Author Picture

আসমা চৌধুরীর একগুচ্ছ কবিতা

আসমা চৌধুরী

পাখিরা কী গন্ধমফল খেয়েছে কখনো
.
পাখিরা কী গন্ধমফল খেয়েছে কখনো?
এই ধরাধামে তাদের বসবাসের কারণ লেখা হয়নি
পাখি তার নীল ডানা মেরামত করে খাবার সংগ্রহ করে
তার সংসার নীরব ঘাতকের দলে নামে না কখনো।

তুমি কী কখনো পাখি, কখনো পালকের উদাস দুপুর!
তার গভীর পিপাসার গান, করুণ চোখ?
পাখির মতো বুকে নিয়ে তীর, শিকারীর লাল চোখে হিম?
তুমি কী দেখেছো কখনো কথাবলা পাখির খাঁচার জীবন?

 

কবর
.
কবর খুলেছে বুক, নেমে যায় মাটি
শেষবার পোশাকের আগে দেখা হয় যদি
ঘাট থেকে দাঁড়িয়ে দূরে সবুজের বনে
আয়, পৃথিবীর মায়া-জলে পুনরায় ডুবি।

কাউকে দেখি না, হাত থেকে সরে যায় হাত
প্রহর বিনিদ্র হয়ে লিখে রাখে জখমের রাত
কাউকে ডাকি না আজ, শুনি গোপন চিৎকার
কারা যায় দূরে, ফিরবে না আর।

জানালায় কার বাবা ফেলে যায় মুখ
গোপনে চেয়েছিলো কিছু ফেরিওয়ালা সুখ
কে জানে এই ক্ষত কতকাল রবে
কতকাল, বুকের বামপাশ কবরে ঘুমাবে।

 

সব জল আঙুলে মোছে না
.
মৃত্যুও ছিনিয়ে নিতে পারে না
সহস্র অভিমান, ভেজা অন্ধকার ডাকলে
সাড়া দেয় কেউ।

বোকামি বলতে কিছু নেই
একজন বোকাই চিনে নিতে পারে অপার আলিঙ্গন
তার কাছে ফিরে আসে দিনশেষে শ্রেষ্ঠ পথিক
পথ হারায় বলে হারাতে পারে না

জল ডুবে যাবার আগে কখনো এক জীবনসুধা
আঙুলে মোছে না…

 

মানুষ পালাতে চায়
.
ছিঁড়ে কতটুকু বাতিল করবে?
দিনলিপি বদলে দিলে কতটা আড়াল হয় মন?

মানুষ পালাতে পারেনা নিজের কাছে
জমা থাকে নিজস্ব দাঁতের বিষ…

 

বাড়ি হলো আকাশের শরৎকাল
.
বাড়ি হচ্ছে সেই রূপকথার লাল ডাকবাক্স
যেখানে নীল খামে বৃষ্টি আসে, রোদ ধুয়ে যায়
সেখানে দারুণ সুগন্ধ আশার কলমে লেখা গান
ঝোলায় ভরা পিয়নের চিঠি, সাইকেলের টুংটাং

বাড়ি হলো আকাশের শরৎকাল, সাদায় মিতালি
কতজনমের অপেক্ষা, ভোর থেকে রাতের স্বপন
বাড়ি হলো গাঁদা ফুলের কাছে মাটির দেয়াল
বাড়ি হলো মা। বাড়ি হলো বাবার ভেজা গামছা।

 

অরণ্য যা যা ভুলে যেতে চায়
.
চায়ের দোকান শেখায় কবিরাজ, শিকারি আর কাঠুরের গল্প
কবিরাজ সংগ্রহ করে ভেষজ, হাত পেতে থাকে কয়েকজন
শিকারি চোখ শানিয়ে কয়েকটি পাখির কাছে যায়
কাঠুরিয়া ঠক ঠকিয়ে উজার শব্দটি শেখায়

অরণ্য ভুলে যেতে চায় এই পরিচিত মুখের ছবি।

চেনা মানুষকে বারবার চিনতে হয়
কবিরাজ ঔষধে লেখে দুঃখ
শিকারি লেখে না পাওয়া
কাঠুরিয়া লেখে অবিচার…

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!