Author Picture

তামিম, রিয়াদ আর দেশের ক্রিকেট

মেজবাহ উদদীন

তামিম ইকবাল

‘লুক অ্যাট দিজ সেভেন্টিন ইয়ার্স ওল্ডারস রিয়েলি শোয়িং ভেরি লিটল রেসপেক্ট টু দা এল্ডারস’ ২০০৭ বিশ্বকাপে ঈয়ান বিষপ এই কথাগুলো যার সম্পর্কে বলেছিলেন ক্রিকেট দুনিয়া তাকে জানে তামিম ইকবাল নামে। সেই বিশ্বকাপের ইন্ডিয়ান দলটাকে মনে করা হয় সর্বকালের সেরা দল। যেখানে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলী, যুবরাজ সিং, জহির খানদের মতো বড় বড় নামের খেলোয়াড়রা। উড়তে থাকা সেই ইন্ডিয়ান দলটার অহংকে মাটিতে নামিয়ে এনে তাদের বাড়ি ফেরা কঠিন করে তুলেছিলেন যে বাঙালি তরুণ তুর্কি তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের আগ্রাসী ক্রিকেটের প্রথম এবং হয়তো একমাত্র বিজ্ঞাপন। সেদিন জহির খানের বল ১৭ বছরের তামিমের ঘাড়ে লাগলে উৎকণ্ঠায় কেঁপে ওঠে পুরো মাঠ। তবু তামিম দমে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণে ক্রিস ছেড়ে বেরিয়ে এসে জহির খানকে যেভাবে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন সেটা দেখে উপস্থিত ইন্ডিয়ান সাংবাদিকদের চোখ হয়েছিল ছানাবাড়া। তখনই বোঝা গেছিল এই ছেলে ক্রিকেট মাঠ শাসন করবে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় হওয়ার যে অজস্র অদৃশ্য আবেদনপত্র জমা পরে আছে। কৈশরের শিখর ছোঁয়ার সেই মাতাল স্বপ্নের অনেকটা জায়গা জুড়েই তামিম ইকবাল। কিংবদন্তি হওয়ার অনেক পথের মধ্যে এটাকেও রাখা যায় অনায়াসে। তাই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তামিমের অবস্থান আলাদা। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ওয়ানডে ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক- ১৪টি। তবে তিনি লর্ডসের সেঞ্চুরিকে এগিয়ে রাখবেন। লর্ডস ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যময় ভেন্যু হিসেবে পরিচিত এবং এই মাঠে শতক হাঁকালে বা পাঁচ উইকেট নিলে তার নাম ওঠে অনার বোর্ডে। লর্ডসের অনার বোর্ডে একমাত্র বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে তামিম ইকবালের নাম আছে। আর পাঁচ উইকেট নেয়ার কারণে শাহাদাৎ হোসেন রাজিবের নামও আছে এই বোর্ডে।

শুরুর দিনগুলোতেই তামিমকে মনে করা হতো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। অনেকেই মনে করেন তামিম বাংলাদেশকে প্রথম ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলাটা শেখান। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তামিমের টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি আছে। ক্যারিয়ারে ২৫টি সেঞ্চুরি, ৯৪টি ফিফটি, ১৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান। তবু কেন তামিমকে আলাদা করে মনে রাখা হবে ২ রানের অপরাজিত এক ইনিংসের জন্য? কারণ, সেদিন এক হাতে এক বল খেলেছিলেন তামিম। সুরঙ্গা লাকমলের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে তিন বল খেলেই উঠে গিয়েছিলেন এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে। পরে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবার মাঠে নামলেন তামিম এক হাতে প্লাস্টার নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় হওয়ার যে অজস্র অদৃশ্য আবেদনপত্র জমা পরে আছে। কৈশরের শিখর ছোঁয়ার সেই মাতাল স্বপ্নের অনেকটা জায়গা জুড়েই তামিম ইকবাল। কিংবদন্তি হওয়ার অনেক পথের মধ্যে এটাকেও রাখা যায় অনায়াসে। তাই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তামিমের অবস্থান আলাদা

২০১০ সালের মে মাসে দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলতে ইংল্যান্ড সফর করে বাংলাদেশ। দল ২-০ ব্যবধানে হারলেও প্রতিটি টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য ২০১১ সালে উইজডেন ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হন তামিম ইকবাল।

খেলাধুলায় আবেগের জায়গা কম থাকলেও একটা মানুষ তো আর আবেগ শূন্য হতে পারে না। তাই তো, তামিমকে নিয়ে বোর্ড কর্তাদের অসন্তোষ অবহেলার মনোভাব বুঝতে পেরে গত আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন তামিম হঠাৎই অবসরের ঘোষণা দেন কান্না জড়িত কন্ঠে। সেই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ধরে চলে তামিমের ফিরে আসার অনুরোধ। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তামিম অবসর ভেঙ্গে আবার মাঠে ফেরার ঘোষণা দেন।

 

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

স্বপ্নের একটা জীবন পাওয়ার জন্য সফল হওয়ার জন্য ছেড়েছেন অনেক কিছুই শুনেছেন অনেক গালমন্দ। সেই সাফল্য যদি সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করে তুমি আমাকে কতটা চাও? তার উত্তর হবে সবটা, পুরোটা। শুধু জায়গা দখল করার জন্য বলা নয় আন্তরিকতা, সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম সবকিছু দিয়ে চেয়েছিলেন বলেই  জাতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠানোর গল্পটার জন্ম দিতে পেরেছিলেন। সতের কোটির সেরা ১১ জন হয়ে মাঠে নামার স্বপ্নটা জলাঞ্জলি দেননি বলেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রাসঙ্গিক। জীবনে চরম সুখ বা চরম অবস্থা বলে কিছু নেই তাইতো সময়ের সাথে সাথে ফর্মহীনতায় ইনজুরিতে বাদ পড়েছেন অনেকবার, কিন্তু এবারের বাদ পড়াটা হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে ভক্ত সমর্থকদের।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডব খ্যাত ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রচারের আলো সবচেয়ে কম পড়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওপর।  অথচ বৈশ্বিক কোন আসরে বাংলাদেশিদের সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে রিয়াদ হলেন বেঞ্চ মার্ক। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই সেঞ্চুরি করার পর রিয়াদকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, আর দশটা খেলোয়াড়ের জীবনের মত এমন সিনেম্যাটিক স্ক্রিপ্ট তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ছিল না। বরং পেছন ফিরে তাকানোটাই তার গল্পের সামনে এগনোর জ্বালানি। ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে ব্যাট করাটা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জের সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওপরের দিকে ব্যাট করার অ্যাবিলিটি থাকার পরেও দলের প্রয়োজনে সাত নম্বর পজিশনের চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন নিজেই। ওপরের দিকে সুযোগটা পেলে হয়তো নামের পাশে আরো আরো রান যোগ করতে পারতেন, হতে পারতেন খবরের কাগজে ছাপা অক্ষরের শিরোনাম।

এমনিতেই মাহমুদুল্লাহ ভীষণ শান্তশিষ্ট। না আছে তার পোস্টার বয় ইমেজ না আছে ভীষণ দারিদ্রকে জয় করে উঠে এসে সব জয়  করার মুগ্ধতা। মাহমুদুল্লাহর খারাপ সময় যেনো সমালোচকদের জন্য মধুমাস। তাই তো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যখন বাংলাদেশের হয়ে ভালো করেন তখন পুরো বাংলাদেশে জিতে, আর মাহমুদুল্লাহ যখন হারেন তখন শুধু তিনি একাই হারেন। রিয়াদ কখনো নিজেকে ২২ গজের পাবলো পিকাসো, জয়নুল আবেদীন বা এস এম সুলতান দাবি করেন না। তবুও দেশের ক্রিকেট চিত্রে যে দাগ রেখেছেন তাতে নিদেন পক্ষে চারুকলা পাশের স্বিকৃতী তো তিনি আশা করতেই পারেন! বিসিবির বড়কর্তারা কিংবা নির্বাচক প্যানেল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গাল ভরা উক্তি করলেও বাস্তবতা হলো দলে আর তার ঠাঁই হয় না। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে লবণের স্বাদ হয়ে আরো কিছুদিন খেলে যেতে পাড়েন তিনি।

 

দেশের ক্রিকেট

যে বর্তমানের স্টেশন হয়ে ভবিষ্যৎ এগিয়ে যায় অতীতের গর্ভের দিকে। সেই বর্তমানের কাছে বর্তমানই হয়তো চিরন্তন। তাই তো নির্বাচক প্যানেল সিনিয়ার ক্রিকেটারদের অবদান ভুলে যেতে খুব বেশি সময় নেয় না। নানান অযুহাতে চলে তাদের থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। দল ঘোষণার প্রেসমিটে দেওয়া হয় অদ্ভুতুরে সব যুক্তি! বাঙালীর হৃদয় নিয়ে যারা করে এমন ব্যাঙ্গ, তারাই বছরের পর বছর থেকে যায় নির্বচকের চেয়ারে।

সফলতার একটা মন্ত্র আছে, ডোন্ট চেঞ্জ ইওর গোল, চেঞ্জ দা স্ট্রাটেজি। অর্থাৎ পরিকল্পনা পরিবর্তন করা যেতে পারে কিন্তু, লক্ষ্য থাকবে স্থির। বর্তমান ক্রিকেটে এরকম স্থির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্কটল্যান্ড, নামিবিয়ার মত দেশগুলো। যেটা তাদের মাঠের খেলা দেখলেই বোঝা যায়। এখানে ব্যতিক্রম বিসিবি, তারা স্ট্রাটেজি পরিবর্তন না করে বারবার গোলটাকে পরিবর্তন করছে…..। নাটকটা শুরু হয়েছিল গত বছরের এশিয়ে কাপের আগে থেকে, প্রথমে শুনলাম লক্ষ্য এশিয়া কাপ, কিছুদিন পর শুনলাম লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এরপর বলা হলো না আমাদের লক্ষ্য আগামী বিশ্বকাপ। তো এই নাটকের ফল আমরা কি পেলাম, বিশ্বকাপে গ্রুপের ৬ দলের মধ্যে আমরা হলাম পঞ্চম এমনকি সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডও আমাদের উপরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছিল। আর এশিয়া কাপের দুই ম্যাচে দুই হার নিয়ে আমরা ধরেছিলাম বাড়ির পথ।

এই বৃত্তের বাকি অংশ পূরণের উপলক্ষ্য হয়ে আবারও সামনে এসেছে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ। এবং আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের নাটক চলমান। এবারের নাটকের দুইটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল বিতর্কিত দল গঠণ এবং সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি বোর্ডের অবহেলা আর অসম্মান।

বেদনাকে যারা সুর বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায় বাংলাদেশের ক্রিকেট তাদেরই দখলে। যে ক্রিকেটারদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড প্রায় হাজার কোটি টাকার বোর্ডে পরিণত হওয়ার গর্ববোধ করছে। সেই ক্রিকেটারদের সম্মানজনক বিদায় দিতে না পারা ক্রিকেট বোর্ডের সর্বত্র স্বেচ্ছাচারিতা আর অপেশাদারিত্বের ছড়াছড়ি

যে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ বিশ্বকাপ জেতার কথা ছিল। যেখানে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতার কোন দরকার নেই দাম নেই। হিংসা, বিদ্বেষ, গুটিবাজি করে যে অস্থিরতা বাংলাদেশ ক্রিকেটে তৈরি করা হয়েছে তার ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাদেশ এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছে, যেখানে খুব বাজেভাবে হেরেছি আমরা। এ দিন শেষ দিকে প্রয়োজনীয় ৪০-৫০ রান এনে দেওয়ার মত লোকই ছিল না বাংলাদেশের। শেষের প্রায় আট ওভারের মতো খেলতেই পারলাম না আমরা। যে স্ট্রাইক রেটের দোহাই দিয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়া হয় সে দলের কারও স্ট্রাইক রেট একশ’র আশেপাশেও ছিল না! শান্তর ৭৩ স্ট্রাইক রেট ছিল সর্বোচ্চ। এদিন বাংলাদেশের ১৬৪ রানের মধ্যে শান্তর ছিল ৮৯ রান অর্থাৎ বাকি ১০ জন মিলে করেছেন ৭৫ রান। এ থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে কত অস্থিরতা বিরাজমান। হঠাৎ করে ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন, হুটহাট যে কাউকে নামিয়ে দিলেই যেন সেঞ্চুরি করে আসবে রানের পাহাড় গড়ে আসবে এমনটা অনুভব করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট কর্তারা যে কাউকে নামিয়ে দেন। তাইতো যে ওয়ানডে ফরমেটে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কমফোর্টেবল সবচেয়ে বেশি ডমিনেটিং সেই ওয়ানডে ফরমেটেও সর্বশেষ সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড ছাড়া অন্য সবার বিপক্ষেই হেরেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ হরেছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ হেরেছে, এশিয়া কাপে শ্রীলংকার দ্বিতীয় সারির বোলিং অ্যাটাকের কোনো জবাব ছিল না বাংলাদেশের কাছে।

বেদনাকে যারা সুর বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায় বাংলাদেশের ক্রিকেট তাদেরই দখলে। যে ক্রিকেটারদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড প্রায় হাজার কোটি টাকার বোর্ডে পরিণত হওয়ার গর্ববোধ করছে। সেই ক্রিকেটারদের সম্মানজনক বিদায় দিতে না পারা ক্রিকেট বোর্ডের সর্বত্র স্বেচ্ছাচারিতা আর অপেশাদারিত্বের ছড়াছড়ি।

গত ২০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে জনপ্রিয়তার বিচারে শীর্ষ পর্যায়ের যে পাঁচজন ক্রিকেটারকে মিডিয়াতে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলে উল্লেখ করা হয়, তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠে এখন আর নেই মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। এই তালিকার বাকি চারজনের মধ্যে শুধুমাত্র সাকিব আল হাসানই এখনও তিন ফরম্যাটে খেলছেন, তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সীমিত ওভারের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ এখন শংকায় এবং টেস্ট থেকে তিনি আগেই অবসর নিয়েছেন।

২০১৩ সালের নভেম্বরে নিজের মাঠ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জীবনের শেষ টেস্টটি খেলেছিলেন কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার। ভারতীয় ক্রিকেটের এই গ্রেটকে বিদায় জানানো হয়েছিল বিপুল সংবর্ধনা দিয়ে। সেটি তাঁর প্রাপ্যই ছিল। কী চমৎকার একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি ওয়াংখেড়ের হাজারো দর্শকের সামনে। সেই বক্তব্যের সময় আবেগতাড়িত ছিলেন টেন্ডুলকার, ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন ভক্ত-সমর্থকেরা। একজন ক্রীড়াবিদের জীবনে এর চেয়ে বড় সম্মান আর কী হতে পারে! শ্রীলঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারাও নিজের শহর কলম্বোতে টেন্ডুলকারের মতোই সংবর্ধনা পেয়ে বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ তার সেরা ক্রীড়াবিদদের এমন বিদায় দিতে পারল না, এই আক্ষেপের শেষ হবে কবে!

আরো পড়তে পারেন

বৈভব সূর্যবংশীর উত্থানের রূপকথা

ভারতীয় ক্রিকেটে আইপিএল-এর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেখানে আইপিএল-এর অবদান নিয়ে নিশ্চিয়ই আলাদা একখানা অধ্যায় লেখা হবে। তাতে ক্ষতি আর সমৃদ্ধি দুই দিকের আলোচনাই হবে নিক্তি মেপে। তবে এই পাদটীকা একদিকে সরিয়ে রেখে একটা কথা বলাই যায় যে, ভারতবর্ষে আইপিএল আর শুধুমাত্র একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, এটি একটি সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির অংশ। এর সামগ্রিক….

বিদায় রূপকথার দেবদূত

যে পরিবেশে জলছবি আর রংমশালের গল্প ছিল না। না ছিল রূপকথার পরীদের গল্পও। কেবল ছিল অভাবের গল্প, আর একটা বল ছিল। যতবার সেই বলকে দূরে ছুড়ে দিত রোগা পা, ততবার, একবেলা খেতে না পাওয়ার কথা ভুলে যেতেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ভুলে যেতেন, তাঁদের জীবনটা অভাব অন্ধকার আর না-পাওয়ার সবটুকু রংহীনতা মেখে নিচ্ছে রোজ। ফুটবলের সঙ্গে….

বিশ্বকাপের মার্কশিট

‘পরের জন্মে আমি এর প্রতিশোধ নেব। নেবই। মোহনবাগানের ফুটবলার হয়ে জন্ম নিয়ে…।’ অনেক বছর আগে এক ভারতিয় পত্রিকায় পড়া এক চিঠি। যে চিঠি হয়তো লেখা হয়েছিল কোনও এক অনির্বাণ দহনের রাতে। লিখে আর ভাবেনি, লেখক চলে গিয়েছিল সব ছেড়েছুড়ে। প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। প্রায় পাঁচ দশক আগে পঁচাত্তরে ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোলের অনলে দগ্ধ এক মোহনবাগান….

error: Content is protected !!