Author Picture

গোপাল রায়-এর একগুচ্ছ কবিতা

গোপাল রায়

পোস্টমর্টেম

জীবন মোড়ের ঘূর্ণিপাকে যে স্বপ্নের অবিনশ্বর অলক্ষ্যে
পলে পলে তা ভেঙে যায় পিঁপড়ার উইটিবির মত;
মাকড়সার জালে আটকে যাওয়া জীবন; তাকে ভক্ষণ করে জীবাশ্মের তীক্ষ্ণ রশ্মি
ডানা ভাঙ্গা পতঙ্গের উড়ার যে স্বপ্ন তা স্বপ্নেই থেকে যায় ডাইনোসরের মতো;
রাহু-কেতু ঢোক ঢোক করে গিলে খায় নিশ্বাসের অক্সিজেন;
আর উগলে দেয় কার্বনিক এসিড!
টোটেমের মেমফিসে বিগলিত হয় নির্মোহ হাসি
চোখ ও মুখ চেপে ধরে ইথানলের নগ্নজীবী কশেরুকা,
কালঘুমের দুঃস্বপ্নে দেখা দেয় পদদলিত অর্ধমৃত লাশ
সেই লাশের পোস্টমর্টেমে ধরা পরে হৃদয়ে অসংখ্য খতের দাগ!

 

বিপ্লব ও প্রিয়ার ঠোঁট

বিপ্লবের রং হয় লাল
ভালোবাসার ফুল গোলাপও লাল
প্রিয়ার ঠোঁটও লাল;
বিপ্লব!
গোলাপ!
প্রিয়ার ঠোঁট!
খুব খুব ভালোবাসি!

 

দাগ

একদিন এই পথটাতেই
পাঁচিলের বুকে—
ভালোবাসার জন্য করেছিলে জেদ,
তুলসীমঞ্চ থেকে মেঘের আতরে
ছিলোনা কোনো ভেদাভেদ।

বুনোফুলের মৃত্যুগন্ধে একসময়
সন্ধ্যাপ্রদীপের তেল যায় ফুরিয়ে;
হাতে পরে থাকে লাটাইটা—
সুতো ছিড়ে ঘুড়িটাকে দেই উড়িয়ে!

একদিন এই দেয়ালটায়
ঘোরের ঘাগরা;
অনামিকা মেখে যায়; দু’এক কথা রেখে যায়
রয়ে যায় স্মৃতির দাগরা!

 

মিশে আছি তোমার টিপের আঠায়

আমি দেখছিনা আলো বা আঁধার বিদঘুট,
তোমার চোখে আস্তে আস্তে হয়ে যাচ্ছি লুট!
আমিতো আউল বাউল গড়ে যাই খড় আর নাড়ায়,
যেন দিন রাত কেটে যায় প্রেমের পাহারায়।
সুতোয় বেঁধে গড়ে তুলি ট্যাপেস্ট্রির অবয়ব,
বুক চিরে দেখ কিছু নেই তুমিই সব।
নূপুরের নিক্কণ হোক সাজুক লালে পা আলতায়,
টক কিনা মিষ্টি জানিনা আমি ঐ ফল চালতায়।
তোমায় দেখে জোনাকিরাও আলো পাঠায়,
আর আমিতো মিশে আছি তোমার টিপের আঠায়।

 

বৃষ্টি আমার প্রেমিকা

বৃষ্টি আমার প্রেমিকা
আর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আমার জন্য আমার প্রেমিকার চুম্বন মনে হয়!

আমি সিগারেট ধরাই
হুট করে কোথা থেকে আমার প্রেমিকা বৃষ্টি এসে নিভিয়ে দিয়ে যায় সিগারেটের আগুন!
আমি সুরা পান করি
আমার প্রেমিকা বৃষ্টি তার চুম্বনে ভরিয়ে দেয় পেয়ালা আর নিষ্ক্রিয় করে দেয় নিকোটিন!

বৃষ্টি আমার প্রেমিকা
আর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আমার জন্য আমার প্রেমিকার চুম্বন মনে হয়!

এই চুম্বনে আমার মা ওষুধ খায়!
এই চুম্বনে আমার বাবার ফসল ক্ষেত ভোরে উঠে!
বাবা-মা বলে, আমাদের বৌমাটা বেশ বেশ…
আর বোনরা করে হিংসে, বেশ না ছাই!
হিংসে করবেই না কেন;
আমার প্রেমিকা বৃষ্টিকেও বলি, ওদের শুকিয়ে দেওয়া আচার কেন ভিজিয়ে দাও বল?
কেন ভিজিয়ে দাও ওদের ওড়না, কামিজ আর দীঘল কালো চুল?

বৃষ্টি আমার প্রেমিকা
আর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আমার জন্য আমার প্রেমিকার চুম্বন মনে হয়!

সব ধুয়ে দেয়; দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হয় যখন আমার হৃদয় পাটাতন,
তখন আমার প্রেমিকা বৃষ্টিকে মনে হয় আমার মায়ের মতন!

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!