Author Picture

তুমুল জনপ্রিয়—‘গেরিলারো হিরোইকো’

সুদীপ্ত সালাম

চে গুয়েভারা মানেই আগুন, আন্দোলন, সংগ্রাম, প্রতিবাদ, বিপ্লব ও বিদ্রোহ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক, বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে এখনো জ্বলজ্বলে বিপ্লবী আর্নেস্ট চে গুয়েভারা। আর চে’র প্রতিচ্ছবি মানেই কিউবার আলোকচিত্রী আলবার্তো কোর্দার তোলা তুমুল জনপ্রিয় পোরট্রেট—‘গেরিলারো হিরোইকো’ (বীর গেরিলা যোদ্ধা)।

চে’র কথা মনে আসতেই প্রথমে এই ছবিটিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জ্বলজ্বলে চোখ, যেন ভবিষ্যেতর দিকে তাকিয়ে আছেন। চেহারায় দৃঢ়তা ঝকঝক করছে—যেন পাথরে খোদাই করা ম্যুরাল। ১৯৬০ সালের ৫ মার্চ কিউবার হাভানা থেকে ছবিটি তুলেছিলেন কোর্দা। তখন এই গেরিলা যোদ্ধার বয়স মাত্র ৩১। সে থেকে ছবিটির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। তবে ১৯৬৭ সালে চে’র মৃত্যুর পর এই ছবিটি গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে ছবি নিয়ে এতো মাতামাতি সে ছবিটি নাকি তোলা হয়েছিল ‘কাকতালীয় এবং পুরোপুরি ভাগ্যের জোরে।’ এক সাক্ষাৎকারে কোর্দা তাই বলেছেন।

পরদিন হাভানার কোলন সেমিট্রিতে নিহতদের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কিউবার প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো, দার্শনিক ও লেখক জঁ-পল সার্ত্র, লেখক ও দার্শনিক সিমন দ্য বোভোয়ার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী আর্নেস্ট চে গুয়েভারা। তবে চে স্টেজে এসেছিলেন অল্প কিছুক্ষণের জন্য। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর অফিসিয়াল আলোকচিত্রী হিসেবে কোর্দা সে অনুষ্ঠানের ছবি তুলছিলেন। তার হাতে লাইকা এম২ ক্যামেরা এবং ৯০ এমএম লেন্স। চে যখন হাজির হন তখন তারও দুটো ছবি তুলে রাখেন তিনি

১৯৬০ সালের ৪ মার্চ কিউবার হাভানায় বিস্ফোরিত হয় ফরাসি কার্গো জাহাজ ‘লা কুবর’। জাহাজটিতে এই সময় ৭৬ টন গ্রেনেড ও অন্যান্য বিস্ফোরক ভরা হচ্ছিল। এই ঘটনায় প্রায় একশ লোক নিহত হয়। প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো এই ঘটনার জন্য সিআইএকে দায়ী করলেও যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগ অস্বীকার করে। যাইহোক। পরদিন হাভানার কোলন সেমিট্রিতে নিহতদের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কিউবার প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো, দার্শনিক ও লেখক জঁ-পল সার্ত্র, লেখক ও দার্শনিক সিমন দ্য বোভোয়ার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী আর্নেস্ট চে গুয়েভারা। তবে চে স্টেজে এসেছিলেন অল্প কিছুক্ষণের জন্য। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর অফিসিয়াল আলোকচিত্রী হিসেবে কোর্দা সে অনুষ্ঠানের ছবি তুলছিলেন। তার হাতে লাইকা এম২ ক্যামেরা এবং ৯০ এমএম লেন্স। চে যখন হাজির হন তখন তারও দুটো ছবি তুলে রাখেন তিনি। একটি হরিজন্টাল, অন্যটি ভার্টিকাল। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা, পরিষ্কার। কিন্তু ভার্টিকাল ছবিটিতে চে’র পেছনে একজনের মাথা দেখা যায়। রইলো হরিজন্টাল ছবিটি। এই ছবিটিতে একপাশ দিয়ে পাম গাছের পাতা এবং অন্যপাশ দিয়ে ঢুকে গেছে একজনের শরীরের একাংশ।

আলবার্তো কোর্দা

কোর্দা তখন কিউবার ‘রেভোলিউশন’ পত্রিকায়ও কাজ করেন। সেই পত্রিকার সম্পাদক সিদ্ধান্ত নিলেন, ছাপা হবে শুধু ক্যাস্ট্র, সার্ত্র ও দ্য বোভোয়ারের ছবি। চে’র ছবিটি তখন ছাপা হলো না। কোর্দা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন—এটি একটি শক্তিশালী ছবি। কোর্দার মতে, ছবিটিতে চে’র দৃঢ়তা, ক্রোধ ও কষ্ট ধরা পড়েছে। তিনি ছবিটি থেকে পাম গাছের পাতা ও আরেক লোকের শরীরের অংশ ছেঁটে ফেলে প্রিন্ট করলেন। আর এভাবেই বেরিয়ে এলো চে’র আইকনিক ছবিটি। তিনি সেই ছবির কপি অনেককে উপহার হিসেবেও দিতে লাগলেন। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ‘গেরিলারো হিরোইকো’।

কিন্তু ছবিটি যার তোলা তিনি এই ছবিটি থেকে খ্যাতি ছাড়া তেমন কিছুই পাননি। এই ছবির কপিরাইট এবং এর যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এখনো আলোচনা ও মামলা চলছে। যদিও ২০০১ সালে কোর্দা প্যারিসে মারা যান। তাকে হাভানার সেই কোলন সেমিট্রিতেই দাফন করা হয়।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!