Author Picture

খৈয়াম কাদেরের একগুচ্ছ কবিতা

খৈয়াম কাদের

মানব দহন
.
মানুষ খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই দেখতে পেলাম
পেলাম তোমাকে তাকে এবং অন্যকেও;
কালোকে খনন ক’রে শাদার সাক্ষ্য পেলাম
পীত বাদামি এবং ট্যাবুর মধ্যেও পেলাম মানব দহন।

মানুষ মানুষ ক’রে মানুষের কাছেই গেলাম
মানুষের মাঝেই হাঁটলাম চিরকাল নানাজাত মানুষের
ভীড়ে,কিন্তু পোশাক পেরিয়ে যে-ই শৈল্য দর্শন নিলাম
দেখলাম — মানুষের ভেতরে আর মানুষ নেই।

নিজের ভেতরে যে আয়না আছে
তাকালাম তার বিম্বের দিকে
দেখলাম — সেখানে দাঁড়িয়ে এক কায়াহীন ছায়া
ইশারায় ডাকলাম কাছে, জবাবে ভেংচি দিলো
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো, আমাকে পেছনে ফেলে
সহসাই চলে গেলো উল্টো পথে।

নিত্যের শাঁস
.
মাটির ভেতরে গাছ, গাছের ভেতরে মাটি
বায়ুর মধ্যেও একই সত্যের বাস
সবদিকে শুনি একই শব্দের ধ্বনি
সবখানে দীপ্ত জানি একই নিত্যের শাঁস।

সাগর পাহাড় ও আকাশ
অথবা শস্য ফলানো জমি এবং শুষ্ক মরুভূমি :
জান্তব জঙ্গল, উঁচু উঁচু অধিত্যকা আর
বরফাবিষ্ট শীতল মেরু– সর্বত্র সতত
একই ইমেজ ভ্রমি।

দূরত্ব দেখি না কোনো
সাগরের এপার-ওপার
মানুষে মানুষে জাতের বিভেদ ;
নিঃশ্বাস ফুরোলে সবাই সমান
সবার ভেতরে আছে একই জীবনবেদ।

মকরন্দ পাখি
.
ওলাওঠা প্রেম নিয়ে
হৃদয়ের পরিধি মাপতে এসো না আমার
সে যে সাগরসম অতল আর আকাশের মতো
সীমানাবিহীন, শৈল্য-প্যাথোলোজি করো
শ্বেতস্বচ্ছ আবেগের আলোরেখা পাবে
পাবে সুরের সারঙ্গ আঁকা আদি রসায়ন।

চেতনার চারুপাতে জীবনের চিঠি লেখা আছে
বোধি-ক্যানভাসে মানুষের ছবি ;
প্রেমের শরীরে ফিনিক্স-প্রণয় ভাসে
বাতাসের আলে আলে প্রকৃতির গন্ধ অনুপম
সেখানে সানন্দে নন্দন খেলা করে
সেখানে উড়াল পাড়ে মকরন্দ পাখি।

টাকার সুবাস
.
বামে গিয়ে যাকে পাই
ডানেও দেখি তাকেই
বাতাসের গন্ধে বুঝি
অন্তর অন্দরে কোনো ব্যবধান নেই
কথার কলায় তবু তফাৎ কিছু থাকেই।

টাকার সুবাস পেলে
ঝোলার উষুমে গলে আদর্শের বুলি
বিশ্বাস বদলে যায়
আস্তি নাস্তি মিলে একথালে খায়
তীর্থের দেয়ালে ঝোলে মানুষের খুলি।

জরির পোশাক
.
সততা এখনো আছে
মানুষের মুখে, মনে নয়
আরো আছে কাগজের পাতায় ও
ব্যানার ফেস্টুন আর জাবেদা খাতায়।

ধার্মিকও তেমনই আছে বেশুমার
মন্ত্রপাঠের অসার প্রার্থনায়,কাজে নয়:

অসৎ সযত্নে গায় সততার জারি
মিথ্যার শরীরে জরির পোশাক দিয়ে
নিপুণ দরদে গড়ে
অলীক সত্যের বাড়ি।

মানুষ ও মানবতা একসাথে নেই
ধর্মের আচারে নেই হৃদয়ের ওম
রঙের আবিরে দেখি মেকিও আসল হয়ে যায়
জীবনের মঞ্চে ভাসে নানা অভিনয়।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!