Monday, November 17, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    অনুভব আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা

    অন্তর্গত মসনদে
    *
    যেনো নাচছি সকল মুদ্রায়
    সঠিক আর ভুলের চর্চায় ঘন উস্তাদজীদের ভীড়ে

    কেবল একটা হাততালির প্রত্যাশায়
    জন্মের কাছে জিম্মি হয়ে নাচছি

    পর্ণ কুটির ধারের পথের মতো কাঙাল এ প্রত্যাশা
    এ প্রত্যাশা তৃষ্ণার্ত উটের কুব্জের মতো বেঢপ

    নাচতে নাচতে
    মনোরঞ্জনের এ আসরে ব্যর্থ ভাঁড় আমি
    দাঁড়ায় রয়েছি
    দরোজার বাইরে

     

    নেকরোফিলিয়া
    *
    ১.
    প্রলেতারিয়েত হাঙরের দাঁতে ঘুমিয়ে পড়েছে শরৎ
    ফ্যান্টাসি জুড়ে কালো রঙের মাইম, জোকার মঞ্চ
    অস্তিত্বের ওপর ঝুঁকে আধোলীন
    সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে থাকা অন্ধকারপ্রিয় জানালা
    তোমার ভঙ্গিমা এড়িয়ে
    ক্ষুধা আমাকে ফেরি করে পৃথিবীময়।

    ২.
    এখানে আধোছায়া
    মাংসের মর্মরে ভাঙার আওয়াজ
    ধাতুফলকের বিচূর্ণ রঙে উড়ে যাচ্ছি
    কুহকে, অন্তরালে পালকের নরম কাটছে দাঘ্রিমা
    তোমাদের শহরে আমার স্বাধীনতা মিথের পতাকা।

    ৩.
    আগুন আর পোড়াচ্ছেনা
    গড়ে নিচ্ছে কঠিন
    এখন সকল আঘাতই ঝঙ্কার
    তথাপি আমার শরীরে বিরহ খোদাই করে চলেছে যে কারিগর
    সে বড়ই নিখুঁত।


    ক্লাসঘরের নৈঃশব্দ্যহিমে আমাকে কাঁদে শিশুর মন
    পেন্ডুলামের অশনিসংকেতে
    দিকপালহীন বাড়ছি আমি

    বেঁচে থাকার বেরসিক মেমব্রেনে।

     

    অন্ধকারের জার্নাল
    *
    ১.
    ক্ষুধার পরিসরে ক্রমান্বয়ে ফুটপাত বদল করে মানুষের ভেতর মৃতবৎসা জীবন। কবর এক লৌকিক সমাপ্তি,
    যারও আগে নিভে যায় প্রাণ।

    ২.
    প্রত্যেক ভ্রমণ শেষে দাঁড়িয়ে থাকা একই দিকে। ঘুঙুরের শরীর জানে কতো আঘাতে তার ঝংকার। বাঈজির
    নিভৃতে মানুষের ব্যথার কী আশ্চর্য নিনাদ।

    ৩.
    মেঘলা তরুণীর দিন ঝরে গেলো বৃষ্টির শরীরে। করোটির কালো শ্যাওলায় ছোট্ট বাড়ি। সূর্য ডুবে যায়।

    ৪.
    চিনতে এতোটুকু ভুল হয়না। বরফক্ষেতে শুয়ে থাকা নিজস্ব দেহলিপি। আয়না আলাপে নিশ্চুপ, তোমারই তো
    মুখের কঙ্কাল।

     

    রিরংসার হৃদে
    *
    খেয়েছো চুমু, জীভে-ঠোঁটে দাহকালে
    পেঁপের ভেতর যখন নীরবে প্রেম পাঁকে

    দুই দান ঘুটি হারা দাবার ময়দান
    এলোচুলে নিশিভ্রমে ছুঁয়েছো উঠান?

    ছড়িয়েছো নাভীঘ্রাণ কস্তুরী বনে বনে
    মেঘের পৈতা পরা এক হাওয়াকালে
    ঝড় জ্বরে অরুচিতে নিভেছে নুন পাত
    বেনোজলে ভেসেছে ডোম,
    সময়ের রেখাপাত

    এখানে দিনের বাঁকে কেরোসিনের গন্ধ-
    কামনায় বিহবল ডাহুকের পরাগে
    অস্ত যাওয়া জীবনের শরীরি রাগে
    আবার আসবে জানি, সেদিন দূরে নয়
    জলের পদ্ম বিভ্রমে ফাঁদ হয়
    ডুব যায় কোন সে নারী রিরংসার জলে,
    তীব্র করে তার হৃদেরে।

     

    তুষারপাতের গল্প
    *
    তোমার শরীর ঘিরে উপচে গেছি –
    কামনার ধ্যানবিন্দুতে কিছু শালিখ খুটেছে শুধুই শস্যদানা
    তুষারপাতের শেষে পুরুষের আলুথালু শরীর এক বিভোর জানালা –
    পাখি উড়ে গেলে দৃষ্টি তবু পড়ে থাকে কাচে
    দূরে কোথাও হুইসেল
    হাত ধরে হাঁটে যারা তারাও ভালোবাসে
    তাদের স্বরচিত শীতকাল ঘিরে ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটে
    তারা পাখি হয়, উড়ে যায়

    খুটে খায় শস্যদানা, তুষারপাতের শেষে।

     

    ট্যুরিস্ট
    *
    সুখ নামক ট্যুরিস্ট লাউঞ্জে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসি। এখানে বেশীদিন থাকা আমার মতো দারিদ্র্যের পক্ষে
    সম্ভব হয়না। কষ্টে-সৃষ্টে জমানো সম্বল ফুরিয়ে যায় অল্প আয়েশেই।
    অগত্যা ফিরি নিজ গ্রামে। দুঃখ। নাম তার। হলুদ্রাভ গ্রাম কাঠকয়লার মতো পোড়া অকালপ্রয়াত বাসনার
    ঘরবাড়ি। কী স্পষ্ট চেয়ে থাকে! হাসে। আদর করে বলে- ‘বাছা, ফিরলি তবে এতোদিনে। দ্যাখ, কেমন মলিন
    হয়েছি তোর অনাহারে।’
    ঘরের পাশে গাছ। ভুতে ধরা একা। আমারে দেখে কাঁদে। জিগায়- মনে আছে প্রেম?
    আমি হাসি। প্রেম- মনোহরা পাখি, মাধুকরী সুর কানে রেখে উড়ে গেছে বাদাড়ে।
    ফিরবেনা জেনেও অপেক্ষায় বাঁচি।

     

    পৃথিবী এবং তুমি
    *
    সেদিন বলছিলে -তুুমি কেবল আমাকে নিয়েই লিখছ
    পৃথিবীটাকে নিয়েও লিখতে পারতে, লিখতে পারতে জানা অজানাকে।
    আমি স্মিত হেসেছিলাম
    বলা হয়নি – তোমাকে আবিষ্কার করেছি আমি পৃথিবী আবিষ্কারেরও বহুপূর্বে।

    তখনো তোমার সংগে আমার দ্যাখা হয়নি
    ফলন ভালো হয়নি বলে কিষাণীর পায়ের কাছে পরে থাকা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দুপুরটার যে বর্ণনা লিখেছিলাম
    এই এতোদিন পর তা হুবহু মিলে গেছে তোমার সংগে!
    তোমার জেগে উঠা শরীর ছেনে আমি বুঝেছি মানুুষের মৌলিক চাহিদা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, হাহাকার
    তোমার পোড়া ক্ষত আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে
    বেশ্যা রাজনীতিবিদ আর নুয়ে পড়া বহুগামী রাষ্ট্রের অবক্ষয়।
    আমি তোমার মধ্যেই দেখেছি ঈশ্বর
    তোমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটতে দেখেছি অন্ধকার
    একই দূরত্বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখেছি মানবিকতা এবং
    অমানবিকতাকে।
    আমি তোমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি সুখ
    আমি তোমার মধ্যে কাঁদতে দেখেছি দুঃখ
    আমি তোমার আঙুলের ছাপে খুঁজে পেয়েছি পাপ
    চোখের তারায় আশ্চর্য পবিত্রতা!
    আমি আরও পেয়েছি
    তোমার ঠোঁটের তুুরুপে পৃথিবীর তাবৎ ভুল এবং শুদ্ধতা
    রাষ্ট্র, দ্রোহ, বিপ্লব, স্লোগান, মিছিল, প্রেম, ভালোবাসা, প্রত্যাখান, ঘৃণা, শরীর!
    সবই তুমি!
    তোমাকে ছুঁয়েই প্রতিটি শব্দ কবিতা
    আর প্রতিটি কবিতাই পৃথিবী, জানা-অজানা।
    তুমি না হলে শব্দরা নত মুখে আমার কাছ থেকে দূর বহুদূর।
    তবে কেনো আমি তোমাকে নিয়ে লিখবোনা?
    আর একদিন তোমাকে লিখতে লিখতেই আমি লিখে ফেলবো সমস্ত পৃথিবী, জানা-অজানা!

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.