Author Picture

এ লেফট ফুটেড ম্যাজিশিয়ান

মেজবাহ উদদীন

ফুটবল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসা বাঙালি নিজেদের ফুটবলটা খোঁজে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পায়ে। তাদের জয়-পরাজয় আনন্দ আর ব্যথার অনুভূতির কথা বলে যায়। এদেশের ব্রাজিল সমর্থকরা মাঝে মাঝে আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পেলেও আর্জেন্টাইন সমর্থকরা ম্যারাডোনার সেই ঘোর লাগা ফুটবল ভুলতে না পারার কারণে ট্রফিহীন আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেই গেছে যুগের পর যুগ। অবশেষে ৩৬ বছরের মরুভূমিতে মরুদ্দ্যান সাজালেন একজন লেফট ফুটেড ম্যাজিশিয়ান। দিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন যার পূর্বসূরী। এবারের আলোচনা সেই ম্যাজিশিয়ানকে নিয়ে।

ম্যারাডোনা ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর থেকেই আর্জেন্টাইন সমর্থকগোষ্ঠী প্রতিটা বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে খুঁজতে থাকতেন কার্লোস তেভেজ, হুয়ান রোমান রিকলমে, এরিয়েল ওর্তেগা, হাভিয়ের স্যাভিওলা, হার্নান ক্রেসপো, ক্লাউদিও লোপেজ, সার্জিও অ্যাগুয়েরো, পাবলো আইমার’দের মধ্যে। কিন্তু আরেকটি আখ্যান রচনা করতে তারা সবাই দারুণভাবে ব্যর্থ হন। অবশেষে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল আন্দ্রেস মেসি লা আলবিসেলেস্তেদের জন্য তৃতীয় শিরোপা উচিয়ে ধরে নিজেকে নিয়ে গেলেন অমরত্বের দিকে।

২০০৪ সালে স্পানিওলের বিপক্ষে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে মেসি তার বল কন্ট্রোলিং, ড্রিবলিং, নিখুঁত পাস আর গোলবার খুঁজে নেওয়ার অসামান্য দক্ষতায় ফুটবল জগতের সব আলো টেনে নিলেন নিজের দিকে। এরপর ক্লাব ফুটবলের সব অর্জনকে একপেশেভাবে নিজের করে নিয়ে ফুটবলে চালু করলেন ‘মেসি যুগের’।  উইঙ্গ থেকে ফলস নাম্বার নাইন, কিম্বা পিউর নাম্বার টেন সব পজিশনেই প্রতিপক্ষ খেলোয়ারদের ফেলেছেন কঠিন পরিক্ষায়। কিন্তু জাতিয় দলের খেলায় প্রত্যাশার অনুবাদ হতে না দেখে সমাচলনামুখরবিশ্বের অভিমুখ ঘুরে যায় মেসির দিকে। তবুও তার খেলা সেই সমাচলনাকে পেরিয়ে পৌঁছে যায় ফুটবলপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে।

তাকে যদি শুধুই আরেকজন পেশাদার খেলোয়ার বলা হয়, তবে তা অতিসরলীকরণ হবে। কারণ তার খেলায় ফুটে ওঠে ধ্রুপদী শিল্পের ব্যাকরণ। কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে তিনবার ফাইনালে ওঠেও ট্রফির সাথে নিজের দূরত্ব ঘোচাতে না পেরে অভিমানে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন মেসি। কিন্তু, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমর্থকগোষ্ঠীর তিন যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে, বিশ্বকাপের সেই সোনালী ট্রফিটাকে উচিয়ে ধরতে অভিমানের সাঁকো বেয়ে মেসি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনার জিয়ন কাঠি হয়ে। কাতার বিশ্বকাপে কাঙ্ক্ষিত সেই আবেগের ট্রফিটা উচিয়ে ধরে ট্রফিহীন তিনটি যুগ কাটিয়ে দেয়া সমর্থকগোষ্ঠীর যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়ে আবেগের সূত্রগুলো মিলিয়ে দিলেন মেসি!

৮ জুন ইন্টার মায়ামিতেই যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন মেসি। তবে, শুরু থেকেই মেসির ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে শোনা যাচ্ছিল স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা, সৌদি ক্লাব আল হিলাল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির নাম। তবে বার্সা ও আল হিলালের নামই শোনা যাচ্ছিল বেশ জোরেশোরে। লিওনেল মেসি ঘোষণাটা দিয়েছেন প্যারিসে বসে। আর সেই ঘোষণা ভূমিকম্প হয়ে ধাক্কা দিয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায়। অবশ্য শুধু ফ্লোরিডা কেন, ধাক্কাটা তো খেয়েছে পুরো ফুটবল–বিশ্বই! মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণার পর এখন চলছে মেজর লিগ সকার (এমএলএস) আর মায়ামিকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগে (এমএলএস) ইন্টার মায়ামি ফ্লোরিডাভিত্তিক ক্লাব। ২০১৮ সালে এ ক্লাব যাত্রা শুরু করে, ২০২০ সাল থেকে জায়গা করে নেয় মেজর লিগ সকারে। ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারহিলে ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়াম মায়ামির ঘরের মাঠ। এখন পর্যন্ত তিন মৌসুম এমএলএসে খেললেও বলার মতো কোনো সাফল্য নেই মায়ামির। মেসি তাঁর ক্লাব ক্যারিয়রে যে দুই দলে খেলেছেন, সে তুলনায় ইন্টার মায়ামি নিতান্তই শিশু।

তাকে যদি শুধুই আরেকজন পেশাদার খেলোয়ার বলা হয়, তবে তা অতিসরলীকরণ হবে। কারণ তার খেলায় ফুটে ওঠে ধ্রুপদী শিল্পের ব্যাকরণ। কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে তিনবার ফাইনালে ওঠেও ট্রফির সাথে নিজের দূরত্ব ঘোচাতে না পেরে অভিমানে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন মেসি। কিন্তু, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমর্থকগোষ্ঠীর তিন যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে, বিশ্বকাপের সেই সোনালী ট্রফিটাকে উচিয়ে ধরতে অভিমানের সাঁকো বেয়ে মেসি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনার জিয়ন কাঠি হয়ে

মেসি আসবেন—এ ঘোষণাতেই পুরোপুরি বদলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল। অথচ কদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যেত না। আর এখন সেই মার্কিন ফুটবলে যেন নতুন রং লেগেছ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মেসি, বুসকেতস, জরডি আলবাদের সঙ্গে আরও খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে চায় ইন্টার মায়ামি।

মেসি মায়ামিতেই যোগ দেওয়ার ঘোষণার পর সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই মজা করে লেখেন, ফুটবলকে বিদায় বলেছেন মেসি। তিনি এখন থেকে সকার খেলবেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলকে সকার বলতেই অভ্যস্ত।

তবে ইন্টার মায়ামিতে মেসির অর্থনৈতিক প্রভাব ভিন্ন এক গল্প হতে যাচ্ছে। মেসি যাওয়ার পর পিএসজির অবস্থা এবং গত দুই দিনের হিসাব–নিকাশ বলছে, ইন্টার মায়ামি মার্কিন খেলাধুলার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হতে যাচ্ছে। মার্কার দেওয়া তথ্য বলছে, মেসির আগমনের প্রথম বছরে পিএসজির আয় ৭০ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে গিয়েছিল। একই ধরনের চিত্র দেখা যেতে পারে মায়ামিতেও।

মায়ামি বেছে নেওয়ার পেছনে সেখানকার জীবনযাত্রা এবং ফুটবলের বাইরে বড় ব্র্যান্ডের চুক্তির সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন মেসি। তা ছাড়া মায়ামিতে মেসির নিজের বাড়িও আছে। এসবই মূলত মেসিকে মায়ামিকে বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মায়ামিতে তাঁর বেতনের সঠিক অঙ্ক জানা যায়নি। তবে স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, মৌসুমপ্রতি ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাওয়ার পাশাপাশি অন্য কিছু খাত থেকেও আয়ের সুযোগ পাবেন মেসি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছে, অ্যাপল ও অ্যাডিডাস থেকেও আয় করবেন মেসি। দুটি প্রতিষ্ঠান মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এমএলএসের ম্যাচগুলো দেখায় অ্যাপল টিভি প্লাস। নতুন সাবস্ক্রাইবারদের ম্যাচ দেখিয়ে যে আয় হবে, সেখান থেকে একটি অংশ মেসিকে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছে অ্যাপল ও এমএলএস। প্রায় ১০ বছরের জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে অ্যাপল ও এমএলএসের।

গত ১৬ই জুলাই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় ইন্টার মিয়ামি। তার ৬ দিনের মাথায় চোখ জুড়ানো অভিষেক হলো মেসির। মেজর লীগ সকারে (এমএলএস) টানা ১১ ম্যাচ জয়শূন্য ইন্টার মিয়ামি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ জয়টি পেয়েছিল ৬ ম্যাচ আগে। মিয়ামির এমন ক্রান্তি লগ্নে অভিষেক হলো এক মাসিহার। লীগ কাপের ম্যাচে ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে ড্র হতে চলা ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নামলেন তিনি। দেখালেন ম্যাজিক। শেষ মুহূর্তে ম্যাজিশিয়ান লিওনেল মেসি অবিশ্বাস্য এক ফ্রি কিকে খাদের কিনারায় থাকা ইন্টার মিয়ামিকে এনে দিলেন জয়।

১৬ বছর আগে ২০০৩ সালের ২১ জুলাই ডেভিড বেকহ্যামের অভিষেক হয়েছিল আমেরিকার ফুটবলে। ২০২৩ সালে একই দিনে মেসিরও অভিষেক হল। সেই বেকহ্যাম বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামে মেসিকে দেখা, স্বপ্ন পূরণের মতো। এই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) সবাই মেসির অভিষেক ম্যাচ এবং সে কেমন খেলে- তা দেখার অপেক্ষায় ছিল। আমার আর কিছু বলার নেই।’

২০২১ সালের আগস্টে মেসি যখন পিএসজিতে যোগ দিতে লা বুর্জে বিমানবন্দরে নামেন, তখন তাঁর টি-শার্টে ফরাসি ভাষায় যা লেখা ছিল তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘এটাই প্যারিস’। তখন পর্যন্ত প্যারিস নিয়ে একধরনের সুখকর অনুভূতি হয়তো তাঁর মনে ছিল। কিন্তু ভালো লাগার সেই রেশটুকু নিয়ে মেসি প্যারিস ছাড়তে পেরেছেন, তা বলার সুযোগ নেই। বরং প্যারিসে দুই বছর ধরে যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি গেছেন, তাতে তাঁর বরং হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কথা।

বার্সেলোনায় সমর্থকেরা যেখানে মেসিকে চোখের মণি করে রাখতেন, পিএসজিতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। প্রায় পুরোটা সময় পিএসজি সমর্থকদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে দুয়ো। আড়ালের ঘটনা যা-ই হোক, দিন শেষে মেসির সাথে পিএসজি অধ্যায়টা একটি ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান হয়েই থাকবে

পিএসজিকে কখনোই সুখী পরিবার মনে হয়নি। তাইতো কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির সতীর্থরা যেখানে ক্লাবের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিল, মেসি তার ছিটেফোটাও পায়নি। মেসির মতো একজন গ্রেটের পক্ষে সেটা ছিল অসম্মানের। তাইতো দু’বছরের চুক্তি আর নবায়ন করতে দেখা যায়নি মেসিকে।

বার্সেলোনায় সমর্থকেরা যেখানে মেসিকে চোখের মণি করে রাখতেন, পিএসজিতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। প্রায় পুরোটা সময় পিএসজি সমর্থকদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে দুয়ো। আড়ালের ঘটনা যা-ই হোক, দিন শেষে মেসির সাথে পিএসজি অধ্যায়টা একটি ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান হয়েই থাকবে।

মেসি ফিরতে চেয়েছিলেন ক্যাম্প ন্যুর প্রিয় আঙিনায়, আবেগের টান ছিল। আন্তরিক ইচ্ছাও ছিল। শেষ পর্যন্ত লা লিগার বেতনকাঠামো ও উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি লিওনেল মেসিকে ফিরতে দেয় নি বার্সেলোনাতে। মেসি নিজেও গণমাধ্যমে এই খবর পেয়েছেন, তবে মেসির দাবি অনেক কিছুই ঠিকঠাক ছিল না, ‘শুনেছিলাম আমাকে আনার জন্য বার্সেলোনাকে খেলোয়াড় বিক্রি করতে হবে বা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমাতে হবে। সত্যি বলতে, আমি এই বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি, কিংবা এসব কিছুর দায় নিতে চাইনি।’

মেসিই এমএলএসে ফুটবলের সেরা তারকাদের আগমনের একমাত্র উদাহরণ নয়। পেলেসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় তারকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া লিগে খেলে গেছেন। সেখানে খেলতে গেছেন বিখ্যাত জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলার। নেদারল্যান্ডস কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফও খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়াও সাম্প্রতিক অতীতের অনেক বড় বড় তারকা ফুটবলারই খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এঁদের মধ্যে আছেন ডেভিড বেকহাম, থিয়েরি অঁরি, দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ওয়েইন রুনি, কাকা প্রমুখ।

১৯৭০–এর দশকে পেলের আগমনে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল। পেলের আগমন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল বাস্তবতাকে রীতিমতো বদলে দিয়েছিল। পেলে যে তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছিলেন, সে সময় দেশটিতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছিল। তখনকার শিশু-কিশোরই পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রজন্মের ফুটবলার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ১৯৯০ সালে দেশটির বিশ্বকাপে খেলার পথেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিশ্বকাপ জয়ই তো ফুটবলের শেষ স্টেশন। সেই স্টেশনে পৌঁছতে না পারলে তুমি কীসের বিশ্বসেরা হে! নিজের সময়ের অনেক সেরা ফুটবলারই সর্বকালের সেরা হয়ে উঠতে পারেন নি। ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, রুদ গুলিত, ইয়োহান ক্রুইফ, জর্জ বেস্টরা তাদের সময়ের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে না পারার কারণে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকায় তাদের দেখা যায় না। সর্বকালের সেরা হওয়ার জন্য একটা অলিখিত নিয়ম আছে, বিশ্বকাপ জিততে হবে। সেই নিয়ম মেনে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বকালের সেরার তকমাটা যেন মেসির গায়ে লাগানো যাচ্ছিল না। অথচ চারটা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি, সাতটা ব্যালন ডি’অর নামের পিছনে শত শত গোল আর এসিস্ট। অবশেষে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে মেসি তার নিজের নামটি তুলে দিলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারের সংক্ষিপ্ত তালিকায়।

ক্লাব ফুটবলে তাঁর কিছুই জেতার বাকি নেই। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ ও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কোপা আমেরিকাও। ৩৬ বছর বয়সে এসে পরিপূর্ণ ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে এখন ফুরফুরে মেজাজে থাকার সময়, কোনো চাপ না নিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো স্রেফ উপভোগ করবেন মেসি। যেখানে সর্বকালের সেরা নাম্বার টেনকে এনে আরেকটি ফুটবল জাগরণের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র!

আরো পড়তে পারেন

বৈভব সূর্যবংশীর উত্থানের রূপকথা

ভারতীয় ক্রিকেটে আইপিএল-এর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেখানে আইপিএল-এর অবদান নিয়ে নিশ্চিয়ই আলাদা একখানা অধ্যায় লেখা হবে। তাতে ক্ষতি আর সমৃদ্ধি দুই দিকের আলোচনাই হবে নিক্তি মেপে। তবে এই পাদটীকা একদিকে সরিয়ে রেখে একটা কথা বলাই যায় যে, ভারতবর্ষে আইপিএল আর শুধুমাত্র একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, এটি একটি সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির অংশ। এর সামগ্রিক….

বিদায় রূপকথার দেবদূত

যে পরিবেশে জলছবি আর রংমশালের গল্প ছিল না। না ছিল রূপকথার পরীদের গল্পও। কেবল ছিল অভাবের গল্প, আর একটা বল ছিল। যতবার সেই বলকে দূরে ছুড়ে দিত রোগা পা, ততবার, একবেলা খেতে না পাওয়ার কথা ভুলে যেতেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ভুলে যেতেন, তাঁদের জীবনটা অভাব অন্ধকার আর না-পাওয়ার সবটুকু রংহীনতা মেখে নিচ্ছে রোজ। ফুটবলের সঙ্গে….

বিশ্বকাপের মার্কশিট

‘পরের জন্মে আমি এর প্রতিশোধ নেব। নেবই। মোহনবাগানের ফুটবলার হয়ে জন্ম নিয়ে…।’ অনেক বছর আগে এক ভারতিয় পত্রিকায় পড়া এক চিঠি। যে চিঠি হয়তো লেখা হয়েছিল কোনও এক অনির্বাণ দহনের রাতে। লিখে আর ভাবেনি, লেখক চলে গিয়েছিল সব ছেড়েছুড়ে। প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। প্রায় পাঁচ দশক আগে পঁচাত্তরে ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোলের অনলে দগ্ধ এক মোহনবাগান….

error: Content is protected !!