
দাগ
কিছুটা দুমড়ে মুচড়ে দিলে
কাগজের মতো ফুঁ দিয়ে
উড়াতে পারতাম বাকিটা জীবন
কিছুটা পাথর সরালেই মাতামুহুরি
তোমার কাছে বসে
শুনতে পেতাম পাহাড়ের গান
গৃহত্যাগী সরিসৃপ যেন তুমি
কাছে আসতে আসতে ভুলে গেছ
সমুদ্রের তান
তুমি জানো, মৃন্ময়ী
বুকে আমার বসেছে বিপন্ন দাগ
তাই মেখে যাই বিষণ্ণ পরাগ
খরকা বিল
কোথায় চলেছো, হে নবীন সওদাগর?
ভিড়াও তরী ফেলো নোঙর
খরকার বিলে,
এখানেই নাড়ি পুঁতে রাখা,
মনে রেখো তিলে তিলে।
সিন্ধবাদ তুমি নও,পাটের আঁশের গন্ধ
লেগেছে তোমার শরীরে,
ইস্! শামুকে কেটেছে বুঝি, পা?
কৃষকের ছেলে তুমি,সোনার টুকরো যেনো
ডুব দিয়ে পাটকাঠি তুলে কাদায় ভরেছে গা ।
শ্যামা কিশোরি খরকার বিলে
ফেলেছিল ঠেলা জালি
খালোই ভরেছে মাছে,
মুখে তাই শুধু আনন্দ- অঞ্জলি ।
বটগাছটার শেকড় ঠেকেছে কোথায়?
ইতিহাস বইয়ে পাবো কি এ খবর !
বাবা বলতেন, বিল নিয়ে কোনো স্মৃতি নাই ,বাপ!
খুড়ছি কেবলই খরকা বিলের কবর ।
জীবন
তুমি যখন হারিয়ে যাও
তখন রাত দুপুর
আব্বা বাড়ি ফিরছেন,
সাইকেলের ক্রিংক্রিং বেল বাজছে,
বড়োআপা বই-খাতা খুলে—
বসে পড়েছে বিছানায়,
আবৃত্তি করছে ‘কবর’ কবিতা।
খেলনাগাড়ি ফেলে আমি
ছুটে যাচ্ছি মায়ের কাছে,
আম্মা তরকারি কাটছেন—
চোখের ভেতর বাবার বাড়ি
ফেরার আনন্দ, কী নিবিড় পূর্ণতা—
তুমি যখন হারিয়ে যাও—
শৈশব আমাকে আটকা পড়া
সোলজারের মতো—
টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় জাহাজের হিমঘরে।
যেনো চিরকাল যন্ত্রের তাবেদার
ছিলাম আমি—
যেনো কখনো আমি— ঘাস ভালোবাসিনি।
শুঁকে দেখিনি কোনোদিন— ভাঁটফুল !
তুমি যখন হারিয়ে যাও—
ভোরের কুরআন তিলাওয়াতের
চেয়ে বেশি শুনতে পাই
আম্মার কান্নার আওয়াজ ।
প্রাপ্তি
তোমারে না পাইলেও কবিতা
হাঁটবে বুকের অলিগলি
নির্জন দুপুরে কথা বলবে
নদীর সাথে
তৃষ্ণার্ত ফেরিওয়ালা জিরোবে
গাছের ছায়ায়
শ্রান্তিহীন ফুঁক দেবে বাঁশিতে
তোমারে না পাইলেও বৃষ্টি
নামবে আকাশে
টিনের চালে ভিজবে শুকনো সুপারি
বানের পানিতে ছুইটা যাবে
পুকুরের বেড়া
মাছেরা ডিম ছাড়বে নতুন পানিতে
তোমারে না পাইলেও
হাওয়ারা ঘ্রাণ নিতে আসবে লাল শহরে
হাসপাতালের নিথর
করিডোরে আতিউতি করবে
আমার জান
নতুন কোনো সফল
মৃত্যুর ফরমানে
আজরাইল নিয়ে যাবে আমারে
তখন আমারে নিয়ে তোমার
আর কোনো চিন্তা নাই !
নদী
যেভাবে নদী ও কাশফুল ছিল
সেভাবে প্রেমও ছিল
মেয়েটিও ছিল, দু’চোখ বন্ধ করে
নৌকো ভাসিয়ে এক হিম জোসনা রাতে
কোথায় চলে গেলো;
আমি শুধু তার চলে যাওয়া দেখে গেছি
আর এই রেলের শহরে
হয়েছি নোটের অসুন্দর বিনিময় ।
তাকে ফেরাবার আয়োজন ছিল না
কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না
ক্ষতবিক্ষত কোনো বুক ছিল না,
বৃষ্টি ছিল না চোখে—
অথচ কী মায়াময় স্মৃতি ছিল মনে ।
তাকে চিরনিদ্রার মতো গভীর অভিমানে
শীতের পাখিদের আর্তনাদের কথা
মনে আসে
অশ্রু— শীত চিৎকার— দাপাদাপি
যেন বুলেটে ঝাঝড়া হয়েছে জীবনের
জটিল অংকের ঘৃন্য মহড়া, অশালীন সুদ কষা—
আর কাঠগড়ায়— চাপাফুলের বদলে
অপরাধী— অবনত দীর্ঘশ্বাস ।