
নতুন বইয়ের দাম বেশি, পুরনো বইয়ের কম। স্বতঃসিদ্ধ কথা। সব জায়গার জন্যে সত্য হলেও পশ্চিমে কারণটা ভিন্ন। পশ্চিমে দু’ ধরণের বই ছাপায়: হার্ডকাভার বা হার্ডব্যাক এবং পেপারব্যাক। শুরুতে হার্ডকাভার ছাপায়৷ অক্ষরগুলো বড় থাকে কাগজ দামি, মলাট যেন পাথর৷ খরচ বেশি, তাই দাম বেশি৷ প্লেনের ফার্স্ট ক্লাসের মতো।
আমার মতো দরিদ্রদের জন্য পেপারব্যাক, এগুলো কিছুদিন গেলে ছাপায়৷ নরম মলাট, ছোট হরফ, চিপে চিপে বাঁধাই, ফিনফিনে পাতা, এবং দাম কম। যেন প্লেনের ইকোনোমি ক্লাস। বলতে দ্বিধা নেই, পুরনো বই কিনি, সেকেন্ডহ্যান্ড বইয়ের দোকানে ঢু মারি৷ আমাজনে অনেক ভালো কিন্তু দুষ্প্রাপ্য বই, যা ইংল্যান্ডেও খুঁজে পাই না, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে পুরনো বই কিনে নিই।
ভালো বই কিনে, ধনে না হলেও মনে ধনী হই। ভালো বইগুলো আড়ালে থাকে, দেখতে শুকনো হয়, দোকানে অবহেলায় রয়, প্রচারে যেন বাণিজ্যের যোগ্য নয়। কিন্তু বইয়ের দোকানে সামনের সারিতে থাকে বাণিজ্যের বই, প্রচারেও থাকে বাণিজ্যের লোভনীয় খৈ। যা খাওয়ালে বিক্রেতার পকেট পুষ্ট হয়, ক্রেতার পেট খারাপ হয় কিনা জানি না। আজকাল অনেক বইয়ে লেখার চেয়ে প্রচ্ছদ ভালো, প্রচ্ছদের চেয়ে প্রচার ভালো।
দুটো ব্যাপারে নিজের স্বভাব উদার। আবার একই স্বভাব পরস্পরের শত্রু। খাবার এবং বই৷ দুটোর পেছনে কৃপণতা নেই। একই বই তিনবার কিনেছি, আগের দু’বার কেউ মার্ক টোয়েন’কে ফলো করে আর ফেরত দেয়নি।
ভালো বই পাশে থাকলেও মনে হয় ভালো একজন বন্ধু৷ দেখা গেলো— একটি বইয়ের দোকান, তারপাশে একটি কফির দোকান৷ পেটে ক্ষুধা, চিন্তায় পড়ি, আগে খাবো নাকি একটা বই কিনবো। চিন্তা করি যে, এখন কফি খেলে তো শেষ, এর চেয়ে এই দু’ পাউন্ড বাঁচিয়ে একটা বইয়ের খরচের সাথে যুক্ত করলে একটি ভালো বই কিনতে পারবো৷
এক কাপ কফি ফুরিয়ে যাবে, একটি ভালো বই গোটা একটি ক্যাফে হয়ে পাশে পাশে থাকবে।