Author Picture

কামরুল আলম সিদ্দিকীর একগুচ্ছ কবিতা

কামরুল আলম সিদ্দিকী

তোমার জন্য বর্ষা রাখতাম
.
তোমার জন্য বর্ষা রাখতাম, কলাবতীর পাপড়ি হতাম।
তোমার জন্য বাদল বেলা কেয়াবনের বৃষ্টি হতাম।
তোমার জন্য কলাপাতা আমার পাশে খালি রাখতাম।
তুমুল বৃষ্টি তোমায় আমায় ভাসিয়ে নিতে ঝড় চাইতাম।
তোমার জন্য গঞ্জ কামাই, এক বারান্দা খালি রাখতাম।
বৃষ্টি তোমার জীবন খাতা— সোনাপাতায় তুলে রাখতাম।
এক আষাঢ়ে ভিজলে তুমি, কোন্ পথে আজ মনে নাই।
কতো আষাঢ় ভিজছি আমি, এক আষাঢ়ও লিখে নাই।
এখনোতো বৃষ্টি তুলি, ভুল বারান্দায় আষাঢ়-জীবন
ভিজিয়ে রাখি, কোন্ জীবনে ভিজবে আবার? আপন
হবার দিন গিয়েছে! পারুল বনে একলা চোখের বৃষ্টি আবার
একলা একলা নদী হচ্ছে, হচ্ছে একলা চোখের-পাগাড়!


ও মেঘ একটু দাঁড়াও
.
ও মেঘ
কই যাও! কই যাও!
এই আষাঢ়ে আমার প্রিয়ার দেশে
জানি তুমি যাও!
আমার সাথে কিছু না ক’য়ে,
আমার খবর কিছু না নিয়ে কেন তুমি যাও!

ও মেঘ তোমারে কিছু কওয়ার ছিলো—
কিছু বরষার ফুল দিলাম, তারে তুমি দিও।
আর কিছু ভুল—
তারে তুমি ভেঙে ভেঙে ক’য়ো,
যে ভুল লেগে আছে আষ্টে ও পৃষ্টে,
ঘরে ও বারান্দায়,
উঠোনে ও দরজায়;
যে ভুল কদমে কদমে হাঁটে,
যে ভুল ঘুমে ও স্বপ্নে লেগে লেগে থাকে,
যে ভুল আজও ধুতুরা হয়ে কাটে আর ফাটে!

ও মেঘ একটু দাঁড়াও,
কিছু কথা ক’য়া দিই তারে গিয়ে জানাও—
তার বাড়ির পশ্চিমে আছে যে পাড়া,
ওখানে বন্ধু আমার পরাণ শেখের একঘর ফাঁকা!
পৈলা শাওনের গাদলা যেদিন নামে,
যে রাতে কামিনীর গন্ধ মগম মগম লাগে,
সে রাতে থাকবো আমি ঝিমানো পিদিম হাতে,
সে যদি আসে ওখানে ওই রাতে—
আমার দেয়া লালপাড়ে নীল জমিনের শাড়ি যদি সে পড়ে,
সেদিন কদম কেয়া খুব যদি ফাটে,
হাসনাহেনা গন্ধ মগম মগম যদি সেদিন লাগে,
সেদিন বুঝে নেবো সে আমার, সে আমার—
আজও সে প্রিয়তমা!


এক আষাঢ়ে
.
এক আষাঢ়ে তোমার জন্যই গাদলা ছিলো পাতা,
এক আষাঢ়ে আমার জন্যই সেলাই করতে কাঁথা,
এক আষাঢ়েই তোমার গাঁয়ে নিয়ে এলো
ছমির আলি নায়া,
এক আষাঢ়েই তুলে রাখতে কামিনী গন্ধের মায়া,
এক আষাঢ়েই তুলে রাখতে শিকিয়ে তোমার
নকশিতোলা পিঠা,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য কদমা রাখতে মিঠা,
এক আষাঢ়েই তোমার জন্য গাদলা নামে গাঁয়ে,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য ভিজলে উদাম নায়ে,
এক আষাঢ়েই তোমার জন্য স্কুল হলো কামাই,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য বসে ছিলে বারান্দায়,
এক আষাঢ়েই তোমার কানে গুঁজিয়ে দিলাম জুঁই,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য খুলে রাখলে দু’ই,
এক আষাঢ়েই তোমার জন্য রাত্রি হলো ভোর,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য গাঁথলে ফুলে ডোর,
এক আষাঢ়েই তোমার জন্য লিখেছিলাম কী,
এক আষাঢ়েই আমার জন্য খুললে প্রথম চিঠি,
এক আষাঢ়েই গাদলা ছিলো তোমার জন্য গাঁয়ে।

এক আষাঢ়েই হ্যারিকেনের এপাশ-ওপাশ
আমরা দু’জন বসি।


বৃষ্টি নামুক
.
বৃষ্টি নামুক। ফুল ফুটুক।
ভোর আসুক। সূর্য উঠুক।
দরজা খু’লে দাঁড়াও তুমি—
আসছে কেউ সকাল হোক!

মৃত্যু কোথায়? সত্য অমর!
বৃষ্টিতে আজ আসুক ঝড়!
তোমার জন্য অপেক্ষা আজ—
দরজা খুলো, কোথায় ডর?

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!