Author Picture

ঈদের চাঁদ

মোশাররফ হোসেন ভূঞা


শাওয়ালের চাঁদ উঠেছে। কাল ঈদ। মসজিদের বারান্দায় ইফতার নিয়ে বসা মুসল্লিরা ছেলেপেলেদের উল্লাসধ্বনি শুনেই বুঝতে পারে ঈদের চাঁদ উঠেছে। তাদের সাথে বসা মারফত আলী মিয়ার ভেতরে ভেতরে মন খারাপ। ভাবছে, কাল ঈদ না হলেই ভালো হতো। বাজার-ঘাট তার কিছুই করা হয়নি। নামাজের পরই তাকে ছুটতে হবে বাজারে।
বারান্দায় সাত-আটজন মুসল্লির মাঝে দুই-তিনজন টুকটাক কথা বলছিল। এমন সময় ইমাম সাহেব হাত তুললেন দোয়া পড়তে। ইফতার গ্রহণের আগে দোয়া পড়তে হয়। সবাই হাত তুলল ইমাম সাহেবের সাথে সাথে। দোয়া শেষ করে ইমাম সাহেব বললেন, ‘ওসমান আলী, আজান দ্যাও।’

ওসমান বাইরেই দাঁড়ানো ছিল। ইমাম সাহেবের নির্দেশ পেয়ে পশ্চিমমুখী দাঁড়িয়ে দুই কানে হাতের তর্জনী চেপে ধরে সজোরে হাঁকলÑ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার…।’ আজান শেষ করে ওখানে দাঁড়িয়ে আজানের দোয়া পড়ে ওসমান গালভরা হাসি দিয়ে বলল, ‘হুজুর ঈদের চাঁন বোদহয় উইডা গেছেগা।’
ইমাম সাহেব পানি মুখে দিয়ে রোজা ভাঙছিলেন। পানিটা কোনো রকমে গিলে বললেন, ‘আগে ইপ্তার করো, পরে চাঁন দেহা অইব।’
ইমাম সাহেব আবু সর্দারের বাড়ি থেকে আনা খিচুড়ির সানকিটা নিয়ে তাতে মুড়ি মিশিয়ে ইফতার শুরু করলেন। বাকি সকলে একটি পিতলের গামলা থেকে ইফতার নিচ্ছে। ওটাতে সকলের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ ও সরিষার তেলে মাখানো মুড়ি একত্রে মিশানো হয়েছে। ইমাম সাহেবের পিতলের গাস আলাদা। বাকি সকলে একটি অ্যালুমিনিয়মের গ্লাস থেকে একে একে এক চুমুক করে পানি খেয়ে রোজা ভাঙছে। এ সময় মসজিদের বারান্দায় নীরবতা বিরাজ করছিল। নীরবতা ভেঙে মারফত আলী বলল, ‘হুজুর, আছকাই যে চাঁন উডছে, রোজা একটা কম অইল না?’
ইমাম সাহেব ইফতার চিবুতে চিবুতে বললেন, ‘এইডা আল্লাহ্র হুকুম, কেঅর কিছু করার নাই। আর খাইতে বইয়া কতা কওয়া বেদাইতগ মিয়াসাব।’
মারফত আলী একটু বিব্রত হলো। কিন্তু কথা বাড়াতে চাইল না। সবাই চুপচাপ ইফতার করে যাচ্ছে।

ইফতার শেষে সবাই সারিবদ্ধভাবে নামাজে দাঁড়াতে শুরু করল। ইমাম সাহেব রোজকার মতো বলতে লাগলেন, ‘সবায় কাতার সোজা করেন, পায়ের কাই আঙুলে আঙুল মিলাইয়া খারান, পরনের কাফোর টাকনুর উফরে উডান, ওসমান মিয়া, আকামত দ্যাও।’
ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে ইমাম সাহেব বললেন, ‘সবাই ঈদের চাঁন দেইহা যাইয়েন, অনেক নেকি আছে।’
সুন্নত নামাজ শেষ করে মারফত আলী দ্রুত গ্রামের প্রান্তে ময়নাতলার দিকে রওনা দেয়। চাঁদ দেখে তাকে বাজারে যেতে হবে। একে তো হাতে টাকা নেই, তার ওপর আবার শীত। এবার বো¤¦াইয়া হাজি বাকিতে সওদা দেয় কি না সে জানে না। কেননা গত হাটবারে হাজি সাহেব তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মারফত আলী হাজি সাহেবকে বলেছিল, ‘এই বারের মতো ঈদটা কোনো রহমে পার কইরা দিয়েন, পরে সব বাহির টেহা একলগে দিয়া দিমুনে।’ জবাবে হাজি সাহেব বলেছিলেন, ‘আরে যাও, এমন কতা তোমার মুহঅ বহুত হুনছি। আর তামশা কইরঅ না, তুমি অনেক খারাপ মানুষ।’ হাজি সাহেবের কথা শুনে মারফত আলী কোনো কথা বলেনি। কেননা, এমন কথা হাজি সাহেব প্রায়ই বলে থাকেন।

কাশেম আলী দেওয়ান কথা বলল না। শুধু উদাস নয়নে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে রইল। রহমত আলী দেওয়ান বলল, ‘হরে, আমি দেখতাছি, চাঁন কি দুইডা উডছেরে?’ ছেলেপেলেরা আবারও হেসে উঠে বলল, ‘চাঁনত আমরা দেহি একটা, আমনে দুইডা কই পাইলেন?’ মারফত আলীর ফুফা অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মুখ খুলে বলল, ‘আমি একটা চাঁনই দেখতাছি। কিন্তুক চাঁন্দের দুইডা মাতা কেল্লেইগা ফাডা, বুঝতাম পারতাছি না।’

ওসব ভাবতে ভাবতে মারফত আলী পৌঁছে যায় ময়নাতলায়। পশ্চিমের আকাশটা তখনো লালচে বর্ণ ধারণ করে আছে। অনেকেই চাঁদ দেখতে বরাবরের মতো এখানে উপস্থিত হয়েছে। নিকটস্থ বাড়ির প্রায় আশি বছরের বৃদ্ধ কাশেম আলী দেওয়ান, তার ছোট ভাই রহমত আলী দেওয়ান এবং নাতির কাঁধে ভর দিয়ে মারফত আলীর অসুস্থ ফুফা রজব আলী সরকারও ঈদের চাঁদ দেখতে উপস্থিত হয়েছে।
তাদের দেখে ছেলেপেলেরা হাসাহাসি করছিল। কেউ কেউ হাসি চেপে ভনিতা করে দয়ালু কণ্ঠে বলছিল, ‘এই বুরা বয়সে এত কষ্ট কইরা চাঁন দেকতেন আইলেন, আবার আইছেন খরম পাওদা, যুদি পইরা যান, তাইলে কী উফায় অইব কন দেহি, বুয়েরে লগে কইরা লইয়া আইতেন।’ জবাবে কাশেম আলী দেওয়ান বলল, ‘এই বারইত শেষ, আর কি চাঁন দেহার সুযুগ পামু।’ শুনে তার নাতি সম্পর্কের আমজাদ আলী তামাশা করে বলল, ‘কেরে দাদা, এত তাড়াতাড়ি ঐ কি মইরা যাইবেনগা?’ জবাবে কাশেম আলী দেওয়ান বলল, ‘হরে, এইবারই শেষ, দুই-দুইবার মরণ ফিরাইছি, এইবার আইলে আর পারা যাইত না, চইলা যাইত অইব।’ তার কথা শুনে ছেলেপেলেরা হেসে উঠল। সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে তিনি বললেন, ‘চাঁন কোন মুহিদা উডছে, একটু দেহা দেহি।’

আমজাদ ও রোমান তাদের দুজনের নিকটে গিয়ে বলল, ‘দাদা, আমার লগে আইয়েন, ওই যে দেহেন অরুইন্দার টেহের বরঅ গাছটার উফুর দিয়া চানডা দেহা যাইতাছে।’ কাশেম আলী দেওয়ান সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘কইরে, আমি ত কিছুই দেহি না। সত্য কইরা ক’দেহি, চাঁন উডছে কি না।’ আমজাদ, রোমান এবং কয়েকজন বালক তার নিকট গিয়ে যার যার মতো পশ্চিম দিকে আঙুল দেখিয়ে বলতে থাকে, ‘ওই যে দেহেন গাছটার মাতা খাওয়া, হের উফুর দিয়া চাইয়া দেহেন। এহন চাঁন দেখতাছেন, দাদা?’

কাশেম আলী দেওয়ান কথা বলল না। শুধু উদাস নয়নে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে রইল। রহমত আলী দেওয়ান বলল, ‘হরে, আমি দেখতাছি, চাঁন কি দুইডা উডছেরে?’ ছেলেপেলেরা আবারও হেসে উঠে বলল, ‘চাঁনত আমরা দেহি একটা, আমনে দুইডা কই পাইলেন?’ মারফত আলীর ফুফা অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মুখ খুলে বলল, ‘আমি একটা চাঁনই দেখতাছি। কিন্তুক চাঁন্দের দুইডা মাতা কেল্লেইগা ফাডা, বুঝতাম পারতাছি না।’ কথাটা শুনে কেউ হাসি থামিয়ে রাখতে পারল না, হু হু করে হেসে উঠল। মারফত আলী তাদের ধমক দিয়ে বলল, ‘আরে তরা চুফ করছ না কেল্লেইগা, মুরব্বিগ লগে এরুম টিটকারি করত অয়, চুপ কর সপ্তে।’
ছেলেপেলেরা একদম চুপ হয়ে যায়। কাশেম আলী দেওয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘তরা সপ্তে চাঁন দেখছত, আমার পোড়া কফাল, শেষবারের মোতোন চাঁনডা দেখতাম পারলাম না।’ তার কথা শুনে কেউ কোনো কথা বলল না। ময়নাতলায় একটা নীরবতা বিরাজ করছিল। সে আবার বলল, ‘তরা সপ্তে কি চাঁন দেখছত? চাঁনডা কি সোজা, না বেহা?’ বালকেরা সমস্বরে বলে উঠল, ‘দাদা, দহিন মুহি ইট্টু বেহা।’ কাশেম আলী দেওয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘এই বারঅ চাঁনডা বেহা অইছে? দেশঅ খুব আহাল অইবরে, খুব আহাল অইব, মানুষগুলা না খাইয়া আবার মইরা যাইবগা।’ তার সাথে সাথে রহমত আলী দেওয়ান, রজব আলী সরকার সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। গেল আকালের কষ্টের কথা কেউ ভুলতে পারেনি। ক্ষুধার আগুনের জ্বালা যে কত তীব্র, তা এ এলাকার মানুষ কমবেশি সবাই জানে। তাছাড়া মধ্যবিত্ত মানুষও কোনো মতে একবেলা আধা পেটা করে, কোনো বেলা ভাত, কোনো বেলা যবের ছাতু খেয়ে বেঁচে গেছে। আর গরিবের তো কথাই নেই। এ বছরই তো কত বড় বন্যা হলো। আমন ফসল তেমন ভালো হবার আশা নেই। সবই বন্যায় প্রায় ধুয়ে নিয়ে গেছে।
অবশ্য এ অঞ্চলে বন্যায় তেমন ক্ষতি হয়নি। ধান যা হয়েছে, এ মাসে বৃষ্টি-বাদল না হলে লোকজন ধান তুলে দু’বেলা দু’মুঠো করে ভাত খেতে পারবে। আমজাদ জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা, দেশে আহাল অইব, কেমনে বুঝলেন?’ কাশেম আলী দেওয়ান আবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘হরে বুঝা যায়, বুঝছত, চাঁন দহিনমুহী বেহা অইয়া উডলে দেশঅ আহাল অয়। হেই বছর যে বড় পানি অইল, হেইডা কিন্তুক আমি বুইজা সপ্তেরে আগেঐ কইছিলাম।’ কথাটা বলে কাশেম আলী দেওয়ান একটু থামে। সকলে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘হেই বছর আহার মাসঅ আমি এই ময়নাতলাঐ বইয়া দেখছিলাম আজার আজার লক্ক লক্ক পিঁফড়া খায়োন-দায়োনের জিনিস লইয়া জোঙ্গলের বির্তে যাইতাছিলগা। তহনই আমি বুছছিলাম দেশঅ বরঅ পানি অইব। কতায় আছে না, পুরান চাইল বাতে বারে। ঠিকঐ বুছছিলাম, অইছিলত পানি কত্ত। মানুষ গরু-বাছুর লইয়া কত্ত কষ্ট করছিল। তহন অবিশ্যি আমগ এই দেশঅ কিছুডা ধান অইছিল। হেল্লেইগাঐ মানুষ না খাইয়া মইরা যায় নাই। অনেক দেশঅ মানুষ না খাইয়া মরছে। খুব কষ্ট করছে। আমগ দেশঅ মানুষ না মরলেও খুপ কষ্ট করছে।’ কথাগুলো বলে কাশেম আলী দেওয়ান আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

দোয়া পড়া শেষে ইমাম সাহেব বললেন, ‘শাওয়ালের চান উডছে, কালকা ঈদ, সপ্তে বালা কাফোর-চোফোর পইরা সক্কালবেলা ঈদের নুমাজের মাডঅ যাইবেন।’ আর উপস্থিত সাত-আটজন বালকের নাম ধরে বললেন, ‘তোমরা ফযরের নুমাজ পরোনের লাইগা মজিদঅ আইবা। লগে হলতারা, দাও, পাতি লইয়া আইবা মজিদঅ। ঈদগা পরিষ্কার করত অইব সক্কালবেলা। এহন চাঁন উডার শোকরানা দোওয়া অইব। আলাহর রহমত চাইয়া দোয়া অইব। সপ্তে আত তোলেন।’

ময়নাতলায় আবার নীরবতা ভর করল। খানিক পর কাশেম আলী দেওয়ান বলল, ‘তরা চাঁন দেইহা দোয়া পড়ছৎ?’ বালকেরা কেউ কথা বলল না। রোমান বলল, ‘চাঁন দেহার দোয়াডা কী, দাদা, একটু কন দেহি, আমরা হিগি।’ দেওয়ান সালাম প্রদানের ভঙ্গিতে হাত তুলে বললেন, ‘আসামু আলাইকুম ইয়া হালাল…।’ তিনি শেষ করতে পারলেন না। নিজেই একটু হেসে বললেন, ‘আরে এইডা কী অইল, আমিঐ ত বুইলা গেলামগা।’ তখন রহমত আলী দেওয়ান সাততাড়াতাড়ি বলল, ‘আরে বাই, আমনের বুল অয় নাই, একটা কতা বাদ গেছে, আসোলে অইব, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আল হেলাল। এইডা অইল ছুডু দোওয়া, আবার বড় দোওয়াঅ আছে, হেইডা হুজুর সাবে পারে।’

তখন ইমাম সাহেব উপস্থিত হলেন। তার সাথে আবু সরদার, রহম আলী সরকার, ঈমান আলী সরকার, হাছু সরকার এবং আরও চার-পাঁচজন। সকলের পায়ে খড়ম। ইমাম সাহেব বললেন, ‘সপ্তে চান্দেরে ছালাম করছেন?’ সকলে সমস্বরে বলল, ‘হ, হুজুর।’ ইমাম সাহেব চেঁচিয়ে বললেন, ‘হ, হুজুর মানে! বলেন সপ্তে, জি হুজুর।’ সকলে সমস্বরে বলল, ‘জি হুজুর।’ ইমাম সাহেব বললেন, ‘মারহাবা।’ সকলের মুখেই হাসি হাসি ভাব। ইমাম সাহেব আবার বললেন, ‘এহন আমার লগে সপ্তে মোনে মোনে চাঁন দেহার দোয়া পড়েন। আল্লাহু আকবার, আলাহুম্মা আহিলাহু আলায়না বিল আমনি ওয়াল ঈমানী ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামী ওয়াত্তাও ফীক্বি লিমা তুহিবুব ওয়া তারযা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকালাহু।’

দোয়া পড়া শেষে ইমাম সাহেব বললেন, ‘শাওয়ালের চান উডছে, কালকা ঈদ, সপ্তে বালা কাফোর-চোফোর পইরা সক্কালবেলা ঈদের নুমাজের মাডঅ যাইবেন।’ আর উপস্থিত সাত-আটজন বালকের নাম ধরে বললেন, ‘তোমরা ফযরের নুমাজ পরোনের লাইগা মজিদঅ আইবা। লগে হলতারা, দাও, পাতি লইয়া আইবা মজিদঅ। ঈদগা পরিষ্কার করত অইব সক্কালবেলা। এহন চাঁন উডার শোকরানা দোওয়া অইব। আলাহর রহমত চাইয়া দোয়া অইব। সপ্তে আত তোলেন।’ ইমাম সাহেব দোওয়া শুরু করলেন, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার…।’

আরো পড়তে পারেন

কানু কাকা

আঁধার হারিয়ে গেলেও, সেভাবে ভোরের আলোর উপস্থিতি নেই, রোদ যেনো ফেরারি আসামি হয়ে পালিয়ে। মরুভূমির বালুকণা যেনো উড়ছে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে, ক্ষমতাধর কোনো মন্ত্রীর মত। সাথে যুক্ত হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনির মত কোনো শীতের তীব্র উপস্থিতি। কিন্তু এসব কিছু উপেক্ষা করে বিদ্রোহী কবিতার শ্লোকের মত রওনা হয়েছে কানু কাকা। হেমন্তের হেলে পড়া সূর্যের মত, তার শরীর….

চারটি অণুগল্প

১. পৃথিবীর শেষ গাছটা হাতে নিয়ে ফিহান সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিরকাল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা ফিহান সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, এই ছোট্ট চারাটা নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে, নাকি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে দেবে?   ২. —আমার না প্রায়ই খুব মায়া হয় এদের জন্য —কেন?! —এই যে দেখো, সারারাত জেগে থাকার কথা আমাদের, আর জেগে থাকে ওরা।….

বিবশ

এক. আমাদের আব্বা বড্ড নিশ্চুপ। চুপচাপ-চাপা স্বভাবের। সারাদিনে তিনটা শব্দও তার মুখ দিয়ে বের হয় না। অন্যদিকে আম্মা কথার খই ফোটান। তার সংসার, সংগ্রাম, সীমাহীন দুঃখ এসব। এক রথে একাকী বয়ে চলা জীবনের ঘানি। বাপের বাড়ির রকমারি কেচ্ছা, ছোটবেলায় মা-খালাদের সাথে করা হরেক কাহিনির গপসপ। আমাদের মামারা কেউ বোনের খবর নেয় না। এরপরও সন্ধ্যা করে,….

error: Content is protected !!