
কিছুটা বিলম্ব হলেও বাংলাদেশে চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সমূহে দক্ষ চার্টার্ড সেক্রেটারী তৈরিতে দেশে এই পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে চার্টার্ড সেক্রেটারী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই পেশার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠান; আইসিএমএবি, আইসিএবি এবং আইসিএসবি সংশ্লিষ্ট পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশার উৎপত্তি হয়েছিল ইংল্যান্ডে, ১৮৯১ সালে। মূলত ইংল্যান্ড, ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডাসহ অনেক দেশেই কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আইসিএসবি সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা Corporate Secretaries International Association (CSIA) এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য; CSIA এই পেশার আন্তর্জাতিক গাইডলাইন তৈরি করে থাকে। তাছাড়া আইসিএসবি ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এর সাথে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে, যা ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বলবত রয়েছে।
কর্পোরেট ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ সার্বিক নিয়মতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠা করাই চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশার মূল উদ্দেশ্য। এ কারণে সারা বিশ্বে চার্টার্ড সেক্রেটারী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে সুপরিচিত। তাছাড়া কোম্পানীকে লাভজনক ও যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠা করাও এই পেশার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এজন্য এই পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে আইনী পরিপালন (Compliance), হিসাব ও ব্যবসা প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে হয়ে উঠতে হয় দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কৌশলী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন কোম্পানী, ব্যাংক, বীমা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কোম্পানী সেক্রেটারী, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, চিফ রেগুলেটরি অফিসার, সেক্রেটারিয়াল অডিটর, কমপ্লায়েন্স অডিটর, ইনকাম ট্যাক্স বা ভ্যাট কনসালট্যান্ট প্র্যাকটিশনার ইত্যাদি পদ গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়া এই পেশাগত ডিগ্রী অর্জনের পর স্বাধীনভাবে প্রাইভেট সেক্রেটারিয়াল প্র্যাকটিশনার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এসব পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থীর অভাব কোম্পানী সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায়।
একটি সম্মানজনক ও প্রতিষ্ঠিত পেশা যে কারও সামাজিক, অর্থনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি একটি জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ফলে অনেকেরই অভীষ্ট লক্ষ্ হয়ে ওঠে একটি উন্নত কর্পোরেট চাকুরী; যার মাধ্যমে পেশাগত উন্নয়নের সাথে-সাথে রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও আত্মনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর পেশাগত ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য গতানুগতিক ও সাধারণ শিক্ষার তুলনায় একটি পেশাগত ডিগ্রীর ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের জনশক্তির একটি বৃহৎ অংশ বর্তমানে দেশের কর্পোরেট সেক্টরে কর্মরত। কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও এর উন্নয়নের মানেই হল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অবদান রাখার সুবর্ণ সুযোগ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে চার্টার্ড সেক্রেটারীর মত ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী পেশাগত ডিগ্রীর চাহিদা অত্যন্ত বেশী। কেননা এই পেশাগত ডিগ্রী যে কারও কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বা নতুন চাকুরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে কাজ করে। আর এখানেই অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের কর্পোরেট খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে আইসিএসবি।
আইসিএসবি একটি ১৮-সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত; যার মধ্যে ১৩ জন ইনস্টিটিউটের সদস্যবৃন্দের মধ্য হতে নির্বাচিত এবং অপর ৫ জন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস হতে সরকার কর্তৃক মনোনীত হয়ে থাকেন। বর্তমানে আইসিএসবি সদস্য সংখ্যা ছয় শতাধিক; যারা দেশের স্বনামধন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, বাণিজ্যিক ব্যাংক-ইন্সুরেন্স ইত্যাদিসহ বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কোম্পানী সেক্রেটারীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন। বর্তমানে ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ সহস্রাধিক।
দেশের কর্পোরেট খাতে নিয়মতান্ত্রিকতা, সুশাসন সৃষ্টি এবং এর জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আইসিএসবি ‘চার্টার্ড সেক্রেটারী’ কোর্স পরিচালনা করে থাকে। আইসিএসবি হতে প্রফেশনাল চার্টার্ড সেক্রেটারী ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি ও নতুন চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি যেই প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, তার সামাজিক ও সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম
দেশের কর্পোরেট খাতে নিয়মতান্ত্রিকতা, সুশাসন সৃষ্টি এবং এর জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আইসিএসবি ‘চার্টার্ড সেক্রেটারী’ কোর্স পরিচালনা করে থাকে। আইসিএসবি হতে প্রফেশনাল চার্টার্ড সেক্রেটারী ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি ও নতুন চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি যেই প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, তার সামাজিক ও সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। আগ্রহীদের জন্য আইসিএসবি পরিচালিত চার্টার্ড সেক্রেটারী কোর্স সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিম্নরূপঃ
ভর্তির যোগ্যতাঃ
চার্টার্ড সেক্রেটারী একটি পেশাগত বা প্রফেশনাল কোর্স; যাতে ভর্তির ২টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। বাণিজ্য (Business) শাখায় ন্যূনতম স্নাতক (বিকম/বিকম-অনার্স/বিবিএ/এমবিএ) ডিগ্রী ও কমপক্ষে ৬-পয়েন্টের অধিকারী যারা, তারা সরাসরি ‘সার্টিফিকেট লেভেল-১’ এ ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও সমধর্মী অন্যান্য পেশাগত ডিগ্রী থাকলেও তারা ‘সার্টিফিকেট লেভেল-১’ এ ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অপরদিকে বাণিজ্য (Business) শাখা ব্যতীত অন্যান্য শাখা/বিভাগ হতে স্নাতক ডিগ্রীধারী প্রার্থীগণ চার্টার্ড সেক্রেটারী কোর্সের ‘ফাউন্ডেশন লেভেল’-এ ভর্তির জন্য আবেদন করবেন। এছাড়াও ‘বাণিজ্য’ শাখা হতে ৬-পয়েন্টের কম নিয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারী যারা; তাদেরও ‘ফাউন্ডেশন লেভেল’-এ ভর্তির সুযোগ রয়েছে। অধিকন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ধারী প্রার্থীরাও ‘ফাউন্ডেশন লেভেল’-এ ভর্তি হতে পারবেন। ইংরেজি মাধ্যম হতে A-Level পাশকৃত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২টি বিষয়ে B গ্রেড এবং ১টি বিষয়ে A গ্রেড থাকতে হবে। ‘ফাউন্ডেশন লেভেল’-এর ৪টি বিষয় সফলভাবে সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা ‘সার্টিফিকেট লেভেল-১’ ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করবে।
ভর্তির সময়ঃ
বছরে ২ (দুই) বার; যথাক্রমে জানুয়ারি-জুন সেশন এবং জুলাই-ডিসেম্বর সেশনে চার্টার্ড সেক্রেটারি কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যায়।
শিক্ষা পদ্ধতিঃ
‘সার্টিফিকেট লেভেল-১’ এ যারা ভর্তি হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে কোর্সটির ৫টি লেভেল সম্পন্ন করতে হয় যার প্রতিটি সেশন ৬ মাস মেয়াদি। প্রথম ৩টি লেভেল ‘সার্টিফিকেট লেভেল’ নামে পরিচিত এবং শেষ ২টি লেভেলকে বলা হয় ’প্রফেশনাল লেভেল’। তবে কোন শিক্ষার্থী চাইলে একইসাথে একাধিক সেশনে ভর্তি হতে ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে (শর্ত প্রযোজ্য)। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা প্রতিটি লেভেলে বিষয়ভিত্তিকভাবে পাশ করার মাধ্যমে কোর্সটি সম্পন্ন করতে পারবে।
‘ফাউন্ডেশন লেভেল’ এ যারা ভর্তি হয়ে থাকে (বাণিজ্য শাখার স্নাতক নয় যারা, তাদের জন্য প্রযোজ্য) তাদেরকে ১টি ‘ফাউন্ডেশন লেভেল’ সহ ৩টি ‘সার্টিফিকেট লেভেল’ এবং ২টি ’প্রফেশনাল লেভেল’ সম্পন্ন করতে হয়।
শিক্ষকমণ্ডলীঃ
স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বহুজাতিক কোম্পানীসমূহের পরিচালকবৃন্দ, সিনিয়র কোম্পানী সেক্রেটারী, সিনিয়র ম্যানেজার, সিনিয়র আইনজীবি, পরামর্শক, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট/বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ নিয়মিত পাঠদান করে থাকেন। এছাড়াও শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন, প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আইসিএসবিতে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশেষ ক্লাস নিয়ে থাকেন।
ক্লাসের সময়ঃ
আইসিএসবি-তে দিবা ও সান্ধ্যকালীন ক্লাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ক্লাসরুমে সান্ধ্যকালীন কোচিং ক্লাস সমূহ সন্ধ্যা ৬:৩০টা থেকে রাত ৯.৩০টা পর্যন্ত সপ্তাহের ৩/৪ দিন অনুষ্ঠিত হয়। দিবাকালীন ক্লাস সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সকাল ৮:০০ ঘটিকা হতে বিকাল ৫:০০ ঘটিকা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কিছু ক্লাস হাইব্রিড ও অনলাইন মাধ্যমে হয়ে থাকে।
বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি), ১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, পদ্মা লাইফ টাওয়ার (অষ্টম তলা), বাংলা মটর, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল ফোনঃ ০১৭০৮ ০৩০৮০৪
ই-মেইলঃ icsbadmission@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.icsb.edu.bd
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা আইসিএসবি ইআরপি https://icsberp.org তে অনলাইনে সরাসরি ভর্তির আবেদন করতে পারবেন।