Tuesday, November 18, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    ইন্টারভিউ

    কত দিন পর দেখা হলো রূপার সঙ্গে। তা মনে করতে পারছি না। চোখে চোখ পড়তেই কিছুটা থমকে গেলাম। চিন চিন করে উঠল বুকের ভেতর। ভেতর-বাইর শুরু হলো জ্বলন-পোড়ন। কথা বলব কি-না তা বুঝে ওঠার আগেই সে এলো এগিয়ে। আমাকে বলল, সায়েম তুমি এখানে?

    আমার ইন্টারভিউ আজ। তোমারও কি তাই?

    হ্যাঁ। আমারও তাই। কেমন আছ তুমি?

    হ্যাঁ, আমি ভালো আছি।

    দু’জন কথা বলতেই পেছন থেকে বলল, ‘এই রূপা বাবু কান্না করছে। একটু থামিয়ে দাও।’ আমি চোখ মেলে তাকালাম লোকটির দিকে। ফর্সা গায়ের রঙ। ছয় ফিটের মতো উচ্চতা। মুখ গোলাকার। বুঝতে বাকি রইল না লোকটি রূপার স্বামী। ভদ্র লোকটির কোলে একটি শিশু। তাকাল আমার দিকে। রূপা বলল, ‘আরিয়ান ও আমার ভার্সিটির ক্লাসমেট। পড়াশোনা শেষ করার পর আর দেখা হয়নি।’ রূপার স্বামী আমার দিকে বাড়িয়ে দিল হাত। আমিও মেলালাম হাত।

    রূপার এমন স্বাভাবিক আচরণ আমাকে কিছুটা হলেও পীড়া দিল। মানুষ মানুষকে ভুলে যায়। এভাবে ভুলে যায় সেটা রূপাকে না দেখলে জানতাম না।

    রূপার সঙ্গে আমার একটা অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। যে সম্পর্কে বিয়ে ছাড়া অন্য কিছু ভাবা ছিল কল্পনার বাইরে। আমার পারিবারিক অবস্থা তেমন সুবিধাজনক ছিল না। রূপাই বেশিরভাগ মাসে প্রাইভেটের টাকা পেমেন্ট করত। কোর্সের বই কিনে দিত। ম্যাথ বোঝাত। অনেক সাপোর্ট দিত। আমার পারিবারিক এমন করুণ অবস্থা, রূপা কখনও কিছু বলেনি। সে বরং আমাকে মানসিকভাবে অনেক বোঝাত। কখনও বলত সবার জীবন সব সময় এক থাকে না। মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়। মানসিক ও অর্থনৈতিক দুটোই। কিন্তু সেটা সময়ের দাবি। তা ছাড়া আমার পূর্বপুরুষদের বংশক্রমে উন্নতি হয়েছে। যেটা তোমার আমার হবে। আমাদের সব দারিদ্র্য দূর করব দু’জনার ভালোবাসায়।

    রূপার সঙ্গে আমার একটা অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। যে সম্পর্কে বিয়ে ছাড়া অন্য কিছু ভাবা ছিল কল্পনার বাইরে

    রূপার এমন কথায় আমি স্বপ্ন দেখতে থাকি। ঘর বাঁধতে থাকি। মনের আঙিনায় ফুলের বাগান গড়ে তুলি। যে ফুলের বাগানে একটি ফুল তার নাম রূপা। হৃদয়ের হার্ডডিস্কে একটি মাত্র পাসওয়ার্ড তার নাম রূপা। এমন স্বপ্নে যখন বিভোর; ইয়ারের শেষ সেমিস্টার। তখন রূপার পাগলামি বেড়ে যায়। এক রাতে ফোন করে আমাকে বলে, তুমি কী আমাকে ভালোবাস?

    রূপার এমন প্রশ্নে কি উত্তর দেব। তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেকটা হৃদয় যাচ্ছিল স্থবির হয়ে। আমি রূপাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম— তুমি এমন প্রশ্ন করছ কেন?

    সে কথা না বলে সোজা উত্তর চেয়ে বসল।

    আমি বললাম, এত বছর একসঙ্গে পড়াশোনা করলাম দু’জন। কত মায়া দু’জনার জন্য। তোমাকে ছাড়া আমি চলতে পারব, অন্য কেউ আমার হবে, এটা কল্পনা করতেও বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে।

    তোমাকে ছাড়া আমিও বাঁচব না সায়েম। কিন্তু বাবা বা আমার পরিবার তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবে না। তাদের কথা ছেলের জব নেই। একই বয়সের। পারিবারিক অবস্থাও খারাপ। তোমাকে এমন কথা বলতে চাইনি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করি। ঢাকায় গিয়ে জব করে জীবন পারি দেওয়া যাবে।

    রূপার এমন প্রস্তাব মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পারিবারের একমাত্র ভরসা আমি। নিজের সুখের জন্য পরিবারকে বিপদে ফেলা ঠিক হবে না।

    তুমি কী আমার সঙ্গে যাবে।

    রূপা একবার চিন্তা করো।

    কোনো চিন্তা নয়।

    আমার পক্ষে সম্ভব নয় রূপা।

    কথাটি বলতেই রূপা হাউমাউ করে কাঁদল। আমাকে প্রতারক…; অনেক গালি দিল। আমি হজম করলাম সব। চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম বুক। কিছুক্ষণ পর রূপার নম্বরে ফোন করলাম আর পেলাম না। কয়েকদিন যুদ্ধ করে চললাম। পরে আর কখনও সে যোগাযোগ করেনি। তার নম্বরে অনেক চেষ্টা করেছি। পাইনি তাকে। আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। আজ বিসিএস ইন্টারভিউ দিতে এসে তার সঙ্গে দেখা। রূপা তার স্বামীর সঙ্গে পরিচয় করানোর পর শিশুটিকে নিয়ে হাঁটতে বলল। নিচে গিয়ে বলল কিছু কিনে দিতে। এর মাঝেই শুরু হলো রূপার ইন্টারভিউ নেওয়া। জীবনের এই অতিবাহিত সময়গুলো পারি দিলাম কেমন করে। নিল তার ইন্টারভিউ। এর মাঝে রূপার চোখে জল আসল। সে অন্যদিক তাকিয়ে জল মোছার চেষ্টা করছে। আমিও সেই সুযোগে চোখটি মুছে ফেলি। আবার শুরু হলো রূপার ইন্টারভিউ…।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.