Author Picture

আহমেদ বাসারের একগুচ্ছ কবিতা

আহমেদ বাসার

রাহুফুল

চলে যাচ্ছো অগ্নিধূলায় পা ফেলে ফেলে
ওপারের বাগানে রৌদ্রের রেণুসিক্ত রাহুফুল
ফুটে আছে কমনীয় বহুরূপে
এপারে দাঁড়িয়ে আছি ভঙ্গুর পাহাড়
পায়ের তলায় শতাব্দীর কাঁটাগাছ মাংস ফুঁড়ে
খুঁড়ে যাচ্ছে শরীরী আকাশ
তোমার সমুদ্রচুলে আকাঙ্ক্ষার কত মাছ
খুঁটে খায় প্রার্থিত আহার
তাকিয়ে দেখছি সূর্যগলা চুল্লি ছুঁয়ে
তোমার অয়োময় প্রস্থান

মাটির শরীর হতে ঝরে যাচ্ছে আলোর ফসিল
বহু প্রার্থনার দিগন্তবিভায় জেগেছিল
গোধূলির দৃশ্যমেঘ, আজ রক্তবৃষ্টির
নৃত্যময় ছায়ারূপে মূর্তমান
তুমি চলে যাচ্ছো রাতের অদৃশ্য মায়া মেখে
অমীমাংসিত দ্বিধার দেশে
ধাঁধাময় পায়ে চলে যাচ্ছো ধীরে
চলে যাচ্ছো…

 

মাটির ব্যাংক

আমাকে ভাঙো- কোমল হাতের কবজি ঘুরিয়ে
ছুঁড়ে দাও পলেস্তরাখসা পাকা মেঝেতে
অথবা সভ্যতার জমাটবদ্ধ অহমিকায় গড়া
হাতুড়ির ঘায়ে করে দাও ছিন্নভিন্ন
তন্তুময় মোমকোমল শরীর

আমি তো বহুকাল গচ্ছিত রেখেছি তোমাদের
যৎসামান্য সঞ্চিত অহম, ঝন ঝনৎকার
শব্দ তুলে কতবার নাচিয়েছি হাড্ডিসার
শরীরের অতলে লুকানো তোমাদের অবসাদী মন
দেখো, এখনো এ দেহের ভাঁজে ভাঁজে খেলা করে
লীন সময়ের কত জ্বলজ্বলে জোনাই
আমি তো পড়ে থাকি ভাঁড়ারে, পরিত্যক্ত কোনো
গুদামঘরে, তোমাদের অভিজাত নন্দনপ্রিয় হাতের
করুণায় পেয়ে যাই আলোময় সাজঘর

তোমাদের হাতের মুঠোয় এখন তো ধরা আছে
আলাদিনের সেই জাদুর চেরাগ, ঘষা দিলেই
জো হুকুম বলে আশ্চর্য দৈত্য নিয়ে আসে
অভাবিত সময়ের অলীক কুসুম

তোমাদের নৃত্যপ্রিয় অর্থরা আজ দেশের সীমা
ছাড়িয়ে বিদেশ অভিমুখী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
কোষাগারে প্রতিনিয়ত হাতবদলে জীর্ন
আধুনিক সুদর্শনা অনন্ত অর্থশরীর

আমি তো পড়েই থাকি তোমাদের ভুলোমনা
অতীতের অবচেতনঘরে, আমাকে অগ্রসর
সভ্যতার বিকট হাতুড়ির অবিরাম ঘায়ে ঘায়ে
নিশ্চিহ্ন করে দাও।

 

শরীরই সাগর

শরীরই সাগর-
অমাময় জলের তোড়ে
জীবনের সব রন্ধ্রজুড়ে
তেড়ে আসে কত ক্ষুধানীল হাঙর

দ্রষ্টা পাহাড়-
শরীর জুড়ে তার অযুত চোখ
সব চোখে তার আদিম ভুখ
মাটি থেকে আকাশ অবধি
জগতের নীল নীল জলধি
চেতনায় তার সবই খাবার …

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!