Author Picture

একটি বইয়ের গল্প

সাইফুর রহমান

আধুনিকতার ইতিহাস গ্রন্থটির জনক মুহাম্মদ নওফেল জমির আমার বন্ধু। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন যশস্বী আইনজীবী। লন্ডনে আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। তিনি বর্তমানে লন্ডনেই আইন পেশায় জীবিকানির্বাহ করছেন। আমি যেহেতু বাংলাদেশে থাকি সেহেতু কদাচিৎ ওর সঙ্গে, সাংসারিক, গৃহস্থালিক ও যাপিত জীবনের অনেক কিছু নিয়েই আলাপচারিতা চলে, বাদ যায় না রাজনৈতিক বিষয়ও। তো হয়েছে কী, পশ্চিমানীতি নিয়ে কথা উঠলেই প্রসঙ্গ সূত্রে নওফেল জোরালোভাবে সমালোচনা করে পশ্চিমা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের। সর্বোপরি তাদের নানান নীতির।  আমি প্রায়ই চিন্তা করে অকূলপাথার হই আমার এ বন্ধুটি পশ্চিমা দেশে বসবাস করে তাদের আলো-বাতাসে জীবন নির্বাহ করে কীভাবে সর্বদা তাদেরই নিন্দামন্দে মুখর হয়ে ওঠে। কটুকাটব্য করে তাদের নানান নীতির। মাঝে মাঝে বিনিদ্র রজনির কিছু সময় মস্তিষ্ক অধিকার করে নেয় সেসব চিন্তাভাবনা। বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে হঠাৎ-ই যেন দিশা খুঁজে পাই। ক্রমশ্য টের পাই বন্ধুবর নওফেল জমিরই আসলে ঠিক। আমরাই ভ্রমজগতে বসবাস করছি কিংবা আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোই বরং কুহকাচ্ছন্ন হয়ে আছে।

সেই ব্রিটিশ আমল থেকে অদ্যাবধি পশ্চিমারা আমাদের চিন্তাজগৎকে এমনভাবে প্রভাবিত করে চলেছে যে পশ্চিমাদের সবকিছুই উত্তম সবকিছুই মহান এবং সর্বোপরি তাদের সবকিছুই শ্রেষ্ঠ এমনটাই আমরা জেনে এসেছি। অধিকন্তু আমরা যারা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত তারা তো আরও এককাঠি সরেস। পশ্চিমাদের কোনো ভুলই যেন আমরা মানতে নারাজ। আমার ধারণা এ গ্রন্থের স্রষ্টা নওফেল জমির পর্বতের মতো প্রাচীন এ বয়ানের ওপর চমৎকারভাবে আলো ফেলেছেন। আমাদের দেখানোর চেষ্টা করেছেন আসলে সব সত্যই সত্য নয়। ভাঙতে চেয়েছেন পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্বের মিথ। তিনি কতটা সফল হয়েছেন? আমি বলব বেশ সফল হয়েছেন। বাকিটা না হয় আপনারা পড়ে মতামত দেবেন। মুহাম্মদ নওফল জমির তার বইতে লিখেছেন- ‘বর্তমান বাস্তবতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো hyper-reality বা কাল্পনিক-বাস্তবতা। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ-এসব আমাদের সারাক্ষণ একের পর এক নতুন নতুন তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপন, নিউজ, নাটক ও সিনেমাপরিবেষ্ঠিত জীবনে কোনটা সত্য, এটা বোঝা দুষ্কর।

৫০ বছর আগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরকে যতটা নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করা হতো, এখন মানুষ জেনেশুনেই সংবাদ পড়ে যে যা পড়ছে তার খানিকটা বা অনেকটা সত্য না হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিবিসির মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম হলুদসাংবাদিকতায় সিদ্ধহস্ত। মিয়ানমারে ২০১৫ সালে সু চির নির্বাচন তিন দিন বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে বিবিসি; কিন্তু একটিবারের জন্য বলেনি যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোনো ভোটাধিকার এ নির্বাচনে ছিল না। এটা কেবল একটিমাত্র উদাহরণ, বিবিসির দুর্বৃত্ত সাংবাদিকতার বহু উদাহরণ আছে। ব্রিটেনের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী টিভি ভাষণে বেমালুম একের পর এক মিথ্যা তথ্য দিতে থাকেন এবং মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পৃথিবীর সব সংবাদমাধ্যমের ৯৫ শতাংশের মালিক মাত্র ছয়টি করপোরেশন। এক কথায় hyper-reality সম্পন্ন প্রাক-আধুনিককালে আপনি যা কিছু ফ্রি বিজ্ঞাপন বা মিডিয়ায় দেখছেন, এর ৯ শতাংশের পেছনে একটি উদ্দেশ্য বা এজেন্ডা আছে, অর্থাৎ এসব সংবাদ নির্ভরযোগ্য নয়।’

বন্ধুত্বের কারণেই হয়তো আমি জানি নওফেল যা বিশ্বাস করেন সেটাই লেখেন। এ দুনিয়ায় আমি অনেক লেখক দেখেছি যা তিনি বিশ্বাস করেন সেটা তো লেখেনই, যা বিশ্বাস করেন না সেটাও লেখেন

আধুনিকতার নামে পশ্চিমাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মতবাদ প্রচার কিন্তু সমসাময়িক কোনো বিষয় নয়। ইতিহাস পড়ে দেখলাম, এ বিষয়গুলো তাদের মস্তিষ্কে বহুকাল আগে থেকেই বিদ্যমান। কিছুদিন আগে রোমে গিয়েছিলাম বেড়াতে। রোমের ইতিহাস পাঠ করতে গিয়ে ভয়ংকরভাবে বিস্মিত হলাম রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টিনের নিজস্ব মতবাদ প্রচারের কৌশল দেখে। তিনি ৩০৭ থেকে ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান সম্রাট ছিলেন। তাঁকে বলা হয় মহান কনস্ট্যান্টিন বা সেইন্ট অর্থাৎ সন্তু কনস্ট্যান্টিন। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করা প্রথম রোমান সম্রাট। কিন্তু খ্রিস্টধর্মকে তিনি ব্যবহার করেছিলেন তাঁর নিজস্ব মতবাদের হাতিয়ার হিসেবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তাঁর খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার ঘটনাটি পুরোটাই ছিল একটা কৌশল ও ধোঁকা। সেটা মানুষ প্রায় ২০০০ বছর পর জানতে পেরেছে। সেসব গোপন তথ্য কনস্ট্যান্টিন রোমে অবস্থিত বিখ্যাত কলোসিয়ামের পাশে দণ্ডায়মান-আর্চ অব কনস্ট্যান্টিন অর্থাৎ কনস্ট্যান্টিনের তোরণের একেবারে শীর্ষে লিখে গেছেন। আজ প্রায় ২০০০ বছর পর সেসব আবিষ্কৃত হয়েছে। ঘটনাটা একটু খুলেই বলি। সম্রাট কনস্ট্যান্টিনের সময় থেকেই সাধারণ মানুষদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের একটা হিড়িক পড়ে যায়। বাদ যান না সৈন্যরাও। দলে দলে রোমান সৈন্য সাদরে গ্রহণ করতে থাকেন যিশুর প্রেরিত ধর্ম। কিন্তু সম্রাট কনস্ট্যান্টিন পৌত্তলিক মিথরাস ধর্মের অনুসারী ছিলেন। সে সময় রোমে এ ধর্মটারই প্রচলন ছিল।

আধুনিকতার ইতিহাস । ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওফল জমির
প্রকাশক: সৃজন । প্রচ্ছদ: দেওয়ান আতিকুর রহমান । প্রথম প্রকাশ: বইমেলা-২০২৫ । মুদ্রিত মূল্য: ৮০০ টাকা
ঘরে বসে বইটি সংগ্রহ করতে মেসেজ করুন ‘সৃজন’-এর ফেসবুক পেইজে— fb.com/srijon2017
রকমারি ডটকম থেকে অর্ডার করতে— www.rokomari.com/book/383661
কল করুন +৮৮ ০১৯১৪ ৬৯৬৬৫৮

তো রাজা কনস্ট্যান্টিন তাঁর মিথরাস ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। সে জন্য তিনি ভাবলেন মিথরাস ধর্মের সব অনুসর্গ তিনি খ্রিস্টধর্মে প্রবর্তন করে যাবেন। এই যে যিশুকে ক্রুসিফিকশনের মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়ে পৃথিবীর মানুষের পাপ দূর করা হয়। এটা কিন্তু সম্রাট কনস্ট্যান্টিন খ্রিস্টধর্মে ঢুকিয়েছেন। মিথরাস ধর্মে বৃষ বলির মাধ্যমে তার রক্ত দিয়ে পৃথিবীর মানুষের পাপ মোচন করার রীতি ছিল সে সময়। আবার দেখা যায় খ্রিস্টধর্মে যিশুর পুনরুত্থান হয়। ঠিক যেমনি মিথরাস ধর্মের একজন দেবতা সাইরাসের পুনরুত্থান হয়। অন্যদিকে যিশুখ্রিস্ট যখন জীবিত ছিলেন সে সময় কেউ দাবি করেনি যে যিশুর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর। কিন্তু সম্রাট কনস্ট্যান্টিন দেবতা মিথরাসের জন্মতারিখ ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মতারিখ হিসেবে ইতিহাসে চালিয়ে দিয়েছেন। সে সময় রোমে মিথরাস ধর্মের অনুসারীরা দেবতা মিথরাসের জন্মদিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ১২ দিনব্যাপী আনন্দ-উৎসব পালন করত। ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ আছে। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় এ বিশ্বাস বিষয়েও পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমালোচনার দাবি রাখে। নওফেল জমির তাঁর বইটিতে লিখেছেন-ধর্মীয় মূল্যবোধ বা সনাতন মূল্যবোধ, যা কিছুই ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, তাকেই আধুনিক দর্শন অস্বীকার করে। যদিও এমনটি হওয়ার প্রয়োজন ছিল না বা প্রয়োজন নেই, কারণ Rationalisation যদি কেবলই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা হয়, তবে কোনো ধর্মই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে না; কিন্তু আধুনিক দর্শনে এ এক বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব আছে। এ পক্ষপাতিত্ব জন্মলগ্ন থেকে এবং এ বিষয়ে গভীর আলোচনা করলে কয়েক বলিয়মের বই লেখা যাবে। কাজেই এতটুকুই আমাদের জানা প্রয়োজন যে যেহেতু সনাতন বা ধর্মীয় চিন্তাচেতনার সঙ্গে আধুনিকতার যৌক্তিক চিন্তাধারার প্রতিযোগিতা জন্মলগ্ন থেকে, সেহেতু আধুনিকতা নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে সনাতন বা ধর্মভিত্তিক সব মূল্যবোধকে অস্বীকার করার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে আধুনিকতা নিজের স্বতন্ত্র পরিচিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।

পশ্চিমাদের কোনো ভুলই যেন আমরা মানতে নারাজ। আমার ধারণা এ গ্রন্থের স্রষ্টা নওফেল জমির পর্বতের মতো প্রাচীন এ বয়ানের ওপর চমৎকারভাবে আলো ফেলেছেন। আমাদের দেখানোর চেষ্টা করেছেন আসলে সব সত্যই সত্য নয়। ভাঙতে চেয়েছেন পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্বের মিথ। তিনি কতটা সফল হয়েছেন? আমি বলব বেশ সফল হয়েছেন। বাকিটা না হয় আপনারা পড়ে মতামত দেবেন

বন্ধুত্বের কারণেই হয়তো আমি জানি নওফেল যা বিশ্বাস করেন সেটাই লেখেন। এ দুনিয়ায় আমি অনেক লেখক দেখেছি যা তিনি বিশ্বাস করেন সেটা তো লেখেনই, যা বিশ্বাস করেন না সেটাও লেখেন। এ বিষয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ল। একবার বিখ্যাত লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা শহর থেকে গ্রামে গিয়েছেন তো পথে তাঁর এক স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে দেখা হেেছ-শিক্ষক মশাই শরৎচন্দ্রকে ডেকে বললেন, কী রে ন্যাড়া (শরৎচন্দ্রের ডাক নাম) সলজ্জ দৃষ্টিতে মাথা নাড়লেন। শিক্ষক মশাই তাঁকে বললেন খুব ভালো কথা, কিন্তু মনে রাখিস যা বিশ্বাস করিস সেটাই লিখিস, যা বিশ্বাস করিস না, সেটা কখনো লিখবি না। লেখকসত্তা ও ব্যক্তিসত্তা দুটি আলাদা চরিত্রের হলেও যে মহৎ সৃষ্টি রচিত হয় না তেমনটা নয় কিন্তু ব্যক্তিমানুষটা যদি ভালো হয় নির্মোহ হয় তবে তার রচিত সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়। সেই সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতা তৈরি হয়। প্রসঙ্গক্রমেই নওফেলের চরিত্রের একটি দিক পাঠকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার লোভ আমি কিছুতেই সংবরণ করতে পারছি না। সে জন্যই বলছি-আমি আগেই বলেছি নওফেলের সঙ্গে আমার পরিচয় ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে। তো আমি আর ও একই গ্রামে পড়ি। ক্লাসে পরিচয়। একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করি, চা খাই, নাশতা করি, লাঞ্চ করি, ডিনার করি, ওর বাসায় যাই। কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি ওর বাবা কী করেন সে উত্তর দেয়-‘বাবা আইনজীবী’ আমি আবার জিজ্ঞেস করি ভাইবোন আছে কি না? বলে আছে, তারাও আইনজীবী। এর চেয়ে বেশি কিছু বলে না। এভাবে কেটে যায় প্রায় এক-দেড় মাস। একদিন আমার এক বড় ভাই আমাকে আর ওকে একসঙ্গে দেখে নওফেলকে জিজ্ঞেস করে-কেমন আছেন আপনি। নওফেল স্মিত হেসে উত্তর দেয়। পরে দু-এক দিন পর আমি সেই বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি নওফেলকে কীভাবে চেনেন? আমার সেই বড় ভাইটি চিন্তিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেন তুমি জানো না উনি কে? আমি বললাম, না তো। আমার সেই বড় ভাই বলল, নওফেল তো স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিনের ছেলে।

আমি সত্যি অবাক হলাম। এক-দেড় মাস ধরে ক্লাস করছি, লাঞ্চ ডিনার সব করছি কিন্তু একটিবার ভুল করেও নিজের পরিচয় দেয়নি। এর পরের ঘটনা অন্য কোনো প্রসঙ্গে লেখা যাবে। এই ঘটনাটি এ জন্যই এখানে তুলে ধরলাম একটি মানুষ কতটা নির্মোহ হতে পারে। লেখকদের জন্য স্রোতের বিপরীতে চলা সব সময়ই বড় একটা চ্যালেঞ্জের কাজ। এ পথে সহসা কেউ হাঁটেন না, তবে যাঁরা হাঁটেন এঁদের মধ্যে অনেকেই পুরস্কৃত হন। সতেরো শতকে স্পেনীয় ঔপন্যাসিক সার্ভেন্টেজ ‘দন কি হতে’ উপন্যাসটি লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। এ গ্রন্থটিকে ইতিহাসে প্রথম আধুনিক উপন্যাস ও স্পেনীয় ভাষায় রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলন্সো কিহানো (যদিও এই নাম বইয়ের শেষের দিকে দেওয়া হয়) হলেন একজন হিদাল্গো (নিম্ন স্পেনীয় অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্য)। তাঁর বয়স ৫০ বছরের মতো। তিনি লা মাঞ্চার একটি নামহীন স্থানে তাঁর ভাইয়ের মেয়ে ও গৃহপরিচারিকা এবং একটি বালককে নিয়ে বসবাস করেন। সার্ভেন্টেজের আগে উপন্যাস কিংবা মহাকাব্যগুলো লেখা হতো বীর ও রাজা-বাদশাদের নিয়ে। কিন্তু সার্ভেন্টেজই প্রথম ঔপন্যাসিক, যিনি কোনো সাধারণ মানুষকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে উপন্যাস লিখলেন। স্রোতের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম হাঁটলেন। নওফেল জামিরের এ সৃষ্টিটি যদি পাঠকনন্দিত হয় সেটা হবে একটি বড় মাইলফলক।  আমরা দেখেছি জন মিল্টন কীভাবে প্রথাগত ধারণার বাইরে এসে প্যারাডাইস লস্ট মহাকাব্যটি লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন কিংবা মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেঘনাথ বধ কাব্য লিখে সে সময় ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। শক্তিমান কোনো কিছুকে চ্যালেঞ্জ করা সোজা কাজ নয়, নওফেল জমির সেটা করার প্রয়াস নিয়েছেন এটাই বড় কথা।

আরো পড়তে পারেন

চৌধুরী রওশন ইসলামের ‘ডুবতে ডুবতে ভাসি’

‘প্রভু, নিরস জীবন দিও না আমায় প্রয়োজনে তুচ্ছ করো ঘাসের মতোন, তবু সতেজ সবুজ রেখো এ জীবন; সরসতা চাই প্রাণে— খরায়-বন্যায়।’ সম্ভবত সব কবিরই এ-এক পরম চাওয়া। প্রাণে সরসতা না থাকলে কবিতার বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে বাধ্য। মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে ঈশ্বরী পাটনী দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন— ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’।….

সময়ের হালখাতা

কবি চৌধুরী রওশন ইসলাম এসময়ের মৌলিক কবিদের অন্যতম। ইতোমধ্যে তাঁর প্রকাশিত হয়েছে ১. প্রতিবিম্ব (ঐতিহ্য) ২. অন্য সুখ অন্য অসুখ (ঐতিহ্য) ৩. এসব কথা বলতে নেই (সৃজন) নামে তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং দৈনন্দিন গল্প নামে একটি গল্পগ্রন্থ। ‘ডুবতে ডুবতে ভাসি’ এই কবির চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। ২০২৫ বইমেলায় ‘সৃজন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই কবির কাব্যভাষা তাঁর নিজের, বিষয়….

ছন্দের পরাগায়ন

তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে চলা বিশেষ জ্ঞান কখনোই থেমে থাকে না; বরং গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তি যথার্থতা কিনা বারবার পরীক্ষা করে দেখে। কারণ চোখ বুজে সোজা পথে হাঁটা বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞানের কাজ নয়; বরং যে ধারণাটি গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি সঠিক কিনা প্রতিবার প্রশ্ন করাই তার কাজ। যুক্তির এমন খাড়া দেয়ালের….

error: Content is protected !!