
মানব দহন
.
মানুষ খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই দেখতে পেলাম
পেলাম তোমাকে তাকে এবং অন্যকেও;
কালোকে খনন ক’রে শাদার সাক্ষ্য পেলাম
পীত বাদামি এবং ট্যাবুর মধ্যেও পেলাম মানব দহন।
মানুষ মানুষ ক’রে মানুষের কাছেই গেলাম
মানুষের মাঝেই হাঁটলাম চিরকাল নানাজাত মানুষের
ভীড়ে,কিন্তু পোশাক পেরিয়ে যে-ই শৈল্য দর্শন নিলাম
দেখলাম — মানুষের ভেতরে আর মানুষ নেই।
নিজের ভেতরে যে আয়না আছে
তাকালাম তার বিম্বের দিকে
দেখলাম — সেখানে দাঁড়িয়ে এক কায়াহীন ছায়া
ইশারায় ডাকলাম কাছে, জবাবে ভেংচি দিলো
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো, আমাকে পেছনে ফেলে
সহসাই চলে গেলো উল্টো পথে।
নিত্যের শাঁস
.
মাটির ভেতরে গাছ, গাছের ভেতরে মাটি
বায়ুর মধ্যেও একই সত্যের বাস
সবদিকে শুনি একই শব্দের ধ্বনি
সবখানে দীপ্ত জানি একই নিত্যের শাঁস।
সাগর পাহাড় ও আকাশ
অথবা শস্য ফলানো জমি এবং শুষ্ক মরুভূমি :
জান্তব জঙ্গল, উঁচু উঁচু অধিত্যকা আর
বরফাবিষ্ট শীতল মেরু– সর্বত্র সতত
একই ইমেজ ভ্রমি।
দূরত্ব দেখি না কোনো
সাগরের এপার-ওপার
মানুষে মানুষে জাতের বিভেদ ;
নিঃশ্বাস ফুরোলে সবাই সমান
সবার ভেতরে আছে একই জীবনবেদ।
মকরন্দ পাখি
.
ওলাওঠা প্রেম নিয়ে
হৃদয়ের পরিধি মাপতে এসো না আমার
সে যে সাগরসম অতল আর আকাশের মতো
সীমানাবিহীন, শৈল্য-প্যাথোলোজি করো
শ্বেতস্বচ্ছ আবেগের আলোরেখা পাবে
পাবে সুরের সারঙ্গ আঁকা আদি রসায়ন।
চেতনার চারুপাতে জীবনের চিঠি লেখা আছে
বোধি-ক্যানভাসে মানুষের ছবি ;
প্রেমের শরীরে ফিনিক্স-প্রণয় ভাসে
বাতাসের আলে আলে প্রকৃতির গন্ধ অনুপম
সেখানে সানন্দে নন্দন খেলা করে
সেখানে উড়াল পাড়ে মকরন্দ পাখি।
টাকার সুবাস
.
বামে গিয়ে যাকে পাই
ডানেও দেখি তাকেই
বাতাসের গন্ধে বুঝি
অন্তর অন্দরে কোনো ব্যবধান নেই
কথার কলায় তবু তফাৎ কিছু থাকেই।
টাকার সুবাস পেলে
ঝোলার উষুমে গলে আদর্শের বুলি
বিশ্বাস বদলে যায়
আস্তি নাস্তি মিলে একথালে খায়
তীর্থের দেয়ালে ঝোলে মানুষের খুলি।
জরির পোশাক
.
সততা এখনো আছে
মানুষের মুখে, মনে নয়
আরো আছে কাগজের পাতায় ও
ব্যানার ফেস্টুন আর জাবেদা খাতায়।
ধার্মিকও তেমনই আছে বেশুমার
মন্ত্রপাঠের অসার প্রার্থনায়,কাজে নয়:
অসৎ সযত্নে গায় সততার জারি
মিথ্যার শরীরে জরির পোশাক দিয়ে
নিপুণ দরদে গড়ে
অলীক সত্যের বাড়ি।
মানুষ ও মানবতা একসাথে নেই
ধর্মের আচারে নেই হৃদয়ের ওম
রঙের আবিরে দেখি মেকিও আসল হয়ে যায়
জীবনের মঞ্চে ভাসে নানা অভিনয়।