Author Picture

কাব্য সুমী সরকার-এর তিনটি কবিতা

কাব্য সুমী সরকার

কাকজন্ম

আজকাল আমার আর বলতে ইচ্ছে করে না
এখন চুপ করে ধ্যানের বকবকানিতে
কিছুটা স্বস্তি মিলে।
তোমাকে শুনতে গেলেই ঘোর লাগে,
তোমাকে ভাবতে গেলে
তোমাকে চাইতে গেলে
কেমন যেন আচ্ছন্ন করা সুরের হাওয়া ভর করে
খুব ব্যাকুল লাগে-উদাস হয়ে
খুব মায়া বাড়ে, আপন লাগে।

আমি কান পাতলে যেমন বাতাস আর পাতার শব্দ শুনতে পাই
তার সাথে শস্যের ঘ্রাণ
মায়াময় এসব গুছানো সবকিছু
আমাকে নতুন করে খুব টানে
মোহ নয়, সুখের একটু হাতছানির আভাসে
আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে আরও কিছুকাল…

তোমার চোখ যেন মায়ানীড়, বুক সুবিশাল পৃথিবী
আর তোমার কথার মায়ায় নিজেকে মনে হয়
এ যেন আমার এক কাকজন্ম
আরেকজন্মে কোকিল জন্ম হোক তোমার সাথে আমার…

 

প্রেমিকের চোখ

যে চোখ খুন করতে জানে
সে চোখ নিজেও জানে না
তার ভেতরে তৈরি আছে
ফাঁসির মঞ্চ আরও গভীরে গেলে
তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা।

এ যেন কখনও সুখ
কখনো শোক, দহন বহন করে
সহনীয়তার সীমা ছাড়ানোর পায়তারায় হৃদয় মত্ত
মরণে যেন সুখ, ফেলনাকে যত্ন।

এমন চিন্তা নিয়েও মানুষ পর থাকে
ঘর থেকে বের করে কথার মায়ায়
ছায়ার কায়ায় মিশে থাকে দীর্ঘশ্বাস
যেমন সুখ সবসময় পরবাস
ভেসে বেড়ানো মেঘের মতন
বৃষ্টি সে তো সময়ের ব্যাপার।

সে চোখ আফসোসের ক্ষণ তৈরি করে
চেয়ে থাকা গভীর সেই চোখে
যে চোখে ডুব দিয়ে অকারণ
মোহ- মায়া- প্রেম সেখানে বারণ।

 

অসময়ের গল্প

যদি সময় তোমাকে আমায় চিনাতো
তাহলে অসময়ের হাহাকার বলে কিছু থাকতো না।
আমাদের সময় বড় দেরিতে আসে
আমাদের সময়গুলো আসতে আসতে মাঝপথে ভুলে গন্তব্য…
এ মোড়ে ও মোড়ে বসে জিরিয়ে নিতে নিতে
ভুলে যায় কে তার অপেক্ষায় আছে।
যেন অন্ধকারের হাতছানিকে সুসময় ভেবে
নিজেকে ভুলে থাকে জাগতিক ভোগে।

একদিন ঘোর কেটে গেলে
আলো আর আলেয়ার পার্থক্য সহজ হয়।
তখন আফসোস হয়, মন খারাপ হয়
মনটা তুমি তুমি করে।

তখন তুমি মানেই পথের শেষ
যেখানে যেতে যেতে
অসময় ডাক দেয় ফিরতে হবে।

তখন তুমি মানেই সাতজন্মের পরদেশ
মৃত্যুর খুব কাছে গিয়েও
বেমালুম ভুলে যাওয়া তুমি
হে আমার সুখ-অসুখ ভালোবাসা।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!