Author Picture

আরণ্যক শামছ-এর তিনটি কবিতা

আরণ্যক শামছ

জলছবিতে সোনার বাংলা
.
কুয়াশার সেতু পড়েছে ভেঙ্গে
মূহুর্ত গিয়েছে ছিঁড়ে,
বদলে যাওয়া অবয়ব তোমার
খুঁজি মানুষের ভীড়ে।

নির্জনতার নিপীড়নে তাই
ছিঁড়েছে বীণার তার,
ভ্যানগগের আঁকা জলছবি
তুমি সরোদের ঝংকার।

গল্পের ছায়ায় উদাসী হাওয়ায়
তুমি রাখালীয়া বাঁশি,
বব ডিলানের কবিতা তুমি
আমার স্বপ্ন-চাষী।

চে গুয়েভারা, বিপ্লবী তুমি
ভালোবাসা প্রীতিলতা,
এজরা পাউন্ড যেন তোমারই
ছেঁড়া কবিতার খাতা।

জর্জ হ্যারিসন কবির সুমন
গায় তোমারই গান,
তুমি আমার সোনার বাংলা
আমার ‘কাব্য-স্নান’।

 

সব বলে দেবো
.
চোখের সমুখ দিয়ে হেটে যায় পৃথিবী,
হেটে যায় চেনা সুখ চেনা প্রিয় মুখ;
মানুষ যেন হায় একএকটি মুঠোফোন,
বুঝেনা সে পৃথিবীর হয়েছে অসুখ।

পৃথিবীর পথেপথে হেঁটেছি অনেক পথ,
তবু তার কিছু যেন রয়ে গেছে বাকি;
ছড়ানো ছিটানো সব স্মৃতির ধুলিকণা,
আজ কেন মনে হয় সবই ছিল ফাঁকি।

ঘোর অমানিশা আজ পৃথিবীর পরে,
বিদায়ী নিষাদ যেন ছেড়ে যাবে তীর;
তবুও মানুষ কিছু বোঝেনা তো হায়,
নিজ হাতে ভেঙ্গে ফেলে পৃথিবীর নীড়।

চোখের সমুখ দিয়ে হেঁটে যায় পৃথিবী,
সর্বদেহে রক্তস্রোত গ্রেনেড-বোমায়,
সুন্দর চলে যায় পৃথিবীর হাত ধরে,
প্রমোদে ব্যস্ত সব কে তাঁরে থামায়?

মানুষের রক্ত পান মানুষ করছে আজ,
বিপন্ন প্রকৃতি গায় বিদায়ের গান;
যে শিশুটি বলেছিলো ‘সব বলে দেবো’,
মানুষেরে দিতে হবে তারই প্রতিদান।

 

শুধু একবার হাত বাড়িয়ে দেখো
.
একবার শুধু তুমি হাত বাড়িয়ে দেখো
করতলে বন্দি করে দিয়ে যাবো
পৃথিবীর সমস্ত নিষিদ্ধ সময়
দিয়ে যাবো সুতপা’র গোপন ঠিকানা।

একবার শুধু তুমি হাত বাড়িয়ে দেখো
ক্যাস্পিয়ান আর বৈকাল একসাথে
হাতের তালুতে বসাবে মৈত্রীপ্রবাহ
জেরুজালেমে উড়বে শান্তির পায়রা।

একবার শুধু তুমি হাত বাড়িয়ে দেখো
ধর্মগ্রন্থেগ্রন্থে হবে কোলাকুলি আর
মসজিদ-মন্দিরে উড়বে শান্তির পতাকা
মোঘল সেনাপতি হয়ে যাবে বাহুবলী।

তুমি শুধু একবার হাত বাড়িয়ে দেখো
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজবে না কভু
পরের বিশ্বযুদ্ধে বেদুইন আরব হবো আমি
লাঠি-তীরের যুদ্ধে হবো বেওয়ারিশ লাশ।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!