
আকুলতা
যেহেতু মৃত্তিকাজুড়ে ফুল ফোটে, হাওয়া বয়,
জলের উৎসব চলে আদরের ইচ্ছেডানায়;
কেন তবে কষ্টের যন্ত্রণা ফুটে থাকে
এতোসব উন্মাতাল বসন্তনগর, মাঠ, ঘাট জুড়ে।
যেখানে একদিন পোঁতাছিল নাড়ির গন্ধমাধম,
তাও কি হারিয়ে যাবে চোখ আর শরীরের কাছে!
সময় তাকিয়ে রয় বদলের হাওয়ায়।
পাতারাও ঝরে যায়,
ধুলোপথ উড়ে যায় ফসলের মাঠ,
ক্লান্ত দেহ বসে পরে ভোর ভুলে বিকেলের পাঠে।
তবুও বাড়ির উঠোনজুড়ে বসে থাক,
কোল পেতে উজার করা উষ্ণতার সবুজ সোহাগ।
জীবন
দিনকে কোনোদিন হাওয়ার মতো মনে হয়।
এখন আর সেই দিন নেই
যে হাওয়া কেউ একদিন আগলে রেখেছিল,
হয়তো এখনো তার মনের মধ্যে
পোঁতা আছে সেই দিনের অর্থ।
আমার সে অন্তরও নেই
যে-অন্তর রোদ্দুর হতে পারে।
একদিন মন থেকে পাতা ঝরে গেলে,
সেই মরা পাতা আর কুড়োবার
থাকে যে সময়।
এখন রাত্রিরা ছেয়ে গেছে চোখের উপর।
আলোর শূন্যতা গ্রাস করে জীবনের ফ্রেম,
জীবন মানেই এখন শূন্যতার হাওয়া।
কবিতাচিত্র
আলোর মুখর রোদ ফেটে পড়ে দুয়ারের গায়
কোথায় যে বসাবো তাকে, বুঝতেই পারিনি!
নিরন্ন সংসার এসে ডাক দেয় শিয়রে আমার,
জ্বালা আর জ্বলে থাকা অদৃশ্য পথেই।
জেগে ওঠে কবিতারা, বোধ ফিরে পায়,
জীবনের সুখ, দুখ, সবটুকু জুড়ে।
জগৎ ও সংসার পথে ভাতের আকাল হলে
নিথর পরে থাকে মেঠোপথ, খিদের আগুন,
কবিতার গোপন ঊৎসমুখ।
এমনকি জেগে ওঠে গোপন লোভাতুর স্বর।
সুখের অসুখ নিয়ে ডুবে যাক অন্তরপাড়া,
কবিতার শরীর বড়ো বেহায়া বেগানা।
অন্তরজন্ম
এমন করে লিখে রেখো না আমার নাম।
মধ্যরাতে কে যেন উঠোনের কোণা ধরে টানতে থাকে।
কে যেন দিনের উল্টোপিঠে নিঃশব্দে সংসার সাজায়,
আর আমিও, তোমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকি।
কোথায় যে ছেড়ে গেছে আমার ছায়াজন্ম,
প্যারোলের যন্ত্রণার মোড়ক খুলে তোলপাড় করে খুঁজেতে থাকি,
মধ্যরাতে হারিয়ে যাওয়া আমার তেলেভাজা নাম ।
দুঃখের আসনে আজ সব দুঃখ বসে আছে প্রতিমার দেহে-
যে শরীর সবুজ পাতার ঠোঁটে অহর্নিশ ভেসে ওঠে,
উঠোনের সবটুকু বাগানের চারপাশ ঘিরে।
তাই আমার অন্তর আজ জ্বলে থাকে তোমারই মুখোমুখী।
নির্ভুল খেয়ায়
নশ্বর শরীর থেকে খসে পড়ে জল ও হাওয়া।
কেউ কি দেখেছে এসব নিক্তির ভুল পরিমাপে!
মনের গহীন কোণে উদাসী হাওয়ার প্রচ্ছদ এঁকে
কতোটা বুকের অতলে বয়ে নিতে হয়
নিজেরই লোভের আকরের পরিণতির ভুল উপসংহার।
ভুলোপথ, সেই যে কবেই গেছে চোখের আড়াল!
এতোটা প্রহর গুনে গুনে যে পথিক
সন্ধ্যার আগেই নকশা আঁকে,
বাস্তবের উড়ে যাওয়া পাখির উড়াল পাখায়;
তারাও কি জ্বেলেছে আগুন,
শস্যের করুণ আকুতির দীর্ঘশ্বাসে!
বয়সী বৃক্ষ নাকি ভারের খেয়ায় নতজানু হয়।
দেয়ালের শরীর থেকে খসে পড়ে পলেস্তারা,
কালের অজুহাতে সবুজ ফসলও
হয়ে যায় ছাইভস্ম।
নরম শরীরজুড়ে বাসা বাঁধে আদিমকালের দীর্ঘশ্বাস।
তবু কিছু কাজ, কিছু বোধের সোনালি সময়ের মোহ,
রঙিন সুখের মতোই আলপনা এঁকে-
যাপিত সময়ের নির্ভুল খেয়ায়।