Author Picture

আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

আজাদুর রহমান

শোক সংবাদ
.
যখন দেখবেন অত্যাচারের মত
অনবরত কবিতা আসছে,
ভিতর থেকে বিড়াল-পায়ে
লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে
ওহীর পর
আরেক ওহী!
সমানে লিখেও
আর
কূল পাচ্ছেন না!

তখন বুঝবেন,
আপনি আপনার কবিতার মধ্যে
নিহত হয়েছেন।
আর
যা আপনি লিখছেন, তা কবিতা নয়,
শোক সংবাদ।


প্রাকটিস
.
ব্যথিত হৃদয় নিয়ে কারো কাছে যেওনা,
পৃথিবীতে ‘সাহায্য’ বলে কোন শব্দ নাই,
সকলেই ভিখিরি, চেয়ে আছে মুখের দিকে।
প্রাকটিস করে দ্যাখো-
নিজের চেয়ে ভাল উপহাস
আর কেউ তোমাকে দিতে পারবে না।


পাহাড় কেনা
.
পাহাড় কেনার ব্যাপারটা সত্যি,
এখন সত্যি একটা পাহাড় কিনতে ইচ্ছে করছে।
মনে প্রানে একটা পাহাড় কিনতে চাই।
এই চাকরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বোনাস বেতন
কিছুই নেব না,
একটা পাহাড় পেলে।
এমন একটা পাহাড়, খুব বড় নয়,
যেন খাঁজে খাঁজে ইরিধানের আবাদ করা যায়,
সিম কলা লাউ লাগানোর মত ভাল রোদ যেন থাকে,
যেন নিচের উপত্যকায় একটা ছোট নদী থাকে,
প্যাচানো, দুষ্টু বালকের মত চঞ্চল।
যেন এক বেলা কেউ এদিকে না আসে।


পুরোনো অভ্যেস
.
পাহাড় দেখলে পাপ কমে যায়,
এটা আমার পুরনো অভ্যেস !
দুপুরে দুলছে ঘুম,
হাত পা কব্জি,
গাছেদের স্টেশনে অবসর,
যেতে যেতে মেঘের ওপারে
উঠে যায় বাল্যকাল।
এখানে এলে-
পরকাল ভুলে যাই,
পাপ কমে যায়,
এটা আমার পুরোনো অভ্যেস।


ঘোড়ারোগ
.
সামান্য তিন ছটাক জমিও নেই যে,
ছাপড়া তুলব! একদিন
দুনিয়া ফেলে পা ছড়িয়ে
বসে থাকব পাতানো টংয়ে!
আর আমারই হলো ঘোড়ারোগ,
পাহাড় দেখে বেড়াই, কিনব বলে
সওদাগরের মত দরদাম করি!
নদী দেখলে মনে হয়
জলের জমিদারি নিয়ে
ভেসে ভেসে একদিন মাছেদের সাথে
নিহত হই।
কম ভাড়ার বাসা যার একমাত্র গর্ত
সেই আমি পাহাড় দেখলে
দাঁড়িয়ে পড়ি, দরদাম করি।


পথ
.
পথের উপর দাঁড়াও,
হাঁটতে থাকো,
কাউকে কিছু বলো না,
পথ তোমাকে নিয়ে যাবে!
কোথায় যাবেন! -এমন প্রশ্নে ব’লো
আমাকে নয়!
পথকে জিজ্ঞাসা করুন,
পথটা নিশ্চয় জানে
-আমি ঠিক কোথায় যাবো!
পথ তোমাকে নরক ছাড়া
সবখানে নিয়ে যাবে।
শস্য শ্যামলা মাঠ, নদী, পাহাড়
বিদ্যালয়, বাড়ি, ঘাট, বন্দর, জাহাজ
অথবা একেবারেই অন্যকোথাও
যা তুমি ধারনাই করো নি।
পথের মাথায় কোন নরক থাকে না,
নরক থাকে মস্তিস্কে
মাথা থেকে তাকে ঝেঁড়ে ফেলো।
পা রাখো পথে,
কোথাও না কোথাও গন্তব্য আছে।
হাঁটতে থাকো।


কথা
.
মানুষের মুখের দিকে তাকালে
নিজেকেও মিথ্যাবাদী মনে হয়।
ভাল করে একটা আলাপ করা যায় না।
এমন কি
আমার ভুলটা!
তার ঠিকটা,
সত্য মিথ্যা- কোন কথাই তোলা যায় না!
সে কারণে কোথাও যাই না,
কারও সাথে দেখা করি না।
অপেক্ষা করি,
১০০
২০০
৩০০
বছর অপেক্ষা করি।
ওরা আমাকে খুঁজতে আসবে,
একদিন কোথাও শান্তনা পাবে না,
আমি তাই অপেক্ষা করি-
১০০
২০০
৩০০
বছর অপেক্ষা করি।


ভালবাসা
.
যেন ঘরকুনো লজিং মাস্টার
রাত নামলেই বৃষ্টির শব্দ
তোমার স্নিগ্ধ করতলে
একটা বকুল ফোটে,
প্রতিদিন এই ভাবে, এক পড়া।
তাই ঘরকুনো লজিং মাস্টার,
বার বার মুখস্থ করি-এক পড়া।


বিরুদ্ধ সময়ে
.
বনের পাশে জলের গন্ধ,
ছায়ার চেয়েও ঘন শান্তি।
সেখানে
এক প্রজাপতি উড়ছে,
তাকে কেউ বলে নি।
নিজেই প্রতিপক্ষের মত উড়ছে সে,
তাকে কেউ বলেনি।

আরো পড়তে পারেন

বেওয়ারিশ প্রেমের কবিতা

১. জীবনকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে দিয়ে দেখেছি, আমাকে গ্রহণ করেনা কেউ। আমাকে ভালোবাসে না ঘুমগন্ধওয়ালা সকাল— আমাকে ভালোবাসে না বাজারের জনবহুল রোদ, আমাকে ভালোবাসে না কেউ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, চাষী আমাকে ভালোবাসে না, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ভালোবাসে না, শোষক কিংবা শোষিত, শাসক ও প্রজা কেউই ভালোবাসে না, আমাকে ভালোবাসে না তরুণ-তরুণী-বৃদ্ধ বা যুবা, পার্থিব কোনো….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সহজাত মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে যে কোন দিন যে কোন সন্ধ্যায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে। পথের পাশে ওত পেতে থাকা শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে। কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে কোনও না কোনও ভাবে মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।….

হোসনে আরা শাপলা’র একগুচ্ছ কবিতা

আলতু ব্যথা কোন এক শুভ্র সময় আমাদেরও ছিল পাশাপাশি-মুখোমুখি বসে থাকা শুধু হিসেব-নিকেশ, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া এসবের বালাই ছিলো না কোন শুধু কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো ভালোবাসা। চোখের তারায় ডুবে গিয়ে অন্বেষণ শুধু শত জনমের সুখ। ওইসব স্বপ্নমাখা দিন কোন দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল কোথায় তারই জন্য মনের মধ্যে কেমন আলতু ব্যথা।   তৃপ্তি ভরসার হাত….

error: Content is protected !!