Author Picture

কামরুল আলম সিদ্দিকীর একগুচ্ছ কবিতা

কামরুল আলম সিদ্দিকী

তোমার জন্য রাখছি তুলে
.
তোমার জন্য রাখছি তুলে আমার চোখের রক্ততারা ফুল।
হয় যদিবা দেখা আমার, রেখো তোমার, বুকের ফোটা দু’কূল।
তোমার সাথে দেখা হলেই বৃষ্টি হতো অমন খরার দিনে…
মেঘেরা সব আসতো ফিরে, আসতো ফিরে উজান ঠেলে মীনে।
আগুন ফুটে ফাগুন হতো, দোঁআশ দেশে বাণ ডাকতো জলে।
দোঁআশ ফুলের মেয়ে তুমি, তোমায় দেখে আকাশ যেতো গ’লে।
তোমার জন্য রাখছি তুলে আমার চোখের রক্ততারা ফুল।
হয় যদিবা দেখা আবার, আমায় দিও তোমার ফোটা দু’কূল।

 

উজায়া মাছ
.
উজায়া মাছে ঠাডা পড়লেও উজায়,
পাখাওয়ালা উই কেন যে আগুনে ঝাপায়!
উজবুক উজাতে উজাতে শোল-গজার-কৈয়া ঝাঁকে
ঝড়-বৃষ্টি-বজ্র-মহামারী কালেও সে উজায়।

এখনই উজানের কাল, কালবৈশাখ মাস!
বং তুমি উজাও…
হাটে ঘাটে দোকানে ত্রানের ভাণ্ডারে
দখল নিয়ে উজাও!

জ্যৈষ্ঠের বজ্র থাক, মহামারী থাক!
উজানের কালে—
তুমি আসলে অমাবস্যার ভূত হয়ে যাও!

 

তুমি
.
বাদ আসর বাদ মেঘে
আমগাছের রোদ পড়ে তোমার মুখে,
প্রকৃতি দেখতে এখন তোমারই চোখ চোখ লাগে।

তোমার ঘরে আকাশ ঢুকেছে,
তুমি আসমানী আগে কেউ বলেনি;
তোমার ঘরে বাতাস ঢুকেছে,
তোমার চুলে ওদের বাসা আগে কখনো রাখতে পারোনি।

আগে তোমার বুকে শ্বাপদের পাহাড় ঢুকে থাকতো,
দু’টো নীল পাখি রাখতে তোমার খুব কষ্ট হতো,
পাল ছিঁড়ে আস্ত নাও
মেঘনার ঘূর্ণায় ভয়ঙ্কর ঢুকতে থাকলেও
তোমাকে হা হা করে হাসতে হতো।

কসকিধর পাতালে ঘুমুচ্ছে ভয়ে,
তুমিতো ভালো আছো আজ নদের বাড়িতে।

কভিডের দিনগুলো তোমাকে কিছুটা ফুরসত দিলেও
করোনাতো চিবুচ্ছে পৃথিবীর বুকে
সে কানাতো আর আপদের বৃশ্চিক দেখেনা,
যা সামনে পায় তাকেই কামড়ায়।

তোমাদের অভিশাপেই অন্তত ঘরে আছে জাগুয়ার।

 

আসা-যাওয়া
.
আকাশ দেখতে দেখতে ভুলে গেছি
যাওয়ার কথা।
অচেনা আঁধার থেকে কবে যে নেমেছি সাঁতারে
পুতুলির মেলা।
মনে নেই কবে সেই আসা;
পথ তবু বসে আছে ক্লান্তিহীন রথে—
কোথা সে নেয়ার কথা,
যে পথে যাবো ফের অচেনা হাটের ডাকে—
মাঝি ঠায় বসে আছে নিরাকার, নৈঃশব্দের ঘাটে;
যাবো কোন গাঁয়?
শুন্যতায় ?
আছো কেউ মাঝি?
কেউ নেই?
এই আসা যাওয়ার পারাপারে—
তবু আসি তবু যাই— মেলা ভেঙে, দল ভেঙে
একা নদী পার হয়ে!

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!