
নির্জন হিমালয় কিনে নেবো
.
পাউরুটির মোড়া কাগজের মতো
দুমড়ানো মোচড়ানো বেসামাল বুক
তবু ভাবি এক নির্জন বাংলা বুক করে নেবো
বুকের কবোষ্ম তৃষ্ণা মেটাতে হয়ে যাবো
একজন মামুনুল কিংবা নাভোকভের হামবার্ট।
পুঁজিবাদের আখন্ড আকাশের সীমানায়
শুধু আজ শকুনের উড়াউড়ি
বিজ্ঞাপনের ভাঁজে ভাঁজে জেগে ওঠে
মার্টিনি মাখা রমনীর বাহুমূলের গন্ধ
লোলিটারা আজও শুধু বেওয়ারিশ লাশ।
মধ্যরাতে হানা দেয় পরীরা সদলবলে
ইতিহাস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে রাতের ব্যাবিলন
আর আমি উপোসের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে ভাবি
এক নির্জন হিমালয় বুক করে নেবো আজই
আমি বানপ্রস্থে যাবো।
শঙ্খঘোষের শঙ্খধ্বনি
.
এক জীবনের এক মোড়কে
অনেক জীবন মুড়িয়ে রেখে;
শিমুল ফোঁটা ভোরের আলোয়
শিশির কণায় নামটি লিখে।
যে পথ দিয়ে গেছো তুমি
সে পথ তোমার পায়ের রেখা;
আজও ধুলোয় লুকিয়ে রাখে
তোমার বুকের গোপন লেখা।
তোমার স্নেহের সুদক্ষিণা
মেঘলা মাখা ঠোঁটের মাঝে;
আজও তোমার উদাস দুপুর
বাদল-মাদল নিত্য বাজে।
গ্রহে গ্রহে আজো আছে
তোমার বুনন স্তব্ধ জাল:
জল “না ঢালার’ আক্ষেপে তাই
তোমার কবর টালমাটাল।
তোমার দেয়া ‘সকল-বাকি’
বৈশাখের ঐ হালখাতায়
সবটুকু মোর আছে লেখা
কাব্যে কাব্যে পাতায় পাতায়।
শঙ্খ ঘোষের শঙ্খধ্বনি
এখানে ফের বাজবে না আর;
মাতাল করা অক্ষরে তাঁর
বাজবে বাঁশি কাঁদবে সেতার।
এবার ফাগুনে
.
এবার ফাগুনে পুষ্পার্ঘ্যের ইতি
ঋতুর ছল জেনে গেছি এইবার
বসন্ত এবার পাঠিয়েছে চিঠি খামে
জানিয়ে দিলো ফুলেদের আবদার।
মেঘ তো জানে না রোদের উত্তাপে
চেতনার ক্ষত কীভাবে শুকাতে হয়
লাল সবুজের পতাকার আবডালে
ফুলেদের শব কীভাবে কফিনে রয়।
এবার ফাগুনে জেনে গেছি আমি
রাতের গল্প কীভাবে হয় যে পাকা
আঁধারে ঢাকা রাতের হালচালে
পেটের ক্ষুধায় চাঁদ হয় আঁকাবাঁকা।
এবার ফাগুনে ভাঙ্গা খিড়কির নিচে
বাসা বেঁধেছে সাপ আর উইপোকা
ভিন্ন প্রজাতির একত্র বাস দেখে
এবার বসন্তে ফাগুন খেয়েছে ধোঁকা।
এবার ফাগুনে আকাশে চড়েছে দাম
গরীবের পাতে বনবন করে মাছি
জেনে গেছি আমি আড়তের কারবার
ভান করে রই মহাসুখে আমি আছি।
এবার ফাগুনে পকেট ভীষণ খালি
নিলাম করেছি চেতনার সব ঝুড়ি
খাঁ খাঁ করা জনসমুদ্রের ভীড়ে
ফাগুন দিনের আগুনেই তাই পুড়ি।
এবার ফাগুনে ফনা তুলেছে সাপ
জ্ঞানপাপী সব একত্রে হয়েছে জড়ো
ফুলেরা সব বাগান গিয়েছে ছেড়ে
ঝড় একখানা আসবে যে বড়সড়।
এবার ফাগুনে মেঘেদের হইচই
থেমে আছে যেন আকাশের হুংকারে
জেনে গেছি আমি সেতু পাড়ি দিতে হয়
ভিজে ভিজে গিয়ে শ্রাবণের ঝংকারে।
সর্বনাশ ও প্রজাপতি খেলা
.
তোমার ভুবনে হয়েছে সকাল,
আমার সন্ধ্যা নামে,
অস্তরাগের গোধূলি-আবেগ,
কিনি জীবনের দামে।
হয়তো তুমি পার্কের ঘাসে,
প্রজাপতি খেলা করো,
আমার এখানে ভীষণ আঁধারে,
হায়েনা হয়েছে জড়ো।
তুমি শুনছো জনড্যানভার,
টলস্টয় নিয়ে হাতে,
আমার এখানে মানুষ মরে,
মানুষের হাতে-ভাতে।
তোমার আকাশে খেলা করে,
সাতরঙা রামধনু,
আমার আকাশে চিলের চোখে,
ভাসে মানুষের তনু।
বাংলার আকাশ বাংলার বাতাস,
অসীম আর্তনাদে,
শকূন হায়েনার হিংস্র আঘাতে,
কঁকিয়ে কঁকিয়ে কাঁদে।
তোমার সুখের পালংকে কেবলি,
সুখের হামাগুড়ি,
আমার এখানে সম্ভ্রম হারায়,
মায়ের মতো নারী।
টেমস কিংবা ব্রাইটনে তুমি,
খুজছো অবকাশ,
আমার এখানে পুরুষের হাতে,
নারীর সর্বনাশ।
স্কচ কিংবা মল্ট হুইস্কি,
তোমার সন্ধ্যা শোভা,
আমার এখানে ক্ষুধার রাজ্যে,
মানুষ হয়েছে বোবা।
ভালোবাসাহীন এই পৃথিবীতে,
তুমি আছো মহাসুখে,
আমি কেবলই পশুদল দেখে,
তাকাই রক্ত চোখে।
আমার কেবলই তাকিয়ে থাকা,
আমার কেবলি চাওয়া,
প্রাণহীন এই সংসার থেকে,
কিছু ই হবেনা পাওয়া।
পাওয়া না পাওয়ার অসীম বেদনা,
কুরে মারে পলে পলে,
আমি তোমার ডায়েরীর পাতায়,
তোমার চোখের জলে।
মানুষ
.
কবিতার শরীরে শব্দের আড়ষ্টতা আর শুকনো আকাশে চিলের উড়াউড়ি দেখে বুঝে ফেলি ভালো নেই পৃথিবীর মানুষ। খাঁচায় বন্দি সিংহের গর্জনে ধ্যানমগ্ন প্রকৃতি জেগে উঠলে নির্জনতা জনাকীর্ণ ছায়ার ট্যাঙ্কে চাপা পড়ে। আকাশে টুকরো টুকরো হয়ে ভাসে বিচ্ছিন্ন সময়। ঝরে ঝরে পড়ে রক্তাক্ত পাখির পালক। আর আমি বুঝে নেই, ভালো নেই পৃথিবীর মানুষ। বৃষ্টি ভিজে ভিজে লেপ্টে থাকে আকাশের গায়। রামধনুর নীল রঙ মরে গেলে পাখির স্বাধীনতা কেড়ে নেয় প্রযুক্তির ড্রোন। আকাশ ফাটিয়ে আকাশের আহাজারি বেদনার এসিডবৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে মানুষের গায়ে। মানুষ তখন আর আকাশ দেখে না। আকাশ যখন মানুষ আর পিঁপড়া দেখে, বুঝে নেই, মরে গেছে পৃথিবীর মানুষ।