Author Picture

একগুচ্ছ কবিতা

তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

প্রস্থান
~

একদিন—
পৃথিবীর বুকে তোমাকে পাবার
আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফিরবো; তখন শুধু
তোমার কাছেই যাবো।

জানি, পাবার নিশ্চয়তা নেই
আছে শুধু তোমার প্রিয় ফুল, প্রিয় রাত;
তোমার প্রিয় ফুল, প্রিয় রাত ঝরে গেলে—
কে দেবে তোমাকে পাবার নিশ্চয়তা?

মৃত্যুর মতো তোমাকে পাবার নিশ্চয়তাটুকু পেলে…
সমস্ত বাধা পেরিয়ে তোমার কাছেই যাবো।

 

মৃত্যুই আমার শেষ প্রেমিকা
~

শরীরটা ভালো নেই—
মা মাকড়শার মতো হাত-পা গুটিয়ে নিচ্ছে সমস্ত শরীর;
ইদানীং কচুরিফুলের চোখের মতন
নীল আকাশকে— ছুঁতে ইচ্ছে করে খুব।

আমার একজন তো(মা)কে চাই—
যদিও জানি না কতটুকু ভালোবাসা পেলে
প্রেমিকার কামুক অশ্রু ঝরে যায়;
বিছানার সমস্ত সুখ আকাশে উড়ে বেড়ায়!
আমি এসবের কিচ্ছু জানি না…

সিগারেট খেতে পারলে বোধহয় ভালো হতো,
ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে পারতাম বেঁচে থাকার সমস্ত শোক।

ফড়িং ধরতে না পারার শৈশবের সেই ব্যথাটা
এখনো আছে— ক্ষত দাগের মতন;
জীবনে শুধু ব্যথাই পেলাম— মানুষ মৃত্যুকে যেমন পায়।

এই শহরে আমার কোনো প্রেমিকা নেই—
যদি কোনো পরহেজগার নারী এসে বলতো, ‘ভালবাসি’!
জানি এমনটা কেউ বলবে না— কেবল মৃত্যু ছাড়া…

… মৃত্যুই আমার শেষ প্রেমিকা!

 

তনুতাকে
~

কতোদিন চিঠি লিখিনি তনুতার কাছে—
তনুতাও লেখেনি আর; পৃথিবী ঘুরে দাঁড়ায়।
সময়ের সাথে সাথে তনুতাও ভুলে যায়,
তোমার পৃথিবীর বৃক্ষরা জানে—
আকাশের মেঘেরাও জানে ভালোবেসে ঝরে যেতে হয়।

তোমার আদর মাটিতে মাখাই, ফসল ফলাই—
বিলের কচুরিফুল নীল রঙে গাঢ় হয়ে যায়;
বাগানের কালো গোলাপ ছুঁয়ে ফেলে রাতের পরশ,
শিশিরকনা জমে থাকে ঘাসের উপর।

সবকিছু ভুলে গিয়ে এতটুকু ভাববার আছে—
কতোদিন চিঠি লিখিনি তনুতার কাছে…

 

প্রেমিকার প্রতি
~

বাগান তো জানে না পাথরে ফুল ফোটাতে
সমুদ্র জানে না সাঁতার কেটে ঢেউ পারি দিতে
বৃক্ষ জানে না ছায়ার নিচে শুয়ে শুয়ে ঘুমাতে;
তুমিও জানো না আমায় ভালোবাসতে। এমন কষ্টের
দিনে তোমার ফেরানো দেখে— আমি কি কাঁদবো না?

চোখের সমুদ্রে তোমাকে ঝরতে দেখে—
আমার ভালোবাসা তুলে নিয়েছে হাতের মুঠোয়;
পায়ে পায়ে হেঁটে তোমার সমুদ্র দিয়েছে পারি…
এই বালকের দুঃখগুলো বুঝলে না মেয়ে!

এমন মধুর যৌবনে আমার প্রেমের পরাজয়ে
তোমার ফেরানো দেখে— আমি কি কাঁদবো না?

 

শখ
~

এজন্মে কবি হবার আমার ভীষণ শখ,
মরলে না হয় চাতক হবো কিংবা শাদা বক।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!