমিনের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এই দিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিটি ছাত্রাবাস এমনকি বিভিন্ন বাড়িতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং শহরবাসী কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহে পূর্ববাংলা প্রদেশিক সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্থানে হানা দিতে থাকে। এই দিন অপরাহ্নে পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বসে। অধিবেশনে বিরোধী পক্ষ ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় শোক প্রস্তাব আনলে তা নাকচ করে দেয়া হয়। উল্লিখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে আলোচনার জন্য একটি দিন নির্ধারণের প্রস্তাব করলে তাও বাতিল হয়ে যায়। তবে কেন্দ্রীয় পরিষদের নিকট বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ এই সভায় পাশ হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত; আগের দিনের মতো এই দিনও পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। নাজিরা বাজার পশু হাসপাতালের সামনে ও মুসলিম হলের সামনে পুলিশ জনতার উপর লাঠিচার্জ করে। সচিবালয়ের কর্মচারীরা ও রেলশ্রমিকেরা এদিনও ধর্মঘট অব্যাহত রাখেন। শহরে মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এই দিন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবাদ ও সম্পাদকীয়তে ঘটনার নিন্দা অব্যাহত থাকে। দুপুরে সলিমুল্লাহ হলে শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় ফজলুল হক ছাত্রদের শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের পরামর্শ দেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মাওলানা ভাসানী ও আবুল হাশিম বিবৃতি প্রদান করেন। মেডিকেল হোস্টেলে ভাষা আন্দোলনে কারারুদ্ধ কর্মী আজমল হোসেনের কক্ষে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি সভা হয়। সভায় ২৫ তারিখ ঢাকায় ধর্মঘট এবং ৫ মার্চ সারা পূর্ববাংলায় হরতাল আহ্বান করা হয়। ২২ তারিখ মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা হোস্টেলের যেখানে প্রথম গুলি চলে সেই স্থানে শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় পিয়ারু সর্দারের সহযোগিতায় বিকেল থেকে শুরু করে রাতের মাঝেই তৈরি হয় প্রথম শহিদ মিনার। প্রথম শহিদ মিনারের স্থাপত্য ছিল সহজ-সরল, কিন্তু স্থাপনাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বা বক্তব্যটিও ছিল হৃদয়গ্রাহী। নিম্নাংশের বৃহদায়তন গুরুভার কিউবটা অবশ্যই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বলিষ্ঠ চরিত্রটাকেই প্রকাশ করে বিপদের সম্মুখীন থেকে ভাষাশহিদদের নির্ভীক সাহসিকতা। ঊর্ধ্বাংশে মিনারে উঁচু চূড়া সবাইকে এই বার্তা দেয় যে শত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও অন্যায়-অবিচারের সামনে মাথা নোয়ানো যাবে না- র্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর-নৃশংস অত্যাচারের মুখেও অন্যায়-অসংগত আদেশ মেনে নেওয়া যাবে না, শির থাকবে উঁচু-অবিচল। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শহিদ শফিউর রহমানের পিতা মৌলভী মাহমুদুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করেন।
বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় পিয়ারু সর্দারের সহযোগিতায় বিকেল থেকে শুরু করে রাতের মাঝেই তৈরি হয় প্রথম শহিদ মিনার। প্রথম শহিদ মিনারের স্থাপত্য ছিল সহজ-সরল, কিন্তু স্থাপনাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বা বক্তব্যটিও ছিল হৃদয়গ্রাহী
মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ধর্মঘট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় এবং দাবি পূরণের জন্য সরকারকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। এই দিন দেশের অধিকাংশ স্থানেই হরতাল পালিত হয়। রাতে এক বেতার ভাষণে নূরুল আমীন নজীরবিহীন মিথ্যাচার করেন। তিনি তার ভাষণে গুলিবর্ষনের ঘটনা অস্বীকার এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে জানান। ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল টানা ৯৬ ঘন্টা হরতালের শেষ দিন। এই দিন দেশের প্রধান প্রধান নগরে স্বতস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এসএম হল প্রাঙ্গণে সভা হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলের চেষ্টা করা হলে পুলিশ বাধা দেয় এবং মিছিলকারীদের গ্রেফেতার করে। মাত্র পাঁচ দিনের তৎপরতায় এবং ব্যাপক জনসমর্থনে আন্দোলন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছালো যে শাসকচক্র ও তাদের সহযোগিদের অনেকেই এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা পরোক্ষভাবে হলেও মেনে নিতে বাধ্য হলেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত সর্বত্র ধর্মঘট ও হরতাল স্থগিত করা হয়। ফলে শহরের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সরকারও এসময় আন্দোলন সংগঠন ও সংশ্লিষ্টদের ওপর কঠোর দমননীতি চালায়। পুলিশ ও মিলিটারি বিভিন্ন স্থানে হামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। ২৪ ও ২৫ তারিখ রাতে নিরাপত্তা আইনে আবুল হাশিম, আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দলাল ব্যানার্জী, খয়রাত হোসেন প্রমুখকে গ্রেফতার করে। ভাষা আন্দোলন সমর্থনকারী বুদ্ধিজীবিদেরও গ্রেফতার করা হয়। ২৬ ফেব্রুযারি ভোরে ড. পিসি চক্রবর্তী, মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক অজিত গুহ, সতীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকার বাইরেও এ সময় ব্যাপকহারে ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এভাবে আন্দোলন তার গতিশীলতা হারায়। তবে ঢাকায় আন্দোলনের স্থবিরতা সত্তেও এর জাগরণের প্রভাবে তখনও তা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। তবে ৫ মার্চ আহুত হরতাল জোরালো বা পূর্ণরূপে সফল হয়নি। এরই মাঝে ৭ মার্চ ৮২ শান্তি নগর ডাক্তার মোতালেবের বাড়িতে সভা করার সময় ভাষা আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব, মীর্জা গোলাম হাফিজ, মুজিবুল হক, হেদায়েত হোসেন প্রমুখ গ্রেফেতার হন। একুশের আন্দোলনের বিরতি এবং অধিকাংশ নেতাদের গ্রেফতারের প্রেক্ষাপটে ২৬ এপ্রিল আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। তবে আন্দোলন পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জোরালো ভূমিকা পালনের সক্ষমতার অভাব থেকে যায়। কমিটির উদ্যোগে রাজবন্দীদের মুক্তি, সকল কালাকানুন প্রত্যাহার এবং বাংলা রাষ্ট্রভাষা প্রবর্তনের দাবিতে ১৫ মে থেকে সারা দেশে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করে এবং ৫ ডিসেম্বর দেশের সর্বত্র বন্দীমুক্তি দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়। বলা বাহুল্য বন্দীমুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আমরন অনশনে জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি ফরিদপুরে পরিবারের কাছে যান সেখানে মার্চ মাসের পুরোটা সময় থেকে চিকিৎসা করান। সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরে তিনি ভাষা আন্দোলনের জনমত সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ভাষা সংক্রান্ত দাবি ও রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য করাচিতে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে সাক্ষাত করে তার দাবি সমূহ জানান। তাঁর এই পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালে তিনি করাচি ও লাহোরে সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ও রাজবন্দীদের মুক্তি দাবি করেন। ১১৬ ২০ নভেম্বর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে ঢাকার আরমানিটোলা মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্য দাবির সাথে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা ও রাজবন্দিরে মুক্তি দবি জানানো হয়। এই সভায় হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর বক্তৃতায় নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করেন, উর্দু ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান এবং পূর্বে তার বক্তব্য বিকৃতকরে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৫ ডিসেম্বর বন্দীমুক্তি দিবস উপলক্ষে আরমানিটোলা মাঠে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিশাল সভার আয়োজন করে। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান অবিলম্বে বিনা বিচারে আটক রাজবন্দীদের মুক্তি না দিলে দেশব্যাপী গণআন্দোলনের সৃষ্টি হবে বলে শাসকচক্রকে হুশিয়ার করেন।
পরের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)