Author Picture

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

গাজী গিয়াস উদ্দিন

পিয়াইনের তীরে
.
এবার এ সৌম্য চরাচরে
কোন দিব্যই বিঁধেনি চোখে
না নারী না কোন নতুন,
একি মায়ায় জল ঝরে
পরাণ বিদরে!
পাহাড়ি নদীমণি বধুরাণী
পাথরের গহনায় ভরেছে বুক,
নিসর্গের বিরহী দান অম্লান চির
মনে হয়
জগতে ভালোবাসা আর কিছু নয়।
মনে হয়
পাথরে প্রাণ খুঁজলো প্রণয়!

এ প্রথম শুনি বন্দীর বন্ধুতার বাণী
মনের কথা প্রস্তর বলেছে খুলে
সেসব ‘সুধা প্রকৃতি’ জানলে
যুদ্ধ শত্রুতা রাজনীতি কূটনীতি
সবই থেমে যেতো!
ভালোবাসার ধ্রুবনাম পিয়াইন তুমি
পাহাড় অরণ্য বুকে প্রাণের লালনভূমি
প্রকৃতির খোলা জানালায় ডাক পড়েছে এ প্রথম!
হৃদয় ছেঁড়া গান
বসন্তের পড়ন্ত বেলায়
রোদে-জলে মিতালী
শ্রমজীবীদের ব্যস্ত আনাগোনা।

রুদ্ধশ্বাস নদী
আহরিত খনিজ সম্ভারে বয় নিরবধি
নিভে যায় তৃষ্ণা অবার
আর সব স্রোতস্বিনী দেখবার কৃষ্ণা!
দূর হতে অরণ্য সাজে জাফলং শাড়ি
ডাউকি শহরের পাহাড়ি মিথস্ক্রিয়া।
পুরুষের উপদ্রব সইবার
ধৈর্যবান নারী।
আমার উদাস রাতে তোমাকে মনে পড়ে
বন্ধু পিয়াইন!

 

আর কোন ললনা
.
সেদিন সাহিত্যকে দেখলাম
হেলেদুলে হেঁটে যায়
গতিছন্দে নৃত্যে সঙ্গীতে
অনিন্দ্য সুন্দর সাহিত্য!

সেতো কীটসের কবিতা
পথধারে ক্ষণিক বিয়াত্রিচ
পূজো দিলেই সফল হবে পূজা
এতো রক্তকে কালিতে রূপান্তরের যন্ত্রণা
আর যেন দেখা না হয় কভু!

হৃদনদে ঢেউ জাগায়
নিসর্গ-রঙধনু হেরে যায়
মায়াবী জলপরী ডাঙায় হেসে যায়!

কি কোরকে কি দরদে ফুল ফোটায় বিধাতা
আর কোন ললনা আমি দেখতে চাইনা বসুধা।

 

ভুল-ব্যর্থতা
.
পছন্দের খাবার এনেছি ভেবে
বিড়ালটাকে কতোবার ডাকলাম
সে এলোনা,
এটা কি নয় তার পছন্দের খাবার ?
নাকি ভয় ও অবিশ্বাস তার
সে ফিরে গেলো,
তাকে অভুক্ত অসহায় ভেবে
ফেরাতে পারলাম না
বহু চেষ্টায়-
এমন বহু ভুল-ব্যর্থতা সয়ে যায় !

 

খেলতে খেলতে
.
এক.
জানি, অপচয়ের জন্যে এ জীবন পাইনি
অথচ সবার ঘরে সূর্য ডোবে
ধান পেকে গাছ যায় খড়ের বাড়ি
সময়ে ধান তোলো চাষি।

দুই.
খেলতে খেলতে এসে পড়েছি
নীল গাঙের ধারে
ঘুটঘুটে আবছা আঁধারে দু’পা
হলদে ঔষধি খেত থরে বিথরে
শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শুনে
এখানে এলাম,
এবার ফেরার পালা পান্থশালা

বার্তা পেলাম :
ফেরার সব সিডিউলই বাতিল।
হায়! খেলাটাও শেখা হলোনা।

 

ছুটে চলা পাখি
.
এক.
জন্মমৃত্যুর মতো চির অচেনা
সূর্যাস্তের লুকোচুরি খেলা
অধম শিখেছি আহার ও রিরংসা,
কোটিবার উচ্চারণে স্বভাবে আবেগে
কুমার-কুমারী বেলা,
অশ্রু আনন্দ জুড়ে অনাসক্ত হৃদয় খুঁড়ে
বলতে পারি যেন সারাজীবন ভালোবাসা!

দুই.
ভালো থেকো পথঘাট ধানখেত পাটপাতা
আখের রসে খেজুর রসে মিতালীর হালখাতা,
বুঝেছি এ পৃথিবীতে জানা অজানার কোন বিতর্ক নেই
শুনেছি মানুষের গান- একসুরে বাজে অপূর্ব সানাই।

তিন.
জন্মমৃত্যুর রহস্য এখন আর ভাবায় না,
হেমন্তের প্রথম কুয়াশা মাড়িয়ে এসেছি
খড়ের গাদায় নাড়ার খেতে মক্তবের শাসনে
শান্ত দুরন্ত শৈশব লুকিয়ে এসেছি,
ঝড়ঝঞ্ঝা গাঁ-গঞ্জে ডিপোজিট থাকুক
অগণিত শান্ত দুরন্ত পাখি ছুটে চলা দিকহারা নয়
মৃত্যুজুড়ে সুখদুঃখ ভিড়ে আজনম ভয় করি জয়,
ঝরে জামফুল দাদির সমাধি সংসারে
মায়ের শিয়রে শুবো আমি।

নক্ষত্রের জন্যে মায়া হয়,
ভুসুকুর মৃত্তিকা কাব্যে মরমী রহস্য অক্ষর
শীতের ঝরা শীর্ণতা শুঁকে
জামবাগের টুকটুকে পথে চলে যাবো।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!