Author Picture

চৌধুরী রওশন ইসলাম-এর একগুচ্ছ কবিতা

চৌধুরী রওশন ইসলাম

দোটানা

যার কথা বলা যায় তার কিছু গল্প,
বুকের ভেতরে জমা আছে খুব অল্প।
বলতে পারি না যার প্রমত্ত উচ্ছ্বাস,
মনের ভেতরে সেই করে হাঁস-ফাঁস।

নির্দয় নিষ্ঠুর এক নিয়তির দায়,
কোন পাপে আজো কাঁধে বহিয়া বেড়াই ?
যার চোখ ছুরি মারে বুকের ভেতর,
নিয়তির কষাঘাতে সে আমার পর।

নিয়মের বেড়াজালে যে হলো আপন,
এতদিন হয়ে গেছে, বোঝে না সে মন।
মনের খবরটুকু ছিল যার কাছে,
জানা নেই এখন সে কার ঘরে আছে।

ঘর করি, তবু যেন পরের মানুষ,
গোপন আগুনে পোড়া হতভাগা তুষ।

 

গ্রহণ

এত পাপ নিয়ে আমি যাব কার কাছে ?
অসীম ক্ষমায় বুকে টানার কে আছে?
সব শেষ হয়ে গেলে ভিখিরির মতো,
তোমার দুয়ারে এসে হয়েছি আনত।

যাকিছু বলছে লোকে, তুমি সবি মানো,
আরো যা বলতে পারে, হয়তো তা জানো।
তবু স্নিগ্ধ স্মিত মুখে আমার এ হাতে,
তোমার বকুল-মালা দিয়েছিলে রাতে।

স্বপ্নের মতোন সেই রাতের কাহিনী,
বুকের ভেতরে বাজে সুখ রিনিঝিনি।
আমার দু’হাত তুমি দিয়েছিলে ভরে,
রাশি রাশি প্রীতি-সুখে, তৃপ্তি থরে থরে।

ভুল-ত্রুটি পাশে ঠেলে নিলে কাছে টেনে,
অপূর্ণ আমারে তুমি নিয়েছিলে মেনে।

 

সাজ

খোঁপায় ফুল গুজে দেব কি বধূ আজ ?
শর্ষে ফুলের হলদে শাড়ি, সে কী সাজ !
মৌমাছিগুলো ফুলের শোভা ভুলে গিয়ে,
তোমারে ঘিরি শোনায় গান গুঞ্জরিয়ে।

তোমার ভুলে বাঁধা-খোপাটি দিলে খুলে;
উতলা বায়ু হারালো দিশা পথ ভুলে।
এ-গাঁওবাসী, ও-গাঁওবাসী, সর্বজনে
পলকহীন চোখে তাকাল মুগ্ধ মনে।

ওদের আর কী অপরাধ ! চাঁদমুখ
দেখে আমিও কি পাই বধূ কম সুখ !
হলুদ বনে হলুদ শাড়ি দোলা দিলে,
ঢেউ ওঠে যে অস্তপাটের দূর নীলে।

হলুদ শর্ষে ফুলের টিপ শুভ্র ভালে;
দেখেছি চোখে শর্ষের ফুল সন্ধ্যাকালে।

 

প্রেমহারা

বাঁশি হাতে আনমনে নবগঙ্গা-কূলে,
ছিলাম নিজেরি মতো সুরধ্বনি তুলে।
কাশফুলে ঘাসফুলে দখিণা সমীর,
মৃদু তরঙ্গে জাগিত জল তটিনীর।

কোথা হতে একদিন তুমি এসে কূলে,
বাতাসে সহাস্যে দিলে বাঁধা-খোঁপা খুলে।
বাঁশি ফেলে সেইদিন বিমুগ্ধ নয়ন,
ব্যাকুল তৃষ্ণায় প্রেম করেছে চয়ন।

আমার এ নবগঙ্গা-কূলে এসেছিলে,
বহুদিন ভালোবাসা-স্রোতে ভেসেছিলে।
একদিন নদীকূলে ঝড় এসে সব,
প্রণয়ের ঘর ভেঙে করেছে নীরব।

আবার এখন সেই হারা-বাঁশি খুঁজে,
সে বাঁশিতে সুর তুলি হারা-প্রেম পূজে।

 

বাসর

এই পুণ্য রাতে আমি কী দেবো তোমায় ?
আশির্বাদ ছাড়া কিছু নেই এই হাতে।
চাল-চুলো হারিয়েছি খরায়-বন্যায়,
ক্ষুধা পেলে চাঁদ পেড়ে দেবো প্রতিরাতে।

অমাবস্যার রাতে গভীর অন্ধকারে,
উপোসি হবো আমরা দুজন সুজন।
এই জঠর-জ্বালা যে ভাগে নিতে পারে,
এই জনমে তারেই করেছি আপন।

এই শূন্য ঘরে আজ এলে যদি সখি,
যেও না ছেড়ে আমারে দিকশূন্য করে,
নবগঙ্গার প্রান্তরে হবো চখা-চখি,
বেড়াবো পুবে-পশ্চিমে দক্ষিণে-উত্তরে।

সখি, আজ শূন্য ঘরে এই পুণ্য রাতে,
আমারে সঁপিলাম তোমার স্বর্ণ-হাতে।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!