Author Picture

তরুন ইউসুফের এগুচ্ছ কবিতা

তরুন ইউসুফ

আমরাও নক্ষত্রচূর্ণ
.
নিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি আমরা
সময়ের সাথে
আমাদের একত্রে থাকা
যা দেখি পেছনে তাকিয়ে
আসলে অতীত
দূরের ঘটনা
মহাবিশ্বের মত
ঘনীভূত ছিল একদা
তারপর কাছে থাকার উত্তাপে
প্রবল বিস্ফোরণ
সেই থেকে
গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সি
দূরে সরে যাচ্ছে
তারা থেকে তারা
আমরাও নক্ষত্রচূর্ন, আহা
দূরে যেতে যেতে
কেমন আত্মহারা!


নিখোঁজ সংবাদ
.
তোমাকে পাই না তাই-
খুঁজতে গিয়ে
নিজেই হারিয়ে যাই।
এখন কে কাকে খুঁজব?
নাকি থেকে যাবো বেখোঁজ
বাকি পথ- একজীবন।
কি আসে যায়
পাশাপাশি থেকেও কি
কেউ কারো খোঁজ পায়-আদৌ।
তাই নিখোঁজই থাকি
যে পথ আছে বাকি
হয়ে যাই আগন্তুক
নিজেদের কাছে-
তারও কিছু প্রাপ্তি আছে
হারিয়ে যাওয়ায়
আসলে সুখ পায়রা
উড়ে যায়,
কিছু দুঃখ আছে
শোক আছে খাঁটি,
গুছিয়ে নিয়ে হাটি
যে যার পথে-
সবার কি খোঁজ থাকে
থাকে না
কত কত মুখ আছে
কতদিন দেখি না
তারাও নিখোঁজ হয়ত।


পাতাদের মত জীবন চাই
.
আহা! জীবন যদি পাতাদের মতো হতো
স্বতস্ফুর্ত সবুজ
আবার ঝরেও যেতাম নিঃশব্দে হাওয়ায়।
অথচ একেকটা ভোর দিনের পয়গাম নিয়ে আসলেই
সাজাতে থাকি নিজেকে দাহ করার চিতা
আউলা বাতাসে উড়াই ভ্স্ম করা ছাই
দিন শেষে যতটা চিৎকার জমা হয়
তাকে গিলে নেই
যতটা পাপ জমা হয়
ঝুলিয়ে দেই কপালের মাঝে
তারপর মুখোমুখি হই মুখের সাথে-
ধূসর
অথচ পাতাদের পাপহীন সবুজ জীবন
ঝড়ে যাবার আগেও শান্ত আয়োজন।


যন্ত্রভোগে মানুষ
.
সভ্যতায় মানুষের অবস্থান এখন নড়বড়ে

বাজারি যুদ্ধে
সিলিকন যৌনপন্যের কাছে
হেরে যাচ্ছে পুরুষ-নারী
রক্তে মাংসে আর সুখ হয় না
ফ্যান্টাসিতে ডিলডো আর জাপানিজ ডল

ভালবাসা প্রেম
কদাচিৎ পিডিএফ ভার্সনে চোখে পড়ে

মানুষ সুখের লাগিয়া যন্ত্র গড়েছিল
এখন যন্ত্র মানুষকে ভোগ করে।


প্রগতির দাহ দেখি
.
পাখিদের বাঁচার অধিকারের কথা বললে
সভ্যতা বলে
তুমি মানুষের প্রগতি ঠেকাতে চাও
সবুজের কথা বললে বলে
বরং বনে চলে যাও

মনের দুঃখে বনে যাব
বন নাই, বন উজার
আগুনে পুড়ছে বন,
সেই লেলিহান আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে
ভাবে মন-
শেষ গাছটা পুড়ে গেলে
আগুন পোড়াবে কি?

পুড়বে তখন
মানুষ আর প্রগতি।


পতনের ছন্দ
.
পতনেরও ছন্দ আছে
আছে কিছু সুখ।
শালফুল সেটা জেনে-
প্রথমে সৌন্দর্য ছড়ায়
তারপর হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে
উড়ে উড়ে একটু দূরে
ঝড়ে পরে
শান্ত স্থির।

অথচ আমরা
ধুপ করে পড়ে যাই
ছন্দহীন, সৌন্দর্যহীন
নিঃশ্ব-

পতনেরও ছন্দ আছে
আছে কিছু সৌন্দর্য
চল শালফুলের কাছে
অন্তত পতনের ছন্দ শিখি।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!