Author Picture

বই বনাম বই 

অপূর্ব চৌধুরী

নতুন বইয়ের দাম বেশি, পুরনো বইয়ের কম। স্বতঃসিদ্ধ কথা। সব জায়গার জন্যে সত্য হলেও পশ্চিমে কারণটা ভিন্ন। পশ্চিমে দু’ ধরণের বই ছাপায়: হার্ডকাভার বা হার্ডব্যাক এবং পেপারব্যাক। শুরুতে হার্ডকাভার ছাপায়৷ অক্ষরগুলো বড় থাকে কাগজ দামি, মলাট যেন পাথর৷ খরচ বেশি, তাই দাম বেশি৷ প্লেনের ফার্স্ট ক্লাসের মতো।

আমার মতো দরিদ্রদের জন্য পেপারব্যাক, এগুলো কিছুদিন গেলে ছাপায়৷ নরম মলাট, ছোট হরফ, চিপে চিপে বাঁধাই, ফিনফিনে পাতা, এবং দাম কম। যেন প্লেনের ইকোনোমি ক্লাস। বলতে দ্বিধা নেই, পুরনো বই কিনি, সেকেন্ডহ্যান্ড বইয়ের দোকানে ঢু মারি৷ আমাজনে অনেক ভালো কিন্তু দুষ্প্রাপ্য বই, যা ইংল্যান্ডেও খুঁজে পাই না, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে পুরনো বই কিনে নিই।

ভালো বই কিনে, ধনে না হলেও মনে ধনী হই। ভালো বইগুলো আড়ালে থাকে, দেখতে শুকনো হয়, দোকানে অবহেলায় রয়, প্রচারে যেন বাণিজ্যের যোগ্য নয়। কিন্তু বইয়ের দোকানে সামনের সারিতে থাকে বাণিজ্যের বই, প্রচারেও থাকে বাণিজ্যের লোভনীয় খৈ। যা খাওয়ালে বিক্রেতার পকেট পুষ্ট হয়, ক্রেতার পেট খারাপ হয় কিনা জানি না। আজকাল অনেক বইয়ে লেখার চেয়ে প্রচ্ছদ ভালো, প্রচ্ছদের চেয়ে প্রচার ভালো।

দুটো ব্যাপারে নিজের স্বভাব উদার। আবার একই স্বভাব পরস্পরের শত্রু। খাবার এবং বই৷ দুটোর পেছনে কৃপণতা নেই। একই বই তিনবার কিনেছি, আগের দু’বার কেউ মার্ক টোয়েন’কে ফলো করে আর ফেরত দেয়নি।

ভালো বই পাশে থাকলেও মনে হয় ভালো একজন বন্ধু৷ দেখা গেলো— একটি বইয়ের দোকান, তারপাশে একটি কফির দোকান৷ পেটে ক্ষুধা, চিন্তায় পড়ি, আগে খাবো নাকি একটা বই কিনবো। চিন্তা করি যে, এখন কফি খেলে তো শেষ, এর চেয়ে এই দু’ পাউন্ড বাঁচিয়ে একটা বইয়ের খরচের সাথে যুক্ত করলে একটি ভালো বই কিনতে পারবো৷

এক কাপ কফি ফুরিয়ে যাবে, একটি ভালো বই গোটা একটি ক্যাফে হয়ে পাশে পাশে থাকবে।

আরো পড়তে পারেন

আওরঙ্গজেব ও শম্ভাজির মিথ বনাম ইতিহাস: প্রসঙ্গ ছাবা চলচ্চিত্র

বর্তমানে বিজেপির সংঘ পরিবার প্রায় তিন’শ বছর আগের ভারতের এমন এক সম্রাটের কবর মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করছেন- যিনি ইতিহাসে ভারতকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রের মানচিত্র ও সংহতি উপহার দিয়েছিলেন, যার আয়তন ছিল চল্লিশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার- যা ছিল বর্তমান ভারতের চেয়ে আট লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বড়, তাঁর অধীকৃত রাষ্ট্রটিই ভারত এখনো তারা….

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যা জানা গিয়েছে, যা জানা সম্ভব

এক মহান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অপরিসীম আত্মত্যাগ। নানা সূত্র থেকে আমরা শুনে এসেছি ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা। অনেকেই আবার ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন প্রশ্ন ওঠার মূলে রয়েছে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে ৭১-পরবর্তী শাসকদের উদাসীনতা। তারা এত বছরেও শহীদের সংখ্যা….

প্রতিটি শূন্যতা যেন নতুন শোকের জন্ম দেয়

শূন্যতার আকাশে স্মৃতির মেঘ জমে। জীবন সরে সরে আসে মৃত্যুর দিকে। ফুরিয়ে আসা সময়ের দাপট এড়াতে পারে না কেউ। একজীবনে বহু জীবনাবসানের দেখা পাওয়া যায়, হয়তো দুর্ভাগ্যক্রমেই। ব্যক্তির মৃত্যুর পরিসমাপ্তি একবারই হয়, তবে সেই ব্যক্তি যদি বহুপ্রাণের সাথে জুড়ে থাকেন, তাঁর অনুপস্থিতি বারংবার অনুভূত হয়। প্রতিটি শূন্যতা যেন এক নতুন শোকের জন্ম দেয়। ২০২৪ সালে….

error: Content is protected !!