
গন্তব্য
কোথাও না কোথাও গন্তব্য আছে,
এসো, এই কথা ভেবে হাঁটি।
আশা ছেড় না,
আশা ছেড়ে দিলেই মৃত্যু হবে তোমার।
ভয় হোক, বুক কাঁপুক, পা কাঁপুক
অস্থিরতা বাড়ুক, হোক না হয়
আরও হতাশা।
আশা ছেড় না,
আশাকে রশির মত দু হাতে
আঁকড়ে ধরো
প্রাণপনে।
আশা ছেড় না,
আশা ছেড়ে দিলেই তোমার মৃত্যু হবে।
বিক্রয় প্রতিনিধি
সাব্বিরের মাথার ভিতর সিলিং ফ্যান ঘুরছে,
ঘুরে ঘুরে বলছে,
তিন মাসের বাসাভাড়া বাকি।
সাব্বিরের মাথার ভিতর সেলস ম্যানেজার ঘুরছে
ঘুরে ঘুরে বলছে,
টার্গেট কভার না হলে, স্যালারি রিডাকশনে যেতে হবে!
‘সরি’ সাব্বির।
আজ মাসের শেষ তারিখ,
সাব্বির কাঁদছে, থেমে থেমে বৃষ্টির মত
টপ টপ করে নোনার ফোঁটা পড়ছে মাখা ভাতে,
নাহ, আজ আর কোন দলা হচ্ছে না,
গলা দিয়ে সর সর করে
ঝোল মাখা ভাত নেমে যাচ্ছে নিচে।
নাহ, আজ আর বুকে কোন চাপ হচ্ছে না।
সাব্বির হৃদয় খুঁজে পাচ্ছে না।
রোদ সইতে না পেরে,
সাব্বিরের ছায়াটা অর্ধেক ছিঁড়ে গেছে।
ভার সইতে না পেরে,
সাব্বিরের পিঠটা ধনুক হয়ে গেছে।
অপমান সইতে না পেরে,
সাব্বিরের হৃদয়টা তিন টুকরো হয়ে গেছে।
হৃদয়ের বড় টুকরোটা সাবিহা খেয়ে ফেলেছে,
বাকি দুই টুকরো দুই ছেলেমেয়ে।
দাম্পত্য
শাড়ি বদলাতে বদলাতে তুমি,
পাল্টাচ্ছ তোমার মন,
আর আমি ভাবছি, আজ কি বুধবার নাকি সোম,
আমার পকেট ভর্তি জোনাকি, মুখ ভরা ভুল,
ঠোঁট লেগে আছে পরশুদিনের ব্যাথায়।
ভাবছি, ভালবাসা এক দুষ্টু কাঠবেড়ালি,
তার যোগ্য হয়ে ওঠাও এক এবাদত।
মুখ ঘুরিয়ে তুমি বললে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,
আর আমি ভাবছি, ঘুম এবং মৃত্যু
মাঝখানে
ফুটে আছে আমাদের সম্পর্কের আঙুল।
ভাবছি, সবকিছু বাদ দিলে
ভাগফল বলে আর কিছু থাকে না !
—তবুও বয়স আমাদের মৃত্যুর সমান।
সক্রেটিস
তোমার মহামান্য ঠোঁট,
ঠোঁটের সামান্য নিচে
লজ্জিত হেমলক;
তোমার প্রশান্ত চোখ-
যেন গৌতমের স্তব্ধ গলা থেকে
লুটিয়ে পড়ল গভীরতর এক
ধ্যানবিন্দু।
সমস্ত ফুলের অভিশাপ নিয়ে
তারা তোমাকে হত্যা করল।
তোমার নিঃশ্বাস থেকে জন্ম,
তেমন রজনীগন্ধ্যা
আজ তাদের জানালায়!
আমি সামান্য,
অতি সামান্য বলেই
চায়ের পেয়ালা হাতে
বসে আছি।
পান করতে পারছি না।
—তোমাকে মনে পড়ছে সক্রেটিস
সব সত্য, সত্য নয়
সক্রেটিসকে মেরে ফেলা হয়েছিল
আমি সেই পৃথিবীতে এসেছি।
আমাকে বুঝতে হবে—
সব সত্য, সত্য নয়
সব মিথ্যা,মিথ্যা নয়!
পৃথিবী চলে বিশ্বাসের উপর
সত্য অথবা মিথ্যা
বিশ্বাসের কাছে প্রত্যেকেই অসহায়।
ভয়ে ভয়ে পা ফেলি
প্রত্যেক সুন্দরের সাথে চরিত্রহীন হবার
একটা ভয় থাকে,
ভয়ে ভয়ে পা ফেলি।
অচেনা সৌগন্ধে গোলাপ থেকে
সরে গিয়ে হাসনাহেনার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
বকুলকে ভালবেসে
জুঁই বেলীর পায়ে জল দান করি।
ক্রমে ফুল থেকে আরেক ফুলে
সোপর্দ হতে হতে একদা আমরা
পুরোপুরি মিথ্যাবাদী হয়ে যাই।
কিছুদিন গাছে গাছে থাকি,
পাখি হয়ে উড়ে যাই,
ভ্রমরের গান গাই,
কিছু দিন পাহাড় থেকে পাহাড়ে
জুমচাষে আদিবাসী মন……
ফিরে আসি, দেখি, পথের পাশেই
ফুটে আছে সম্পর্কের আঙুল
—অন্যমনস্ক বাড়ি।
ভয়ে ভয়ে পা ফেলি
মৃত্যুকে বলে আসি,
আর কয়টা রাত আমাকে দিও।
আমরা সত্য ভুলে যাই।
কেউ ভুল করে সত্য বললে,
আমরা তাকে অপদস্থ করি,
গায়ে হাত তুলি।
হয়ত মারা যাবো
হয়ত মারা যাবো। কখন!
ঠিক নাই তার।
চিতা জ্বলে,
বোল হরি, হরি বোল।
হয়ত মারা যাব। কখন!
ঠিক নাই তার।
শরীর ভাসে
পাতা ঝরে, ফুল ঝরে।
দেহের মাপে গোর খোড়ে
ভাগের আত্মীয়।
লাকুম দিনুকুম, দিনুকুম লাকুম।
কিভাবে এলাম!
কার সাথে এলাম!
কেন এলাম!
—আর আসব না।