Author Picture

কৌশিক মজুমদার শুভ’র একগুচ্ছ কবিতা

কৌশিক মজুমদার শুভ

১.

ফটোকপির মতো দিনগুলা আসতেছে,
রেডিওতে প্রতিদিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
বিছানায় ঘাম
বেগনী দাঁড়কাক ডাকতেছে খুব ভোরে
একোরিয়মের বুদবুদ
আরেকটা দিন
সূর্য আবারো আসতেছে
নদী আসে
সবই ঘোরে,
কেবল মানুষই যেতে পারে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি না রেখে।

 

২.

বিমর্ষই লাগে বরং, নিজেকে আয়নায় দেখি; পৃথিবীর মতো স্তব্ধতা ভার হয়ে আছে; দুই গালজুড়ে পড়েছে কালো চোখের ছায়া; দাঁতগুলো ক্রমশ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে— তোমাকে ভোলার একটা ডিসেম্বর গ্যাছে, আরেকটা আসতেছে হয়তো; খারাপ লাগতেছে আমার। নিজেরে নিজেরই ইচ্ছা করছে না দেখতে; মনে হয় তোমারেও ভুলে যাই মুখস্থ করতে~ যেন সাতটা প্যারাগ্রাফের মতো জিজ্ঞাস করলে ফ্যালফ্যাল কইরা নিরুপায় হইয়া পড়ি; তারপরও শীতের রৌদের মতো মোলায়েম মুখ মনে পড়ে, বাবার ভাঙা স্কুটির মতো পিছন থেকে তাকিয়ে দেখি হারিয়ে যাচ্ছো দূর।

 

৩.

রবিবার আসলে তোমারে বেশ হালকা কইরা মনে পড়ে~ হারাইয়া যাওয়া কবিতাগুলারে যেমন অস্পষ্ট মনে~ স্মৃতি কোপাইয়া খুঁড়ছি যেইটা দেখি আমারই কবর; লাশের লোবানে মনে হয় উপচাইয়া পড়তেছে কাতর শরাব, জানি লাভ নাই তবু~ শীতের রাত্তিরে কম্বলে ফিসফাস শুনলে, একটা থার্মোকল কাপ একলা বইসা আছে বেঞ্চের পাড়ে~ সিগারেট পুইড়া চোখ কালা হৈয়া আসতাছে যেমন~ মনে হইতেছে তোমারে~ দূরবীক্ষণে কাঁপতেছে সূদূর মিনার~ টেলিফোনের তার ধইরা দাঁড়াইয়া আছে পোস্টম্যান~ বারান্দায় উড়তেছে হাত~ঠান্ডায় কারা দুইজন মাঠের ঘাসে হাত ধইরা হাঁটতেছে~ টনসিল দুখতেছে~ প্যালেট অসম্ভব লালচে~ দুনিয়া ছোটো হইয়া আসতেছে গলার মতোন~ মনে পইড়া যায় শৈশবের কয়েক ঘরের নামতা~ কোরাসের সুরে আমরা পড়তেছি, রাত জাইগা জাইগা সিগারেটের মতো কালচেটে হইয়া আসতেছে সন্ধ্যাগুলা~ কোথায় বিসমিল্লাহ খানের সানাই খুব বাজতেছে~ জানি লাভ নাই তবু তোমারে মনে পইড়া যাইতেছে কেবল।

 

৪.
তোমায় স্মরণ করি মোনাজাতে মনে পড়া মুখ
যেমন স্মরণে থাকে কৈশোরে ঠোঁটের চুমুক।
রেখেছি স্মরণে ঠিক বৃষ্টিতে ঝরে পড়া দিন,
হাফেজের সুরে যেন মনে রাখা- সুরা ইয়াসিন।
তোমায় স্মরণে রাখে নদীতীরে বসে থাকা মাঠ,
ফসলের অবসরে প্রতীক্ষাতে যেন কাটে রাত।
তোমারে রেখেছি নারী শার্টের দ্বিতীয় বোতাম,
নিজেই পারবো তবু আটকাতে তোমায় দিতাম।

তোমার প্রেমের পাশে বারবার রেখেছি ঈমান
নিয়মের মতো যেন সকালের পূজার সিনান।
তোমারে ভুলবোনা এ ওয়াদা গীতায় রেখে হাত,
জীবন কারবালা হোক হারবার গুণেছি প্রমাদ।
যেখানেই থাকো তুমি, হয়ে থাকো যারই খসম,
তোমারে ভুলবোনা মেয়ে,সত্যই আল্লার কসম।

 

৫.

মনে হয় মরে যাই, কেউ জানুক সবকিছু- কেমন খারাপ আছি, কেমন ধুঁকতে ধুঁকতে মরে গেছি, কেমন অস্থিরতায় ছাড়িয়ে যেতো খাবার সময়, কেমন অনিয়ম করে রোগা হয়ে গেছি। কেমন না ঘুমিয়ে চোখে কালি পড়ে গ্যাছে— আমি চাই কেউ জানুক সবকিছু।
জানুক কিভাবে বাস্তুহারার মতো কাটছিলো দিনগুলা, কেমন পাড়ার লোকেরও মায়া হতে শুরু করেছিলো আমার উপর, কেমন কাশির ধকলেও সিগারেটের ধোঁয়া বের হোতো নাকমুখ দিয়ে, জানুক কিভাবে দিনরে রাতে, রাতরে দিন কইরা কাটছিলো সময়। আফসোস হোক নাহোক, আমি চাই কেউ জানুক, কাউরে জানাবার জন্য আমার মনডা মরার জন্য উতলা হৈতেছে কেবল।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!