Author Picture

ছবিটি কি এখনো চাঁদে পড়ে আছে?

সুদীপ্ত সালাম

মার্কিন নভোচারী চার্লস ডিউক যখন চাঁদে পা রাখেন তখন তার বয়স মাত্র ৩৬। সর্বকণিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনিই প্রথম চাঁদে গিয়েছিলেন। এটা শুধু তার জন্য নয় গোটা দুনিয়ার ইতিহাসের জন্যও একটি বড় ঘটনা। কিন্তু ডিউক ঐতিহাসিক ঘটনাটিতে একটি মাত্রা যোগ করলেন। ১৯৭২ সালের ২০ এপ্রিলের চন্দ্র-অভিযানের কথা যখন ওঠে তখন ওই মাত্রাটির কথাও সামনে চলে আসে। তিনি চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফেরার আগে নিজের একটি ফ্যামিলি পোরট্রেট চাঁদের গায়ে ফেলে আসলেন! না ভুলে নয়, ইচ্ছে করেই।
‘এপোলো ১৬’ চন্দ্রাভিযানের আগে দিনের পর দিন ডিউককে বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। পরিবার থাকত যুক্তরাষ্ট্রের হিউসটনে, আর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতেন। সুতরাং তার দুই ছেলে বাবাকে কাছে পেত না। ছেলেদের অবাক করে দিতেই ডিউক চাঁদে গিয়ে এই কাণ্ডটি ঘটান। সপরিবারে তো আর চাঁদে যাওয়া যাবে না—তাই তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন পুরো পরিবারের ছবি। ছবির পেছনে তিনি লিখেছিলেন, ‘এটি পৃথিবী থেকে আসা নভোচারী চার্লি ডিউকের পরিবারের ছবি, যিনি ১৯৭২ সালের ২০ এপ্রিল চাঁদে পা রেখেছেন।’ ছবিতে ডিউক ছাড়াও আছেন তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে। সেসময় এক ছেলের বয়স সাত, আরেকজনের পাঁচ বছর। ছবিটি কে তুলেছিলেন তা জানা যায়নি।

ডিউক পরিবারের মূল আলোকচিত্র।

২০১৫ সালে ‘বিজনেস ইনসাইডার’ পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিউক বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় এই ছবিটি চাঁদে রেখে আসার পরিকল্পনা করতাম। আমি ছবিটি চাঁদের গায়ে রেখে একটি ছবি তুলেছিলাম—সন্তানদের দেখাতে যে আমি ছবিটি সত্যিই চাঁদে রেখে এসেছি।’ ঘটনাটিকে ডিউক ‘মহাকাশ গবেষণার মানবিক দিক’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ছবিটি কি এখনো চাঁদে পড়ে আছে? এই প্রশ্নের জবাবে ডিউক বলেছিলেন, থাকলেও ভালো অবস্থায় নেই। কেননা চাঁদের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ে। তিনি আরো বলেছিলেন, থাকুক না থাকুক—ছবিটি তার পরিবারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সবশেষে তাই আসল কথা। ধারণা করা হয়, চাঁদের যে জায়গাটিতে ছবিটি রাখা হয়েছিল—এখনো সেখানেই আছে। খুব ছোট বলে তা স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে না।
চাঁদে পড়ে থাকা ডিউক পরিবারের ছবির ছবিটি কত জায়গায় কতবার যে ছাপা হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এপোলো অভিযান ও জেমিনি অভিযানগুলো নিয়ে করা মাইকেল লাইটের বিশ্বখ্যাত আকরগ্রন্থ ‘ফুল মুন’ বইয়েও ছবিটি স্থান পেয়েছে। ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে বড় বড় জাদুঘরে।

আরো পড়তে পারেন

আওরঙ্গজেব ও শম্ভাজির মিথ বনাম ইতিহাস: প্রসঙ্গ ছাবা চলচ্চিত্র

বর্তমানে বিজেপির সংঘ পরিবার প্রায় তিন’শ বছর আগের ভারতের এমন এক সম্রাটের কবর মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করছেন- যিনি ইতিহাসে ভারতকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রের মানচিত্র ও সংহতি উপহার দিয়েছিলেন, যার আয়তন ছিল চল্লিশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার- যা ছিল বর্তমান ভারতের চেয়ে আট লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বড়, তাঁর অধীকৃত রাষ্ট্রটিই ভারত এখনো তারা….

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যা জানা গিয়েছে, যা জানা সম্ভব

এক মহান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অপরিসীম আত্মত্যাগ। নানা সূত্র থেকে আমরা শুনে এসেছি ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা। অনেকেই আবার ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন প্রশ্ন ওঠার মূলে রয়েছে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে ৭১-পরবর্তী শাসকদের উদাসীনতা। তারা এত বছরেও শহীদের সংখ্যা….

জর্জ অরওয়েলের নৌকাডুবি

১৯৪৪ সালের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে হিটলার যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধে জয় পেতে। তার মরণকামড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নানা দেশের নানা শহর ও জনপদ। জার্মান বাহিনীর ভি-ওয়ান নামক উড়ন্ত যুদ্ধজাহাজগুলো মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ করেছে লন্ডন শহরে। বিমানবাহিনীর এমন দুর্দৈব তাণ্ডবে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন সব আশ্রয় নিচ্ছে মাটির তলার বাঙ্কারে ও পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে। এমনই একদিন….

error: Content is protected !!