
তৃষ্ণার সাঁঝনদী জল
.
সাঁঝের ঘোমটা-নদীর মতো আঁধারও ধানক্ষেতে খেলে।
অথচ তোমার শূন্যপুর উঠোনের ধুলোর মায়ায় নতজানু হয় আর
পরিহাসে উন্মুখ আকাশ মাটির কাছেই ঠোঁটের উষ্ণতা খোঁজে-
দিন ও রাতের নিয়তির ঘোরে। এ-বুঝি প্রেম নয় প্রেমের দিশেহারা সিঁড়ি।
চারিদিকে ছুঁয়ে থাকা স্মৃতির দেয়াল। কখনও ভাসে আর ডোবে।
শাড়ির ভাঁজের মাঝে ডুবে থাকা আলো আর অন্ধকার চেয়ে থাকে
উষ্ণতার গর্ভবতী শস্যের দানায়। ছুঁয়ে থাকা শব্দের জোয়ার এসে
লিখে যায় অভিজাত সিঁড়ির তপ্ত বুকের বিষাদিত দীর্ঘশ্বাসে।
বলো, শব্দেরা আজন্ম খুঁজে বেড়ায় মায়াবী তৃষ্ণার সাঁঝনদী জল।
ঘুমহীন জনম কাঁদে
.
আমাকেও জীবনের টান ফেলে দিতে হয়।
যে টানে পলাশ ফোটে-পলাশের লাল ঘোমটা টানে-
সে টানে অসুখ কেন? গায়ে মেখে উঠোন চাদর।
কাছে আসে দূরে যায়- বার বার ফিরে যায় আমার শহর।
বৃক্ষেরা আড়াল হলে অসুখের ঘুম নেমে আসে।
অথচ বসন্ত পাড়া আঁচলের ভাঁজে ভাঁজে নাক ডেকে যায়।
মাঘ এসে জুড়ে বসে ফাগুনের ডালে-
কত রঙ হেঁটে চলে- কত রঙ ছাউনি ফেলে তোমার পাড়ায়।
আর ঘুমহীন জনম কাঁদে তোমার আশায়-
দূরের কোথাও সাঁঝ বাতি জ্বেলে।
এতো এতো লাল কেন- লালের ভিতরে লাল লালের জীবন।
যদি বলো, আমিও তোমার মতো লাল ফিতা কাটা শিখে নিয়ে চলি।
উঠোনের কোণা
.
ও আমার উঠোনের কোণা- জীবনের নির্ঝর সমুদ্রে ফোটার
আশায় চোখ মেলে ঘুমের ভিতর বলে ওঠো; ও-পরাণ বন্ধু,
বুকের কাছে বিষথলি বাতাস পুষে মেদ মাংস, প্রিয় নারী ও ফুলের দোলায়
তুমি কি নিঃশব্দে বিষাদগীতি গাইতে পার? প্রিয় জন্ম, পোড়া চোখ
আর মরা গাঙে নিয়তির পর্দা ঠেলে তুমি কি আর্তস্বরে চিৎকার করেই
জন্ম জন্মান্তরে দু’চোখ বেয়ে নদী হয়ে ওঠো। না হলে বিধ্বস্ত
নগরীর আজন্ম স্পন্দিত বুকের উপর লিখে রেখে বলতে পার-
রোদেজ্বলা আকাশ, মায়াহীন আদর, পাপড়িঝরা ভোর সবকিছু ভুলেই
তুমি থাক পোড়ো রাত্রির ঘুমহীন শ্মশানের পোড়াস্মৃতি হয়ে।