
মামলার রায়
“ওগো নিষ্ঠুর, ফিরে এসো হে! আমার করুন কোমল, এসো!
আমার মুখের হাসিতে এসো হে, আমার চোখের সলিলে এসো ,
আমার শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভুবনে এসো!”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নারীনির্যাতন, প্রেমিকার গৃহে অগ্নিসংযোগ, এবং একজন নারী ও একটি কুকুরের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে কেভিনের বিচার চলছে এক মাস ধরে। কাল মামলা শুনানির শেষ দিন ছিল। আজ জুরিরা বসেছে মামলার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করতে। আমি তাদের একজন। জুরিদের রায় শুধুই হতে পারে দুটি শব্দ: দোষী অথবা নির্দোষী। বারো জন জুরিদের মধ্যে একজনও যদি আসামিকে নির্দোষী ভাবে তবে আসামি খালাস পেয়ে যাবে। এটাই মার্কিন আদালতের নিয়ম।
আগুনটা কে লাগিয়েছে? কেভিন? না কি ডেভ? কেভিনের নামেই সুজানের অভিযোগ, কিন্তু আগুনটা তো ডেভও লাগাতে পারে। বাড়িটা পুড়ে গেলে ডেভ প্রতিমাসের মর্টগেজ দেওয়ার দায়িত্ব থেকে বেঁচে যায়। ইন্সুরেন্স কোম্পানি বাড়ির পুরো দাম দিয়ে দিবে, যাতে ডেভ এবং সুজানের আধাআধি ভাগ আছে। বাড়িতে আগুন লাগানোর কোন চাক্ষুষ সাক্ষী নেই। তবে একজন কেভিনকে দূর পুকুর পাড়ে কুকুরটির সাথে দেখেছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছে।
একটি নারীকে সঙ্গ দেওয়া, তার কাপড় ইস্ত্রি করে দেওয়া, কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে দেওয়া কি নারী নির্যাতন হতে পারে?
বারো জন জুরিদের মধ্যে সাতজন মেয়ে। দেখা গেল কেভিন ইতিমধ্যেই মেয়েদের মন জয় করে ফেলেছে। ‘আহা, আমার স্বামী যদি এমন হতো!’ একজন মহিলা জুরি আক্ষেপ করে বললেন।
মামলায় কেভিন বেকসুর খালাস পেয়ে গেলো। জীবনটা আবার কিভাবে শুরু করা যায়? ভগ্নস্বাস্থ, ক্লান্ত কেভিন শূন্য হৃদয় নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে সে কথাই ভাবছিলো। ফোনটা বেজে উঠলো, লস এঞ্জেলস থেকে ক্যারোলের ফোন করেছে, ‘‘হাই, মিস্টার এল এ, আমি মিসেস এল এ বলছি। আজ বাবার কাছে মামলার রায় শুনলাম। গত ছয় মাস তুমি আমাকে অনেক কাঁদিয়েছো। আর কাঁদতে চাই না। যে ভালোবাসার কারাগারে সুজান বন্দি হতে চায় নি, আমি স্বেচ্ছায় সেই কারাগারে ঢুকতে চাই। শুধু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈতরণী পার না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তুমি কি অপেক্ষা করবে?’
হ্যা, তাই হোক। কেভিন অপেক্ষা করবে।